নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ এর ব্লগ

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ

আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা কি?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৭



এক।

একবার এক সিনেমাটোগ্রাফারকে জিজ্ঞেসা করেছিলাম- ‘নায়িকাদের ক্ষেত্রে ভিডিও করার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন?’ তিনি আমার প্রশ্ন শুনে বেশ আগ্রহ নিয়ে এভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘নায়িকাদের হিপ, আর বুক। কোন নায়িকাকে প্রথমবার দেখে যদি দ্বিতীয়বার সিনেমা হলে না যায় মানুষ তাহলে সে নায়িকার কোন মূল্য নেই।’

তাহলে অভিনয় কি খুব গৌণ পর্দায়? তিনি যোগ করেন, ‘তা ঠিক নয়। অভিনয়তো একটা ব্যাপার। তবে মানুষ শুধু অভিনয় দেখতে যায়না। অন্যকিছু দেখতে যায়।’

আর একদিন এক পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘একজন নায়িকার স্বার্থকতা কোথায়?’ তিনি তখন কোন রাখঢাক না রেখে বললেন, ‘যে নায়িকাকে দেখে দশর্কের স্পার্ম(!) দৌড়ঝাপ করে সে ই প্রকৃত নায়িকা। অভিনয় তো করবেই। তার থেকে বড় মানুষকে শিহরিত করা। কামনার সর্বোচ্চ স্তরে পৌছে দেয়া।’

এবার দর্শক নায়িকার কোন বিষয় দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যায়? নায়িকার অভিনয় নাকি শরীর? এরকম একটি প্রশ্ন করা করেছিলাম কয়েকজন দর্শককে। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, অভিনয় দেখতে সিনেমা হলে যান। আবার কেউ কেউ নায়িকা দেখতে।

এই তিনটি পৃথক কেস স্টাডি থেকে প্রমাণ হয়, একজন নায়িকা কেবলই কামনার দেবী। বড় পর্দায় নায়িকার শরীর পুরুষ দর্শকের মনে কামনার সুখ প্রবাহিত করে। এখানে দর্শক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে, নায়িকা আকাঙ্ক্ষিত হয়ে ধরা দেন।

এই যে, একজন নায়িকাকে দেখে দর্শকের ভেতর কমনার উদ্রেক হয় সেটাকে ফ্রয়েডীয় ভাষায় ‘অবদমিত কামনা’ বলা হয়ে থাকে। এই অবদমিত কামনা নায়িকার সঙ্গে দর্শকের সহবাসের স্বপ্ন দেখায়। যা বাস্তবে সুযোগ হয়ে ওঠেনা, সেকারণে সিনেমা হলে নায়িকার উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে তার বুক, ঠোঁটে লেজার লাইট মেরে শিষ দিয়ে অবদমিত কামনাকে প্রকাশা করার চেষ্টা করে।

ফ্রয়েড মনে করতেন, ‘আমাদের সবার নির্জ্ঞান মনে ধূসর স্মৃতি ও বাসনা অবদমিত আছে। এসব কামনা সবসময় প্রকাশের উপযোগী হয় না। অচেতনে অনেক কিছু লুকানো থাকে বলেই সমাজে জীবনযাপন সম্ভব হয়। আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে চলছে। সেগুলো দেখেশুনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নানান কথা ও ভাবনার আসে – নানান অনুভূতির উদয় হয়। এই ভাবনা ও বোধ আপনাআপনি আসে, এদেরকে সচেতন মন ঠেকাতে পারে না। আমরা নিজেদের কাছ থেকে এই ভাবনা–অনুভূতির স্রোত লুকিয়ে রাখতে চাই।’

দুই।

বাংলাদেশের বাংলা সিনেমায় এখন যারা নায়িকা তারা পূর্বের প্রজন্মের নায়িকাদের থেকে বেশি এগিয়ে। তারা নিজেকে প্রকাশ করার, প্রচার করার বিভিন্ন মাধ্যম হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে তারা একটু আধটু সিনেমা করে নায়িকার তকমা লাগিয়ে লাগাতে পারছেন।

