নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্মশান ঠাকুর

শ্মশান ঠাকুর

nothing to say

শ্মশান ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষাণীর চন্দ্রিমা::::পর্ব :: মধুচন্দ্রিমা....১

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৩৩

কাঠের দোতলা বাড়ির জানালায় শেষ বিকালের রৌদ্র এসে পরেছে। জল জানালার কাছে দাড়িয়ে বাহিরটা দেখছে কিন্তু তার মনোজগত ঘরের ভিতর। রৌদ্র চলে যাবার পর যে রাত আসবে, তা জলের জীবনে বিশেষ রাত। প্রতিট মানুষের জীবনে তাই হয়।



জল একটি তাতের শাড়ি পরে আছে। সারাদিন শরীরের সাথে লেগে থাকায় তা শরীরের সৌন্দর্যের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছে। নতুন কচুরি পাতার মতো সবুজ রঙের শাড়ি, গাঢ় লাল রঙের আচল এবং পার। জলের কাধ বেয়ে আচঁল নেমে গেছে তার কোমেড়। তাঁতের শাড়িকে শরীরের সাথে মানিয়ে নিতে পারলে, তার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়। জলের শাড়ির ভাঁজ ভেঙ্গে গেছে শরীরের সঙ্গতায়।



জানালার পাশে রাখা টেবিলে কিছু শিমুল ফুল। জলের আচঁলের সাথে মিশে গেছে শিমুল ফুলের লাল।



জল কখনো শিমুল ফুলে হাত বুলায়নি, কৃষ্ণচূড়াও স্পর্শ করেনি। গাছে অনেক দেখেছে কিন্তু শহরে বড় হওয়া মানুষ ফুলের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য জীবনকে সময় দেয় না। জল ফুল, মাটি ভালবাসে এবং আমি জলকে ভালবাসি। বসন্তের শুরুতে প্রচুর ফুল ফুটেছে, বসন্তের ফুল লাল কিংবা হলুদ হয়। জসন্ত হলো উজ্জল ফুলের সময়। বর্ষায় সাদা কিন্তু সুগন্ধী ফুল ফোটে।



বাড়ির সামনের পলাশ গেছে আজ প্রথম ফুল ফুটেছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য লালের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে লাল বৃত্ত তৈরি হয়। ভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। জলের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আজ ভ্রান্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর জল আকাশে উড়ে যাবে। বাষ্প হয়ে যাবে কিংবা জলের চকচকে ডানা তৈরি হবে, জল সেই ডানায় ভর দিয়ে আস্তে আস্তে চলে যাবে।

জলের মুখে রৌদ্রের প্রভা লাগায়, উজ্জল হলুদ রঙের আরবণ আরো হলুদ লাগছে। বিয়ের সাজে নেই জল কিন্তু সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, কোন আনাড়ি চিত্রকর প্রিয়তমার গায়ের রঙ লাগাতে গিয়ে, হলুদ রঙ শেষ করে ফেলেছ।



বাহিরে কিছু একটি দেখে জরের চোখ বড় হয়ে আবার ছোট হয়ে যায়। জল চোখের উপর এবং নিচে সাজায়। আর কিছু না হলেও , সে চোখে কাজল ব্যবহার করবেই। সকালে মুখ ধুয়ে সে চোখে কাজল লাগায়।



একটি হাত জানালার লোহার শিকে অবহেলায় রেখে দেওয়ায়, তার সুতি ব্লাউজের একটি অংশ বের হয়ে আছে। শাড়ি ডরলে বুকের একটা অংশ প্রায় অর্ধেক ঢেকে থাকায় নারীকে আরো কুয়াশার ভিতর নিয়ে যায়। ব্লাউজের রঙ লাল। শাড়ির আঁচলের সাথে মিরিয়ে নেওয়া। জলের মাথায় একটি বেণী কোমড় ছু্ছুই। মেরুদন্ডের হাড় বেয়ে তার বেণী নেমে গেছে। জলের চুল কোঁকড়া, বড় করার কারণে অসাধারণ লাগে। মিথের েদবীদের এমন চুল হয়। জলের চুল ছেড়ে দিলে সারা পিঠ চুলে ভরে যায়।



জলের ছায়া ঘরের ভিতর এসে পরেছে, পাশে শেষ বিকেলের রৌদ্র। জলের ছায়ার কাছে রৌদ্রকে বড় মলিন মনে হচ্ছে। কনে দেখা রৌদ্রের চেয়ে, বিয়ের কনে হাজার গুন বেশি সুন্দর, তারচেয়ে বেশি সুন্দর মাত্র বিবাহিত নারী মধুরাতের অপেক্ষায়, যে বিকেল পার করছে।

জলের পা খালি। ফর্সা পায়ের গোড়ালি দেখা যাচ্ছে শাড়ির নিচে। ফর্সা পায়ের গোড়ালি দেখা যাচ্ছে শাড়ির নিচে। চিকন গাছের পাতার মতো পায়ের ডাতা। জলের গায়ের গঠন পাতলা। শরীরে অতিরিক্ত মেদ নেই কিন্তু যৌবনের পরিপূর্ণতা আছে। নারী গঠনের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য তার শরীরে বর্তমান। জলের ভিতর রাতের অপেক্ষায় বুক ধুক ধুক করে, কি এক অজানা অনুভূতিতে বারবার নিজের ভিতর হাড়িয়ে যাচ্ছে সে। বাহিরে প্রকৃতির তৃষ্ণায় জলের প্রয়োজন হয়।



