নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কলোসিয়াম ছাড়া রোমান ইতিহাস অসম্পুর্ণ। অলিম্পিক ছাড়া গ্রীক সভ্যতাও খোলনলচে অজানা। তেমনি আজ থেকে একশো বছর পরে টি২০ ছাড়া ক্রিকেটও দ্যূতিহীন নক্ষত্রের মতো—নাকি এখনই, কে জানে !
‘টাইম ট্রাভেল’ থাকলে একবার ঘুরে আসতে পারেন ষোড়শ শতকে। দেখবেন শ্বেত-শুভ্র পোশাকে ‘রেড চেরি’ আর ‘উডেন টিম্বার’ নিয়ে খেলছেন কেতা-দুরস্থ ইংরেজরা। তখনকার ‘ক্রিকেট’ ছিল অবসরযাপনের অনুসঙ্গ। কিন্তু এখন মানুষের দৈনন্দিন কর্মব্যস্ত সময়েরও দখল নিয়েছে খেলাটি। ক্রিকেটে কেউ আবেগবাদী, কেউ আবার বাস্তববাদী ; কিন্তু এ দুই ঘরানারই অপেক্ষা থাকে, পরের বলে কি ঘটবে ? মজাটা হলো, এ অপেক্ষাতেই লুকিয়ে টেস্ট আর টি২০-ফরম্যাটের পার্থক্য।
টি২০’তে হয় চার-ছক্কা, ডাবলস, সিঙ্গেল নতুবা আউট। টেস্টে এসব তো থাকছেই, সঙ্গে ধৈর্য্য আর প্রখর ধী-শক্তির নমুনাটাও দেখাতে হয়। প্রতিটি বলই টিকে থাকার কিংবা উইকেট নেয়ার পরীক্ষা। আর তাই প্রতিটি সেশনই গোটা নাটকের একেকটি রোমাঞ্চকর অঙ্ক। এ কারণে টেস্টের আবেগ সুগভীর এবং স্থায়ী। বিপরীতে টি২০ গতিময় বিনোদনের পসরা। টেরি জেনার বলে গেছেন-‘পপকর্ণ ক্রিকেট’। লোলিত মোদীর চোখে-‘ক্রিকেটেইনমেন্ট।’
ধরুন, আপনার প্রিয় দল ২০ ওভারে ২০০ রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং ধ্বসের শিকার হলো। বাকি ১০ ওভারে প্রয়োজন ১০০ রান, হাতে ৪ উইকেট। কোন আশা আছে ? সবচেয়ে পাঁড় ভক্তটিও হয়তো আশা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু ওয়ানডে হাতে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ ৩০ ওভারে ২০০ রান তাড়া করে জয়ের নজির আছে। এসব অতিমানবীয় ব্যাপারকে ঘিরেই আবেগ খেলা করে ভক্তদের মনে। এবার টেস্টের ক্ষেত্রটা বিচার করে দেখুন, সেখানে লড়াই হয় সেশন ধরে ধরে, বোলারদের প্রতিটি ডেলিভারির নিশানা উইকেট শিকারের জন্য। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে হিসেবটা ঠিক উল্টো, অর্থাত্ ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র’ উইকেট। আর তাই টেস্টে বোলার আর ব্যাটসম্যানের লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা একেবারেই মৌলিক—সামর্থ্যের চ্যালেঞ্জ। এ কারণে মাঝে-মধ্যেই ড্র টেস্টেও রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে বসে ক্রিকেট। টেস্টে এমন অনেক ড্র ম্যাচ আছে, যা মনে করে আবেগমথিত হয়ে পড়েন অনেক স্মৃতিমেদুর রসিকজন।
টেস্ট সত্যিকার অর্থেই ক্রিকেটীয় সামর্থ্য প্রমাণের ফরম্যাট। এখানে উইকেটে সেট হওয়ার পর ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন একজন ব্যাটসম্যান। আস্তিন থেকে বাহারী সব স্ট্রোক বের করার আগে ম্যাচের গোটা পরিস্থিতি বুঝে নিতে হয় ব্যাটসম্যানকে। এ কারণে টেস্ট ক্রিকেট বেশ ধীর এবং চঞ্চলমতি দর্শকদের জন্য অনেকক্ষেত্রেই বিরক্তিকর। কিন্তু টেস্টে দ্বিতীয় দিন সারাদিন ব্যাট করা প্রতিপক্ষ দলের দুই ব্যাটসম্যানকে তৃতীয় দিন সকালের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরতে দেখার আনন্দটা শুধুই একজন সত্যিকারের ক্রিকেটভক্তের। টি২০’তে একজন বোলারের সুযোগ মাত্র ৪ ওভার। এর মধ্যেই ঝুলির সব বিদ্যে জাহির করতে হয়, যা অসম্ভব এবং ম্যাচের আবহ বিচারে অনুচিত। কারণ এ ফরম্যাটে রান কম দেয়া মানেই জয়ের সম্ভাবনা।
ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। তাদের হাতে প্রথম বল থেকেই চালিয়ে খেলার লাইসেন্স। অনেকটাই, হয় ছক্কা নয় ফক্কা। আর তাই টি২০ ক্রিকেট উদ্ভাবনী শক্তির আধার। স্কুপ, সুইচ হিট, রিভার্স সুইপ...আরও আসছে। ম্যাচের পরিস্থিতি আর টেকনিক বিচারে শটগুলো কখনো কখনো অপ্রয়োজনীয় আর দৃষ্টিকটু মনে হলেও রান তো আসছে? মূলত এই ‘রান আসা’ ব্যাপারটাই টি২০ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়েছে এতটা সামনে। দর্শকেরা মাঠে যান কি দেখতে ?
