নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুটি ঘড়ি এবং কিছু উপলব্ধি

২০ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:৩৮

১৯৯৬ সালে লালমোহন থানার এক শিক্ষানুরাগীর নামে প্রবর্তিত একটি বৃত্তি “মুন্সি হাসমত আলী মেধা বৃত্তি” লাভ করি। যেহেতু ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি পাই নাই এবং বৃত্তি নাকি একজন ছাত্রের ভালো ছাত্র হওয়ার মাপকাঠি তাই এই বিকল্প বৃত্তি পেয়ে ঘরের লোকজন বিশেষ করে বাবার পড়াশুনা করিয়ে কি হবে ধরণের কথা হতে হাফ ছেড়ে বেঁচেছি। বৃত্তি প্রাপ্তির ৬ মাস পরে প্রথম এবং শেষ বারের মত বৃত্তির টাকা (পরিমাণ জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না) উঠিয়েছিলাম। বৃত্তির টাকা আর নিজের জমানো টাকা মিলে ৪০০ টাকা হওয়াতে নিজেকে অনেক ধনী ধনী লাগতেছিল। ঐ বয়সে নিজের এত টাকা মানেই অনেক কিছু, নিজেকে বিলগেটস টাইপের কিছু মনে হত। এই টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একখানা শাড়ি, পরিবারে আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল মেঝ বোনে (অগণিত বার আমার পীঠের মার গুলো নিজের পিঠে নিয়ে নেয়ার কৃতজ্ঞতা সরূপ) এবং নিজের জন্য একখানা ঘড়ি কিনব বলে মনঃস্থির করলাম। প্রথমে ঘড়ি কিনব বলে দোকানে গিয়ে দেখলাম আসলে আমার কাছে যে পরিমাণ টাকা আমাকে নিজেকে অনেক ধনী ভাবিয়েছিল সেই টাকা বাস্তব জগতের হিসেবে আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুবই অপ্রতুল। পরিকল্পনাতে কাট ছাট করতে গিয়ে খুব ঝামেলাতে পরে গেলাম, কাকে বাদ দেই? স্বার্থপর মন নিজের ঘড়ি বাদ দিতে কিছুতেই চাইছে না, মনের স্ক্রিনে বাদের অপশন তিনটির মধ্যে একটি থাকার কথা থাকলেও সে নিজের জন্য ঘড়ির অপশন টি বেমালুম গায়েব করে ক) মায়ের জন্য শাড়ি খ) বোনের জন্য ঘড়ি দুইটি অপশন দেখাইতে ছিল। কেন যেন মনে হল বোনকে দেয়ার জন্য সারা জীবন পরে আছে পরের বার বৃত্তির টাকাতে বোনের জন্য ঘড়ি কিনব আজ মায়ের জন্য কিছু কিনি। যেই ভাবা সেই কাজ, ১২০ টাকা দিয়ে বাঘের মুখের ঢাকনা ওয়ালা একখানা ঘড়ি এবং ২৫০ টাকাতে মায়ের জন্য একখানা কাপড় কিনলাম। এই কাপড় খানাই আমার জীবনে মায়ের জন্য দেয়া একমাত্র উপহার হবে তা তখন কল্পনা না করতে তো পারিই নি উপরন্তু ক্লাস এইটে বৃত্তি মিস করার পরেও কল্পনা করতে পারি নি। জীবনে অর্থ, ইচ্ছা এবং সুযোগ তিনটির সঠিক সমন্বয় না হলে অনেক আশাই অপূর্ণ থেকে যায় এবং এই আশাগুলো বুকের মাঝে কষ্ট হিসেবে জমা হতে থাকে। কখনো কখনো এই কষ্ট গুলো বুকচিড়ে বের হয়ে আসতে চায় কিন্তু পাজরের হাড় গুলো বড় নিষ্ঠুরের মত কষ্ট গুলোকে আবারো আছড়ে ফেলে বুকের জমিনে মিথ্যা দাফনে সচেষ্ট হয়। যদিও এতে কষ্ট গুলো বাড়ে বৈ কমে না। যাই হোক এ অন্য কাহিনী বর্তমান গল্পের নায়ক হল আমার বাঘের মুখোশের ঘড়ি প্রসঙ্গে আশা যাক। ছোটবেলাতে মাঠে খেলার বিরুদ্ধে বাবার ১৪৪ ধারা জারি থাকত, সমস্যার ব্যাপার হল রাজনিতিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ গর্বের বিষয় হইলেও জীবন নীতিতে তা ভঙ্গের জন্য পীঠের আঘাতে বেত ভাঙ্গার গর্ব খুব উপভোগ্য না হওয়াতে নিশ্চুপে বাবার মিডিয়া (ছোট বোন) কে না জানিয়ে জীবনে কত দিন মাঠে খেলেছি তা গুনে বলে দেয়া যাবে। এমনি এক সাফল্য মণ্ডিত দিন এসেছিল এই ঘড়ি কিনার ২ দিন পরে। লালমোহন হাই স্কুল মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল খেলার পরে স্কুলের পুকুরে গোসল করে উঠে জামাকাপড় গায় দিয়ে দেখলাম প্যান্টের পকেট হতে কেউ আমার সাধের ঘড়ি খানা মেরে দিয়েছেন। মনে বড়ই আঘাত নিয়ে বাসার পথে হাটতে হাটতে চিন্তা করলাম বাবার কথা অমান্য করার জন্যই এই শাস্তি হয়ত আল্লাহ্ আমার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। এই আঘাত এতই গভীর ছিল যে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আর জীবনে ঘড়ি ব্যাবহার করব না।

