নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক দিনের দেশপ্রেম...?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১৯


আমরা একদিনের দেশপ্রেম দেখানো জাতি! যেটা শুধু লোক দেখানো আর ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট পাওয়ার দেশপ্রেম। সর্বোপরি সবাই আমরা হুজুগে দেশপ্রেমিক। সত্যি কারের দেশপ্রেম কি আসলেই আমাদের কারো মধ্যে আছে?

দেশপ্রেম কি শুধু ফেসবুকে লাল-সবুজ প্রোফাইল বা কভার ফটো পরিবর্তন করলেই হয়ে যায়? একদিন গাড়ির বনেটে পতাকা ঝুলিয়ে? বা অফিসের ডেস্ক এ ছোট্ট একটা পতাকা উড়িয়েই কি দেশপ্রেমীক হয়ে গেলাম আমরা? এই প্রশ্ন আমার নিজের কাছেই নিজের?

আপনারা নাহয় নিজেদের কাছে নিজেরাই জিজ্ঞাসা করুন?

আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করিনা যে একদিন পতাকা ঝুলিয়ে, দুলিয়ে, উড়িয়ে বা ফেসবুকের প্রোফাইল আর কভার ফটো পরিবর্তন করে আর একদিন জাতীয় সংগীত গাইলেই সেটা দেশপ্রেম বা দেশপ্রেমীক হতে পারে?

আমি মনে করি দেশপ্রেম আগে নিজের কাছে নিজের দেশ, সেই দেশের মানুষ, সমাজ আর সার্বিক অবস্থার উপরে থাকতে হবে। দেশপ্রেমীক হবার আগে নিজের কাছে নিজের সৎ আর সাহসী হতে হবে। দেশপ্রেমীক হতে হলে কারো এতটুকু ক্ষতি হয় তেমন কিছু না করাকে দেশপ্রেম বা দেশপ্রেমীক বলে। দেশপ্রেমীক হতে হলে নিজের কাছে আগে নিজেকে স্বচ্ছ, সুন্দর আর আত্নপ্রত্যয়ী হতে হবে। নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি আমি নিজের নিজের কাছে দেশপ্রেমীক।

সত্যিকারের দেশপ্রেমীকের সদ্য পাওয়া দুটি উদাহারন দেয়া যেতে পারে।

উদাহারন একঃ
গত পরশু একটা কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। তো সেখান থেকে ফেরার সময় বেশ কমদামে কিছু সবজি আর তরকারী কিনে এনেছি। ঢাকার প্রায় অর্ধেক দামে। তো সেগুলো কিনে এনে বাসায় বেশ রসিয়ে রসিয়ে রান্না-খাওয়া আর কত কম দামে কিনলাম সেই ফিরিস্তি দিচ্ছিলাম। তো একটা তরকারী কিনেছিলাম প্রায় ৫ কেজি কিন্তু যে দাম চেয়েছে তার প্রায় অর্ধেক দামে! তো যার এলাকায় গিয়েছিলাম সে খুব কষ্ট পেল এতে! কেন?

কারণ সে চায়না তার বাড়ির গরীব কৃষক যে এতো কষ্ট করে সবজি উৎপাদন করেছে, তার কোন ক্ষতি হোক, বা মুনাফা কম হোক। কেন তার সাথে দামদামি করলাম আর তাকে অর্ধেক দাম দিলাম সেটা নিয়ে সে খুবই কষ্ট পেয়েছে! এই যে সেই কৃষকের জন্য কষ্ট পাওয়া, আমার কাছে এটা হল সত্যিকারের দেশপ্রেম।

সে কখনো তার এলাকায় গেলে গরীব রিক্সাওয়ালার সাথে কোন দাম করেনা বা ভাড়া ঠিক করেনা, এমনকি এই ঢাকা শহরে সে তার কোন এলাকার রিক্সাওয়ালা পেলে যে ভাড়া তার চেয়ে ৫/১০ টাকা বেশী দেয়, যেন সে খুশি হয়, যেন তার একটু ভালোলাগে, যেটা তাকে অনেক আনন্দ আর তৃপ্তি দেয়। আমার কাছে এটা হল সত্যিকারের দেশপ্রেম।


উদাহারন দুইঃ
যেটা আমার দেখা, শোনা বা জানা সেরা দেশপ্রেমের উদাহারন। যেটা একবার পড়ার পরে মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে তার দেশপ্রেমের অভাবনীয় দৃষ্টান্ত। সেটা হল, আমাদের সবার পরিচিত আর অনেকের কাছেই এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত কোন এক বিজয় দিবসের কোন এক লেখা বা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তার সুযোগ ছিল, তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে আমেরিকায় জন্ম দিয়ে সে দেশের নাগরিক বানানো বা সেই পরিবেশে বড় করে তোলার, কিন্তু সেটা তারা করেননি! কারণ তারা চান তাদের ছেলে-মেয়ে দুটি এই দেশে জন্মনিক, এই দেশের আলো-হাওয়া-মাটি-সুন্দর-অসুন্দর সবকিছু দেখুক, সেভাবেই বড় হোক, যেভাবে এই দেশের সাধারণ ছেলে-মেয়ারা বড় হচ্ছে বা হয়েছে। তারা অল্প হোক বা বেশী দেশে থেকে দেশটাকে কিছুটা জানুক।