আর তাই প্রথম বলেই ‘দিলস্কুপ’ খেলেন দিলশান। স্রেফ রান বাঁচাতে প্রথম বলটাই হতে পারে ‘ফিফথ স্ট্যাম্ক’ বরাবর ইয়র্কার। সেটাও আবার পিটারসেন-ওয়ার্নাররা ‘সুইচ হিট’ করে গ্যালারীতে পাঠাবেন ! আবেগের ব্যারোমিটারে তাই প্রবল চাপ। তারপরও এসব মহিমা ক্ষণস্থায়ী। কারণ একটা ভাল শট দেখার ঠিক পরের বলেই অনর্থক, অদ্ভুতুড়ে কায়দায় আপনার প্রিয় ব্যাটসম্যানটিকে আউট হতে দেখতে ভালা লাগার কথা নয়। তিন ঘন্টার ‘পপকর্ণ’ তাই পেটে বেশিক্ষণ থাকেনা।
বাস্তবতা হলো, বেশিক্ষণ পেটে না থাকার একটা সুবিধেও আছে। দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে নিয়মিত ক্রিকেট দেখার সুযোগ। গত এশিয়া কাপের কথাই ভেবে দেখুন-অফিস সেরে গ্যালারীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ম্যাচ দেখেছেন অনেকেই। যুগ বিচারে সময়টা এখান অনেক বড় ‘ফ্যাক্টর’। আর তাই বেশি-বেশি চার-ছক্কার এই ক্রিকেট ঘিরে ভক্তদের স্মৃতির ভাঁড়াড় খুব বেশি সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। হ্যাঁ টুপটাপ করে রেকর্ড ভাঙ্গছে ঠিকই কিন্তু নেই ফলো-অন থেকে ম্যাচ বাঁচানো একটা লম্বা ইনিংস দেখার সুযোগ, নেই দুই সেশন একই লেংথে একটা ব্যাটসম্যানকে খেলিয়ে শেষ সেশনের প্রথম বলেই ভিন্ন লেংথে উইকেট শিকারের ব্যাখ্যাতীত আনন্দ ! টি২০ তাই হতে পারে ‘অ্যাড্রেনালিন রাশ’, কিন্তু আগে টেস্ট পরে ওয়ানডে—এ দুই ঘরানার জমিনেই লুকিয়ে ক্রিকেটীয় আবেগের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
ওয়ানডেতে তাও ইনিংস গড়ার সুযোগ আছে, যার সর্বোচ্চ বিকাশ দেখা যায় টেস্টে। পাঁচদিনের ফরম্যাটে প্রতিটি উইকেটই অমুল্য। আর তাই ব্যাটসম্যানের বল ছাড়াও পুর্ণ মনোযোগের সঙ্গে দেখে থাকেন একজন টেস্ট দর্শক। এ কারণে ম্যাচের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশও ছুঁয়ে যেতে পারেন তারা। মনে দাগ কেটে থাকার সুযোগটাও তাই টি২০’র তুলনায় বেশি। একজন দুঁদে ফাস্ট বোলারের সঙ্গে টেকনিক্যালি নিঁখুত ব্যাটসম্যানের লড়াই টি২০’তে ঠিক জমে না। উইকেট শিকারে পেসারদের ঘাতক ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কার অথবা রিভার্স সুইং ব্যবহারের সুযোগটা সীমিত। লাইনে গড়বড় হলে পাছে রান খরচা হবে জলের মতো ! স্কিনারদের ক্ষেত্রেও সমস্যাটা একইরকম। শুধু রান খরচায় কৃপণ হলেই যদি ‘ভাল বোলার’ হওয়া যায়, তাহলে ঝুঁকি নেয় কোন বোকা ?
