নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন মানুষ ।

দুর্গম পথের যাত্রী

দুর্গম পথের যাত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

U.S. Politics বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে নোয়াম চমস্কির সাক্ষাতকার

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৫১

অনুবাদকঃ জেমস সুজিৎ

ম্যাসাচুয়েট ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলোজির সাবেক অধ্যাপক এবং দার্শনিক নোয়াম চমস্কি বিশ্বের নেতৃস্থানীয় একজন চিন্তাবিদ। তার প্রতিটি কথাই দার্শনিক দম্ভে ভরপুর। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক রাজনৈতিক নীতিকল্প, ইরানের সাথে সমঝোতা এবং শরনার্থী সংকট নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এমরান ফিরোজ।

এমরানঃ বারাক ওবামার প্রেসিডেন্সীর সময়কাল প্রায় শেষ। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থা এবং কায়রোতে বারাক ওবামার ভাষণের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক তার সাধারণ নীতি কি?

চমস্কিঃ আমি মনে করি তার বক্তব্যে চিন্তাশীলতার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। আমি যেহেতু এই বক্তব্য থেকে কিছু আশা করি নি সেহেতু আমি তার বক্তব্যে হতাশ নই। তার নীতিমালার একটি ভালো দিক হলো যে, সেখানে ইরাক আক্রমণের মতো কোন ভয়ানক আগ্রাসন ছিল না, যা ছিল এই শতাব্দীর সবচেয়ে কলুষিত অপরাধ। আবার ইরানের সাথে যে সমঝোতামূলক আলোচনা হয়েছে সেটাও একটি ভালো দিক। ইরানের সাথে আলোচনা অনেক আগেই করা যেত তবে একেবারে না করার চেয়ে দেরিতে করাটা বোধহয় ভালো।
ইরাকে ওবামার প্রধান কীর্তি হলো তার ড্রোন ক্যাম্পেইন যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের নতুন পথ খুলে দিবে। আমি ভবিষ্যৎ বানী করছি যে এর প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত হবে। ড্রোন প্রযুক্তি শুধু ব্যাপক হারে বেড়েই চলবে না বরং ভবিষ্যতে অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী দলের জন্য এটা একটা সুবিধাজনক প্রযুক্তিতে পরিণত হবে। আরব বসন্তের সময়ে ওবামা এবং তার সমর্থনকারী গোষ্ঠীরা প্রতিষ্ঠিত একনায়কে সমর্থন করেছিল যতক্ষণ সম্ভব ঠিক ততক্ষন পর্যন্ত। আরো বলতে গেলে, তারা আন্দোলন শুরু হবার পরেও পুরনো ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।

এমরানঃ আমরা এখনো এই নৃশংস একনায়কতন্ত্র সিরিয়া এবং বিশেষ করে মিশরে দেখতে পাচ্ছি। আরব বসন্ত কি তাহলে সম্পুর্নরুপে ব্যর্থ হয়েছে?

চমস্কিঃ এটা বলা আসলেই একটু কঠিন। কিছু প্রগতি সম্ভব হয়েছে তবে আরও অনেক কিছুই করার বাকী আছে। এমন কিছু পরিবর্তন হয়েছে যা নতুন কোন কিছু সৃষ্টির জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মিশরে আরব বসন্তের পরে শ্রমিক আন্দোলন বেশ সাফল্য লাভ করেছে। মিশরের বহুবিধ সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয় ওই সিসি(Sisi) একনায়কতন্ত্রের পক্ষে। আমি মনে করি গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন দেশ হবার একটা ধাপ এটা যা অনেক দেশ ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে। সিরিয়ার ব্যাপারটি একটু আলাদা। দেশটি মনে হয় নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনছে। একটি সমস্যা মোকাবেলায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা সাথে সাথে আবার নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে।

এমরানঃ কোন দিক থেকে অ্যামেরিকার প্রশাসন সিরিয়ার অন্তঃস্ফোটনের জন্য দায়ী?