২০০১ সাল কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ি। বন্ধু সবাই হাতে ঘড়ি দেয় আলাদা একটা ভাব আছে নাকি এতে উপরন্তু কলেজের অন্যতম প্রিয় শিক্ষক নবিবর স্যার ছাত্র জীবনে সময়ানুবর্তীতার উপর ছোট খাট একটা লেকচার দিয়ে দেওয়াতে ঘড়ির উপরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলাম এবং বাবার অর্ধ চলমান সিকো ফাইভ ঘড়িখানা মেরামত করে নিজের কব্জিতে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পর দিন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক ঘড়ির মেকানিকের কাছে নিয়ে গেলাম ঘড়িটি। বন্ধু সুলভ মেকানিক বলল এই ঘড়ি আমার ঠিক করার অভিজ্ঞতা নাই তুমি ঐ মেকারের কাছে নিয়ে যাও উনি খুব ভালো মেকানিক। বন্ধু বরের উপদেশ শিরোধার্য করে ঐ মেকানিকের কাছে ঘড়ি নিয়ে হাজির হলাম এবং ওনাকে বললাম আঙ্কেল আমার ঘড়িটা একটু দেখবেন কি সমস্যা?

ঘড়ির মেকানিকঃ হুম, দেখি কি সমস্যা।

আমিঃ (ঘড়িটি ওনার হাতে দিতে দিতে বললাম) স্লো হয়ে যায় দিনে এক ঘণ্টার মত।

ঘড়ির মেকানিকঃ তুমি ঘুরে আসো একটু দেখতে হবে সময় লাগবে।

আমিঃ সময় লাগুক আঙ্কেল আমি এখানেই বসে অপেক্ষা করি বাইরে অনেক রোদ, এর মধ্যে আর বাইরে না যাই।

উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে ওনার কাজে লেগে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে আমাকে প্রশ্ন করলেন- কি কর তুমি?

আমিঃ পড়াশুনা করি।

মেকানিকঃ কোথায়?

আমিঃ আব্দুল জব্বার কলেজ এ এইচ এস সি প্রথম বর্ষে।

মেকানিকঃ ওহ, তুমি তো তাইলে মাহিন কে চিন, চিনার তো কথা ও তোমাদের ব্যাচের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, কি চিন না?

আমিঃ হ্যাঁ আঙ্কেল চিনব না কেন আমরা তো একই সাথে বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করেছি।

মেকানিকঃ ও আমার ভাতিজা, যদিও এস এস সি তে ফলাফল ওর বা আমাদের কারো আশানুরূপ হয় নি দেখবে এইচ এস সি তে ও অনেক ভালো করবে।

আমিঃ হ্যাঁ, ও অনেক পড়াশুনা করে আমিও আশা করি ওর এস এস সির তুলনাতে এইচ এস সি এর ফলাফল অনেক ভালো হবে।

আঙ্কেলঃ আরে ও তো এস এস সি তে ই অনেক ভালো ফলাফল করার কথা ছিল। কিন্তু ঐ যে মানিকার একটা ছেলে চালাকি করে ওর আর নাবিলের পরীক্ষার সিট পরিবর্তন করে দিয়েছে বলেই নাবিল আর ও আলাদা হয়ে গেল ফলে ও কিছুটা মনোবল হারিয়ে ফেলল। ফলাফল খারাপ করল কিছুটা।

আমিঃ কিছু মনে না করলে একটা অনুরোধ করব, আমার বাড়ি যেহেতু মানিকা ঐ ছেলের নামটা বললে আমি হয়ত চিনতাম।
কিছুক্ষণ চিন্তা করে উনি নামটি মনে করতে পেরে অনেকটা খুশী হলেন বলে মনে হল। উনি বললেন – আরে মাহাতাব নামের একটা ছেলে ঐ যে লালমোহন থেকে এসে তোমাদের সাথে ভর্তি হয়েছিল।

আমিঃ কিন্তু আমি তো জানি মাহাতাব এবং মাহিন এর সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক আর নাবিল তো তেমন একটা স্কুলেই আসে না ফলে নাবিলের সাথে এত ভালো কোন সম্পর্ক মাহাতাবের নাই যে মাহিনের কাছে থেকে নাবিল কে সরিয়ে মাহাতাব কোন সুবিধা পাবে।

