নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানুষ , মুক্ত সমাজ, মুক্ত পৃথিবী; মুক্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

সালমান মাহফুজ

সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সেই কৈশোর থেকেই । মাঝে মাঝে লিখতেও চেষ্টা করি । যেই সাহিত্য আমাকে ধরেছে, সেই সিলেবাস আমাকে দূরে সরিয়ে দিছে । সুতরাং একাডেমিক কন্ডিশন চরম বাজে । প্রচণ্ড অলস এবং অসামাজিক । নিজের কাজের প্রতি চরম বিশ্বাসহীনতা । মাঝে মাঝে সবকিছুকেই অনর্থক ফাও ফাও মনে হয় । এমনকি বেঁচে থাকাটাও । তবুও বেঁচে আছি । কেন ? জানি না । শুধু জানি, কিছু একটা করতে হবে । কী সেটা ? তাও জানি না । মানবজন্মটাকে এভাবে বৃথা চলতে দেয়া যায় না, এই ভেবেই বোধোহয় আরেকটু বাঁচবার লোভ হয় ।

সালমান মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : রুম্পা

১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

গত মাসের ২৯ তারিখেই খবর এলো । বাবা আর পারছেন না । নিরুপায় মা ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে উঠলেন ! মামার কাছে আটবার হাত পেতেও হাজার খানেকের বেশি পাওয়া যায় নি । আমি বুঝে গেলাম । নিজের বোঝাটা এবার নিজের কাঁধেই তুলে নিতে হবে ।
চাকরি ? এই মুহূর্তে কোথায় পাব ? কার কাছে চাইব ? কে দিবে ? আমি বহুবার বহুজনের মুখ থেকে শুনেছি , ওসব ইদানিং লাইন লবিং ছাড়া হয়ই না । তার মানে আমার মত ভার্সিটিপড়ুয়া নিম্নমধ্যবিত্ত লাইন লবিংহীন ছাত্রের পক্ষে চাকরিটা এখন অনেকটা দুঃসাধ্যই ! তার চেয়ে সহজ, যে দু'কলম বিদ্যা শিখেছি তার জোরে একটা টিউশনি খুঁজে নেয়া । বেশি কাঠখড় পোড়াতে হল না । পেয়ে গেলাম টিউশনিটা । যা দিবে বলেছে , চলে যাবে কোনোমতে ।
প্রতিদিন সন্ধে ৭টায় বেরিয়ে পড়ি । রিক্সায় ২০ টাকা ভাড়া । সুতরাং হাঁটতেই হবে । হেঁটে হেঁটে আধঘণ্টা লাগে । ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা । ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের ঘর্মাক্ত ক্লান্ত মুখের প্রতিচ্ছবি দেখে ভালোই লাগে । নিজের ঘামের টাকায় নিজের পেট চলছে ! তৃপ্তিটাই অন্যরকম ।

সেই শুরুর দিন থেকেই টিউশনিতে যেতে একটা মেয়েকে চোখে পড়ে । রাস্তাজুড়ে ভরাট অন্ধকার থাকলেও তাকে চিনতে আমার কষ্ট হয় না । নিতান্তই সাধাসিধে । পরনে ঢিলেঢালা জামা-পাজামা । মাথাটা ওড়নায় ঢাকা । এদিক-ওদিক বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই । পথের দিকে চোখ নিচু করে হাঁটছে তো হাঁটছেই । সেও যে আমার মত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে সংগ্রামরত কেউ একজন, আমার বুঝে নিতে মোটেই কষ্ট হয় না ।
সেই সন্ধ্যায় ভয়ানক বৃষ্টি শুরু হল । আমি তখন মাঝপথে । সঙ্গে ছাতা নেই । দৌঁড়ে কোথাও গিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচব, সেই সম্ভবনাও নেই । সুতরাং ভিজতেই লাগলাম । ক্ষণকাল পর পর মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানি ! ঝলকানো বিদ্যুতের আলোয় হঠাৎ মেয়েটির মুখ চোখে পড়ল । এই প্রথম আমি ওর মুখ স্পষ্ট দেখতে পেলাম । ওর মাথায় ছাতা । আমি ওর সমান্তরালে পাশাপাশি হাঁটছি । বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েই চলেছে । মেয়েটি থমকে দাঁড়ায় । আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আমি চমকে উঠি ! একটা অচেনা ছেলেকে ডেকে নিশ্চয়ই ছাতার নীচে ঠাঁই দিবে না ! হঠাৎ যাত্রী ছাউনিটা আমার চোখে পড়ে । একদম ফাঁকা । আমি হুটহাট ঢুকে পড়ি । মেয়েটিও ।

