নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু করা হয়ে উঠেনি এখন। ব্লগ এ লেখা টা প্রথমে ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতা। মেসেজ শেয়ার করা। তবে লিখতে লিখতে এখন লেখার ভালবাসায় পড়ে গিয়েছি। নিজে যেমন লিখতে পছন্দ করি অন্যের লেখা ও একই পছন্দ নিয়ে পড়ি। লেখালিখির আরেকটা বড় উদ্দেশ্য হল (অন্যের দৃষ্টিতে তা ফানি মনে হবে ) সামাজিক বিপ্লব করা , মানুষের জীবনে স্বাছন্দ্য আনয়ন করা মূলত আমার দেশের মেয়েদের লেখিকাদের আমি বড় প্ল্যাটফর্ম এ দেখতে চাই। আমাদের দেশে ভাল লেখিকা অনেক কম। অথচ আমার মন বলে অনেক ট্যালেন্ট মেয়েরা আছে। অনগ্রসর সামাজিক পরিস্থিতির কারণে মেয়েরা এক বৃত্তে বন্ধী হয়ে আছে। আমি খুব চাই ওই বাধা সরিয়ে আলোয় ,সাহিত্যে জ্ঞানে আমাদের মেয়েরা পথ চলুক। প্রচলিত দৃষ্টিতে সমাজে চলতে মেয়েদের বাধা গুলি চিহ্নিত করা আমার লেখালিখির আরেকটি উদ্দেশ্য। প্রগতির কথা বলতে চাই ভদ্রতায় , শালীনতায় এবং মর্যাদায়। সামাজিক আভ্রু ভেঙ্গে নয় যা তসলিমা নাসরিন করেছিলেন। বেগম রোকেয়া আমার পথ প্রদর্শক। তিনি মেয়েদের পাদ প্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছিলেন ঠিক ই রক্ষনশীলতার ঢাল ভেঙ্গে নয় , মর্যাদায় থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন মেয়েদের।
মাসুম বাসায় এসে পৌছল রাত দশ টায়, যদিও সে আট টার মধ্যে ফিরতে চেয়েছিল, কিন্তু তার চেহারাতে বিষাদ এর ছাপ টা এত বেশি প্রকট দেখা যাচ্ছে এই চেহারা নিয়ে মায়ের মুখোমুখি হওয়া যাবেনা । ঘরে ঢুকে মাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে বারান্দায় এসে দেখল মা খুব অসহায় ভাবে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
মাসুম এসে মায়ের পিছনে দাড়ালো, মা এতই উন্মনা হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে টের ই পেলনা ।
কি মা এভাবে একা বারান্দায় দাড়িয়ে আছ, শরীর ঠিক আছে তো ? আবেগ ভরে মায়ের কাধ জড়িয়ে ধরল । মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এখন থেকে মাকে আরো বেশি সময় দিবে ।
নীলিমা চমকে উঠলো, বুঝা যাচ্ছে অন্যমনস্কতার অতলে অবস্থান করছিল সে।
কি এত দেরী হলো কেন ? তোর্ ফোন ও বন্ধ, আমার টেনশন হচ্ছিল ।
এই যে মা এজন্য দেরী হলো তোমার প্রিয় চাইনিস আনতে গিয়ে,
আজকে তো আমি অনেক কিছু রান্না করলাম , মা হেসে স্নেহভরে বললেন ।
ওকে তোমার রান্না আমি খাব, আর তুমি খাবে আমার আনা খাওয়ার বলে মাকে আন্তরিক ভাবে জড়িয়ে ধরল ।
মা তাড়াতাড়ি টেবিল সাজাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি , ভিষন খিদে পেয়েছে l
মায়ের অন্যমনস্কতা কাটানোর জন্য অতিরিক্ত চঞ্চলতা আর উত্ফুল্লতার ভান করলো ।
টেবিল এ এসে খাওয়ার আয়োজন দেখে মাসুম হতবাক।
তার যত পছন্দের খাওয়ার আছে সব দিয়ে টেবিল সাজানো
ইলিশ মাছ ভাজি , ইলিশ এর ডিম ভুনা, চিকেন ফ্রাই , বীফ ঝাল , কই মাছের ঝোল, চিংড়ি মাছের মালায় কারি, খাসির সাদা মাংশ, আরো হরেক রকমের ভাজি ভর্তা .