মজার ব্যাপার হলো, যারা ডিজিটাল মাধ্যমকে নিজেকে প্রচারের মঞ্চ হিসেবে মনে করেন তাদের মাথায় একটি শব্দ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে, ‘শরীর’। এই শরীরকে তারা মূল অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। এতে করে যে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন তা কিন্তু নয়। তারা সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। আর যারা সুযোগ দিচ্ছেন তারা অভিনয় দেখছেন না, দেখছেন শারিরীক সৌন্দর্য। কাকে কতোটা কামনার দেবীর মতো লাগে! এতে করে সেই নায়িকা হয়ে ওঠেন কতিপয় মানুষের কামনার খোরাক ।

পর্দায় তাদের এমনভাবে হাজির করা হয় তাতে দর্শকের মনের গোপন ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যা কখনো কখনো তাদের ইগো নিয়ন্ত্রণ করে। সবক্ষেত্র ইগোর জয় হয়না। ফলে সিনেমা হলে অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পড়তে হয়। পরিচালকরাও চান দর্শক যেনো নায়িকাকে দেখে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাক। দেশের সিনেমার যা অবস্থা তাতে তারা মনে করেন সিংহভাগ লোক নায়িকাকে দেখতে যায়। নায়িকার স্তন, হিপ, কোমর দোলানো- এসবই তাদের কাছে কামনার খোরাক। তারা ক্ষুধার্ত থাকে। এ ক্ষুধা পেটের নয়, চোখের। তাই হুমায়ূন আজাদ যথার্থই বলেছিলেন, ‘ক্ষুধার্ত দর্শকেরা ফিল্ম দেখেনা। মাংস ও চর্বি দেখে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।’

সেই দর্শদের ক্ষুধা নিবারন করার তাগিদেই নায়িকারা খোলামেলাভাবে হাজির হন। ক্লিভেজ দেখান, সেক্স অ্যাপিল জাগানিয়া অঙ্গভঙ্গি করেন। এক্ষেত্রে নায়িকাদের ভেতর এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিযোগিতায় জিততে হবে। নতুবা পিছিয়ে পড়তে হবে। হারিয়ে যেতে হবে। অথচ এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে নিজের ভেতরের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলছেন সেদিকটায় খেয়াল নেই। আর তাইতো অনেক নায়িকা মনে করেন, নাচতে নেমে ঘোমটা দিলে হবেনা। আসলেই তো! কথাটি ফেলে দেয়া যায়না।

অথচ অভিনয়ের সুস্থ একটি প্রতিযোগিতা হতে পারতো। যেরকম প্রতিযোগিতা আগের তিন প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যে ছিল। তখনও নায়িকাদের যৌনসুঁড়সুঁড়ির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে সেটা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। সাদা শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভেজা কিংবা চুম্বন, শারিরীক সম্পর্কের দৃশ্য হলে মন্তাজ ব্যবহার করা। মন্তাজ কিন্তু সিনেমাটিক শিল্পের ভেতরই পড়ে।

পরিচালক চাইলে একটি দৃশ্যকে নানাভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। দর্শকেরও এখানে দায়ভার আছে। দর্শক যদি নায়িকার স্তন দেখলেই যৌনতা অনুভব করে তাহলে সেটা তার অবচেতন মনের চিন্তা। সেই চিন্তাকে সে যেভাবে প্রভাহিত করবে সেভাবে প্রবাহিত হবে।

‘সারেং বউ’ সিনেমার কথা ধরা যাক। জলোচ্ছ্বাস যখন গ্রাম তলিয়ে নিয়ে গেছে। ফারুক তখন জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কাদার ভেতর পানির জন্য ছটফট করছেন। তখন কবরি কোথাও পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বুকের দুধ পান করান।

এটাকে দর্শক যদি মৈথুনের উপাদান মনে করে তাহলে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত। সে চাইলেই এটা থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারে। কে কিভাবে বিষয়টি নিবে সেটা সম্পূর্ণ তার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।

কলকাতার ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায় জয়া আহসান ও রুদ্রনীল ঘোষের একটি দৃশ্য আছে। সে দৃশ্যে জয়া রুদ্রর হাত নিজের স্তুনে, নিতম্বের কাছে নিয়ে বোঝাতে চায়, এটা কেবল যৌনতার প্রতিক নয়। এটা শরীরের হাত, পা, চোখের মতো অঙ্গ।

