নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

Mass Film এবং ‘জওয়ান’ মুভির সাফল্যের রহস্য উন্মোচনে কিছু কথা

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১:৩২



‘Mass Film/Entertainment (গণবিনোদন)’ দীর্ঘ সময় ধরে নিচু স্তরের/মানের বিনোদনের উৎস হিসেবে মেনে আসা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে যে, ‘Mass’ এন্টারটেইনমেন্ট এবজার্ড (অনর্থক) এবং ননসেন্স। এই ধরণের যে কোনো নাটক বা সিনেমা একটি ভীড়ের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হয় এবং ঐ ভীড় ঠিক করে দেয় সেটা কতটা ভালো হবে অথবা কতটুকু ব্যবসা সফল হবে। এখানে শুধুমাত্র ঐ ভীড় কি দেখতে চায়, ঐ ভীড়ের যে স্বপ্ন আছে, ঐ ভীড়ের যে ক্ষোভ, ভালোবাসা, আনন্দ বা কষ্ট ইত্যাদি আছে তা অপ্রকাশিত হলে প্রকাশিত রুপে সামনে নিয়ে আসা হয়।

‘Mass Media/Entertainment’ মূলত TRP/Box Office Collection এর উপর নির্ভর করে চলে। তাই কনজিউমার বিহেভিয়ার (ভোক্তার আচরণ) খুব ভালো ভাবে রিডিং করা জরুরী হয়ে পড়ে এবং তা থেকে যেটুকু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় ‘Mass’ সেটাই উপস্থাপন করে থাকে। ‘Mass Film’ এর উদ্দেশ্য নয়, ওটা কতটুকু ভালো শিল্প বা ঐ শিল্পের দ্বারা অদৌ কোনো বার্তা সমাজকে দেওয়া সম্ভব হলো কিনা!

আপনি যদি সাম্প্রতিক ডার্ক গ্যাংস্টার মুভিগুলো দেখেন তাহলে আরো পরিষ্কার হতে পারবেন। বিশেষ করে দক্ষিণী ভারতীয় ‘KGF: Chapter Two’, ‘Pushpa’, ‘Vikram’ ইত্যাদি মুভিগুলো অনেকক্ষেত্রে প্রায় পুরোটাই এবজার্ড এবং ননসেন্স দৃশ্যে ভরপুর।

এখন আপনি যদি এই ধরণের মুভি ভক্তদের বলেন, “ভাই, কেমন ছিলো মুভিটা?” হয়তো তিনি বলবেন, “অসাধারণ ভিএফএক্স, দুর্দান্ত মারপিট!” কিন্তু আসলে তিনি কি দেখলেন! কেন দেখলেন? তার উত্তর আমি অন্তত গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি যে, ৯৯.৯৯% শতাংশ উত্তর দিতে পারবেন না। কেউ কেউ শুধুমাত্র উপনিবেশিক ভাবনার বিষয় আছে এই বলে কথা শেষ করবেন। মূলত, এসব মুভিতে কিছুই ছিলো না যা আপনার মস্তিষ্ক কে উর্বর করতে কিছুটা হলেও সক্ষম।

আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন তৈরির ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনগুলো আমার দৃষ্টিতে সেরা। একটি বিজ্ঞাপনে জেলের ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় A+ পায়। যখন ছেলেটি খবর পেয়েছে তখন তার বাবা তার পাশে নেই। তিনি নদীতে মাছ ধরবার জন্য ব্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ করে গ্রামীণফোন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে খবরটা তার বাবার কাছে পৌঁছাতে পেরে চরম আনন্দিত, পুলকিত, চোখে তার জল।

এখানে মূলত জেলের জীবনের সাথে গ্রামীনফোন বা কোনো কোম্পানির নেটওয়ার্ক এর সরাসরি তো দূর কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নাই। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন সে সময় এত হিট ছিলো যে, আমাদের চোখেও জল আনতে বাধ্য করেছে, আজও করছে। তাহলে এই বিজ্ঞাপন এবজার্ড কীভাবে? ননসেন্স কীভাবে?

দেখুন, এই টিভিসি টিম খুব ঘনিষ্ঠভাবে জেলেদের জীবন, তাদের জীবনযাপনের মান অর্থে দৈনিক রুটিন, তাদের কথা বলার ধরণ, তাদের ঘরবাড়ির আকৃতি, যোগাযোগ ইত্যাদি খুব ভালোভাবে প্রথমে স্টাডি করেছেন। দ্বিতীয়ত, একটি সিম কার্ড বা নেটওয়ার্ক ক্যানেকশন বাংলাদেশে স্থাপন মানে সেখানে কৃষক/জেলে/দিনমজুর নিশ্চয় থাকবে। ফলতঃ ওরা যা দেখিয়েছে সেটি ভিন্ন কিছু নয়, ওটা আমরাই দেখতে চেয়েছি। ওরা যে প্রজেকশন ও স্বপ্ন আমাদের মনের মধ্যে গ্রথিত করেছে সেটা আমাদেরই সুপ্ত বাসনা বৈ ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমাদের কাছে নতুন যোগাযোগ বা দ্রুত যোগাযোগ করার চেয়ে মুঠোফোনে তখন ‘হ্যালো’ না বলতে পারার যে আক্ষেপ, যা শুধুই অভিজাত্যের প্রতীক বা যা সহজলভ্য নয় তার প্রতি এক বিশেষ ধরণের আকর্ষণ কাজ করে চলতো। আজও অনেক বাংলাদেশিদের মধ্যে সেটি কাজ করে।