আমার কাছে এটা হচ্ছে সত্যিকারের দেশপ্রেম। আমার কাছে এটা হচ্ছে এখন পর্যন্ত দেখা সেরা দেশপ্রেমের উদাহারন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তবে যারা যুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে তারা কি দেশপ্রেমিক নয় বা ছিলেননা? অবশ্যই তারা দেশপ্রেমিক। তবে তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, যারা সে সময় যুদ্ধে গিয়েছিলেন তাদেরকে তো আমি আমরা বর্তমান প্রজন্ম দেখিনি, তাই তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলার মত যোগ্যতা বা অধিকার আমার আছে বলে আমি মনে করিনা। আমি নাহয় আমার স্থুল অনুভূতি দিয়ে আমাদের প্রজন্মের দেশপ্রেমের কথাই বলি। যা চারপাশে দেখি আর দেখছি, বিশেষ দিনে, বিশেষ দেশপ্রেমের সাময়িক বহিঃপ্রকাশ।

এবার আমাদের দেশপ্রেমে কোন পর্যায়ের তার কয়েকটি উদাহারন দেই, আপনারা নাহয় এরপর বিবেচনা করে দেখুন আর নিজের সাথে মিলিয়ে দেখুন আপনার আমার আর আমাদের দেশের বাকি সবার কার কতটুকু দেশপ্রেম?

১) যারা নীতি নির্ধারণ করে তারা কোন রকম ট্যাক্স দেয়না, এটা হল আমাদের দেশপ্রেম। সব লুটেপুটে খায় নিজের আরাম আয়েশের জন্য, এটা হল আমাদের দেশপ্রেম। সেই তারাই আবার বিশেষ দিনে পতাকা ওড়ায়, জাতীয় সঙ্গীত গায় আর দেশ নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা দেয়! কিন্তু দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার কথা তারা একবারও ভাবেনা। এই হল তাদের দেশপ্রেম!

২) শিক্ষা অফিসে, আদালতে, অন্যান্য সরকারী অফিসে, যেখানেই যাবেন, ঘুষ ছাড়া একটা কাজও হয়না, বা হলেও হাজারো বিড়ম্বনার শিকার হবার পরে। সেই তারাই আবার পতাকা দোলায় বিশেষ দুই একটি দিনে, বড় বড় কথা বলে, জাতীয় সঙ্গীত গায়। এই একদিন তাদের বিবেক জাগ্রত হয়ে ওঠে, দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ হয়ে ওঠেন তারা। আর অন্যান্য সময় তাদের বিবেক ঘুমিয়ে থাকে, আর তাদের দেশপ্রেমের বোধ বধীর হয়ে যায়। এই হল তাদের দেশপ্রেম।

৩) আমরা অফিসে বসে এঁকে অন্যের পিছনে কে কতটা লাগতে পারি, কে কতটা রাজনীতি করতে পারি, কার প্রমোশন আর বিশেষ সুবিধা (ভালো কাজের জন্য!) পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারি, সেসব নিয়ে সব সময় সচেষ্ট থাকি। কাকে কোন ভাবে হেনস্তা করা যায়, ছোট করা যায়, অন্যের কাছে খারাপ বানানো যায়, সেসব নিয়ে অনেক সময় কাটাই, এসবে আমাদের বিবেক বাঁধা দেয়না। আর বছরের দুই-একদিন অফিসের ডেস্ক এ জাতীয় পতাকা ঝুলিয়ে, ফেসবুকের প্রোফাইল আর কভার ফটো পরিবর্তন করে দেশপ্রেম দেখাই!
চাইলে এমন ভুরি ভুরি দিন-ভেদে দেশপ্রেমের উদাহারন দেয়া যায়, সেটা আপনি আমি আমরা সবাই জানি। তাই কথা না বাড়িয়ে শেষ আর একটা দেশপ্রেমের উদাহারন দিয়ে শেষ টানি।

৪) আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। গত কয়েকদিন আগে একজন চাকুরীজীবী পাশাপাশি আমাদের এখানে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে এমবিএ করছিল। তো গত সপ্তাহে অফিস আর পরে ক্লাস শেষে তিনি রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে ছিনতাইকারী তার ব্যাগ টেনে নিয়ে যাবার সেটা করাতে সে রিক্সা থেকে পরে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে, রাস্তায় পড়েছিল। শত শত মানুষ রাস্তা দিয়ে হেটে গেছে, তাকে পরে থাকতে দেখেছে, কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেনি।

