নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা প্রেমী; একটু এলোমেলো; উড়নচণ্ডী; আর বই ভালবাসি। শব্দ নিয়ে খেলা আমার বড্ড প্রিয়। গল্প-কবিতা-মুক্ত গদ্য সব লিখতেই ভালো লাগে। \"কেননা লেখার চেয়ে ভালো ফক্কিকারি কিছু জানা নেই আর।\"

শিখা রহমান

পুরনো ইমেজারির ব্যবসা করি। চিত্রকল্প সস্তায় বানাই। টান টান রিমেকশিল্প, ওপরে ঝকঝক করছে স্কাই।.........লোকে পড়ে ভাবে এ তো নতুন, আনকোরা কৌটো। কিন্তু সেই একই, সেই একই বন্দিপ্রাণ ছটফট ভ্রমর....

শিখা রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একছড়া তেঁতুল বা একটি হরিণের কাহিনী

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২১



১.
- ভাই যাই বলেন পিঠটা কিন্তু সুন্দর!! না তাকায়ে থাকা কঠিন...হাহা হা হা!!!
- আজ অনেকদিন পরে আবার সেই সৌন্দর্য দেখলেন...হাহা হা!!!
- আরে তেঁতুল নাতো একেবারে তেঁতুলের আচার!!
- এভাবে বইলেন না তো। এমনিতেই আমি ইদানিং চটপটি ঠিকমতো খাইতে পারতেছি না, তেতুলের পানি বাদ দিছি। মেয়েদের ভাই আমি খুবই সম্মান করি!!!

অপালা দুই কিউবিকল পরে উঠে দাড়াতেই ওর দুই কলিগ হাসি গিলে ফেললো; চেহারায় একটু অপ্রস্তুত ভাব। অপালারই আসলে খুব বাজে লাগছে; মনে হচ্ছে ওই চুরি করে এইসব কথোপকথন শুনে ফেলেছে। এমডির অফিসে ছিলো; একটা ফাইল নিতে যে ও আবার ডেস্কে এসেছে ওনারা দুজন দেখেননি। কিন্তু অপালার না উঠেও উপায় ছিলো না; এমডি সাহেব ফাইলটা জরুরী ভাবে চেয়েছেন; একটু ফিগারগুলো চেক করতেই ডেস্কে বসা।

ও শাড়ির আচলটা টেনে পিঠের ওপরে দিলো। ওদের পাশ ঘেঁষে যেতে যেতে অপালার মনে হচ্ছিলো সবার জোড়া জোড়া চোখ ওর পিঠে বিধছে। রুমে ঢোকার পরে এমডি মাহমুদ সাহেব বললেন “কি ব্যাপার অপালা? আপনি ঠিক আছেন তো?” মনে হয় ওর পাংশু মুখ বলে দিচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই।

মাহমুদ সাহেব মানুষটা ভালো। ওর ঝামেলার সময় বেশ সাপোর্ট দিয়েছেন, অন্যদের মতো আজেবাজে মন্তব্য ছোড়েননি বা দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দেননি যে ও একটা মাংসের টুকরো ছাড়া আর কিছুই নয়। তারপরেও অপালার মাহমুদ সাহেবের মতো মানুষদের ভালো লাগে না। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে এই ধরনের মানুষদের চিন্তা ভাবনা খুবই গা ছাড়া, প্রশ্রয় দেয়া। ঠিক যেন মাঠে খেলতে গিয়ে বাচ্চারা পড়ে গেলে মা বাবা যেমন সান্ত্বনা দেয় তেমনটা; কিন্তু অপালার সাথে যা ঘটেছে সেটা তো দৈব দুর্বিপাক নয়, সেটা অন্যায়, আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

২.
সারি সারি পা; বেশীর ভাগ পায়েই জোড়া জোড়া স্যান্ডেল; পাজামা পাঞ্জাবীর সাথেতো চটি স্যান্ডেলই মানায়। শুধু একটা কেডস, হালকা নীল জিন্সের নীচে কেডসে কালোর পাশে লাল বর্ডার, লাল ফিতা বাঁধা; আর এক জোড়া জুতা কালো বা গাঢ় খয়েরী, চকচকে ভাবের ওপরে হালকা ধুলোর প্রলেপ। অপালা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে; চারপাশে মানুষগুলো হল্লা করছে; দুরে গান বাজছে “এসো হে বৈশাখ…এসো এসো…”

