নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাকসুদ আলম মিলন

মাকসুদ আলম মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ"ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই লোকাল যে বাস গাড়ি/ ছিট তো খালিই নেই,দাড়িয়েও লোক গেছে ভরি!!!"

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩




রক্তজবা বিকেল যাকে বলে।পশ্চিমাকাশে সূর্যটা হেলে পরেছে।সূর্যটা ডুবে যায়নি এখনো, ডুবো ডুবো অবস্থায় বিদ্যমান।গ্রীষ্মকালের দিন এমনিতেই বড় হয়।সূর্য উদিত হয় দ্রুত গতিতে আর অস্ত যায় মন্থর গতিতে।আহ্নিক গতির ফলে যা ঘটে আসছে সৌরজগতের নিয়মানুসারে।অফিস ছুটি হয়েছে ৬টায় কিন্তু এখনো বাড়িতে পৌছতে পারেনি মতিন।।অফিসে আজ যত দ্রুত সম্ভব কাজ কমিয়ে বাসায় ফিরার পরিকল্পনা করছিল সে।কারণ আজকের দিনটা তার কাছে বিশেষ একটা দিন। বরঞ্চ আজকেই যেন সব কাজ উথলে উঠছে।হাতের কাজ শেষও করেছিল বটে কিন্তু বসের কষাকষিতে আর উঠতে পারেনি।কি আর করার "কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন"।

বিশেষ দিনটা হলো আজ তার একমাত্র মেয়ে "ঊষার" জন্মদিন।এমন একটা মেয়ে হয়েছে শিউলী আর মতিনের ঘরে বাবা ছাড়া যেন কিচ্ছু বুঝে না।মেয়েরা সাধারণত মায়ের আদরে আহ্লাদিত হয়।মাকে অনুসরণ করে কিন্তু ঊষা হচ্ছে ঠিক তার বিপরীত।তার সবকিছুই বাবাকে ঘিরে।গ্রহ,উপগ্রহ গুলো যেমন সূর্যকে ঘিরে ঠিক তেমনি ঊষার কাছে তার বাবা।ঊষার বয়স ৬ এর মধ্যেই যে সে কটকট করে কথা বলে রীতিমত বড়রা তার কথায় খেই হারিয়ে ফেলে।বাবা তাকে আদর করে কটকটি বলেই ডাকে।বাবা ছাড়া অন্যকেউ এমনকি তার মাও যদি তাকে কটকটি বলে ডাকে তাহলে রীতিমত রাগে ফুলে ফেঁপে উঠে তেলে বাগুনে ঝলে উঠার মতো।
শিউলি সুন্দর করে বাড়ি সাজাচ্ছে।সব ঝকঝকে,চকচকে।এমনিতেই শিউলি অনেক পরিপাটি একটি মেয়ে।বাড়ি ঘর নোংরা থাকলে তার ঘুম হয় ঠিক মতো।মনে ঘিনঘিনে খচখচ করতে থাকে।শিউলী জানে মাসের শেষের দিকে মতিনের হাতেও তেমন টাকা পয়সা নেই ।তাই তার কাছে আর টাকা চাইনি। তার কাছে যা জমানো টাকা ছিল কিছু তা দিয়ে সে উৎসব উৎসব আমেজের চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।আলমারি থেকে গাড় নীল রঙের শাড়ি পড়েছে সে।যেটা বিয়ের পর পরই মার্কেট থেকে কিনে দেয়া মতিনের সবচেয়ে পছন্দের শাড়ি।তারপর ঈদ ব্যতীত আর মার্কেটে যাওয়া হয় না।যেমন আয় তেমন ব্যয়।আর শিউলীও অনেক হিসেব নিকেশ করে চলে। ঊষার বাবার পায়েস খুব পছন্দের। সে সেটাই মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে।আর অন্যদিক দিয়ে ঊষা বারবার তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করছে ।

-মা বাবা আসবে কখন????বাবাকে আমি বলে দিয়েছি ইয়া বড় একটা কেক আনতে।আমার বান্ধবী খেয়ার জন্মদিনে ইয়া বড় কেক এনেছিল সে নাকি খেয়ে শেষ করতে পারে নাই।পরেরদিন টিফিনে কেক নিয়ে এসেছিল খেয়া।মা আমিও কাল টিফিনে কেক নিয়ে যাবো। কখন আসবে বাবা আর কতক্ষণ????