হা হয়ে গেছে মাসুম , ব্যাপার কি মা এসব আজকে রান্না করলে? আজকে কি কোনো অকেশন আছে ?
আজকে তোর্ বাবার জন্মদিন ভুলে গেলি ?
মাসুম এর মন টা খারাপ হয়ে গেল মায়ের মন খারাপ কেন এবার বুঝতে পারল ,
খাওয়া বন্দ করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলো , নীলিমার খেয়াল করতে বলল কিরে খেতে কি ভালো হয়নি? খাচ্ছিস না কেন?
মা তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই, তুমি যদি কিছু মনে না কর
তুমি কি কখনো বাবার কাছে ফিরে যাবে? নীলিমা মাথা নাড়ায়
তোমাদের যখন আর একসাথে থাকার কোনো সম্ভাবনা নাই তখন বাবার কথা আস্তে আস্তে ভুলে যেতে চেষ্টা কর? কেন তুমি এখনো বাবার জন্মদিন মনে কর?
আমি মনে করেছি তুই খুশি হবি, নীলিমা বললেন নিচু গলায় ।
আমি খুশি হইনি মা , যেটা করলে তোমার মন ভালো হয়, সেটা করলে ই আমি খুশি হই বেশি ।
আমি খুশি হব তুমি যদি অজয় আঙ্কেল কে বিয়ে কর .
আমার ছেলেটা কি পাগল এর মত কথা বলে , এখন আমি তোর্ বিয়ে দিব পাগলা ছেলে ।
বাইশ বছরে আমাকে বিয়ে দিতে চাও? এমনি খাইয়ে খাইয়ে এই বয়সে মধ্য বয়সী দের মত ভুড়ি করে দিয়েছ ।
যা ফাজিল তোর্ কোথায় ভুড়ি ? কত সুন্দর স্বাস্থ্য, ঠিক তোর্ বাবার মত ।
বেশি স্বাস্থ্য, বডি বিল্ডার এর স্বাস্থ্য এখনকার মেয়েরা এত স্বাস্থ্য পছন্দ করেনা
মেয়েরা আমাকে পাত্তা দেয়না জানো মা কৌতুকের স্বরে বললে ও শেষের দিকে গলার স্বর ভারী হয়ে গেল আয়েশার কথা মনে পড়ায় , এই ব্যাপার টা পরিষ্কার আয়েশা এখন আর তাকে পছন্দ করেনা ।
২অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠলো মাসুম, তার জীবনে প্রথম সে কিচেন আসলো, খুব দ্রুত ডিম ফেটে অমলেট বানালো, পাউরুটি টোস্ট করলো, রুটি বানানোর চেষ্টা করে শেষে হাল ছেড়ে দিল, রুটির শেপ এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেল ।
রাতে মায়ের রান্না করা কিছু সবজি, চিকেন সহ টেবিল সাজালো l মাকে আজকে বিগ সারপ্রাইস দিবে তাড়াতাড়ি তার দুই বন্ধু সফিক, সাহান কে ফোন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিল । একজনকে বলল কোনভাবে আয়েশা কে ম্যানেজ করে তার বাসায় নিয়ে আসতে ।
অজয় আঙ্কেল কে ফোন করলো ,
আঙ্কেল এর টেনশন ফীল করে হেসে ফেলল, ওনার গলা কাপছে টেনশন এ
কি ব্যাপার মাসুম তোমরা ঠিক আছ তো ?
