নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সবসময় সত্য,আমি সত্যেরই সারথী।লেখালেখির অভ্যাস পুরানো,ফেলতে পারি না;সময় অসময়ে জেগে ওঠে।ব্লগ কিংবা ফেবুতে আমি একজনই..\"শাহেদ শাহরিয়ার\'\',জয়\' নামটা বন্ধুদের দেয়া।ওটা\'ও তাই রেখেই দিয়েছি।লিখছি,যতকাল পারা যায় লিখব;ব্যস এতটুকুই!

শাহেদ শাহরিয়ার জয়

আমি শাহেদ শাহরিয়ার,একটু আবেগি আর খানিকটা যৌক্তিক।

শাহেদ শাহরিয়ার জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'ডাক্তার\' ও কিছু মানুষ!

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪২



কলিং বেলে চাপ দিতেই একটা হাবা-গোবা টাইপ মেয়ে এসে দরজাটা খুলে অন্যরুমে চলে গেল,আমি ড্রইং রুমেই বসে পরলাম,সামনে একটা ছোট্ট টি টেবিল,একটা মোড়া,দেয়ালের সাথে ঘেষানো দু'সেট সোফার পুরোটাই ভ্যালবেট কাপড়ের চাদরে ঢাকা।হাতের বা পাশেই একটা বইয়ের আলমিরা,সাজানো আছে হরেক রকমের বই,বেশির ভাগই মেডিকেল সম্বন্ধীয়।উত্তর পাশের দেয়ালের কোনায়,বড় একটা এলইডি টিভি দেয়ালের সাথে সেট করা,৪৫"৪৬" হবে বোধয়,ঠিক নিচেই দুটো ল্যান্ডফোন:একটা হয়তো টিএনটি অন্যটা কি জানা নেই,নষ্টও হতে পারে।কিন্তু এত্তবড় ডিগ্রীধারী ডাক্তারের বাসায় নষ্ট ফোন সাজিয়ে রাখার কথা না।যাহোক কৌতুহল খারাপ জিনিস,মানুষের মনকে স্থির থাকতে দেয় না,তাই অহেতুক কৌতুহল নিভৃত করার চেষ্টা করলাম।মিনিট দু-তিনেক বাদে সে মেয়েটাই ট্রে করে লেবুর সরবত আর দুটো ড্রাই কেক সামনে রেখে গেল,বোধয় আমায় লজ্জা পাচ্ছিল।এরও কয়েক মিনিট পর তিনি এবং সে আসল: তিনি ডাক্তার মহাশয়ের স্ত্রী আর সে আমার টিউশনের ছাত্রী।আমাকে সালাম মা মেয়ে কোনটাই না দিলেও আমি বিনয়ের সহিত সালাম দিলাম।ছাত্রী নিজগুণেই সামনে রাখা মোড়াতে সম্রাজ্ঞীর ভঙ্গিতে বসে পরল আর মা কত্তগুলা দিক নির্দেশনা দিলেন,ভালই বলেন শিক্ষিত মহিলা,শুধু আমাকে কিছু বলার সুযোগটা দিলেন না।যাহোক,মা-তো গেলেন,এবার তার দিকে তাকালাম,ক্লাস এইটে পড়ে,ইংলিশ মিডিয়াম একটা স্কুলে,গতবছরও একই ক্লাসে ছিল,এটা হল ব্যাক গ্রাউন্ড,অবশ্য সেটা সে নিজে বলেনি,যে আমাকে টিউশনটা দিয়েছে সে বলেছিল।প্রথমদিন ডাক্তার সাহেবকে দেখা গেল না,ছাত্রীর মুখে যা শুনলাম তাতে দেখা পাবার আশাও নাই,ওনি সকাল ছয়টা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে-এগারটা অবদি বাসায়ই থাকেন না।কি করেন, সেটা জানার দরকার না থাকলেও ছাত্রী নিজের মনে করে সেটাও বলে দিল।বাবার ব্যাপারতো বুঝলামই,মেয়ের ব্যাপারটাও বুঝলাম: ও বাসায় খুব একাকিত্ব অনুভব করে,বাসায় এত্তগুলা প্রাণী থাকতেও ওর সাথে মিশার মত,ওর কথা বুঝার মত যেন কেউই নেই।