নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্ন ফাঁস না জাতির গলায় ফাঁশ-

২৯ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:১১

১৯৮৬ সালে আমার জন্ম বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাতেই আমি বা আমার সমসাময়িক ব্যাক্তিবর্গ সেকেলে খেতাব প্রাপ্ত। কারন আজ তাদের মূল্যবোধ বা সামজিকিকরন শিখানোর জন্য অনেক সংগঠন, অনেক বরন্য ব্যাক্তি (অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আনিসুর রহমান প্রমুখ ব্যাক্তিগন) বা অনেক মিডিয়া (সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ইত্যাদি) রয়েছে কিন্তু আমরা মূল্যবোধ শিখেছিলাম আমাদের স্কুলের শিক্ষক গনের, পিতামাতা, কোন সৎ নিষ্ঠাবান রিকশাচালক বা পরিপার্শ্বিক ভালো লোকদের কাছ থেকে। শিক্ষকগণ আমাদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে আমাদের যা শিখিয়েছেন টা হল ভালো ও মন্দের তফাৎ এবং ভালো ও মন্দ কাজকে কত দ্রুত উপলব্ধি করা যায়। পিতা মাতা শিখিয়েছেন ধর্মীয় অনুশাসন এবং উত্তম আচরণ। সামাজিকীকরণ শব্দটার সাথে আমার পরিচয় আমি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র তখন ১৯৯৯ সালে কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম এটা আমি আমার পরিবার ও প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের নিকট হতে আরও ৪ বছর পূর্বেই শিখে ফেলেছিলাম। এর জন্য আমার কোন সোশ্যাল মিডিয়া বা টেলিভিশন চ্যানেল অথবা স্বনাম ধন্য কোন পত্রিকার সাহাজ্য নিতে হয় নি। আমাদের সময় বাংলাদেশে একটাই টিভি চ্যানেল ছিল তাতে আমরা সপ্তাহে একদিন ভালো কিছু অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পেতাম তাই বলে আমরা যে সংস্কৃতি বুঝি না এমন বলাও অন্যায় হবে। এমন অনেক কিছুই বলা যাবে যা বর্তমান সময়ের তুলনায় অপ্রতুল হলেও আমরা এই অপ্রতুল অবস্থাতেও আমার মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের থেকে অনেক ভালো মূল্যবোধ শিখেছিলাম।



মূল আলোচনাতে আশা যাক-

যদিও আমরা বাঙ্গালীরা অধিকাংশই কখনোই একজন মানুষের সাফল্যকে দলীয় মতবাদের উর্ধে উঠে স্বীকার করতে পারিনা তাই প্রাক্তন শিক্ষা প্রতি মন্ত্রী জনাব এহসানুল হক মিলনের অবদান আজ মাটিচাপা পরেগেছে। এই প্রথম আলো, ডেইলি স্টার প্রমুখ মিডিয়া ই তাঁকে নকল মুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলন করার নায়ক হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল আর আজ তারাই তাঁকে দুর্নীতিবাজ বলেও আখ্যা দিচ্ছে। সেই প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার টাইপ মিডিয়া ই আমাদের বর্তমান প্রজন্ম কে সামাজিকিকরন এবং মূল্যবোধ শিক্ষা দিচ্ছে!! তাই তো আজ আমাদের পরবরতি প্রজন্ম এত বেশী মূল্যবোধ ও সামাজিক জ্ঞান সম্পন্ন(?)। এহসানুল হক মীলন সাহেবের প্রশংসা বা তার পক্ষে কিছু বলা এই লেখার উদ্যেশ্য নয় এটা বললাম তার কৃতিত্ব কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। ২০০১ সাল আমি তখন এস এস সি পরীক্ষার্থী মিলন সাহেব ঘোষণা দিলেন এবারের এস এস সি পরীক্ষা তিনি নকল মুক্ত পরিবেশে নিবেন এবং তিনি অনেকাংশে সফল ও হয়েছিলেন। আমাদের উচ্চতর গণিত ও রসায়ন প্রশ্ন খুব কঠিন হয়েছিল কিন্তু তার পরেও আমার জানা মতে কেউ নকল করেনি। উচ্চতর গণিত পরিক্ষার দিন আমার এক বন্ধুর বোন জামাই তাঁকে একটা নকল পাঠিয়েছিল এবং আমার মনে আছে সে গর্বভড়ে তা ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিল ফেল করতে পারি কিন্তু নকল করব না। এই বন্ধুটি জাফর স্যার বা অধ্যাপক আনিসুর স্যার এর নামও জানত না কিন্তু এই অজপারা গায়ের ছাত্র টির মধ্যে যে মূল্যবোধ ছিল তা আজ মাত্র একটি মেয়ের মধ্যে পাওয়া গেল (জাফর স্যার এর লেখা অনুসারে)। তাহলে আমাদের কি আরেকবার ভাবা উচিৎ না যে আমরা স্রোতের বিপরীতে পরিবর্তনের হাওয়া লাগাতে ব্যাস্ত আছি কিনা?