তিনটি প্রশ্ন—নিজের কাছে সত্ থেকে বলুন তো, এই যে এত ক্রিকেট ম্যাচের চাক্ষুষ সাক্ষী আপনি, এর মধ্যে কোন ফরম্যাটের খেলা বেশি করে দাগ কেটেছে আপনার মনে ? কোন ফরম্যাটের ম্যাচগুলো আপনাকে আরও বেশি স্মৃতিমেদুর করে তোলে ? কোন ফরম্যাট গড়ে দিয়েছে আপনার ক্রিকেটীয় মননের ভিত্তি ? জবাব না দিলেও চলবে। ক্রিকেটের সুপ্রাচীন ইতিহাসেই এসব প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে, যেখানে ভাঙ্গা হাত নিয়ে ব্যাটিং-বোলিং করে টেস্ট জিতিয়ে ‘অমর’ ম্যালকম মার্শাল। ইতিহাসের সেসব পাতায় আজও পর্যন্ত ব্যাখ্যা মেলেনি ’৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ক্লুজনার-ডোনাল্ডের সেই পাগলাটে দৌড়ের কার্যকারণ। বাস্তবাদীরা বলবেন, এসব তো আবেগতাড়িত ব্যাপার-স্যাপার। বটে ! এই যে এতসব মণি-মুক্তো খচিত ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে ক্রিকেট, তার বেশিরভাগই তো দলের প্রতি খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ আবেগ প্রকাশের ফসল ? পরবর্তিতে ভক্তরা তা বুকে ধারণ করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। টেস্ট আর ওয়ানডের এ পথ পর্যন্ত আসতে এখনো অনেক দেরি টি২০ ক্রিকেটের। আর তাই ‘বিশের বাঁশি’র সুর গতিময় হলেও আবেগ সামান্যই।
১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
নাছির84 বলেছেন: 'বিশের বাঁশি'----কেন তার উত্তরটা আপনি নিজেই লিখেছেন পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা...
২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০৩
বিজন রয় বলেছেন: জটিল লেখা।
+++
১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৯
নাছির84 বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা...।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: ওয়ানডে ক্রিকেট যখন এলো, তখনও কিন্তু তাকে নিয়ে সমালোচনা কম হয় নাই। টি টুয়েন্টিই ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। কিচ্ছু করার নাই। তবে টেস্ট টিকে থাকবে। ওয়ানডে ম্রা খেয়ে যাবে।
১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩০
নাছির84 বলেছেন: 'টি টুয়েন্টিই ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ'---কথাটা ধীরে ধীরে সত্য হওয়ার পথে থাকলেও আমি অন্তত কোনদিন মেনে নিতে পারবো না। কোনদিনও না...।
ওয়ানডেতে ইনিংস তৈরির সুযোগ আছে। টি২০ ক্রিকেটে আছে ? ওয়ানডেতে এক-দুই ওভার বোলিং খারাপ করেও ফিরে আসা যায়। টি২০ ক্রিকেটে সে সুযোগ আছে ?...এরকম হাজারো খুঁত আমি আপনাকে এই মুহূর্তে বলে দিতে পারবো হাসান ভাই। কিন্তু সহজ কথায় বলি---টেস্ট ক্রিকেট হলো আমাদের দাদাদের জেনারেশন, যখন সবকিছুতে পুত-পবিত্রতা বলে একটা ব্যাপার ছিলো। ওয়ানডে আমাদের বাবাদের জেনারেশন, যখন পুত-পবিত্রতা, নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে কিছুটা চটুল চাহিদাও যোগ হয় সময়ের প্রয়োজনে। শুধু ভারসাম্য থাকায় এ নিয়ে কখনো বিতর্ক ওঠেনি। উঠবেও না। আর টি২০ ক্রিকেট হলো বর্তমান জেনারেশন (সরি ; সবাই না তবে সিংহভাগ)....বাকিটুকু বুঝে নিয়েন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯
গেম চেঞ্জার বলেছেন:
লেখাটি ভাল হয়েছে।
বানানটা কি {‘বিশের বাঁশি’ < বিষের বাঁশি} হবে?
যেহেতু টি-২০ ফরম্যাট সেজন্য আপনারটাও ঠিক হতে পারে।