-এইতো মা এসে পরবে... ফোন দিয়েছিলাম তোমার বাবাকে। অফিস শেষ করে কেক কিনে তারপর বাসায় ফিরবে।
- মা আরেকবার ফোন দাওনা।আমি কথা বলি।আচ্ছা দিচ্ছি ধরো মামুনি
-হ্যালো বাবা কখন আসবে তুমি ???আর মনে আছে তো ইয়া বড় দেখে কেক নিয়ে আসবা আর বড় দেখে একটা পুতুল।
ওপাশ থেকে মতিন-আচ্ছা মা আচ্ছা।আর আমি কিনে দাড়িয়ে আছি বাসের জন্য। ঘড়ি ধরে আর ৩০ মিনিট লক্ষ্মী মা আমার তুমি স্কুল থেকে এসে খেয়ছো মা কি রান্না করছে
-বাবা তুমি এতোগুলা প্রশ্ন একসাথে করছো কেন ????আর জানোই তো বাবা... তোমাকে ছাড়া আমি খেয়েছি কখনো ???আর কোনদিন এরকম প্রশ্ন করবে না। আর মা রান্না করছে তোমার পছন্দের পায়েস।(ফিস ফিস করে)আর জানো বাবা মা আজ নীল শাড়ি পরছে... যা সুন্দর দেখাচ্ছে একেবারে মুভির হিরোয়িনের মতো(ফিস ফিস করে)
-ও...তাই!!!!!! আচ্ছা মা... আমি তাড়াতাড়ি উড়ে চলে আসছি। তুমি ঘড়ি ধরে রাখো মাত্র ৩০মিনিট।

মতিন তার কলিং এর কাছ থেকে কিছু টাকা হাওলাত করছে।তাতে যতটুকু সম্ভব বড় দেখে কেক আর পুতুল কিনেছে।তার হাতে কেকের বাক্স।একটু সেভ করে নিতে হবে নচেৎ নির্ঘাত সব বেসতে যাবে।সন্ধ্যায় অফিস ছুটি হওয়ার পর বাস পেতে বেশ বেগ পোহাতে হয়।মতিন প্রথমে ভাবছিল সিএনজি করে যাবে।পকেটের যে দূরঅবস্থা দেখছি মুশকিল হয়ে যাবে।আর বাস গুলাও টুইটম্বর করে ভরে আসছে। ঠাই পাওয়া যায় না রবীন্দ্রনাথর কবিতার মতো ...

"ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই লোকাল যে বাস গাড়ি
ছিট তো খালিই নেই,দাড়িয়েও লোক গেছে ভরি!!!"

ছুটির আগের দিন বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাস্তায় ভয়াবহ ভিড়ে বর্ধিত থাকে চারপাশ।অন্যদিনের মতো বা হাতে কিছু না থাকলে বাসের হ্যান্ডেল ধরে ইতিমধ্যেই বাসে উঠতে পারতো মতিন।কিন্তু তার আর সুযোগ কই। বাস আসলেই দেখা যায় মানুষের ভৌ দৌড়।কে কার আগে পারাপারি,যাতাযাতি করে উঠতে পারে বাসে।মতিনের হাতে কেকের বাক্স থাকায় বেশ মসিবতে পড়েছে সে।কয়েক হালি নিষ্ফল চেষ্টা চালিয়েছেও কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি।একবার উঠতে গিয়েও থমকে গেছে ।আর একটু হলে ধাক্কা লেগে সে এবং কেক একসাথে গড়াগড়ি খেতো।
ক্রমে ক্রমে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলো,বাড়তে থাকলো পাল্লা দিয়ে গাড়িতে উঠার প্রতিযোগিতা।যা করার আগে করা উচিত ছিল।আর ঐদিক দিয়ে শিউলি ও বারে বারে ফোন দিচ্ছে।
-ঊষা সকালে ডিম পরোটা খাওয়ার পর আর কিছু খাইনি।বারবার বলছে বাবা এলে খাবে।তাকে জোর করেও লাভ হয়নিই।এমন জেদি মেয়ে।ঠিক তোমার মতো।যা বলে তাই।তোমার বাসে উঠা হলো।
-আরে না জানোই তো বৃহস্পতিবার ভয়ংকর ভিড় থাকে রাস্তায়।এর মধ্যেই কয়েকটা গাড়ি মিস করছি।
-আচ্ছা দেখেশুনেই আসো।তাড়াহুড়ার দরকার নাই।

ঘটা-খানিক পর শিউলির মেজাজ বিঘ্রে যাচ্ছে।এতবার ফোন দেয়ার পরও ফোন তুলছে না কেনো মতিন।

চারপাশে ভিড় আর গাড়ির শব্দে মতিনের ফোন রিংটোনের শব্দ কানে আসছে না।তার ধ্যানজ্ঞান দৃষ্টি কখন সে বাসে উঠতে পারবে। এ পর্যন্ত ৮টা গাড়ি মিস করছে সে।এখন ৯ নাম্বার বাস আসার।সে পাই পাই করে গুণে রেখেছে।মতিন ঠিক করেছে যা কিছুই হোক তাকে পাল্লা দিয়ে বাসের হেন্ডেলটা আগে ধরতেই হবে।বাকি সব আল্লাহ ভরসা।

৯ নম্বর বাস আসছে... ভিড় ঠেলে মতিন ছুটছে বাসের দিকে হেন্ডেলটা ধরতে,পেরেছেও বটে কিন্তু বাস আর এগুচ্ছে না। ভিড় এখন ৯নম্বর বাসটিকে ঘিরে। ভিড় আরও বাড়ছে,বাড়ছে মানুষের জানার কৌতূহল!!! অন্যদিক দিয়ে বাড়ছে ঊষা আর শিউলির দুশ্চিন্তা নামক কৌতূহল!!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.