আঙ্কেল আপনি আমার বাসায় একটু আসতে পারেন এক্ষনি বলে তাকে দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল ।
জানে বিশ মিনিট এর মধ্যে আঙ্কেল চলে আসবে, সে এদিক তাড়াতাড়ি গোছাতে সুরু করলো ,
কলিং বেল এর শব্দে দরজা খুলতে দেখল আয়েশা, সফিক, সাহান ,খুশি হয়ে দেখল আয়েশা কে
আয়েশা মনে হলো আয়নায় মুখ দেখার স্কোপ ও পায়নি, কোনরকমে হাত মুখ ধুয়ে রাতের কুচকানো ম্যাক্সি পরে চলে এসেছে, চোখে মুখে ঘুম আর বিরক্তির ছাপ ।
কি ব্যাপার তোমার বন্ধু বলল তুমি খুব অসুস্থ, এই বুঝি তোমার অসুস্থতার নমুনা, রাগে তার মুখ লাল হয়ে আছে l
অসুস্থ ই তো আমি তোমার বিহনে, এইযে গায়ে হাত দিয়ে দেখো অনেক জ্বর । বলে আয়েশার হাত নিয়ে তার বুকে রাখল ।
রাগে আয়েশার মাথায় আগুন ধরে গেল, তার বন্ধুরা ও হাসতে সুরু করলো , সে ধাক্কা দিয়ে মাসুম কে সরিয়ে দিল , তুমি যখন ভালো আছ তো আমি গেলাম,
আয়েশা কে সত্যি সত্যি চলে যেতে দেখে তাড়াতাড়ি এসে মাসুম পথ আটকালো
প্লিস আয়েশা আজকে শেষ দিন, আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবনা, আমার মায়ের জন্য তোমাকে ডেকেছি l সামনের রুম টাতে যাও, ওখানে কিছু কাপড় অরনামেন্টস আছে তুমি আমার মাকে সাজিয়ে তুমি চাইলে সাজতে পারো, আমরা সবাই মিলে রেজিস্ট্রি অফিস যাব, তারপর একটা রেস্তুরেন্ট এ খাওয়ার পর তোমাকে আমি নামিয়ে দিব, প্রমিস । আজকে আমার মায়ের বিয়ে ।.
মায়ের বিয়ে মানি এরকম বিদঘুটে কথা আয়েশা জীবনে প্রথম শুনলো এ পুরা পাগল মনে হচ্ছে , কখন এই পাগল এর হাত থেকে রেহাই পাবে আল্লাহ ই জানে।
অজয় আঙ্কেল প্রায় দৌড়ে ঘরে ঢুকলো
ব্যাপার কি মাসুম, তিনি উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন
হট্রগোল এর শব্দ পেয়ে নীলিমা বের হয়ে আসল ভিতরের রুম থেকে ,সবাইকে দেখে খুব অবাক
জয় কি ব্যাপার ? তুমি ঠিক আছ তো ?
এটা তো আমি জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি নিলি তোমরা ঠিক আছ? মাসুম আমাকে ফোন করে ইমার্জেন্সি বলে আসতে বলল ।
মাসুম কেশে গলা পরিস্কার করে বলল আজকে জয় আর নিলি র বিয়ে আমাদের দাওয়াত বলে একটু হাসলো .।
অজয় আঙ্কেল হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো, নীলিমা র মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল, ছেলে র পিঠে জোরে থাপ্পর দিয়ে বলল ” পাজি ছেলে মায়ের সঙ্গে এরকম ফাজলামি করে কেউ।
মা তোমার মা বাবা বেচে নেই, তোমার বিয়ের দায়িত্ব ছেলেকে নিতে হবে ।
অজয় আঙ্কেল হা হা করে জোরে হাসতে সুরু করলো , মাসুম এর পিঠে চাপড় দিয়ে বলল
নিলি এরকম একটা ছেলে সত্যি তোমার নিজেকে লাকি মনে করা উচিত , তুমি দেখছ কোনো ছেলে মাকে এরকম বন্ধুর মত ফীল করতে । সো পিচফুল
ওকে মাসুম তুমি চাইলে আমরা অবশ্যই বিয়ে করব, এখন না তোমার বিয়ের পরে, বলল চাচা হেসে ।
আমার এখন বিয়ের বয়স হয়নি আর আপনাদের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বলল মাসুম টিপ্পনির সুরে ।
চাচা আবার হা হা করে জোরে হেসে উঠলো ।
মাসুম কে ডেকে কানে কানে বলল শোনো আমার কোনো আপত্তি নাই তোমার মা যদি রাজি থাকে .
