নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,

নাহিদ২৯

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখ...।

নাহিদ২৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব -৩

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০



মুল লেখকঃ কমান্ডার হাসান জামান খান



আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব- ২



UN FORCES HEADQURTERS এ দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পন্ন করার ধারাবাহিকতায় TRANSPORT SECTION এ হাজির হয়েছিলাম। গাড়ী চালনায় কতখানি পারদর্শী তা ইউ এন বিশেষজ্ঞগন পরীক্ষা করে দেখবেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হলে যে পারদর্শী গাড়ী চালক হতে হবে এ তথ্য আমার পূর্বেই জানা ছিল। গাড়ী চালনার উপর ১৯ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা ! যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক সে মুহূর্তে আমার একজন সহকর্মী জানতে চাইলো, ১৯৯৩ সনে লাইবেরিয়াতে ইউ এন থেকে প্রাপ্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সটি কোথায়? ভাগ্যিস, সৃতি হিসেবে লাইসেন্সটি বিগত ১৮ বছর ধরে খুব যত্ন সহকারে সংরক্ষন করছিলাম। কে জানতো, ওই লাইসেন্সই এমন মুহূর্তে আমার পরম বন্ধু হবে । যা হোক পরীক্ষকদের বিষয়টি জানাতেই বলল s'il vous plaît prendre votre siège. (সিলভু প্লে প্রেন্দে ভতর ছিইয়েজ), অর্থাৎ অনুগ্রহ করে আপনার আসন গ্রহণ করুন। যথারীতি অপেক্ষা করছিলাম। কিছু সময় না যেতেই আমার চোখেমুখে আনন্দের ঝলকানি। একজন চটপটে ভদ্রমহিলা কাছে এসে বললো আপনাকে পরীক্ষা দিতে হবে না, এই নিন আপনার লাইসেন্স । “মেরছি বকু, মাদাম” (অসংখ্য ধন্যবাদ , ম্যাডাম ) বলতেই মহিলার মুখে হাসি। সাথে সাথে ছুটে গেলাম প্রশাসনিক দপ্তরে, লাইসেন্স প্রাপ্তির কথা বলতেই হাতে ধরিয়ে দিল টীম সাইটে যাবার বদলী আদেশ। ঐ মুহূর্তে আনন্দ, শঙ্কা ইত্যাদি নানা বিষয় মনে দারুনভাবে ভর করছিলো। যেতে হবে আবিদজান শহর থেকে ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে, বুরকিনা ফাছো- আইভরি কোস্ট সীমান্তে। আইভরি কোস্টের মিশন এলাকায় সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে কাজ করছে অন্যান্য প্রায় ৪২টি দেশের সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনীর অফিসারগণ। ফেরকে টীম সাইটের ১০ থেকে ১২ জন ভিনদেশী অফিসারের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে । যেতে যখন হবেই তখন আর দেরী কেন? পরের দিন সাতসকালে সড়ক পথে যাত্রা শুরু। সঙ্গী ছিল উরুগুয়ে সেনাবাহিনীর আর রুমানিয়ান নৌবাহিনীর লেফটেনান্ট কর্নেল পদবীর দুজন চৌকশ অফিসার। গন্তব্যস্থল ফেরকেসেদুগু । অচেনা পথে গাড়ী চলছিল ১০০ কিমি গতিতে। শহর ছেড়ে কিছুদুর যেতেই ভিন্ন চিত্র। পাহাড় ঘেঁষে চারদিক জুড়ে সবুজ আর সবুজ । কিছুদুর পর পর রাস্তার দু ধারে ফলফলাদির বাগান আর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। আম, কলা, পেপে, নারিকেল, তাল, আখ, আনারস আরও কত কি? এ ছাড়া যতদুর চোখ যায় শুধুই গহীন জঙ্গল। রাস্তার দু পাশে তেমন কোন জনবসতি নেই বললেই চলে। হাইওয়েতে গাড়ীর সংখ্যা হাতে গুনেই বলা যায় । তবে কয়েক মাইল পর পর দেখা যায়, পাশাপাশি অবস্থান করছে দু - চারটি কুড়েঘর । যতই পথ অতিক্রম করছিলাম ততই যেন জনমানবহীন গ্রামগঞ্জের চিত্র ফুটে উঠছিল। চমৎকার রাস্তা পেয়ে গাড়ীতে গান চালিয়ে দিলাম, “পিচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি, তার সাথে এই মনটারে বেধে নিয়েছি” ।