বাতাসে উৎসবের আমেজ, আনন্দের গন্ধ। শুধু অপালার নগ্ন পিঠে হাজার হাজার অচেনা অজানা আঙ্গুলের স্পর্শ; কর্কশ হাত ছিড়ে ফেলেছে ওর ব্লাউস; লাল ব্লাউস; লাল শাদা শাড়ির আঁচল স্তুপ করে অপালা নুয়ে আছে; বুক ঢেকে আছে। কোথাও আসলামের কন্ঠ আর্তনাদ করছে “একি কি করছেন আপনারা? ছাড়ুন আমাকে, প্লিজ সরে যান…আমার স্ত্রীর কাছে যেতে দেন প্লিজ!! প্লিজ!!! অপালা…অপালা…”

অপালা মুখ তোলে; চারপাশে রঙ বেরঙের মুখোশ পরা মানুষ; কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না কেন? ও নগ্ন দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি মুখোশের মাঝে। মুখ ঢাকা, চোখ নেই। তবে এতো ভয় লাগছে কেন? মুখোশের আড়ালে কি ভাবে ও দেখছে মানুষগুলোর লোলুপ চোখ; জিহ্বা বের করে পুরু ঠোঁট চাটা। চারপাশ থেকে হাতগুলো ওকে ছুঁয়ে দিচ্ছে; আঙ্গুলে লালা ঝরছে কি? প্লিজ ছুঁয়ো না…প্লিজ!!

গান বাজছে “তাপস নিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে…বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক…যাক…যাক…” অপালা প্রানপনে চেষ্টা করছে হাত গুলো এড়াতে; চারপাশে শত শত হাত, হাজার হাজার আঙ্গুল ওকে ছোবার জন্য কিলবিল করছে। পারছে কই? ও হেরে যাচ্ছে। নিজেকে বড্ড অপবিত্র লাগছে, গা ঘিনঘিন করছে। অপালা ঠিক এই মুহূর্তে ঘুম থেকে জেগে ওঠে; ঘামে শরীর, বিছানা বালিশ ভিজে শেষ।

অফিসে লাঞ্চের পরে অফিসে ঝিমুনি আসতেই ও চমকে ওঠে। গতকাল রাতেও অপালা দুঃস্বপ্নটা দেখেছে; জেগে উঠে বাকী রাতটা চুপচাপ দিনের অপেক্ষা। ভোরের আলো জানালায় হলদে আভা ফেলতেই আরেকটা দুঃস্বপ্নের শুরু; সুড়ঙ্গের শেষে আলো সবার কাম্য নয়। সুড়ঙ্গ থেকে বের হলেই মস্ত বড় পৃথিবী; অপালা সেই পৃথিবীর মুখোমুখি হতে চায় না।

৩.
ফেব্রুয়ারী মাস; বইমেলা শুরু হয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরেই আসলাম যেতে চাইছে; আজ বিকেলে অফিস থেকেই ওর সাথে চলে যাবে ভেবে শাড়ি পরা। আসলাম দেখলে খুশী হবে; অপালাকে শাড়ীতে খুবই মানায়। দোতলার সিড়ি ভেঙ্গে বাইরে পা রাখতেই রোদ পড়লো ওর পিঠে; বেলা নয়টার একটু তেতে ওঠা বাতাস ছুঁয়ে গেলো ওর মসৃণ পিঠ। অনেক দিন, প্রায় দশ মাস পরে অপালা শাড়ী পড়লো।

এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সামনে রেহানা ভাবী আর সোমা আপা রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে; বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। আগে হলে অপালা টুকটাক কথা বলতো বা নিদেন পক্ষে একটা সৌজন্যমূলক হাসি। এখন চোখ এড়িয়ে চোরের মতো রাস্তায় রিক্সা খোঁজার ভান করা যেন ওরা পরষ্পরকে তেমন একটা চেনে না। সোমা আপার জন্য অপালার মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়; পুরো বিল্ডিংয়ে এই একটা মানুষের সাথেই ও একটু মন খুলে কথা বলতো। আর সেই সোমা আপাই কি বদলে গেলেন!!

একা একা লাগছিলো, আসলাম কি একটা কাজে বাইরে। আপার বাসা কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে উনি এমন চমকে উঠলেন যে অপালার খারাপই লাগলো।
- আপা ভালো আছেন?
- হ্যা…তুমি হঠাৎ কি মনে করে? আপার গলা একটু রুক্ষ শোনায়; তাও অপালা বোঝেনি।
- নাহ অনেকদিন জম্পেশ গল্প করা হয় না…তাই একটু এলাম। আপনি কি ব্যস্ত?
- ব্যস্ত নই কিন্তু...