আমিও বুঝতাম না,কয়েকটা দিন ওদের পরিবারে যাওয়া আসায় ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম।ওর মা-টাকে দেখতে অনেক স্মার্ট দেখায়,স্মার্ট বটেও,প্রথমদিন তো আমাকে বুঝতেই দেন নি ওনি শ্রবণপ্রতিবন্ধী! দু'ভাই দু' বোনের মধ্য ও তৃতীয়।বড়বোন ডাক্তারি পাশ করে এখন কোন এক ডাক্তারকে বিয়ে করেছেন,বড়ভাই বুয়েটে পড়ছে,আর সবচে ছোটযে,ওকে দেখে যে কারো সহানুভূতি লাগবেই,১০ বছর বয়সেও বেচারা মুখ খুলে কথা বলতে পারে না,যে বয়সে বাচ্চারা ফুটবল নিয়ে দৌঁড়ায়,ও ঠিকভাবে হাটটতেও পারে না।তাছাড়া,ছোটদের চেহারটা স্বভাতই আদরের,ও সে আদুরে চেহারা থেকেও কি কারনে যেন বঞ্চিত।
শুনেছি,বড় ডাক্তার হয়েও,তিনি এ দেশের চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে ছেলেকে মাদ্রাজ নিয়েছেন,দু-তিন বার,ওরাও আস্থা রাখতে পারে নি।এখন বোধয় বুঝেছেন,আল্লাহই ভরসা,তাই মায়ের হাতে রাতদিন একটা তজবীর মালা থাকেই।একটা পরিবারে এত্ত দুর্যোগ আসলেই খারাপ লাগার কথা,তাও আবার মেডিকেল কলেজের সহযোগি অধ্যাপকের ঘরে।একদিন শুনলাম ঘর পেরিয়ে সেটা বড়মেয়ের ঘর পর্যন্ত পৌঁছেছে।ছাত্রীকে যখন পড়াচ্ছিলাম,পাশের রুম থেকে কান্না আর চেঁচামেচির আওয়াজ দুটোই একসাথে আসছিল,মাকে আস্তে বল্লে শুনেন না,তাই বাধ্য হয়েই বেচারি ঘরের কথা পরকে শুনাচ্ছে;মনে হচ্ছে না সংশয়ে আছে,মনে হচ্ছে যেন তিনি আমাকেও জানাতে চাইছেন ওনার ডাক্তার বর কতটা খারাপ!
আর আমিও বুঝলাম: নচিকেতারা কেন ডাক্তার নিয়েও দর্শন ফলায়! কোনো সরকারি বড় মেডিকেলে গেলে আমাদের দু'ধরনের অনুভূতি আসতে পারে-১.হয়তো আমরা অতি মাত্রাই ধর্মভীরু হয়ে যাবে অথবা,২. আমাদের ধর্ম বিশ্বাসে ছিড় ধরতে শুরু করবে।প্রথমটার কারণ হল,মেডিকেলের বেড হতে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের,বিভিন্ন প্রকার রোগি- আগুনে পোড়া, পক্ষাঘাত কিংবা দুর্ঘটনায় মারাত্নকভাবে আহত, অনাগত সন্তান বয়ে বেড়ানো রোগীর আর্তচিৎকার আমাদের ভাবাভেই-' আমরাতো আল্লাহর রহমতে ভাল আছি'।মানুষের জীবনযে কতটা দুর্বিষহ আর মানুষযে বিপদের কাছে কতটা অসহায়,সেটা বুঝার ক্ষমতা সেখানে গেলেই পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত,আমরা যারা একটু অন্যভাবে ভাবি,তারা ভাবতেই পারি-' বিধাতা নাকি সর্বশক্তিমান আর মানুষ নাকি তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান সৃষ্টি,তবে তাদের এ অবস্থা কেন!?এর জবাব ধর্মীয়ভাবেই খাটে,যুক্তিবিদের যুক্তিতে এর আশ্রয় নেই।
