নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নতুন কিছু জানার জন্য নতুন কিছু করো\"

পলাশ তালুকদার

পলাশ তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দে কাটানো সেই অভিশপ্ত দিনগুলো

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:২২

আজানের ধ্বনিতে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতের সহিত ২ রাকাত ফরজ আদায় করে কিছুক্ষণ মসজিদের মধ্যে সময় দিয়ে বাইরে বের হতাম। সবাই সবার দিকে তাকিয়ে যে যার মতো করে চলে যেতো বাড়িতে অথবা বাজারে চায়ের দোকানে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দেখা সাক্ষাৎ করার জন্য। অপরদিকে ইমাম সাহেব সহ খুব কাছের কিছু প্রিয় মানুষ নিয়ে আমরা যেতাম দক্ষিন দিক হয়ে সনমান্দি অথবা বালিগ্রাম পর্যন্ত হাটাহাটি করতে (প্রাতভ্রমণে)। হাটার পরিমাণ পর্যাপ্ত না হলে অথবা এনার্জি থাকলে সময়ের উপর ডিপেন্ড করে কখনো আবার ফেরার পথে উত্তর দিকে বটতলা অথবা মাহবুবের স্কুল পর্যন্ত ও যেতাম (ছয়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।
এরপর ঘামে ভেজা কাপড়ে ক্লান্ত আর খুদার্ত অবস্থায় যে যার মতো করে বাড়ি চলে আসতাম।
তারপর বাড়িতে গিয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে খুদা নিবারনের যুদ্ধ শেষ করে সবাই আবার একত্রিত হতাম তিন রাস্তার মোড়ের কনক্রিটের তৈরি আধুনিক বেঞ্চে। মুলত এটাকে আমরা "বারো আউলিয়ার মাজার" বলে থাকি। কারণ এই বেঞ্চে একসাথে সাধারণত ১২ জন পর্যন্ত বসতে পারি। এখানে বসে কিছুক্ষণ আড্ডাবাজি আর লুডু খেলার ছলে মেঘবৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতাম। এরপর মেঘ আসলেই সবাই দ্রুত বাড়িতে গিয়ে ফুটবল খেলার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে চলে যেতাম। এটা একটা ঐতিহাসিক মাঠ। ঐতিহাসিক বলার কারণ হলো এই মাঠে আমরা ফুটবল খেলি অথচ ২০০০ বর্গ মিটারের এই মাঠের মধ্যে আনুমানিক গাছ আছে ৮০-৯০ পিচের মতো।
যাইহোক ফুটবল খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই বাড়িতে চলে যেতো আর কয়েকজন বাকি থাকতাম যারা বাড়িতে না গিয়ে মাঝেমধ্যে গগনপুর বাজারে গিয়ে ওয়াজেদ ভাইর হাতে বানানো সিংগাড়া খেতাম। সমস্যা একটাই সাথে কোন সচ বা সালাদ থাকতো না। তবে কখনো কখনো পিয়াজ আর আনলিমিটেড কাচা মরিচ প্রভাইড করতো।
সিংগাড়া খাওয়ার মধ্যেই জোহরের আজান শুনতে পেতাম তাইতো তারাহুরো করে বাড়িতে গিয়ে যে যার মতো গোসল করে নামাজ পড়তে আবার মসজিদে চলে আসতাম। কখনো পুরো জামাত পেতাম আবার কখনো সময়ের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারনে জামাতের অংশ (২/৩ রাকাত) পেতাম। নামাজ শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা হলেও আবার তিন রাস্তার মোড়ে সেই বেঞ্চে আবারও একটু বসে সবাই খোস গল্প করে অপেক্ষায় থাকতাম দুপুরের খাবারের জন্য (বাড়িতে রান্না শেষ হয়েছে কি না)। 
তারপর খানিকক্ষণ পরেই আবার সবাই খালি পেটের গল্প ছেড়ে চলে আসতাম বাড়িতে। বাড়িতে এসে মায়ের হাতের রান্না নামক অমৃত খেয়ে মোবাইল চাপতে থাকতাম বেডে শুয়ে শুয়ে। কখন যেন ঘুম চলে আসতো নিজেও বুঝতাম না। কারণ,, ঐ যে ফুটবল খেলার ক্লান্তি!