অপালা আগের মতো দুষ্টামি করে “আপা কি ব্যাপার? লোকমান ভাই বাসায় নাকি? রোমান্টিক সময় কাটাচ্ছেন?” আপার মুখ খুব কঠিন হয়ে যায়।
- শোনো অপালা তোমাকে কিছু কথা সরাসরি বলি। আমি চাই না যে তুমি আর আমার বাসায় আসো বা আমার সাথে কথা বলো। বিশেষ করে তুমি লোকমানের সাথে একদমই কথা বলার চেষ্টা করবে না। তোমার মতো মেয়েদের আমার চেনা হয়ে গেছে…
- আমার মতো মেয়ে?
- মেলায় এতো মানুষ যায় তোমার সাথেই এমন হবে কেন? পুরুষদের গা দেখিয়ে কাছে ডাকা মেয়েদের দলে তুমি…ছি ছি!! ছিহ!!

সোমা আপা মুখের ওপরে দরজা বন্ধ করে দিলেন। অপালার আগেই বোঝা উচিত ছিলো; পুরোটা সময় উনি দরজা আগলে দাঁড়িয়ে ছিলেন, একবারো ঘরে ঢুকতে বলেননি, যেন ও কোন ব্যাধিগ্রস্থ মানুষ, ভয়ংকর ছোঁয়াচে রুগী। বাসায় ফিরে ও কি যে কেদেছিলো!!! চারপাশের চেনা পৃথিবী কয়েক ঘণ্টায় এমন বদলে যেতে পারে??

এমন কথা এরপরেও অনেকেই সামনাসামনি বা আড়ালে আবডালে বলেছে “অতো সাজগোজ করে মেলায় যাবার কি দরকার?” “এভাবে গা দেখালে তো ছেলেরা গায়ে হাত দিতে চাইবেই!!! ছেলেদের আর কি দোষ?” “যাই বলেন ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে একটা বেসিক ডিফারেন্সতো আছেই… সেটা অস্বীকার করেতো আর চলা যায় না। একটা ছেলে খালি গায়ে ঘুরতে পারে তাই বলে একটা মেয়ে কি তাই করতে পারবে?”

অপালা এমন কি পরেছিলো সেই দিন অনেক ভেবেও বুঝতে পারেনি। লাল শাদা শাড়ী; লাল ব্লাউজ। তবে হ্যা…ব্লাউজ হয়তো কোমর ঢাকা লম্বা ছিলো না, তবে বলিউডি ফিতা ষ্টাইল অনেক ছোটও না; ফুল হাতা না, কনুই পর্যন্ত। ওর কোমর ছোয়া রেশমী চুল পিঠ ঢেকে ছিলো; পিঠ খোলা ছিলো নাতো। অপালা খুব সুন্দরী নয়; সাধারন বাঙ্গালী মেয়েদের চেয়ে উচ্চতা বেশী, পাঁচ পাঁচ হবে। চওড়া কাধ; সরল চোখ; একটু খাঁড়া নাক; আত্মপ্রত্যয়ী একজোড়া ঠোঁট। সরাসরি দৃষ্টির মতো কথাও সরাসরি বলে। একটু রাজকীয়; অনেক মেয়ের মধ্যে ওকে চোখে পড়বেই। মানুষ অপালার মধ্যে তেমন অস্পষ্টতা নেই। তবে বিধাতা ওর সৌন্দর্যের মাঝে অস্পষ্টতা দিয়ে দিয়েছেন; কোথাও একটু অধরা লাবন্য আছে, ধরা যাবে না জেনেও কাছে যেতে ইচ্ছা করে।

সেদিন না পরলেও অপালা অফিসে বা বাইরে জিন্স ফতুয়া পরে; কখনো কখনো হাতকাটা টপস বা ব্লাউজ। শরীর নিয়ে ওর তেমন শুচিবাই নেই; যা ভালো লাগে চিন্তা না করেই পড়ে। হাতকাটা জামা পড়লে চুলগুলো যখন মাঝে মাঝে ওর মোমবাতির আলোর মতো কোমল বাহু ছুঁয়ে যায় ওর নিজেকে বড্ড সুন্দর লাগে। ঠিক যখন শার্টের বোতাম খুলে একজন পুরুষ তার বুকের লোম দেখায় তখন যেমন তার নিজেকে পুরুষালী মনে হয় তেমনটা।