'ইশ্‌ কী বিচ্ছিরি বিষ্টি ! হায় , হায় , আপনি তো একদম ভিজে গেলেন !' একটা আফসোসের স্বর ! বৃষ্টির তীব্র শব্দের ভিতরেও আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম । বিদ্যুতের ঝলকানিতে যখন আমার কাকভেজা দশা নজরে এল একটু মুখ চিপে মেয়েটি হাসছিলও বটে ।
আমি চুপ । কী বলা যায়, খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।
'আমি রুম্পা ... ' । মেয়েটিই পরিচয়ের হাত আগে বাড়িয়ে দিল ।
আমি আমার পরিচয়টা না দিয়ে বলে উঠি,
' টিউশনিতে যাচ্ছেন নাকি ?'
প্রশ্ন দিয়েই শুরু করলাম । যদিও এর জবাব আমার জানা । তবুও আলপটা শুরু করা চাই ।
'হুম ।'
'আমিও ।'
তারপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ ।
হঠাৎ তীব্র আলোর বিস্ফোরণে আমাদের মুখ দুটি যেন সূর্যালোকিত দিনের মত জ্বলজ্বল করে উঠে । বজ্রের আলোতে আমি রুম্পাকে আরো স্পষ্ট দেখতে পেলাম ! এ তো প্রস্ফুটিত যুবতী নারীর মুখ । এ মুখে তো বিনামেঘেই বিদ্যুৎ খেলে যায় । কিন্তু তীব্র মেঘের গর্জনে মাটির সাথে সাথে যখন হৃৎপিণ্ডটাও থরথর কেঁপে উঠল তখন মেয়েটির বিদ্যুৎ-চমকানো মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভিতর একটা অসহায়ত্বের সুরই ধ্বনিত হতে থাকল । একেই কী বলে লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই ।
' কী বাবা ! এটা কী শুরু হইল আপনি ! আচ্ছা, আপনি আর কতটুকু যাবেন ?' বজ্রপাতের আকাশ-ফাটানো আওয়াজ শেষে কান থেকে হাত নামায় রুম্পা ।
'এইতো সামনেই । আপনি ?'
'আরো অনেকটা দূর । উফ্ রাত্রিবেলা মেয়েদের জন্য টিউশনি করাটা কী যে...' রুম্পা থেমে যায় ।
'তাতো বটেই । আপনার পরিবারে কে কে আছেন ?'
'বাবা, মা আর একটা ছোট ভাই । বাবা প্যারালাইজ্ড । ৬ বছর যাবৎ । ' কাতর কণ্ঠে বলে রুম্পা । বৃষ্টির জ্বালাতনে বিপন্ন মুখটা যেন আরো বিপন্ন হয়ে উঠল ।

বৃষ্টি থেমে গেছে ।
'এই যে চলুন । বেরিয়ে পড়া যাক ।' রুম্পা আমাকে তাড়া দেয় ।
আমরা দু'জন আবার সমান্তরালে পাশাপাশি হাঁটছি । বহুক্ষণ চুপচাপ ।
'এই তো চলে এলাম । পরে দেখা হবে ।' আমি থমকে দাঁড়াই ।
'ওকে বাই । আপনি ফিরবেন কখন ?'
' ৯ টার দিকে ।' 'অপেক্ষা করবেন একটু আমার জন্য । আধঘণ্টা ।
' 'হুম । ' বলেই আমি আমার গন্তব্যের মেইন গেটে পা বাড়াই ।
'আচ্ছা আপনার নাম-পরিচয়টা জানা হল না যে ।' আমি এক কদম না এগুতেই রুম্পা বলে উঠে ।
ফেরার সময় বলব, কেমন ?'
'ওকে আসি ।'

হ্যাঁ, 'আসি' । 'আসি' বলেই রুম্পা চলে গেল ! সেই যে গেল ! আজ অবধি রুম্পা ফেরত এল না ! আসবেও না কখনো ।

সেইরাতে আমি রুম্পার জন্য অপেক্ষা করব বলে কথা দিলেও, অপেক্ষা করে নি । পুনরায় বৃষ্টিতে ভিজে যাব বলে আশংকা করতে করতে আমি ওর কথা বেমালুম ভুলে গেছি ! পরের দিন সকালে নির্জন সুপারি বাগানে রুম্পার ছিন্নভিন্ন জামা-পাজমার কয়েক টুকরো পাওয়া যায় । রুম্পার আর বাকীসব কারা যেন পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিছে !
ওরা কারা ? ওরা কারা ? আমিও কি ওদের একজন ?



বিঃ দ্রঃ লেখাটি বেশ আগে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম । সেখান থেকে সামন্য কিছু ঘষা-মাজা করে নিলাম ।

ফেসবুক লিংক

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:০৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুবই হৃদয় বিদারক মর্মস্পর্শী ।
ওরা কারা , ওদের পরিচয় প্রকাশ হওয়া একান্ত প্রয়োজন ।

২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:১৩

সালমান মাহফুজ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

২| ১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:১৭

সুমন কর বলেছেন: ছোট হলেও ভালো হয়েছে। বর্ণনা সাবলীল।

২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:১৩

সালমান মাহফুজ বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন সুমন ভাই ।

৩| ২০ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:২১

রুমি৯৯ বলেছেন: বর্ণনা সাবলীল। তবে লভিং এর জায়গায় লবিং লিখলে আরো ভালো দেখাবে।

২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:১৫

সালমান মাহফুজ বলেছেন: হুম বেশ কিছু জায়গায় এডিট করেছি ।

ধন্যবাদ জানবেন ।

৪| ২০ শে মে, ২০১৭ রাত ২:৪৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: পড়ে গেলাম।।

২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:১৫

সালমান মাহফুজ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।

৫| ২০ শে মে, ২০১৭ রাত ৩:২৩

ওমেরা বলেছেন: ভাল লিখেছেন ধন্যবাদ ।

২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:১৫

সালমান মাহফুজ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

৬| ২০ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

ধ্রুবক আলো বলেছেন: খুবই হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পর্শী ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.