ভিনদেশী সঙ্গী দুজন গানের কথা বুঝতে না পারলেও তাঁদের অঙ্গভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল বাংলা মিউজিক আর হৃদয়ছোঁয়া গানের সুর খুব ভালোভাবেই উপভোগ করছে । প্রশ্নের জবাবে জানতে পারলাম দেশটির আয়তন ৩২২,৫০০ বর্গ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় আড়াই গুণের মতো । জনসংখ্যা প্রায় ২০ মিলিয়নের মতো, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার আট ভাগের এক ভাগ। সঙ্গী অফিসারদের বাংলাদেশের আয়তন আর জনসংখ্যার কথা বলতেই তাঁদের ভুরু কুচকে চোখ কপালে উঠে গেলো । এক কথায় বললো ABSURD. কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। যা হোক, আইভরী কোস্ট নিয়েই বলি, এ দেশে ঋতু দুটি, গ্রীষ্ম এবং বর্ষা। বছর জুড়েই চমৎকার আবহাওয়া । রাজধানী দুটো। অর্থনৈতিক রাজধানী আবিদজান আর রাজনৈতিক রাজধানী হলো ইয়ামুসুক্র । এছাড়া বুয়াকে, দালোআ, মান, সান পেদ্র হলো বড় বড় শহর । অন্যান্য ধর্মালম্বীর পাশাপাশি মুসলমানের সংখ্যা কোনোঅংশে কম নয়। চার্চ ছাড়াও সারা দেশ জুড়ে আছে কারুকাজ খচিত অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ । জুম্মার দিন মসজিদে স্থান পেতে হলে নামাজের কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে হাজির হতে হয়। আইভরী কোস্টে প্রায় ৬০ টি ETHNIC GROUP থাকলেও আকান, ক্রউ, উত্তর মান্দে , দক্ষিণ মান্দে, সেনউফু এই পাঁচটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। দাপ্তরিক ভাষা ফরাসী। তবে গ্রামাঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষার বেশ প্রচলন আছে। প্রতিবেশী দেশের নাগরিকসহ বহু সংখ্যক লেবানিজ এবং ফরাসীদের বসবাস এ দেশে। নানা কথা বলতে বলতে প্রায় চার ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে যাত্রা বিরতি। দীঘির পাড়ে দাড়িয়ে নিজ আঙ্গিকে কিছু ছবি ক্যামেরায় বন্ধী করছিলাম। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি ও রে বাবা ! দীঘির পাড় জুড়ে বিশাল বিশাল কুমির। একসাথে এতোগুলো কুমির এর আগে কখনো আমি দেখি নি। সংখ্যায় গুনে শেষ করা কঠিন ব্যাপার। সময়ের তাড়া ছিল বলে আবার পথ চলা, অন্ধকার নেমে আসার আগেই গন্তব্যস্থলে পৌছতে হবে। প্রথম কদিন নিরাপত্তা নিয়ে আবিদজান শহরে তেমন একটা চিন্তিত ছিলাম না তবে যাত্রা পথে চারদিকের যে চিত্র ফুটে উঠছিল তাতে একটু একটু করে শঙ্কিত হতে লাগলাম। ভিনদেশী সঙ্গীদের চোখেমুখেও যে ভীতির ছাপ পড়ছিল তা আমার নজর এড়াতে পারে নি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

েবনিটগ বলেছেন: ==++

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৭

নাহিদ২৯ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.