নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক

মনের আবোলতাবোল চিন্তাগুলো সাজিয়ে গল্পে পরিনত করতে চাই। কখোনও গল্প হয়। আবার কখোনও হয় না। ভাল লিখতে জানি না।তবুও লিখি। কারন এটা শখ হয়ে গেছে। আরর এই শখ জেকে বসেছে।

পাবনার তাঁরছেড়া বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাকে বলে ত্যাগ

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:১৮

কাকে বলে ত্যাগ
.

.
জনাব বাপ্পি সাহেব অফিসে বসে আছে। ফাইলগুলোতে চোখ বুলাচ্ছে। বাপ্পিকে চোখ বুলাতে হয় মাঝেমাঝে। বাপ্পির কাজ ফাইলগুলোতে চোখ বুলিয়ে দেওয়া। প্রোমোশন পেয়ে আজ জনাব বাপ্পি এই অবস্থান এ।
.
একজন দরজার সামনে বলল
-স্যার আসতে পারি?
-হ্যা আসুন
-স্যার এই ফাইলটা সই করে দিতে হবে।
-আচ্ছা দিন।
.
জনাব বাপ্পি সাহেব ফাইলে চোখ বুলিয়ে বললেন
-হ্যা দেখলাম। অনেক টাকার লোন। ফাইল তো সই করবো। সামনে কোরবানির ঈদ বোঝেনই তো।
-ও নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আসিফ ভাই আপনার ঈদ বোনাস হিসেবে আশি হাজার টাকা পাঠিয়েছেন।
-মাত্র আশি হাজার!! এত টাকার ব্যাপার। আর মাত্র আশি হাজারে হয়।
-আচ্ছা। তাহলে কিছু বাড়িতে দিয়ে নব্বই হাজার দিয়ে দেই। এবারে কিন্তু না করবেন না প্লিজ।
-আপনাদের নিয়ে আর পারা যায় না। দিন সই করে দেই।
-এই যে।
.
ফাইলে সই করে দিয়ে জনাব বাপ্পি ভাবছে ঈদে কিছু কিনতে হবে। ছেলে-মেয়েদের কেনাকাটার জন্য অনেক টাকাই দিতে হয়েছে। আর কোরবানির ঈদে কোরবানিও কিনতে হবে।
.
জনাব বাপ্পির গাড়ি বাসার সামনে এসে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে যাওয়া যাক। আজকেই কোরবানি কিনে আনলে ভাল হত। কিন্তু না পরে কিনলেও চলবে।
.

.
জনাব বাপ্পি সকালে হাটতে বের হয়েছেন। হঠাৎ আলিম সাহেবের সাথে দেখা। আলিম হাসেব জনাব বাপ্পিকে দেখে বলল
-আরে ভাই। কি অবস্থা?
-ভালই।
-কোরবানি কিনেছেন?
-না। এখনও কেনা হয় নি।আপনি?
-না কেনা হয় নি।
-কবে কিনবেন?
-আজকে যাবো কিনতে।
-বাজেট কত।
-আমার বাজেট পঞ্চাশ হাজারের নিচে। আপনার?
-দেখি কত দিয়ে কেনা যায়? কখন যাবেন হাটে?
-আজকে বিকেলে যাব।
-আচ্ছা। তাহলে দেখা হবে হয়তো।
.
জনাব বাপ্পি বাড়িতে চলে এসেছেন। বাড়িতে এসে আলিম সাহেবের কথা ভাবছেন। আলিম সাহেবের কথা ভাবছেন। আলিম সাহেব পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানি কিনলে জনাব বাপ্পিকে আরো বেশি টাকা দিয়ে কোরবানি কিনতে হবে। কারন জনাব বাপ্পির মত আলিম সাহেব এত টাকা আয় করতে পারেন না।
.

.
বিকেলবেলা বাপ্পি সাহেব কোরবানি কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে বের হচ্ছে। গরু আনার জন্য হাট থেকে লোক পাওয়া যায়। কিন্তু বাড়ি থেকে কাউকে নিয়ে গেলে ভাল হয়।
.
জনাব বাপ্পি হাটে যাওয়ার জন্য আবুলকে ডাক দিয়ে সাথে নিল। জনাব বাপ্পি গাড়ি রেখে রিক্সায় এসেছেন। কারন গাড়ি নিয়ে তো হাটে যাওয়া যাবে না।
.
জনাব বাপ্পি হাটে ঘুরে ঘুরে অনেক গরুই দেখছেন। দুই একটা গরু পছন্দ হচ্ছে। তবুও ভাল গরু দেখার আসায় এগিয়ে যাচ্ছে।
.
হাটের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে জনাব বাপ্পি লক্ষ করলেন জনাব আলিম একটি গরুর দড়ি ধরে হেটে যাচ্ছেন। তাই জনাব বাপ্পি সেইদিকে যেতে থাকলেন।
.
আলিম সাহেবের কাছে গিয়ে বললেন
-কি ভাই। এটা কিনলেন নাকি?
-হ্যা কিনলাম।
-কত দাম পরলো?
-এই আট চল্লিশ হাজারের মত। আপনি কিনেছেন?
-না। কিনবো তারাতারি।
-আচ্ছা আপনি কিনে আনুন। আমি বাড়িতে যাই।
-আচ্ছা।
.
জনাব বাপ্পি সাহেব এখন আবারও গরু খুঁজছেন। যার দাম এক লাখের বেশি হতে হবে। আলিম সাহেবের চেয়ে দামি গরু কিনতে হবে।
.
খুঁজতে খুঁজতে একটা গরু পেয়ে গেলেন। যার দাম হল এক লাখ চব্বিশ হাজার টাকা। তাই গরুটাকে কিনবেন বলে ঠিক করলেন।
.
গরুর টাকা দিয়ে জনাব বাপ্পি সাহেব গরুর সামনে হাটতে থাকলেন। আর পিছনে লোকজন গরুটাকে ধরে নিয়ে আসছে।
.
এলাকায় ঢুকতেই সবাই জনাব বাপ্পি আর তার গরুর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছে
-কত দিয়ে কিনলেন?
কেউ বা বাহবা দিচ্ছে। আর এসব দেখে জনাব বাপ্পির ভালই লাগছ।
.
আগেভাগে কোরবানি কিনে বাড়িতে রাখায় সবাই দেখছে আর দেখে জনাব বাপ্পিকে বাহবা দিচ্ছে। আর এতে জনাব বাপ্পির গর্ব হচ্ছে।
.