২০১০ সালে ঢাকা শহরের নামকরা শিক্ষালয় সেন্ট জোসেফের শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলাম। এখানে এসে সত্যিকারের কিছু মূল্যবোধ সম্পন্ন ছাত্র পেলাম যাদের অনেকেই এই মিডিয়া এর বারা বারি রকম পরিবর্তনের হাওয়াতে অতিষ্ঠ ছিল। সবার কথা না বলে আমার এক ছাত্রের কথা বলব। জনশ্রুতি রয়েছে সেন্ট জোসেফের ছাত্র রা ধানমণ্ডি ইউসুফ স্কুলের বদৌলতে এ + পায়। ওখানে নাকি একজন আরেকজনের খাতা কপি করতে পারে। আমার এক ছাত্র ২০১১ সালের এস এস সি পরীক্ষার হলে ওর খাতা এক বন্ধু দেখার কারনে (ওর অজান্তে) ঐ প্রশ্নের সেট সে পরিক্ষার খাতা হতে কেটে অন্য সেট লিখেছিল। ফলে যথাসময়ে সে সব উত্তর দিতে ব্যারথ হয় এবং ঐ বিষয়ে এ গ্রেড পাওয়াতে তার গোল্ডেন মিস হয়। এমন ছাত্র ও এখন আছে কিন্তু আমার আতঙ্কের বিষয় হল শতকরা হার নিয়ে। যেখানে আমাদের সময় মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষার্থীর হার ছিল ৭৫-৮০ শতাংশ এখন আসলে তা কত তে নেমে এসেছে তার একটা জরিপ করে আমাদের মাঠে নামা উচিৎ। তা হলেই কেবল এই প্রশ্ন ফাঁসের দুষ্ট চক্র হতে আমরা বের হতে পারব।



এই প্রশ্ন ফাঁস যে শুধু পাবলিক পরীক্ষাতে হচ্ছে তা নয়। ২০১১ সাল হতে যত গুলো ব্যাংক বা নন ক্যাডার পরীক্ষা হয়েছে তার সিংহ ভাগেরই প্রশ্ন একটি ছাত্র সংগঠনের সোনার (?) ছেলেদের ঢাকাতে ফ্ল্যাট কিনার টাকা যোগাড় করে দিতে কিছু মহান (?) কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ফাঁস হয়েছিল এবং আজো হচ্ছে। ২০১২ সালের একটা ব্যাংক এর পরীক্ষার প্রশ্ন এত কঠিন হল যে আমার রুমের অনেকেই গণিত অংশের ৭০ নম্বরের উত্তর দিতেই হিমসিম খাচ্ছিলাম সেখানে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সানন্দে ৯৫ টি নাকি সঠিক উত্তর দিয়েছে। বাইরে এসে এক বন্ধুর সাথে দেখা যে সারা জীবন অঙ্ক মুখস্থ করে পরীক্ষা দিত এবং এইচ এস সি এর পর অঙ্কের ভয়ে মেডিক্যাল কোচিং করে পরে মেডিকেলে চান্স না পেয়ে প্রানিবিদ্যা বিভাগ হতে সম্মান পাশ করেছিল। আমার সেই বন্ধুটিও শুনলাম ৯৬ টি অঙ্ক সঠিক উত্তর দিয়ে এসেছে এবং সে এখন ঐ ব্যাঙ্কের একজন সফল এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা। এমন হাজারও উদাহরন টানা যাবে চাকুরির প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা গন এটা গুজব বলে উড়িয়ে দেন। আর রাজনীতিবিদগণ তো মুখে কুলুপ এটে থাকেন কারন কাজ টা তো তাদের পদলেহন কৃত বিবেক বর্জিত কুঁকড়ের চেয়ে কম মূল্যবোধ সম্পন্ন ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের স্বার্থেই হয়েছে। তাই এখানে নিরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে জাতী ধ্বংস হয় হোক তাতে কার কি আসে যায়। উনারা তো ব্যাস্ত ভোটের ও আমাদের আমজনতার মাথা বিক্রয় করে নেওয়া বিভিন্ন লোণের টাকা আত্মসাৎ করতে। তাতে যত মূল্যবোধহীন জাতী তৈরি হবে ততই উত্তম। চেঙ্গিস খান বলেছিলেন তুমি যদি কোন জাতিকে ২০০ বছর নিরবিছিন্ন শাসন শোষণ করতে চাও তবে নিচের কাজ গুলো সম্পন্ন কর

১. ঐ জাতির সুশিক্ষিত লোকদের হত্যা কর

২. সকল জ্ঞান ভাণ্ডার তথা বই/লাইব্রেরি ধ্বংস কর

৩. ঐ জাতির মাঝে এমন কিছু শিক্ষিত লোক ছড়িয়ে দাও যারা আসলে তোমার পদলেহন কারী

আমাদের ভেবে দেখা দরকার যে আসলে আমরা কি চেঙ্গিস খানের কথা অনুসরন করনেওয়ালা কোন ধূর্ত শিয়ালের ফাঁদে আঁটকে আছি বা যাচ্ছি কিনা।