চমস্কিঃ এটা বলা কঠিন। তবে আসাদ’ শাসনতন্ত্রই অধিকাংশ দানবীয় নৃশংসতার জন্য দায়ী। IS হলো আরেকটি পৈশাচিকতা। আল-কায়দা সম্পৃক্ত আল-নুসরা ফ্রন্ট আই এস থেকে কোন অংশে কম নয় এবং আরও অনেক গ্রুপ এদের সাথে সম্পৃক্ত। নিজ অঞ্চল রক্ষায় কুর্দিশ দলগুলো সফল এমনকি তারা কিছু নিজস্ব সিস্টেমও গড়ে তুলেছে। আরও অনেক গ্রুপ আছে – স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী, যারা গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা আনয়নে ছোট ভুমিকা পালন করছে। তবে কোন দিক থেকে তারা এই প্রভাব সৃষ্টি করছে তা একটু বিতর্কিত। মধ্য-প্রাচ্যের সংবাদদাতা রবার্ট ফিস্ক দাবী করেছেন যে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। আবার কেউ কেউ বলেন অনেক দল আছে। এটা আসলে অনেক দলের একটা সংযোজিত অবস্থা। বর্তমানে কিছু ভালো লক্ষন দেখা দিচ্ছে যা সিজফায়ার অথবা সমঝোতার সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে। এটা হয়ত বাজে মনে তবে তবে আত্মহত্যার চেয়ে ভালো।

এমরানঃ আপনি ইতোমধ্যেই ইরানের সাথে চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। অনেকে মনে করেন এটা ওবামা প্রশাসনের একটি বড় সাফল্য আবার অনেকে মনে করেন এটি আরবের সুন্নি মুসলমানদের জন্য নিউক্লিয়ারাইজেশনের পথ খুলে দিবে। কেন আপনি মনে করছে এটি একটি সাফল্য?

চমস্কিঃ আমি মনে করি চুক্তিটি সফল তবে ইস্যুটিকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে একটু গলদ রয়েছে। পারমানবিক অস্ত্র মুক্ত অঞ্চল বিনির্মাণে ইরান, আরব এমনকি বৈশ্বিক যে মতামতের সংমিশ্রণ ঘটেছে তা সন্তোষজনক এবং একটি ভালো পদক্ষেপ। এটাই ওবামা সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমরা – অ্যামেরিকান ইন্টেলিজেন্স এখনো জানি না যে ইরান পারমানবিক অস্ত্র তৈরি করছে কি না! তবে আমরা অনেকটা নিশ্চিত যে ইরান তার পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। অন্যদিকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর যে কোন দেশ এই ক্ষমতা অর্জণ করতেই পারে। তারপরেও যে নিষেধাজ্ঞামূলক চুক্তি গৃহীত হয়েছে তা এক ধাপ এগিয়েই বলা চলে।

এমরানঃ সফলতার কথাই যদি বলি, তাহলে এটি ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনে কেমন অবস্থায় আছে?