অপালা আর কেউ কথা না বললে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। ওই লোভী আঙ্গুলগুলো অপালাকে অচ্ছুৎ করে দিয়েছে। কিভাবে সেটা ও আজও ভেবে পায় না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শত শত ছবি, ভিডিও; ফেসবুকে, ফোনে, টেলিভিশনের পর্দায়, খবরের কাগজে অপালা; সোশাল মিডিয়াতে ঝড়, হাজার হাজার শেয়ার, লক্ষ লক্ষ লাইক; প্রেস ক্লাবের সামনে উদ্ধারকারীদের ভাষণ, প্রশংসার বন্যা।

অসংখ্য ভিডিওতে, ছবিতে ওই পশুগুলোর মুখ; মেয়েদের কাপড় ছিঁড়ে ফেলছে, অশালীন হাতগুলো বেপরোয়া ভাবে শরীরের খাজে খাজে। অথচ ওই জানোয়ার গুলোর শাস্তি হলো কই? পুলিশ লোক দেখানোর জন্য চার পাঁচ জনকে গ্রেফতার করলো, আবার ছেড়েও দিলো। তবে কি অপালা একাই ওই পশুগুলোর মুখ দেখতে পায়? অন্যেরা কি ওদের দেখতে পায় না নাকি সবাই শুধু দেখছে অপালার খোলা পিঠ, সুন্দর কফি রঙের পিঠ, ওর ছটফটিয়ে ওঠা মরাল গ্রীবা, লজ্জায় ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া অর্ধনগ্ন শরীর। আশ্চর্য!!! ওর কষ্ট, ওর লজ্জা, ওর সমস্ত পৃথিবী ভেঙ্গে পড়া, বা বছরের প্রথম দিনটিতে মনুষ্যত্বের ওপরে বিশ্বাস হারানো কি কেউ দেখতে পায় না?

৪.
অফিস থেকে মাহমুদ সাহেবকে বলে অপালা একটু আগেই বেরিয়ে গেলো। অপালার আসলেই শাড়ী পরে আর ভালো লাগছে না; মনে হচ্ছে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছে। বাসায় গিয়ে শাড়ী খুলে ফেলবে; আজ মনে হয় বই মেলায় যাবে না। গলির মোড়ে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতেই জোর শীষের শব্দ। হালকা গানের কলি ভাঁজা শীষ না, মুখে আঙ্গুল পুরে কুকুর ডাকা শীষ। এই শীষে হালকা আনন্দের ছোঁয়া নেই, আছে অশ্লীল ভাবে কাছে ডাকা হুকুম।

অপালা ঘুরে দেখতেই মোড়ে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটেদের মুখে হালকা হাসির আভা; চোখের লোলুপ দৃষ্টি বলছে “শীষে কাজ হয়েছে…শিকার চোখে চোখ রেখেছে…আব আয়েগা মজা…” ও তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মন্তব্য কানে এলো “এই সব চরিত্র খারাপ মেয়ে মানুষদের জন্য পাড়ার ছেলেপুলে নষ্ট হইয়া যাইতেছে…” “হরিন নাচতে নাচতে বাঘের সামনে যাইবো আর বাঘ চাইয়া চাইয়া দেখবে এমন কথা কেউ কোনদিন শুনছে?” পাড়ার কয়েকজন মুরব্বী আসরের নামাজ সেরে মসজিদ থেকে হেঁটে ফিরছেন।

অপালার হঠাৎ হাসি পেলো। অবশেষে পদোন্নতি, তেঁতুল থেকে হরিণ। ওনারা বিজ্ঞ প্রবীন বলেই না এমন সুন্দর কথা বলতে পেরেছেন; পরনের শ্বেত বসনের মতো ওনাদের মনটাও শুভ্র…হা হা হা!! ও নিজের অজান্তেই জোরে হেসে ফেলে চমকে গেলো। বখাটে ছেলেগুলো কেমন ভড়কে গেছে; মুরুব্বীদের চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়। আশেপাশের সবার চেহারা দেখে অপালার আরো হাসি পেলো।

অপালা হাসি থামাতে পারছে না; হাসতে হাসতে ও বাসার দিকে পা বাড়ালো। ও বুঝতে পেরে গেছে কেন সবাই এমন? কেন এই অদ্ভুত সমাজ ডাকাতি হবার পরে গৃহস্থকে বলে তোমার বাসায় এতো সুদৃশ্য দরজা কেন? চুরিতো হবেই, তুমি ডাকাতকে দরজার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করেছো। দরজা পালটে ফেলা যত সহজ চোর ডাকাত ধরা এতো সহজ নয়; চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী।

একজনের দিকে আঙ্গুল তুলে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়; না হলে যে সবাইকে দায়ভার নিতে হয়, স্বীকার করতেই হয় এই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুন ধরেছে। এই ভালো!!! ভেবে নেয়া সব ঠিক আছে; দোষ সেই মেয়েটির যে সুন্দর করে সেজেছে, শরীরের বাঁকে যে যৌবন হাতছানি দেয় সেতো অনাহূত ছোয়া পাবার জন্যই। ওই পঙ্কিল আঙ্গুল গুলোর আর দোষ কি?

