নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনটি ওদের ছিল...

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩৬


প্রতি ডিসেম্বরের শেষে কোথাও না কোথাও বেরিয়ে পরাটা একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার। এই ডিসেম্বরেও নানা রকম প্ল্যান করে রেখেছিলাম। কিন্তু নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলনা কোথাও। বাসায় শুয়ে-বসে, গড়িয়ে, কাটিয়ে দিতে হল পুরো দুই সপ্তাহ প্রায়। এরপর যথা সময়ে আবার অফিস শুরু হল, ২০১৭ এর প্রথম সপ্তাহ।

অফিসে এসে দেখলাম সহকর্মীদের ব্যাক্তিগত আয়োজনে পিকনিকের পরিকল্পনা চলছে। তারপর লোকেশন আর চাঁদা পরিমাণ শুনে আমার মাথায় হাত, আর হাতে প্রায় হারিকেন ওঠার মত অবস্থা! যে আমি ২০০০ টাকায় ভারত ভ্রমণ করি, ৪০০০ টাকায় দার্জিলিং এর রিশপ-লাভা ঘুরে আসি আর মাত্র ৫০০০ টাকায় স্বপ্নের, সাধনার সান্দাকুফু ট্রেক করে আসি সে কি করে এতো এতো টাকা দিয়ে ঢাকার মধ্যেই জিন্দাপার্ক যেতে পারে? একদম জানিয়ে দিলাম আমি নেই।

কিন্তু আমার এক সহকর্মী প্লাস বন্ধু সে নাছোড় বান্দা, সে যাবে, চাঁদা দিয়েছে আর আমাকে যেতেই হবে। আমি যতই যুক্তি দেখাই না কেন যে এতো এতো টাকা দিয়ে আমি এই ঢাকার মধ্যেই বেড়াতে যেতে রাজী না, সে সেটা শুনবেনা। শেষ পর্যন্ত সে নিজেই আমার চাঁদাও দিয়ে দিল, আমাকে তার সাথে নিতে! কি আর করার, তাই অবশেষে সম্মতি দিতেই হল।


তো যেহেতু আমাকে যেতেই হচ্ছে, আর ঢাকার এতো এতো কাছে, অফিসের গাড়ি আছে, বেশ নির্ভাবনায় যাওয়া আর আসা যাবে তাই বাসায় যেতে যেতে ভাবলাম। তবে ছেলেটাকেও নিয়ে গেলে কেমন হয়? তার মা যাবেনা অফিসের ব্যাস্ততা আছে সেটা জানতাম। তবুও বাসায় গিয়ে ছেলেকে বলতেই ইয়েয়েয়ে... বলে লাফিয়ে উঠলো মুহূর্তেই। পাশাপাশি তার মাও তাকে আমার সাথে পিকনিকে যাবার অনুমতি দিয়ে দিল। এতে করে তার উৎসাহ আর উদ্দীপনা কয়েকগুণ বেড়ে গেল। পরদিন ওর চাঁদা দিয়ে সেটা কনফার্ম করা হল।

এরপর সে একবার শুধু জেনে নিল যে কবে, কয়টায়, কোথায় পিকনিকে যাচ্ছে, সেখানে যেতে কতদিন আর কত সময় বাকি আছে, আর সেখানে গিয়ে কি কি দেখার বা খেলার আছে? ব্যাস এরপর আর যাই কোথায়, যতক্ষণ বাসায় থাকি ততক্ষণ তার একটাই প্রশ্ন আর একটাই জিজ্ঞাসা আর কয়দিন পর আর কত সময় বাকি? প্ল্যান প্ল্যান আর প্ল্যান, কি কি সাথে নেবে, কোন ব্যাগে নেবে, কয়টা ড্রেস, সুইমিং এর জন্য কি কি? চকলেট, কেক, ফল, নুডুলস, আরও হাজারো পরিকল্পনা করে বসে বসে। একটা একটা পরিকল্পনা নিজের মত করে করে আর এসে সেটার বিস্তারিত শুনিয়ে যায়।

বেশ মজা পাই ওর এইসব পাগলামি পরিকল্পনা আর ক্ষণে ক্ষণে হাজারো প্রশ্নের একাধিকবার উত্তর দিতে। ও যেমন ক্লান্তিহীন ভাবে ওর প্ল্যানিং এর কথা বলে যায়, আমি তেমনি ক্লান্তিহীন ভাবে সেসব শুনি আর আমার মত করে, তবে ওর খুসি হবার মত করে উত্তর দিয়ে যাই। এতে সে দারুন মজা পায়, খুসি হয় আর সবচেয়ে যেটা ভালো সেটা হল, সাময়িকভাবে সকল রকম দুষ্টুমি বাদ দিয়ে প্রায় ভদ্র ছেলে হয়ে যায়! যেন আমি আবার পিকনিক বাতিল করে না দেই সেই সংকায়।


অবশেষে এলো সেই দিন। ছেলের অনেক স্বপ্নের আর ইচ্ছে মত কল্পনা করে নেয়া রঙিন আর হাসি-খুশিতে ভরপুর পিকনিকের দিন। ওর ইচ্ছেমত ব্যাগ গুছিয়ে, পছন্দমত সরঞ্জাম নিয়ে, ক্রিকেট, ফুটবল আর সাতারের সবকিছু নিয়ে অফিসের গাড়িতে উঠে বসলাম।

কিছুদূর যেতেই আর এক সহকর্মীর ছেলে-মেয়েসহ ওর বয়সী কয়েকজন পেয়ে গেল। এরপর সেই জিন্দাপার্ক পৌঁছে দেখা গেল প্রায় সকল সহকর্মীই তাদের ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে এসেছেন। বাহ দারুন বেশ বড়সড় একটা কচিকাঁচার দল হয়ে গেল। সাথে শুরু হল ওদের অবিরাম ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি, আর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ক্লান্তিহীন ঝাপাঝাপি।