অনেকটা ঘুমিয়ে যখন আসরের আজান দিতো তখন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে তা একটা একরকম ম্যাজো ম্যাজো অবস্থায় নামাজের জন্য মসজিদে যেতাম। নামাজ শেষ করে ঠিক ফজরের মতো মসজিদের মাঠ নামক জানাজার অস্থায়ী নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে সবাই সবার মতো গ্রুপ করে একেক দিকে চলে যেতাম। বর্ষার কৃপায় আসরের পরে সবসময় ক্রিকেট খেলার সুযোগ থাকতো না। তাইতো আমরা গ্রুপ করে গগনপুর হয়ে আবার করদি বা কুন্তিপাড়ার রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে বিকেলের সময়টা কাটিয়ে দিতাম বাদাম খাওয়া ছাড়াই। আসলে এতো কথার মাঝে আবার বাদাম খাওয়ার সময়ই পেতাম কোথায়।
সূর্য ডুবতেই মাগরিবের আজানের শব্দ ভেসে আসতো চারিদিক থেকে আর তখনই আমাদের গ্রুপটা ভেঙ্গে যেতো সময় আর সুযোগের হিসেব কষতে গিয়ে। কেউ চিন্তা করতাম বাজারের মসজিদেই নামাজ পড়বো কেউবা আবার বাড়ির মসজিদে পড়বো বলে তারাহুরো করে আজানের ঐ সময়ের মধ্যেই আবার বাড়ির মসজিদের দিকে জামাত ধরার জন্য চলে যেতাম। তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হয়ে সবাই সবাইকে মোবাইলে কল দিয়ে ভিন্ন একটা গ্রুপ হতাম শহরের দিকে (মাদারীপুর) সময় কাটানোর জন্য। কয়েকজন মিলে প্রথমে যেতাম নতুন বাস- স্ট্যান্ডের অতুলনীয় সেই প্রিয় বড-নুডুলস খেতে। খাবারের স্বাদ কেমন সেটা বলব না। শুধু এটা বলা যায় যে, এক প্লেট খাবারের জন্য আমাদের সবাইকেই সিরিয়াল ধরে আধা ঘন্টা পর্যন্ত ও অপেক্ষা করতে হতো। আর আমার কখনোই ১ প্লেটে হতো না। অন্তত ২ বার নেয়াই লাগতো। নুডুলস খেয়ে অটো ধরে চলে যেতাম জনপ্রিয় লেক ভিউ পার্কে (লেকের পাড়ে)। সেখানে গিয়ে পুরো একটা চক্কর দিতে পারলেই বুঝি দিনটা পুর্ন হতো। এরি মধ্যেই এশার আজান দিয়ে দিতো। কখনো লেকের পশ্চিম পাড়ের মাদ্রাসা মসজিদে নামাজ পড়তাম আবার কখনো কখনো সদর হাসপাতালের মসজিদে নামাজ আদায় করে চৌধুরী ক্লিনিকের দক্ষিন পাড় হয়ে চা-কপি খেয়ে ডি.সি.'র বাসার সামনে এসে ইটেরপুলে আসতাম। তারপর ইটেরপুল বাজার মসজিদ (হাওলাদেরদের মসজিদ) এর সামনে দাঁড়িয়ে বিক্রি করা ঐ চাচার ছোলাবুড খেতাম প্রচুর ঝাল দিয়ে। কাচা ঝালের তীব্রতা কমাতে পাশের দোকান থেকেই কোল্ড ড্রিংকস নিতাম। আর এই কোল্ড ড্রিংকস পান করার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের ১৬ কলা পুর্ন করতাম। তবে ড্রিংকস হিসেবে যে যাই নেক, আমার পছন্দ ছিলো স্পিড (২৫০ মি.লি.)।
তারপর বাড়ির দিকে রওনা হতাম ভ্যান গাড়িতে করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য মাত্র ৭-১০ মিনিটের মধ্যেই বাড়ির রাস্তায় পৌঁছে যেতাম। তারপর ঘরে ঢুকে মা খাবার দিলে কম খেতে পারতাম। আবার কখনো কখনো খেতেই পারতাম না। আর মা তখন রাগের কন্ঠে বলতোঃ "সারাটা দিন বাইরে টো-টো করে ঘুরে বেড়ালে ঘরের খাবার কিভাবে পেটে যায়!"
মায়ের বকা খেয়ে শুয়ে পড়তাম আর মোবাইলে ডাটা অন করে সোস্যাল মিডিয়া নিয়ে বিজি হয়ে যেতাম। পুরাটা দিনের ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত পথিক আমরা ঘুমিয়ে যেতাম যার যার ঘরে। তারপর আবার সেই ফজরের আজানের ধ্বনি______________________।
এভাবেই অনেকগুলো দিন অতিবাহিত করেছি আমি। মস্তিষ্কের স্মৃতির অধ্যায়ে জড়িয়ে আছে শত সহস্র কাহিনি। সময় পেলে এখন ও ভাবি সেই আনন্দে কাটানো অভিশপ্ত দিনগুলোর কথা।