অথচ এই দৃশ্যটি মানুষ গ্রহণ করেছে কামনার খোরাক হিসেবে। ফুটেজটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। যা থেকে মানুষ শেখার চেয়ে ‘দেখার সুখ’ মনে অনুভব করছে। এটা নিয়ে তো বাংলাদেশে সমালোচনাও হলো অনেক।

তিন।

আজকাল নায়িকারা প্রযোজক বনে যাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রযোজক এনে তাকে প্রিয় বন্ধু, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কাছের বন্ধু বা পারিবারিক বন্ধু পরিচয় দিচ্ছেন। আবার কখনো কখনো বন্ধুর ভালোবাসার প্রমাণ রাখতে প্রযোজক হিসেবে বান্ধবীর নাম বসিয়ে দেন। ফলে সেই বন্ধুর টাকা দিয়ে যেসব সিনেমা নির্মিত হয় সেসব ছবি আদোতে সিনেমা হয়ে ওঠেনা। বরং সেগুলো ছি!নেমা হয়ে যায়।

বন্ধুর প্রযোজিত এসব সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়ে। দর্শক দেখেনা। তবুও কতিপয় নায়িকা দামি প্রাইভেট কারে এফডিসিতে নামেন। শিল্পী সমিতিতে বসে শিল্পীর ভাব নেন। এরা কখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেনা, আমি কি আসলে নায়িকা? নাকি নায়িকার ছদ্মবেশে লোক ঠকাতে এসেছি?

অনেক নায়িকা আছেন যারা নায়িকার সাইনবোর্ড লাগিয়ে অবৈব ব্যবসাও করেন। মাঝে মাঝে কিছু নামধারি নায়িকাকে গ্রেফতারের খবর আসে পত্রিকায়। সেসব খবর পড়ে প্রকৃত গুনী শিল্পীরা হতাশ হন। আফসোস করেন। আহ নায়িকা, আহা নায়িকা!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশে সিনেমা গুলো নষ্ট/নোংরা মানুষদের জন্য বানানো হয়।
যখন ভালো লোকদের জন্য সিনেমা বানানো হয়- তখন ভালো লোকজন সিনেমা দেখতে যায়।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: তবে মানুষ শুধু অভিনয় দেখতে যায়না। অন্যকিছু দেখতে যায়।’
............................................................ সহমত হলাম না,
তবুও আমাদের প্রেক্ষাপটে আহ নায়িকা, আহা নায়িকা!
বলব ।

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৬

কামভাখত কামরূখ বলেছেন: বিশ্লেষণ গুলো এমনই হওয়া উচিৎ তথ্যবহুল উদ্দেশ্য প্রণোদিত না, ব্লগের শিক্ষাবৃত্তির বিকাশে সবাইকে ব্লগে লিখার অনুমতি দেয়াটা উচিৎ না এটা এইধরনের লিখা থেকেই অনুমিত ইদানীং ব্লগটায় আজাইরা টপিকেই ভিউয়ার বেশী যার ফলে ভালো লিখকদের অরুচি জম্ন দেয়।

৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৬

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: ভলিউডে এখন যে জেনারেশন। বরুন দাওয়ান, আলিয়া, কাপুর পরিবার, এই পরিবার সেই পরিবার। সেইখানে একজন কেউ আসতে গেলে অনেক কোষ্ট করতে হবে। আজকাল মামা ই সব।বাকি কিছুনা।

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সিনেমা জগত এক রহস্যময়ী জগত।

৬| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৬

নতুন বলেছেন: নায়িকা যদি অভিনয়ে না দশ`কের মনে দাগ কাটতে পারে তবে বুক আর নিতম্ব দিয়ে জনপ্রিয় হতে পারেনা।

উপরে যাদের কাছে জিঙ্গাসা করেছেন তারা কেমন শিল্পি কি জানি...

হলিউড, ভারতের, আমাদের দেশের অনেক নায়িকা আছে যারা তাদের বুক আর নিতম্বের জন্য না তাদের অভিনয় দিয়ে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.