যত সব পাগলদের কান্ড বলে নীলিমা ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল , আয়েশার কোনো সন্দেহ নাই এ ব্যাপারে , তবে এইমাত্র আয়েশার চোখে নতুন একটা জিনিস ধরা পড়ল , মাসুম তার মাকে অনেক বেশি কেয়ার করে বুঝা গেল , এই প্রথম মাসুম কে শুধু বেশি কথা বলা ফালতু ছেলে বলে উড়িয়ে দিতে পারলনা ।
এরপর প্রতি মুহূর্ত আবার নুতুন করে যেন আবার আয়েশার জীবনে প্রেমের প্লাবন এনে দিল, সে মনে করেছিল তার প্রেমে ভাটা পড়ে গেছে , আসলে প্রেম টা সুপ্ত অবস্থায় ছিল , যতবার ই মাসুম তার দিকে তাকিয়ে হাসলো সে আগের মত ফীল করলো যখন তারা পরস্পরকে ছাদ থেকে দেখত প্রেমের প্রথম দিকে ।
তার মনে এখন অনুশোচনা আসতে লাগলো মাসুমকে এতদিন অবহেলা করার জন্য l মাসুম এর হৃদয় এর পরিচয় পেয়ে তার ভিতর টা ভরে গেল, গাড়িতে যেতে যেতে সে দেখল মাসুম মায়ের হাত ধরে কাধে মাথা দিয়ে বসে আছে , এমনকি সে এখন আয়েশা র উপস্থিতি ভুলে গেছে মনে হচ্ছে । আয়েশা কি কোনদিন তার মাকে এত টা ভালোবেসেছে।
গাড়ি এসে থামল রেস্তুরেন্ট এর সামনে, সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামল , আয়েশা নামতে গিয়ে একটু হেলে পড়তে নিলে মাসুম এসে শক্ত হাত দিয়ে ধরে ফেলল ।
আয়েশা লজ্জা পেয়ে মাসুম এর দিকে তাকিয়ে হাসলো, তার হাসি বলে দিল তার মন আবার মাসুম এ ঠাই করে নিয়েছে ।
মাসুম এর তাই মনে হলো, কৃতজ্ঞচিত্তে ভালবাসার চোখে আয়েশার দিকে তাকিয়ে থাকলো. পুরানো কষ্টের কথা আর তার মনে রইলো না ।
২| ২১ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩১
আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।শুভেচ্ছা রইল।ভাল থাকবেন।
৩| ২১ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
আমারে তুমি অশেষ করেছ বলেছেন: প্রেমের টানাপোড়েনের গল্প ভালই লাগল। খুব সংক্ষেপে শেষ করে ফেললেন বলে মনে হল।
৪| ২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫
হামিদ আহসান বলেছেন: ভাল লাগল প্রেম-বিরহ-মিলনের গল্প। এক কথায় সুন্দর গল্প। ধন্যবাদ লেখিকাকে....................
৫| ২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৩
আরজু মুন জারিন বলেছেন: সংক্ষেপ করলাম এই কারনে বড় লেখা ব্লগে পড়তে চায়না অনেকে।
৬| ২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৫
আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ আমারে তুমি অশেষ করছ কমেন্টসের জন্য।শুভেচ্ছা রইল।
অশেষ না শেষ।এমন আইডি উচ্চারন করতে সমীহ বোধ করি।
৭| ২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
আরজু মুন জারিন বলেছেন: ধন্যবাদ হামিদ ভাই মন্তব্যের জন্য।
"হামিদ ভাই যেখানে
আমি আছি সেখানে"।ভাল থাকবেন।শুভেচ্ছা রইল।
৮| ২২ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী পটভূমির একটি গল্প।
সন্তান যে কতভাবে মায়ের ঋণ শোধ দেবার চেষ্টা করতে পারে তার একটি নমুনা পেলাম।
ভালো লেগেছে সব মিলিয়ে।
৯| ২২ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৭
আরজু মুন জারিন বলেছেন: মইনুল ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।পাশে পেলে ভীষন কৃতজ্ঞ হই।অনেক শুভেচ্ছা/ভাললাগা মন্তব্যে।ভাল থাকবেন।
(কোন রকম একটা লেখা।ঠিক ভাল লেখা বলা যাবেনা।তবু আপনার মন্তব্যে বেশ সন্মানিত বোধ করলাম।)
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:২২
রাশেদ আহমেদ শাওন বলেছেন: ভালো লাগল