চমস্কিঃ সেখানে আমাদের সাফল্য শূন্যের কাছে। যদি আমরা কাজের কথা ধরি তাহলে বলা যায় ওবামা প্রশাসন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বেশি সমর্থন যুগিয়েছে। সমগ্র বিশ্ব যেখানে অবৈধ স্থাপনা বিনির্মানের বিপক্ষে সেখানে আমেরিকা ইসারায়েলীয় সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। এখনো সেখানে অবৈধ স্তাপত্য নির্মানের জন্য কূটনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক এবং চিন্তাগত সমর্থনের অস্তিত্ব রয়েছে। ওবামার পদক্ষেপগুলোর মধ্যে যে কয়েকটি জনসমর্থন লাভ করেছে তার মধ্যে একটি হলো, ২০১১ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেওয়া প্রস্তাবে ভেটো প্রদান। প্রস্তাবটি আসলে আমেরিকান পলিসিকে সমর্থন করেই নির্মিত হয়েছিলো। প্রস্তাবনায় অবৈধ স্থাপনা হ্রাসকরণ সম্পর্কে বলা হয়েছিলো। তবে ওবামার ভেটোতে বলা হয়েছিল প্রস্তাবনাটি শান্তির জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তারপরেও আমরা বর্তমানে নেয়ানিয়াহু’র সাথে ইউ.এস এইড সম্পর্কিত বেড়ে চলা সমঝোতা আলোচনা দেখতে পাচ্ছি যা মূলত অবৈধ স্থাপনার বৃদ্ধিকেই উস্কে দিচ্ছে। আমেরিকার সহায়তায় ইসরায়েল গাঁজার উপরে নির্মম এবং আদিম হিংস্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এমরানঃ আমরা বর্তমানে ইউরোপে জাতীয়তাবাদ এবং কনজারভেটিভদের উত্থান দেখছি। এই ঘৃনাটি মূলত মধ্যপ্রাচ্য সৃষ্ট সংকট থেকে পালানো এবং ইউরোপে আশ্রিত শরনার্থীদের উপরেই বর্ষিত হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকেই একই রকম অবস্থা আমেরিকাতেও উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে। আপনি কি মনে করেন যে এই ঘৃণা সৃষ্টিকারী বাহিনী জয়লাভের দিকে যাচ্ছে?

চমস্কিঃ শরনার্থী সংকট বর্তমানে একটি চমকপ্রদ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, অস্ট্রেলিয়াতে, একটি নতুন নাজি বাহিনী রাজনৈতিক বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া খুব সামান্য সংখ্যক শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ইউরোপের অধুনা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সুইডেন, সর্বোচ্চ সংখ্যক, প্রায় ১৬০,০০০ শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। সুইডেন একটি ধনী রাষ্ট্র এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ১০ মিলিয়ন। সেই হিসেবে সুইডেনের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ১.৫ ভাগই শরনার্থী। তারপরেও দরিদ্র দেশ লেবাননের তুলনায় এটি খুবই কম এবং লেবাননের শরনার্থী নির্মানে কোন ভুমিকা নেই। বর্তমানে লেবাননে শরনার্থীদের সংখ্যা এর জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ এবং এর মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগই সিরিয়ার শরনার্থী। জর্ডানও অনেক শরনার্থীদের আশ্রয় প্রদান করেছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ইউরোপের তুলনায় এই দেশগুলো শরনার্থীদের আশ্রয়দানে অনেক এগিয়ে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই শরনার্থীরা কোথা থেকে আসছে? এদের বেশিরভাগ আসছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তবে কিছু আফ্রিকা থেকেও আসছে। ইউরোপের অনেক ইতিহাস আফ্রিকার সাথে জড়িয়ে আছে। শতাব্দীর পর শতাব্দি ধরে আফ্রিকা বিপর্যয় এবং ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে যে কারণে অনেক আফ্রিকান নাগরিক ইউরোপের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের অনেক ধরণ আছে তবে সেগুলোর মধ্যে ইরাকে ব্রিটিশ-আমেরিকান বহিরাক্রমণই প্রধান। কারণ এই আক্রমণ ভার্চুয়ালি দেশটিকে ধ্বংশ করে দিয়েছে। ইরাকীরা বহিরাক্রমের অনেক আগে থেকেই, বিশেষ করে সেই উপদলীয় দ্বন্দের পর থেকে শুরু করে এখনো পালাচ্ছে তাদের নিজ দেশ থেকে। একটু ভালো করে তাকালেই দেখা যাবে কিছু কিছু দেশ তাদের ইতিহাসের শুরু থেকেই হাজারো শরনার্থী সৃষ্টি করছে এবং এই দেশগুলোর মধ্যে ইউ.এস, ব্রিটেন এবং কিছু কিছু ইউরোপিয়ান দেশই প্রধান।
___________________________________________________
Qantara.de, August 3. নোয়াম চমস্কি ম্যাসাচুয়েট ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজির লিংগুইস্টিক বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরেই তিনি ইউ.এস এর রাজনীতির একজন স্পষ্টবাদী সমালোচক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.