৫.
আসলাম বাসায় ফিরে অবাক হয়ে অপালাকে দেখছে। টকটকে লাল শাড়ী; শাদা কালো হাতকাটা ব্লাউজ। রক্তলাল ঠোঁট; কপালে মস্ত লাল টিপে যেন পলাতক বিকেলের সূর্য। বামপাশে লম্বা বিনুনী; কাজল টানা গভীর কালো চোখে মোহময়ী আহ্বান। বড্ড লাস্যময়ী, বড় ভয়ঙ্করী সুন্দর লাগছে ওকে; ঠিক যেন আগুন ঝরানো ফুলভারে নত শিমুল গাছ।

ও অবাক হয়ে বললো “অপা…তোমার কি হয়েছে? এতো সেজেছো কেন?” অপালা হাসছে; হেসেই যাচ্ছে। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আসলামের কেন যেন গা ছমছম করতে লাগলো।

(ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২৯

রায়হান মজিদ বলেছেন: ai desher je ki hobe?

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৩১

শিখা রহমান বলেছেন: রায়হান মজিদ আসলেই!! :-(

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৯

বৃতি বলেছেন: মেয়েদেরকে দোষ দিয়ে ফেলাটা সবার জন্য সহজ। তাতে পুরুষদের (এমনকি অন্য কিছু মেয়েদেরও) দায় দায়িত্ব অনেক কমে যায় :)
সময়োপযোগী একটি গল্প।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৩২

শিখা রহমান বলেছেন: "মেয়েদেরকে দোষ দিয়ে ফেলাটা সবার জন্য সহজ। তাতে পুরুষদের (এমনকি অন্য কিছু মেয়েদেরও) দায় দায়িত্ব অনেক কমে যায়।" --- সহমত। সুন্দর বলেছেন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮

আমিই মিসির আলী বলেছেন: পিঠটা সুন্দর।
তেতুল!
কি সব শব্দ!!

গল্প ভালো লাগছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩

শিখা রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: নতুন পোস্ট দিন শিখা রহমান।

কেমন আচেন?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫

শিখা রহমান বলেছেন: বিজন কেমন আছেন? হুউউ..অনেকদিন এখানে পোষ্ট করা হয় না। আপনি কেমন আছেন? আমি ভাল এবং ব্যস্ত।

৫| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: চেনা বিষয়ের গল্প, কিন্তু পড়ে অসম্ভব রকমের অসাধারণ মনে হলো। চরিত্রগুলোকে বাস্তব করে টেনে এনেছেন।
২০১৬ এর বইমেলায় আমার প্রথম বই আত্মপ্রকাশ করেছিল। অনেক যেতাম, একটু অন্য ধরণের ভাল লাগা অনুভব করতাম।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৩৭

শিখা রহমান বলেছেন: খায়রুল আহসান পহেলা বৈশাখের ঘটনাটা খুব আলোড়িত করেছিলো আমাকে, এখনো করে। সত্যি ঘটনাকে নিয়ে লেখা বলেই হয়তো গল্পটা চেনা চেনা মনে হয়েছে। চরিত্রগুলোকেও বাস্তব মনে হয়েছে শুনে ভালো লাগলো।

আমি কখনোই বই মেলায় যাইনি। আসলে এমন সময়ে হয় যে কাজে ছুটি মেলা ভার। খুব ইচ্ছে আছে একবার যাওয়ার।

ধন্যবাদ আমার পুরোনো এনং খুব প্রিয় একটি গল্প খুঁজে পড়ার জন্য। শুভকামনা নিরন্তর।

৬| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৮

নীল আকাশ বলেছেন: আপু, আপনার সাথে সাংঘর্শিক বিষয় নিয়ে খুবই কম কথা হয়, তবে আজকে মনে হয় হবে.............