সৃষ্টির শুরু থেকেই সমাজে কিছু মন্দ লোক ছিল, আছে এবং থাকবে। জুগেজুগে মনিষী গন সমাজে এই মন্দ লোকের সংখ্যা কমিয়ে ভালো লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি করার কাজেই ব্যাস্ত ছিলেন। যার ফলাফল ১৯৫২ -১৯৭১ এ আমরা বাংলাদেশের উত্থানের ঘটনাবলী দেখলেই বুঝতে পারব অথবা ১৯৯১ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন দেখলেই হবে। কিন্তু দিনে দিনে আমাদের দেশের এমন সৎ সাহস সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোটাতে নেমে আসতেছে। যা জাতির জন্য এক অশনি সঙ্কেত। প্রশ্ন ফাঁস গত ৫-৬ বছর যাবত এক নইমত্তিক ঘটনা। হয়ত এ বছর তার ব্যাপ্তি খুব বেশী ছিল তাই এটা নিয়ে এত আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। যারা এ বিষয়ের সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই সাস্থি হওয়া উচিৎ। তবে আমার মনে হয় সাস্থি দেওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই যে এ সকল শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ও সততা কে জাগ্রত করা। আমাদের সকল শিক্ষার্থীই যদি আমার ঐ বন্ধুর (প্রথমোক্ত) মত বলে যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তো কি হয়েছে আমি যা পরেছি তাই লিখব প্রশ্ন আমার দরকার নাই। তবে আমি মনে করি এমনিতেই প্রশ্ন ফাঁসের দুষ্ট চক্র ধ্বংস হয়ে যাবে।



আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে ২০০৯ বা ১০ সালে (আমার সঠিক মনে নেই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে একটা অনুষ্ঠানে ১০ মিনিট একত্রে বসে একটা ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম তখন থেকেই আমি তার ভক্ত। নিঃসন্দেহে তিনি একজন সৎ ব্যাক্তি কিন্তু তার চারিত্রিক কঠোরতা এখোণো যে দলীয় স্বার্থের উরদ্ধে উঠতে পারে তা হারে হারে টের পেলাম এম পি ও ভুক্তি নিয়ে যেদিন তিনি সম্মানিত (?) সংসদ সদস্য দের হাজার অপমান সহ্য করেও মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন এম পিও ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিলেন। আমি আরও অবাক হলাম শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় যেখানে একটি নিদ্রিস্ট মানদণ্ড ঠিক করে এম্পিওভুক্তি করলেন সেখানে সেই তালিকা বাদ দিয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এম পি গনের সুপারিশের ভিত্তিতে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান কে এমপিও দিয়ে দিলেন। এই ঘটনাই নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবের দৃঢ়তার পরিচায়ক যার ফলেই আজো এই প্রশ্ন ফাঁস। যদিও তিনি বা জনাব ওবায়েদুল কাদের সাহেব যদি আমার নির্বাচনী এলাকা হতে নির্বাচন করতেন তবে আমি দল মত নির্বিশেষে তাদেরি ভোট দিতাম।



আমাদের আরও ভেবে দেখা উচিৎ বর্তমানে এত সচেতনতা এত সদুপদেশ দাতা থাকতেও কেন এই নৈতিক অবক্ষয়? আমার মনে হয় এর একমাত্র কারন আমরা ধর্মীয় অনুশাসন কে কুসংস্কারের সাথে একীভূত করে ফেলেছি। কুসংস্কার অবশ্যই পরিত্যাজ্য কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসন অবশ্যই পালনীয় একটি বিষয়। এই দুই মেরুকে একত্রীত করতে যেয়ে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে এক গোলোক ধাঁধাতে ফেলে দিচ্ছে যার ফলাফল আজকের এই নৈতিকতা, বিবেক এবং সততা বিবর্জিত তরুন সমাজ। কু ও সু এই দুই সত্তা নিয়েই মানুষের পৃথিবীতে আশা। ধর্মীয় অনুশাসনই একমাত্র সু কে কু এর উপর বিজয়ই করে তোলে তা নাহলে কু সর্বদাই সু এর চেয়ে শক্তিশালী থাকে। আর যে জাতির মধ্যে কু শক্তিশালী তাদের অবস্থা আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেই দেখতে পাব যেখানে ধর্ম নেই বলিলেই চলে। কিছুদিন পূর্বেও সেখানে ইলিওত রজার নামে এক ব্যাক্তি যার বিরুদ্ধে কোন থানাতে কোন অভিযোগ নেই সেই কিনা ৬ জন ছাত্র কে মারার পর আত্মহত্যা করল। আমরা তাদের অনুসরন করতে করতে যেন সেই পর্যায়ে না চলে যাই তাই আমাদের উচিৎ সঠিক ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র ছাত্রীদের মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষার ব্যাবস্থা করা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.