শেষে দুই রিক্সাওয়ালা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে, ততক্ষণে তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে, অকালেই। আর আমরা যারা তাকে দেখেও উপেক্ষা করে চলে গিয়েছি। আর আগামীকাল বা পরশু গাড়িতে, বাড়িতে, গায়ে-মাথায়, ফেসবুকে লাল-সবুজের ছবিতে আর পতাকায় ভাসিয়ে দিয়ে নিজেদের দেশপ্রেম জাহির করে লাইক আর কমেন্ট পেয়ে সুখ পাবেন। এই হল আপনার আমার দেশপ্রেম। আর এই মানের দেশপ্রেমীক আমরা সবাই।

৫) আর একটা কথা না বললেই নয়। নিজের কাছে নিজের লেখা অপূর্ণ থেকে যাবে। সেটা হল, আমরা এখনো বাসের ভিড়ে, সিটে, দাড়িয়ে, বাজারে, দোকানে, অফিসে, মেলার মাঝে সুযোগ আর সুবিধা মত মেয়েদের শরীর স্পর্শ করার সুযোগ হারাই না। একটু সুযোগ পেলেই ছুঁয়ে দিতে মন উসখুস করে, যেটা যে কোন সভ্য মেয়ের কাছেই চূড়ান্ত অপমান আর অবমাননা, যেটা সেই যুদ্ধের সময়ের হানাদার বাহিনীর আচরণের চেয়ে খুব কম কিছু নয়, সময় আর পরিস্থিতির বিচারে। অথচ সেই আমরাই কাল বা পরশু জাতীয় পতাকা ওড়াবো, বাড়িতে বা গাড়িতে, অফিসের ডেস্কএ, মাথায়-কপালে, গালে বা ফেসবুকের টাইম লাইনে। এই হল আমাদের দেশপ্রেম। এই মানের দেশপ্রেমিক আমরা।

এবার আসুন, আপনি-আমি-আমরা নিজ নিজ দেশপ্রেম আর দেশপ্রেমের পরিধি আর গভীরতা নিয়ে ভেবে দেখি, আমরা কে, কতটা আর কেমন দেশপ্রেমীক? কি বলেন?

শুধু একদিনের জন্য পতাকা লাগিয়ে, ছবি বদল করে আর জাতীয় সংগীত গাইলেই দেশপ্রেম দেখানো যায় বা দেশপ্রেমীক হওয়া যায় বলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করিনা। দেশপ্রেম দেখাতে হলে আগে নিজের কাছে সৎ হতে হবে, আত্মীয়-স্বজন আর পরিচিতজনদের কাছে নিজেকে সৎ আর স্বচ্ছ প্রমাণ করুন, কারো কোন ক্ষতি হবেনা, করছিনা, এমন কাজ বা কথা না বলি, সেটা আগে নিশ্চিত করি। নোংরা রাজনীতি করে (অফিসে বা বাইরে) নিজের পেট না ভরে, অন্যের জন্য কিছু করে নিজের মনে আনন্দ পেলেন কিনা সেটা আগে নিশ্চিত করি।

যার যেমন সাধ্য সেই অনুযায়ী নিজের জন্য, অন্যের জন্য, দেশের জন্য সত্যিকারের মন থেকে কিছু করি, যেটা করে এক অনাবিল সুখ আর আনন্দে মন-প্রান ভরে যাবে তেমন কিছু করি। শুধু একদিন জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে, ছবি পরিবর্তন করে দেশপ্রেম দেখানো যায়না আর দেশপ্রেমীক হওয়া যায়না।

দেশপ্রেম আর দেশপ্রেমিক হতে হলে সেটা নিজের অন্তরে, মনে আর বিকেকে আগে ধারন করতে হবে, নিজের কাছে নিজের সনদ পেতে হবে যে আপনি আমি দেশপ্রেমীক, আপনার আমার সত্যিকারের দেশপ্রেম আছে।

তাই চলুন কম হোক বা বেশী, অল্প বা অনেক, সব সময় আর প্রতিদিনের জন্য দেশপ্রেমীক হই।

এক দিনের দেশপ্রেম না দেখাই আর

এক দিনের দেশপ্রেমীক না হই?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: এক দিনের দেশপ্রেমীক না হওয়াটা তখন যথার্থ হবে যখন দেশপ্রেমের পরিচয় বাস্তব জিবনে ফুটে উঠবে!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪

সজল জাহিদ বলেছেন: জি ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬

মোটরসাইকেল ভ্যালী বলেছেন: আপনার লেখায় আমাদের কিছু সংগতি অসাধারনভাবে ফুটে উঠেছে।

সুযোগ পেলে আমার ব্লগবাড়ীতেও পদধুলি দিবেন Click This Link

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৫

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, পদধূলি কেন? যাবো অবশ্যই।

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৩

কালীদাস বলেছেন: এইটা এমনকি দেশপ্রেমও না। ফ্যাশন বা ট্রেন্ড। সবাই করছে, আমাকেও করতে হবে টাইপের।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৫

সজল জাহিদ বলেছেন: হুম, ঠিক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.