°°°°°মোঃ পলাশ তালুকদার,
           ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ইং
           ১১২ নাই থাল রোড,
           সিংগাপুর- ৬২৮৫৯৯ °°°°

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:৩৪

রানার ব্লগ বলেছেন: অতীত সব সময় মধুর তা সে বেদনার হোক আর আনন্দের হোক !!!

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:৪২

পলাশ তালুকদার বলেছেন: খুবই ভালো কথা বলছেন ভাই

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:২১

নাহল তরকারি বলেছেন: ভালো।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:০০

পলাশ তালুকদার বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫০

জগতারন বলেছেন:
আপনি মাদারিপুরের সন্তান বুঝতে পারলাম।
আমিও, আমি মাদারিপুর নাজিমুদ্দিন কলেজ থেকে আই, এস, সি, পাশ করে যুক্তরাষ্ট্র এসে পড়াশুনা করে হাওয়াইজাহাজ প্রস্তুতকারি সংস্থাত ও বিভিন্ন এ্যায়ার লাইনে চাকুরী করেছি বহু বছর।

বয়সে আপনি আমার ছেলের বয়সী হবেন।
মাদারিপুর লেইক, ইটের পুল, লেইকের পশ্চিম পাড়ের মাসজীদ সবই আমার চিনা ও জানা।
লেইকের পশ্চিম পাড়ের মাসজীদ-এর মীনারের নীচেই আমি থাকতাম। এখানে থেকেই আমি পড়াশুনা করেছি।
লেইকের পশ্চিম পাড়ের মাসজীদ-এ যে মাদ্রাসা ছিল সেটি একসময়ে ক্বোর'আন হেফসাখানা ছিল। সেই মাদ্রাসায় খাটো করে একজন হাফিস শিক্ষক ছিলেন, সে কঠোরভাবে ঐ মাদ্রাসার ছাত্রদের পিটায়ে শাসন করতো যা আমি মোটেও পছন্দ করতাম না।
আরও বহু স্মৃতি আমার সাদ্য যৌবনকালে মাদারিপুর ঘিরে জমা আছে আমার মনে।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০১

পলাশ তালুকদার বলেছেন: আমি সত্যিই অবাক ও একই সাথে অনেক খুশি হলাম এ জন্য যে, আপনার মতো একজন সফল ব্যক্তি আমার পোস্টে মন্তব্য করেছেন এবং আমি আর আপনি একই জেলার সন্তান।
আসলেই মাদারীপুর ঘিরে অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে।
আমি এখন সিংগাপুর থাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.