ধর্ম কিংবা অধর্ম এখানে অপ্রাসঙ্গিক,প্রাসঙ্গিক হল ' মানবিকতা'। মানুষ যখন দুর্যোগে পরে- রোগ,ব্যাধি কিংবা শারিরীক- মানসিক যন্ত্রনা পায়,তারা ঠিক তাদের মতই দেখতে- শুনতে অন্য একটা ' মানুষে'র কাছে আকুতি নিয়ে দাঁড়ায়,বাঁচার আকুতি!এটা ভাবলে চলে না যে,' যার দ্বারা আমার উপকার হবে না,তার সুস্থতার ভার আমি নিব কেন!?'অথচ,সকল মানুষই একে অন্যের ওপর কিছুটা হলেও নির্ভরশীল।যেমন:- একজন কৃষকের সাথে একজন ডাক্তারের পারস্পরিকভাবে হয়তো প্রত্যক্ষ কোন সম্পর্ক নেই,কিন্তু বাজারের যে তাজা সবজিটা ওনি খান,সেটা কৃষকেরই গামে জড়া উৎপাদন!
এগুলা ত্বত্তকথা,মূল কথা হল,একজন রোগী আর অন্যজন যদি ডাক্তার হন,তবে যার কাজ যেটা সে সেটাই করবে,বিনিময়তো আছেই।কিন্তু আজকাল সে বিনিময়ের ধরনটা অনেক পরিবর্তন হয়েছে।একটা সময় যে ছেলে বা মেয়েটা ক্লাসে নিজের ' জীবনের লক্ষ্য' লিখতে গিয়ে ডাক্তার হয়ে গ্রামের গরীব মানুষের সেবা করার কথা লিখত,তারাও সময়ের পরিক্রমায় বোল পাল্টে ফেলেছে,এখন আর কেউ গরীবের সেবার জন্য ডাক্তার হয় না,গ্রামের থাকার জন্যতো না-ই!
যাহোক,ধরলাম ওনারা টাকার জন্যই ডাক্তার হলেন,শহরে থাকার জন্যই ডাক্তার হলেন,কিন্তু সেটারওতো একটা সীমাবদ্ধতা আছে।সীমাবদ্ধতার কথা যারা ভাবেন,তারা ভুল ভাবেন,যদি ভাবনাটা সত্য হতো,তবে হুড়- হুড় করে এভাবে ব্যক্তিগত চিকিৎসা কারখানা তৈরি হত না আর সরকারি মেডিকেলে অফিস সময়ে রোগীরা ডাক্তারের জন্য আকুতি করত না।বুঝলাম,টাকার দরকার আছে,বাঁচার জন্য অনেক টাকা লাগে!হুমম,'বাঁচার' জন্যই। বাঁচার জন্য মেডিকেলের বেডে শুয়ে থাকা রোগীরা ডাক্তারকে ফেরেশতার মতই দেখে: একটা সাদা এ্যার্পন পরিহিত,একজন ফেরেশতা!যিনি কাছে এসে হাসিমুখে একটু কথা বল্লেই অর্ধেক রোগ সেরে যাবে,যার হাতের স্পর্শে স্বপ্নাহত মন আবার বাঁচার স্বপ দেখবে!
আর যদি এর বিপরীত হয়,ব্যথায় আর্তনাদ করতে করতে যদি কারো চোখের সামনে তার মা- মেয়ে কিংবা বোনের প্রাণ প্রদীপ নিভে যেতে দেখে,যার যায়,তার অবস্থা আমরা নাহয় বুঝলাম না কিন্তু যিনি এ যাবার বেলায় সাক্ষী থাকেন,তিনি কখনোই মন থেকে কোন ডাক্তারকে আর সম্মান দেখাবেন কিনা সংশয় আছে।এভাবে টাকার লোভে মানুষের জীবন নিয়ে খেলার মত ডাক্তারের অভাব বর্তমানে নেই।কিন্তু এই বাহ্যিক লাভটাই আমরা দেখি,ভিতরের ইতিহাস ক' জন জানেন।যারা এভাবে মাুনুষের জীবন নিয়ে খেলছে,সে খেলার আর্বতে কিন্তু তারা আটকা পরে যায়; ডাক্তার হয়েও যার ঘরে শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী থাকে,অজস্র থেকেও তার কিছুই না থাকার মত!
অভিশাপে সবাই বিশ্বাস করে না,তবে পৃথিবীরও তো একটা নিয়ম আছে,সে নিয়মের আইনে আজ তুমি যাকে অবহেলা করবে,কাল অন্যকোন জন,অন্যকোন রূপে তোমাকে তা ফিরিয়ে দিবে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.