বাতাসে উতলা আবেগ, বাষ্প করে দেয় মন। গাছের পাতায় বৃষ্টির হাহাকার। ধুলার প্রলেপ পরে থাকা চিরহরিৎ বৃক্ষের দৃষ্টি আকাশের দিকে। কান খাড়া করে, সে বৃষ্টির অপেক্ষায় আছে। হাজার মাইল দূর থেকে মেঘ উড়ে আসছে। এক ঝাপটা জল ছিটিয়ে দেবার জন্য। ঘাছের পাতারা বছরের প্রথম বৃষ্টিতে নিজেদের দন ধুয়ে নেবার জন্য অপেক্ষায় আছে। বাতাসে গোপন খবর আছে, শীতল মেঘেদের দেশ থেকে। আজ তারা আনন্দ বিলাসে বের হবে।



বাহিরে আমের মুকুলের কড়া গন্ধ। শীত চলে গেছে কিছু দিন হলো। সামনে বসন্ত। প্রকৃতি বসন্তকে আলাদা রকম করে সাজায়। বসন্তে সঙ্গী খোজে মন। মানুষ বসন্তের আগে বিয়ে করে। জলের বিয়ে বসন্তকে সামনে রেখে হয়নি। বসন্ত তার বিয়ের সামনে এসেছে। অন্য কোন ঋতু হলেও জলের জীবনে আনন্দের কমতি হতে না। সে ঋতুর মতো করে হতো।

জল এক পায়ে ভর দিয়ে, আরেক পায়ের আঙ্গুলে সে পায়ের ভর নেয়। কোমড় বেকে একদিকে খানিকটা নেমে দাড়ায়। জল মোনযোগ দিয়ে বাহিরে পাখির শব্দ শোনার চেষ্টা করে। জলের মেদহীন পেটে ভাঁজ পরে। শেষ বিকালের এই বাঠির বািড়র দোতলায় জানালার কাছে, না দাড়িয়ে জল যদি স্বর্গের কোন প্রাসাদের জানালায় গিয়ে দাড়াতো তবে, তাকে ভিনাস কিংবা আফ্রেদিতির চেয়ে সুন্দরী লাগতো। জলের মুখে ভালবাসার অনুভূতি খেলা করে যাচ্ছে। মুখের রঙের সাথে পাল্টে যাচ্ছে অনুভূতির স্পর্শ। জল শাড়িতে অভ্যস্ত নয় কিন্তু তার এই নতুন শাড়িতে দীর্ঘ সময় তাকে আরো মাধূর্য্য দিয়েছ। নাভীর উপর শাড়ি পরেছে জল। চাঁদের মতো মেঘের ফাঁকে তার নাভী দেখা যাচ্ছে। মেদহীন পেটে ভাঁজ পরে আছে। বিয়ের পর মেয়েদের খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম চলে আসে। জলও দুইদিন ধরে তেমন কিছু খায়নি। যা খেয়েছে পরিবেশ এবং গ্রহন প্রক্রিয়া রক্ষার জন্য কিন্তু এই খানিকটা দুর্বণতা জলকে আরো রমনীয় করে তুলেছে। জলের ভিতর হতে তার নারী শক্তির প্রখরতা টের পাওয়া যায়, মনের ভিতর থেকে জল শক্তি পায়, আহার থেকে নয়।



জলকে বরণ করে নেবার জন্য প্রকৃতি নিজেকে আবরনহীন কেরে প্রকাশ করেছে। একটি রঙের ভীতর হাজার রঙের চক্র শেষ করে যখন যে, নতুন রঙ সামনে চলে আসে, তা লক্ষ্য করার উপায় নেই। রাত-দিনের মধ্যবর্তী সময় আলো- অন্ধাকার এক সাথে মিশে যায়। জল আর মিটি যেমন একটি পৃথিবীর বৃত্তে একে অপরকে অবলম্বন করে আছে।



বাহিরে কোকিল ডেকে উঠে। জল কোকিলের কন্ঠ চিনতে পারে। পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে তার ভিতর চঞ্চল হয়ে উঠে। সে খুশিতে বাহিরে বিশাল বাগানের ভিতর কোকিল খুজতে চেষ্টা করে।

কিছুক্ষ পর হাজার পাখির শব্দে কোকিলের কন্ঠ মিশে যায়। চারপাশের আকাশ থেকে অসংখ্য জাতের পাখি উড়ে আসছে জলকে দেখার জন্য। নিজেদর মধ্যে তারা নানা কথা বলছে। জল এতে পাখি কখনো দেখেনি। বিভিন্ন জাতের পাখি হঠাৎ করে চোখের সামনে আসলে, পরিচিত চড়ুইকেও অচেনা লাগে। অজানা লাগে। পাখিরা িনেজেদর মধ্য কথা বলে,

`একটা নতুন জোড়া হয়েছ।'

` সুন্দর জুটি।'

` মেয়েটা কি সুন্দর!'

` আমার চেয়ে এই মেয়েটির ঠোট বেশি সুন্দর।' মেয়ে পাখিটি অভিমান করে। জল হেসে দেয়। পুরুষ পাখি সঙ্গীর ঠোট ঘষে দেয়। জলের চোখ তাদের ভাষা বুঝতে পারে কিন্তু এতো কল কাকলির মধ্যে, অন্য পাখির সাথে তার পরিচয় হয়।

` তুমি বুঝি নতুন বউ! তা আমরা তোমাদের প্রতিবেশী, একটু সামলে!' জলকে সাবধানতার কথা বলে যায় বুড়ি ডাহুকী। তার ডাহুত মারা গেছে, না সাবধান ঝড়ে।



....(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-১

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:০৩

দ্বীপ ১৭৯২ বলেছেন: অনেক সুন্দর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.