নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাখি কিংবা কিরনমালা ড্রেস এর জন্য আত্মহত্যা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যের শীর্ণ অবস্থার বহিঃপ্রকাশ

১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:১৮

বাবা ব্যাংকার ছিলেন, সিনিয়র অফিসার পদে চাকুরি বেতন সর্ব সাকুল্যে ৬০০০/৭০০০ টাকা। চার ভাইবোন পড়াশুনা করতাম। এর পরেও আত্মীয়দের মধ্যে তিনটা পরিবারের উপার্জন ক্ষম ব্যাক্তি ও আমার বাবা। কারন দুই ফুফা, এক ফুফাতো বোন জামাই আমার জন্মের পূর্বে মারা যায়। এই পরিবার তিনটি এবং অন্য সকল দরিদ্র আত্মীয়দের নিয়ে ভাগাভাগি করে এই টাকাতে আমাদের চলতে হত। নতুন পোশাক বলতে রমজানের ঈদে দেয়া পোশাক কেই বুঝতাম। কারন ঈদুল আযহা তে কোরবানির জন্য টাকা লাগতো। একবার ঈদুল ফিতরের পূর্বে খুব আগ্রহ নিয়ে আছি বাবা কবে বোনাস পাবে আর আমরা কবে জামাকাপড় কিনতে যাব। এমন একদিন বাবা এসে বললেন এই ঈদে জামা কাপড় দেয়া যাবে না শুধু বড় বোনকে দিবেন আর মায়ের, ফুফাতো বোনটির আর ফুফুদের কাপড় দিতে হবে। বলা বাহুল্য আমার মা সর্বদা একই রঙের চার খানা কাপড় কিনতেন নিজের জন্য এক খানা আর বিধবা ভাগ্নি এবং দুই ননদের জন্য দুই খানা। এটা কেন করেন জিজ্ঞাসা করলে মা বলত ওরা যদি দেখে আমি অন্য কালারের শাড়ি কিনেছি ওরা মনে কষ্ট পাবে মনে করবে হয়ত এটা দামি। যাই হোক এই সিদ্ধান্তে আমার ছোট বোন খুশি হইতে পারলো না। বাবা ওকে কাছে নিয়ে অনেক কিছু বুঝালেন এবং উপসংহারে বললেন এই এক ঈদে কাপড় না পেলে ঈদের আনন্দ নষ্ট হয়ে যাবে না। পরে জানতে পেরেছিলাম আমাদের নাপিত বাড়ির একজনের এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা সহ সেই বছর এমন ৪ জনের ফরম ফিলাপের টাকা দিতে হয়েছে আব্বাকে।

এমন বহু ঈদে আমরা পুরানো কাপড় পরে করে ফেলেছি। আসে পাশের অন্য ব্যাংকের ব্যাবস্থাপকদের বা চাকুরীজীবীদের সন্তানরা নতুন কাপড় পরে যে আনন্দ করত আমরা পুরানোটা পরেই সেই আনন্দ করে ফেলতাম। এতে আমাদের মধ্যে কোন হাহাকার কখনো পরিলক্ষিত হয় নি। অথচ এখন ঈদ আসলেই সংবাদ মাধ্যমে এক মর্ম পীড়াদায়ক সংবাদ দেখি আর তা হল ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল গুলোর সিরিয়ালের নায়িকার নামের ড্রেস না পেয়ে ডজন খানেক আত্মহত্যা করেছে। এই বছর তা ১৩ জনে রূপান্তরিত হয়েছে।

আমাদের সময় আমাদের স্যাররা আমাদের বেত দিয়ে সপাং সপাং করে মেরেছে, বাবা বা বড় বোনেরা মেরেছে এতে করেও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এতো নাজুক হয় নি যে সাধারণ একটি পোশাকের জন্য আত্মহত্যা করে বসব। এখনকার বাংলাদেশে কত মানসিক কাউন্সেলিং, কত নিয়ম, কত হরলিক্স জিনিয়াস কিন্তু এই ফালতু জিনিষটির জন্য আত্মহত্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সর্বশেষ করা একটি আইনে বলা আছে শিক্ষকের কোন কথাতে যদি শিক্ষার্থী মনে করে যে এতে তাঁর মানসিক কষ্ট হয়েছে তাহলে সেই শিক্ষক কে আইনের আওতাতে আনা যাবে!! একটি জাতীর ধ্বংসের জন্য এই রকম আইনের প্রণয়ন কারী কিছু বুদ্ধিজীবী ই যথেষ্ট।

জাতীর উন্নয়নের আড়ালে যে মানুষগুলো সব বিবেকের বদলে আবেগ দিয়ে পরিচালিত হওয়া শুরু করেছে সে দিকে আমাদের নিতি নির্ধারকদের কোন দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। যে ব্যাক্তি নিজের দলের চুরিকে সাপোর্ট দিতে পারে তাঁর মানসিক বৈকল্য কোন পর্যায়ের তা সহজেই অনুমেয় আর এই শ্রেণীর মানুষ আমাদের সমাজে কম নেই। একই সাথে যে স্ত্রী সন্তান বাবার ঘুষের বা দুর্নীতির টাকাতে হলেও এই পাখি ড্রেস না হলে ঈদ হবে না কিংবা কিরণমালা ড্রেস না হলে ইজ্জত থাকবে না মনে করছেন তাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ রুপে মেনে নিতে কেউ পারবে না। এবার যোগদেন আসলে আপনাদের এই ক্ষমতা লিপ্সা কিংবা দলীয় লেজুরবিত্তি একই সাথে অন্যকে খুশি করার সামাজিক আইন গুলো কত মানুষকে তাদের স্বাভাবিক জীবনের লাইন থেকে বিচ্যুত করেছে। জীবন রেললাইনের মত সমান্তরাল পথে চলে এই লাইন থেকে বিচ্যুত জনগনের বৃহৎ অংশ কে আবার লাইনে আনার সক্ষমতা রাষ্ট্রের কি আছে? ভেবে দেখুন তা না হলে এমন একদিন আসবে যেদিন এই বিচ্যুত জন গোষ্ঠীর লাইন ই সঠিক লাইন বলে মনে হবে এবং জাতী এক অমানিশার অন্ধকার পথে পরিচালিত হবে। যেই অন্ধকার কৃষ্ণ গহ্বরের চেয়ে ভালো কিছু নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.