নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ এর ব্লগ

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ

আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেয়াল (ষষ্ঠ পর্ব)

০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫



ছয়
রাহুল আবারও বিয়ে করবে।
সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা ভাবেনি সে। ভাববার সময়ও পায়নি। রিমা তাকে ভাবার সুযোগটাও দিচ্ছে না। সময় চাইলেই শুধু বলে, ‘তোমার বউ চলে গেছে। এখন আমাকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? আমার সাথে ওরকম ধানাইপানাই চলবে না।’

সত্যিই রিমার সাথে ধানাইপানাই চলবে না। ও একদম পিউয়ের মতো শান্ত স্বভাবের না। পান থেকে চুন খসলেই রাহুলের খবর করে ছাড়ে।

যদি বিয়ে না করে তাহলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ মামলা করে জেলের ভাত খাওয়াতেও পিছপা হবে না। কথাবার্তায় এরকম ইঙ্গিত সে আগে কয়েকবার দিয়েছে।

রাহুল যে তাকে ভয়ে বিয়ে করছে তা নয়। রিমা চাপ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিয়েটা সে নিজ ইচ্ছায় করতে চায়।
পিউয়ের সংসার ভাঙার জন্য এই রিমা দায়ি। ওরা এক অফিসেই চাকরি করে। রিমা জানত রাহুল বিবাহিত। তবুও রাহুলের ভালোবাসায় সে সাড়া দেয়।

পিউ যতটুকু জানে, রাহুলের পক্ষ থেকেই প্রথম প্রস্তাব যায় রিমার কাছে। রিমাও সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। তারপর ওদের প্রেমে এগোতে থাকে। বিছানা পর্যন্ত গড়ায় ওদের ভালোবাসা।

একদিন শপিংয়ে গিয়েছিল পিউ। বাসায় ফিরে ওদের দু’জকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে। সেদিন কিছুই বলেনি পিউ। চেয়েছিল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। কিন্তু রাহুল তাকে বোঝায়। প্রমিজ করে, রিমার সাথে সম্পর্ক রাখবে না। তাতে মন গলে যায় পিউয়ের।

প্রমিজ রাখেনি রাহুল। ওদের প্রেম আটকে থাকেনি। পিউ চেয়েছে ভালোবাসা দিয়ে রাহুলকে রিমার কাছ থেকে ধরে রাখতে। পারেনি

কাছে গেলেই রাহুল নানা অযুহাতে দূরে সরে থাকত। জোর জবরদস্তির কারণে এক মাসের বাচ্চাটিকে গর্ভেই মেরে ফেলতে হয় পিউকে।
পিউ চেয়েছিল, যে করেই হোক প্রথম সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবে। সবরকম চেষ্টাই করেছিল সে। শেষ রক্ষা হয়নি।

ঘন্টাখানেক ধরে ফরিদকে ফোন করেই যাচ্ছে রাহুল। ফরিদ এখনও ফোন রিসিভ করে না রাহুলের। এই মুহূর্তে ওকে খুব দরকার। বিয়ের আয়োজনটা ওকেই করতে হবে। প্রথম বিয়ের আয়োজনটা ওই করেছিল।

রাহুলের এমন স্বভাবের কারণে ওর অনেক কাছের বন্ধু দূরে সরে গিয়েছে। শেষমেষ ফরিদও সরে গেলো দূরে!

যত যাই হোক, ফরিদের দূরে চলে যাওয়া মেনে নেয়া যাবে না। ওকে রাহুলের জীবনে প্রয়োজন। কিন্তু ফরিদের রাগ ভাঙাতে গেলে তো পিউকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যা এখন সম্ভব না। রাহুলের হৃদয়জুড়ে এখন শুধুই রিমা।

দোটানায় পড়ে গেলো রাহুল। ঘর থেকে বেরিয়ে রওয়ানা হলো ফরিদের বাসার দিকে। বাসায় গিয়ে কোনোমতে ওকে বুঝিয়ে ম্যানেজ করতে পারলে কেল্লাফতে।

কয়েকবার কলিংবেল বাজার পর দরজা খুললো ফরিদ। রাহুলকে দেখে দরজা আটকে দিতে গেলো। রাহুল দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল।

‘এমন করছিস কেনো ফরিদ? আমরা না ছোটবেলার বন্ধু!’
‘কি জন্যে এসেছিস সেটা বল। আমি বের হব। কাজ আছে।’

ফরিদের রাগ এখনও কমেনি। কণ্ঠ শুনে তেমনটাই বোঝা যাচ্ছে। আজ ওর ডে অফ। বাইরে কোনো কাজ নেই। তবুও রাহুলকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ততার ভান করতে লাগলো।