.
আজকেই অফিস শেষ। তারপরে অফিস ঈদের ছুটি হয়ে যাবে। জনাব বাপ্পি তাই আজ সব কাজ শেষ করে রেখে যাচ্ছেন।
.
জনাব বাপ্পি চেয়ারে বসে একবার বাবুকে ডাক দিলেন। বাবু এই অফিসে জনাব বাপ্পির সবচেয়ে কাছের লোক। তাকে বিশ্বাসও করেন। তাই নিজস্ব কাজে বাবুকেই বেশি ডেকে থাকেন।
.
বাবু দরজার সামনে দাড়িয়ে বলল
-স্যার আসবো?
-হ্যা। আসো।
-আমাকে ডেকেছেন?
-হ্যা। আমার সাথে তোমাকে একটু মার্কেটে যেতে হবে।
-আচ্ছা স্যার। কি কারনে জানতে পারি?
-হ্যা অবশ্যই। আমার ফ্রিজ কেনা লাগবে।
-বাসার ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে?
-আরে নাহ। এবারে বড় কোরবানি কিনেছি। কোরবানির মাংস ফ্রিজে রাখতে হবে।
-ও। আচ্ছা স্যার।এখন যাবেন?
-চলো
.
জনাব বাপ্পি ফ্রিজ কিনে বাসায় নিয়ে এলেন। আর শান্তিমত থাকলেন। এখন সব চিন্তামুক্ত। অফিস ছুটি। তারপরে আবার ঈদেত কেনাকাটা, কোরাবানি কেনা শেষ। তাই কোন ঝামেলা নেই। একবার গরুটাকে দেখে আসলেও হয়
.

.
আজ ঈদের দিন। নামাজ পরে এসেই সবাই কোরবানি করবে। জনাব বাপ্পিও তেমনই করবেন।
.
নামাজ পরে এসে জনাব বাপ্পি কোরবানি করেছেন। এখন গরুর চামড়া ছাড়ানো হচ্ছে। এরপরে গরুর মাংস ছাড়ানো হবে। বাপ্পি সাহেব চেয়ারে বসে সব দেখছেন। ভাড়া করা লোকগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
.
মাংস কাটার কাজ শেষ। এখন কোরবানির মাংস ভাগ করার পালা। জনাব বাপ্পি আবুলকে ডাক দিলেন। আবুল এসে বলল
-স্যার?
-বাড়ির ভেতর থেকে একটা পাত্র নিয়ে আয়। নিয়ে এসে সেই পাত্রে মাংস তুলবি।
-আচ্ছ।
.
পাত্র এনে আবুল মাংস তুলে বলল
-এখন কি করবো স্যার?
-এই পাত্রের মাংসগুলো নিয়ে ফকির মিসকিনসের দিয়ে দে।
-স্যার তিন ভাগ করে দেব?
-তিন ভাগ করতে হবে না। যা বলছি কর।
.
আবুল মাংস নিয়ে যাওয়ার পরে দেখলেন সামান্য মাংস দিয়েছেন। আর সব মাংস রয়েছে। জনাব বাপ্পি বাছেদকে ডাক দিয়ে বলল
-এই মাংস বাড়ির ভেতরে নিয়ে যা। নিয়ে ফ্রিজে রাখবি। আর রান্না করতে বলবি।
-আচ্ছা।
.
বাপ্পি সাহেবের কোরবানি শেষ। তিনভাগে ভাগ করে এক ভাগ রাখলে অল্প মাংস হত। কিন্তু এভাবে অনেক মাংস হয়েছে। অনেক টাকা দিয়ে কোরবানি কিনে মানুষের কাছে নাম কিনেছেন।
.
বাপ্পি সাহেব জানেন তিন ভাগের এক ভাগ রেখে দুইভাগ ফকির আর আত্বিয়দের দিতে হয়। কিন্তু তিনি তা করবেন না। মাংস ফ্রিজে রেখে অনেকদিন ধরে খাওয়া যাবে।কোরবানি মাংস থাকলে টাকা দিয়ে মাংস কিনতে হবে না অনেকদিন।
.
কোরবানি মানে ত্যাগ করা। কিন্তু জনাব বাপ্পি তা করেনি। একে বলে ত্যাগ বলে না।আর এভাবে কি কোরবানি হবেও না।এটা নামের জন্য কোরবানি হল। আসল কাজ হল না।
.
--Jubaer Hasan Rabby(পাবনার তাঁরছেড়া বালক)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.