সেই সাথে বিশাল জায়গা, মাঠ, গাছ-গাছালি, পুকুর, পুকুরে চলার মত বোট, ঝুলন্ত সেতু, দীঘির মাঝখানে দ্বীপের মত ক্ষুদ্র গ্রাম দিয়ে সাজিয়ে রাখা নান্দনিক কিছু, সারি সারি নারিকেল গাছ, দীঘির মাঝে মাঝে সিঁড়ি, ক্যাম্পিং এর জন্য খাটানো তাবু, ঝুলন্ত হ্যামক, এসব পেয়ে ছোট-বড় সবাই উন্মাতাল প্রায়।

বিরামহীন নাগরিক জীবনের নিরানন্দ ব্যাস্ততার মাঝ থেকে হঠাৎ এমন নীরব, নির্জন আর নিখাদ প্রকৃতি পেয়ে সবাই মেতে উঠেছিল নিজেদের মত উচ্ছ্বাসে। বিশেষ করে ওরা, কচিকাঁচারা, কিজে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস করলো দিনভর মন-প্রান ভরে গেছে দেখে ওদের এমন নিখাদ আনন্দ আর ইচ্ছেমত ছুটে বেড়ানোর স্বাধীনতা দিতে পেরে।

কেউ বাবা-মায়ের সাথে দীঘির বোটে উঠে আনন্দে উদ্বেল হয়েছে, কেউ ছোট ছোট গাছে চড়ে নিজের মত করে খুশিতে আত্মহারা হয়েছে, কেউ ক্রিকেট খেলেছে দিনভর, কেউ ফুটবল বা ব্যাডমিন্টন। কেউ ছুটে বেরিয়েছে জলে আর জঙ্গলে, কেউ গড়িয়েছে খোলা প্রান্তরের সবুজের মাঝে। কেউ হ্যামকে দুলে, প্রথম অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পেয়েছে আর কেউ ধুলো লাগিয়ে নতুন কিছুর গন্ধ পেয়েছে। সেসব ওদের কাছে একদম নতুন আর একদম অবাক করার মত লেগেছে।


ওদের কারো চোখে-মুখে ছিলোনা কোন আতঙ্ক, ভয় বা মা-বাবার বকা খাবার কোন শঙ্কা। নিজেরা নিজেদের মত করে যেন খুঁজে পেয়েছিল এই প্রথম! ইচ্ছেমত দৌড়ঝাঁপ আর খেলাধুলা, সাধ মিটিয়ে গড়াগড়ি আর ছুটে চলা, বাধাহীন পাগলামি আর বিরামহীন ঘুরে বেড়ানো। ওদের সারাটাদিন ছিল শুধু আনন্দ আর আনন্দে ভরপুর। এর উপর ছিল সবার জন্য পুরস্কার।

সবকিছু মিলে ওরা যে আনন্দটা করেছে, ওদের যে বিকাশটুকু হয়েছে, ওরা যে স্বাধীনতাটুকু সেদিন পেয়েছে সেটা আমরা চাকুরীজীবি আর শহরে থাকা মা-বাবারা কিছুতেই দিতে পারিনা শত ইচ্ছা আর সাধ্য থাকা সত্ত্বেও। সেই সুযোগ নেই, সেই সময় নেই, নেই তেমন কোন নিশ্চিত আর নিরাপদ উপায়। যেটা দিতে পারে এইসব কচিকাঁচাদের মুক্ত মনে খেলাধুলা আর ইচ্ছেমত মাঠে-ঘাঁটে ঘুরে বেড়ানোর মত স্বাধীনতা, সুযোগ আর তেমন সাধ্য।

তাই নিজেরা কতটুকু আনন্দ করেছি সেই হিসেব করতে চাইনা। ওরা, সবার বাচ্চারা, সব নিস্পাপ ছেলে-মেয়েগুলো কতটা আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে মেতেছিল সেটাই আসল পাওয়া, আর দারুন এক অভিজ্ঞতা ওদের সত্যিকারের আনন্দঘন হাসিমুখ দেখা। যেটা ইট-পাথরের ফ্ল্যাটে দেখা যায়না বা পাইনি কোনদিন।

তাই ভাবছি, নিজের পাশাপাশি এখন থেকে ওদের জন্যও আসুক এমন একটি স্বাধীন আর ইচ্ছেমত ছুটোছুটি করে, হাসি-আনন্দ, উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া এক-একটি দিন। সপ্তাহে, মাসে বা অন্তত তিনমাসে একদিন।

আর ধন্যবাদ তাদের, যারা কষ্ট করে এমন আয়োজন করে, ওদের এমন একটি দিন উপহার দিয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভাল লাগলো আপনার ভ্রমণ কাহিনী ও কচিকাঁচাদের উচ্ছসিত সময়গুলো।


শেষের কথাগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে মেয়েদের সাথে বাবার একটু মুক্ত সময়ে উম্মুক্ত ঘুরাফেরা তাদের প্রফুল্লিত করে। আমাদের উচিৎ তাদেরকে সময় দেয়া। আমিও পারিনা সময় দিতে।
তবে আপনার পোষ্টটি পড়ে বুঝতে পারছি, ছেলের ঘুরতে যেতে চাওয়া যুক্তকর ছিল। আমার না যাওয়াটা ছিল অযৌক্তিক।
কৃতজ্ঞতা রইল আপনার পোষ্টে।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২০

কালীদাস বলেছেন: চাঁদা কত ছিল?

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫২

সজল জাহিদ বলেছেন: হা হা এটা কি বলা ঠিক হবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.