‘শোন, বেশি ব্যস্ততা দেখাবি না। আজ যে তো ডে অফ এটা আমি ভালো করে জানি।’
‘ডে অফ ক্যান্সেল করেছি। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে।’
‘তুই অনেক ভাব নিচ্ছিস ফরিদ। এটা ঠিক না।’
‘আমি মোটেই ভাব নিচ্ছি না। সরি টু সে, তোর সাথে কথা বলার রুচি আমার নেই।’
‘দেখ বেশি বলে ফেলছিস। আমার বউয়ের জন্য তোর এত জ্বলছে কেনো?’
‘জ্বলছে কারণ, তুই তার সাথে অন্যায় করেছিস। আমি ভাবতে পারিনি তুই অন্তত পিউয়ের সাথে এমনটা করবি।’
‘শোন পাস্ট ইজ পাস্ট। আমাদের ফিউচার নিয়ে ভাবতে হবে। দ্রুত গুছিয়ে নে, কাজী অফিস যেতে হবে।’
‘মানে?’
‘রিমাকে বিয়ে করছি। তোকে ছাড়া প্রথম বিয়ে করিনি। দ্বিতীয় বিয়েও করব না। তুই থাকলে সাহস জাগে আর কি!’
‘রিমা, মানে ওই বেশ্ব্যা মেয়েটা! তুই ভাবলি কিভাবে, আমি তোর সাথে যাব?’
‘একদম বাজে বকবি না। ও আমার বউ হতে চলেছে। দেখবি বিয়ের পর ভালো হয়ে যাবে।’
‘ভালো বলেছিস।’— তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো ফরিদ।
‘হাসিস না। নে গুছিয়ে নে। আমি ওয়েট করছি।’
‘তুই একটা ঘোরের মধ্যে আছিস রাহুল। একটা কথা বলি ভালো করে শুনে রাখ, যদি কখনও পিউকে আনতে যাস তখন আমাকে ডাকিস। যেখানেই থাকি চলে আসব। তোর সাথে রিমার বিয়ে আমি মেনে নিতে পারব না। আর হ্যাঁ, যা করিস ভেবে করিস।’

এবার রাহুল রেগে গেলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘তার মানে তুই যাবি না! ওকে ফাইন। তুই থাক তোর মতো। ভালো থাকিস। আমাদের বন্ধত্ব এখানেই শেষ।’

ঝড়ের বেগে রাহুল ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ফরিদ আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। বিড় বিড় করে বলতে লাগলো, জীবনে সবথেকে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছিস রাহুল। ফিরে আয়।

রাহুল ফিরে আসেনি। কাজী অফিসে রিমাকে বিয়ে করে নিলো। রিমার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। আসার কথাও না।

রিমার বাবা নেই। মা আছে। সৎ বাবার সংসারে বড় হয়েছে সে। নিজের মতো করে বড় হয়েছে। মায়ের কথা শুনত না। সৎ বাবার কথা তো শোনার প্রশ্নই আসে না। শাসন করলে, বাড়ি থেকে বের হয়ে ছয়-সাত দিনের জন্য লাপাত্তা হয়ে যেত। এই ভয়ে কেউ তাকে কিছু বলত না।

পিউয়ের সাজানো সংসার এখন রিমার। ঘরে ঢুকে পিউ সবার প্রথমে বেড রুম থেকে দেওয়ালে টাঙানো রাহুল-পিউয়ের জোড়া ছবিটা নামিয়ে ফেললো।

‘তোমার বউ তো চলে গেছে অনেক দিন হলো। এখনও দেওয়ালে কাপল ছবি ঝুলছে! ভুলতে পারছ না বউকে?’—খোঁচা মেরে কথাটি বললো রিমা।
‘একদম খেয়াল ছিল না। তুমি নামিয়ে ভালো করেছো। পুরনোকে আকড়ে ধরে থাকার মানুষ আমি না।’
‘এজন্যই তোমাকে আমার ভালোলাগে। কিন্তু আমি যেন পুরনো না হয়ে যাই তোমার কাছে। মাথায় রেখো। তাহলে খবর আছে।’
‘জো হুকুম মহারানী।’
‘তা রাতে কি খাবে বলো? এখন রান্না করতে পারব না। অনলাইন থেকে অর্ডার করব।’
পেছন থেকে এসে রিমাকে জড়িয়ে ধরলো রাহুল। ঘাড়ে কয়েকটা চুমু দিয়ে বললো,
‘খাবার পরে হবে। আগে অন্যকিছু খাই।’

হঠাৎ লোডশেডিং। ওরা দু’জন দু’জনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অন্ধকার জোরে জোরে নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই শব্দ রাহুলের চেনা। এর আগে অনেকবার এই নিঃশ্বাসে বিশ্বাস সঁপে দিয়েছে সে।

(চলবে...)








মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: রাহুলের আবার বিয়ে করা ঠিক হবে না।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৮

গফুর ভাই বলেছেন: আজকাল কারনে অকারনে পরকিয়ার মত গল্প পড়া হচ্ছে। পরের পর্ব এর অপেক্ষায়...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.