সুতরাং গ্রামীণফোনের টাকা আছে ওখানে যোগাযোগ স্থাপন করার আর খরিদ্দার আমি/আপনি। একসময় টেলিভিশন ছিলো না, আবার কিন্তু আমাদের মধ্যে টেলিভিশন না থাকার অভাব ছিলো না। একসময় হাতে হাতে স্মার্টফোন ছিলো না, আমাদের স্মার্টফোন না থাকার জন্য আক্ষেপ হত না। এমন করে হাজার রকম/ধরণের প্রোডাক্ট/সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করছি আমরা যা কনজিউমার বিহেভিয়ার (ভোক্তার আচরণ) কে ম্যানিপুলেট করা। সামান্য সময়ের জন্য ভাবুন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা জেলে সমাজে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন না করলেও ওদের জীবন ঠিকই চলতো, নতুন করে পকেট কাটার যে সিস্টেম তা নিয়ে তর্ক করা যায়।

এতক্ষণ এতসব বিষয় নিয়ে বকবক করবার কারণ হচ্ছে ‘জওয়ান (Jawan)’ মুভির বিশাল ব্যাপকতা এবং সফল হবার পেছনের রহস্য উন্মোচন করার জন্যে। এবং বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান শুধু একজন অভিনেতা নন; তাঁর ক্যারিশমাটিক চিন্তা চেতনা পুরো ‘Mass’ কে একেবারে পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছে। ভীড় কে ভেড়া না মনে করে তাদের কে একটি ‘Mass Film’ এর মাধ্যমে একাধিক বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন।

১. ভারতে কৃষকদের আত্মহত্যা একটি নির্মম এবং চলমান ঘটনা।
২. ঋণ খেলাপি এবং ‘Crony Capitalism’ নিয়ে ঝেড়ে কাশা যেটা একজন সুপারস্টারের পক্ষে বলা অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু এই মুভিতে সেটা বলায় কোনোরূপ ভয় বা শঙ্কা দেখা যায় নি। টার্গেট করেছেন আদানি’র মত মানুষদের।
৩. দুর্নীতি এবং মূর্খ রাজনৈতিক নেতা।
৪. মাদক নিয়ে সাম্প্রতিক বিশাল কান্ড সেদেশেই ঘটেছে। কালি রুপে বিজয় সেতুপতি এই ভূমিকা পালন করেছেন। ঘটনাটি গুজরাটের।
৫. আঙুলের সহী ইস্তেমাল। মানে ভোট এবং গণতন্ত্রে অধিক চিন্তাশীল মানুষের প্রয়োজন আছে।
৬. মানুষের ধর্ম দেখে বা জাত দেখে ভারতে বর্তমানে কে ভোট চাইছেন সেটা আমাদের কারোরই খুব বেশি অজানা নয়, যেটা করতে নিষেধ করেছেন।
৭. ভারতের বা উপমহাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই নড়বড়ে। কিন্তু অক্সিজেন সংকট নিয়ে যে একজন মুসলিম ডাক্তার উত্তর প্রদেশের একটি হাসপাতালে এভাবেই অপমানিত হয়েছিলেন তার প্রায় হুবহু উপস্থাপন সহজ ছিলো না।
৮. এমনকি বাদ যায় নি ছেলের মাদক কান্ডের বিষয়টিও।

সব মিলিয়ে না জানি আর কি কি উপাদান আছে তার বিশাল তালিকা আমি দিতে পারি। এই সবকিছুই সাধারণ কে সাহস জোগায় যা তারা কোথাও না কোথাও মনের গভীরে সুপ্ত রেখে চলেছে। কিন্তু দিনশেষে স্বীকার করতেই হয়, সর্বশেষ স্টার শাহরুখ খান এবং বাংলাদেশে আমি অন্তত হিন্দি মুভি মুক্তি দেবার পক্ষে নই। তার একটি বড় কারণ ভারতীয় মুভির উগ্র জাতীয়তাবাদ আমার অসহ্য লাগে; ভাষা নিয়ে অন্য একদিন। ধন্যবাদ

ছবি: Hindustan Times

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:০২

ধুলো মেঘ বলেছেন: ভারতীয় মুভির উগ্র জাতীয়তাবাদ আপনার অসহ্য লাগতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে শাহরুখ খানের এক শ্রেণীর ভক্ত শ্রেণী আছে, শাহরুখ এই দেশে এক রাত থেকে গেলেও পরদিন তার থাকার কক্ষ সংলগ্ন বাথরুমে গিয়ে হানা দেবে যে ভক্তদের জন্য কমোডে ফ্লাস না করে কিছু রেখে গেল কিনা।

এই ভক্তদেরকে কেমন লাগে?

১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৮

মি. বিকেল বলেছেন: অন্তত তারা কোনো রাজনীতিবিদের ভক্ত নন, তাই বিরুক্ত লাগে না।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পর্যবেক্ষন সঠিক।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৮

মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রিয় ব্লগার!

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: বিনোদন ভক্তদের জন্য শাহারুখের দরকার ছিলো।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৯

মি. বিকেল বলেছেন: নিশ্চয়, নতুবা শূন্যতা থেকে যেত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.