পহেলা বৈশাখ এবং এর সাথে জড়িত সব কিছুর ব্যাপারে আমি যা বিশ্বাস করি সেটাই নীচে বলে গেলাম: -
নতুন বছরের প্রথম দিনে নারী-পুরুষের মুখে উল্কি আঁকা, বড়বড় পুতুল, হুতুম পেঁচা, হাতি-কুমির-সাপ-বিচ্ছু ও ঘোড়াসহ বিভিন্ন জীব-জন্তুর মুখোশ পরা প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ একসঙ্গে অশালীন পোশাক পরে অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢোল বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করে র‌্যালি করে। এটা কি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না? ইসলামে এটা কবে থেকে সমর্থন করছে?

ইসলামের বিশ্বাস মতে কোন জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না। মুসলমানদের বিশ্বাস মতে ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সব কিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলমানকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই। ছুরা ইখলাছ বাংলা অর্থ কি পড়ে দেখেছেন ?

ইসলাম অনাত্মীয় নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ অনুমোদন করে না এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই পর্দার বিধান জারি করেছে। এটা কি আমি ভুল বলেছি ?

ইসলাম যেটা হারাম ঘোষনা করেছে সেটা সর্বাবস্থায় হারাম। হাজার বছরের ঐতিহ্য হলেও হারাম, কোটি বছরের সংস্কৃতি হলেও হারাম। হাজার বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ভুল করেছে বলে আমাদেরকেও সেই একই ভুল করতে হবে - এটাই বা কেমন আবদার? আমাদের প্রায় সবার পূর্বপুরুষই একসময় হিন্দু ছিল। তারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। আমরা কি এখনোও তাদের মতো ভূল করে যাবো? কিন্তু যারা এই সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে - অর্থাৎ যারা অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করছে তারা চায় আমরা যেন আবার আমাদের পূর্বপুরুষদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করি। তারা আমাদেরকে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনিয়ে হাজার বছর পেছনে নিয়ে যেতে চায়। আমাদেরকে পশুপাখি ও মূর্তির পূজারী বানাতে চায়, অশ্লীলতা ও নোংরামীতে নিমজ্জিত করতে চায়। কিন্তু সচেতন মুসলিমরা কখনোই বিভ্রান্ত হয় না।

আপনি কি জানেন না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যে কাউকে অনুকরণ করে, সে তাদের মধ্যে অন্তর্গত হয়"।

এই রকম দেব দেবীদের কাছে প্রার্থনা করবে আর অস্লীল কর্মকান্ড করে বেড়াবে সেখানে শয়তান এসে অঘটন ঘটাবে না তো কোথায় ঘটাবে? আপনিই বলুন! শয়তান তো ভালো মানুষের কাছে পাত্তা পায় না। পায় যত আজে বাজে লোকজনের কাছে যারা তাকে অনুসরন করে, আমি কি ভুল বললাম? বলুন।

যৌন হেরেস্তার ঘটনা তো পহেলা বৈশাখ নতুন না, আমার প্রশ্ন হচ্ছে জেনে শুনে কেন ওখান যাবে? কি দরকার জেনে শুনে নিজেকে বিপদে ফেলার?

যারা এইসব অঘটন ঘটায় তারা সব পলিটিক্যাল ছেলে, সরাসরি উপর থেকে এদের সমর্থন আসে। জানা কথা এদের কেউ কিছু করতে পারবে না। সেখান কি নিজের সাবধানে চলা উচিত না, বলুন? আমরা কি করি বলুন, যেখানে অহরহ চুরি ছিনতাই হয় সেখানে কি আমরা পারত পক্ষে যাই, বলুন! যেখান সামান্য টাকা পয়সা বাচানোর জন্য আমরা যাই না, সেখানে..আর বললাম না।

আমি কাঠমোল্লাও না, মৌলবাদীও না, শুধু আমাকে বলেন, বাঘ ভালুকের মুখোস পরে কি ভালো আপনি নিয়ে আসবেন বা সেখানে চান?

ধন্যবাদ।
[আমি আপনার সব লেখা আস্তে আস্তে পড়ছি, সব গুলি শেষ করতে মনে হয় সময় লাগবে]



৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪২

নীল আকাশ বলেছেন: অপলা নাম টা আমার ভিষন পছন্দের একটা নাম। আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটা গল্প ছিল অপালা চরিত্র নিয়ে। গল্পটা পড়ার সময়, এই চরিত্রটা আমার মনে খুব ভালো ভাবেই স্পর্শ করেছিল, ঠিক এখন যেমন আপনার টা করল।

শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.