আঙ্কেলঃ আরে না, তোমাদের বয়স কম এত চালাকি বুঝবে না, “অনেকে আছে নিজের উপকার না হলেও তোমার ক্ষতির জন্য কিছু করতে পিছপা হবে না, আর এক জন বন্ধু সহজে তোমার যে ক্ষতি করতে পারবে একজন শত্রুর পক্ষে সে পরিমাণ ক্ষতি করা অনেক কষ্টের”। মাহাতাব জানত মাহিনের এবং নাবিলের ফলাফল খারাপ করার একমাত্র উপায় হল ওদের আলাদা করে দেয়া তাই এস এস সি পরীক্ষার আসন বণ্টন পরিবর্তন করে দিয়েছে।

ওনার এই কথা শুনে মনটা কিছুটা খারাপ হলেও ইনভার্টেড কমার অংশ টুকুন যে নির্জলা সত্য তা সারা জীবনে বহুবার ধরা খেয়ে বুঝেছি। কিন্তু আজো তা মেনে বন্ধুদের সাথে সরল ভাবে মিশে ধোঁকা খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। জীবনেও হয়ত পারব না এই ধোঁকার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। যাই হোক আমি কিছুটা যুক্তি দিয়ে ওনাকে বুঝাতে বললাম- আঙ্কেল আপনার কথাটি আমি মানতে পারলাম না দুটি কারনে, এক, মাহাতাব আর নাবিলের মাঝে দুই জন ছাত্র ছিল যাঁদের কারো মেধা নাবিলের চেয়ে কম নয়, আর মাহাতাব কে আমার কখনো এমন মনে হয় নি যে ও নাবিলের খাতা বা কারো খাতা দেখার জন্য পরীক্ষার সিটপ্ল্যান বদলাতে পারে বা ক্ষমতা রাখে। দুই, দুর্ভাগ্য জনক ভাবে মাহিনের সিট পড়ল এক সারির শেষে জানালার পাশে আর নাবিলের সিট পড়ল আরেক সারির প্রথমে জানালার পাশে এখানে অন্য কারো কোন হাত আছে বলে আমার মনে হয় না।

আঙ্কেলঃ আচ্ছা তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করতেছ না, তুমি একটা কাজ করবে মাহাতাবকে নিয়ে একদিন হোটেলে খেতে খেতে গল্প ছলে মাহিনের ফলাফল খারাপের পিছনে ওর হাত আছে কি নাই তা জানতে চেষ্টা করবে। ভালো করে পটাতে পারলে ও তোমাকে সব বলে দিবে। তখন তুমি আমাকে বলিও যে আমাদের ধারণা ভুল না সঠিক।

আমিঃ আচ্ছা আঙ্কেল আমি জানার চেষ্টা করব।

আঙ্কেলঃ এই যে তোমার ঘড়ি মেরামত করলাম, এর পরেও ভালো না হলে এটা হয়ত আর ভালো হবে না।
আমি ঘড়ি নিয়ে টাকা কত দিব জিজ্ঞেস করাতে উনি অনেকটা রেগে বললেন তুমি মাহিনের বন্ধু আর আমি তোমার কাছে টাকা নিব? ভাবলে কি করে এই কথা তুমি?

দুঃখিত বলে ঘড়ি হাতে নিয়ে দোকান থেকে বের হব এই মুহূর্তে উনি বললেন এই ছেলে তোমার তো নামই জানলাম না ভাতিজা জিজ্ঞেস করলে কি বলব আমি?

আমি বললাম আঙ্কেল আমার নাম শেখ মাহাতাবউদ্দিন। শুনে ওনার চেহারা খানা যা হয়েছিল তা আজো আমার বিনোদনের খোঁড়াক যোগায়। আমি আজো খুব মন খারাপ হলে এই ঘটনা খানা মনে করে উনার সেই বিখ্যাত অনুভূতির চেহারা মনে করে একান্তে অট্টহাসিতে ফেটে পরি।

আমার, নাবিলের কিংবা মাহিনের বন্ধুত্ব কিন্তু এতে করে কমে নি বরং বেড়েছে। আমদের অভিভাবকগণ অনেক সময়ই এভাবে ছেলের বন্ধুদের উপর দোষ চাপাতে অভ্যস্ত। মাদকাসক্তি, বা অন্য বাজে অভ্যাস গুলোই কেবল বন্ধুত্বের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে। কোন বন্ধুর ফলাফল ভালো হবে বলে অপর বন্ধু তার বই, নোট লুকিয়ে রাখবে কিংবা পরীক্ষার হলে সিট পরিবর্তন করে ফেলবে এটা কেবল মাত্র সাইকো বা মানসিক বৈকল্য সম্পন্ন বন্ধুর ক্ষেত্রেই সম্ভব। সুস্থ মাথার কোন মানুষ কখনোই নিজের ভালো ফলাফল কিংবা জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অন্য বন্ধুর ক্ষতি করতে পারে না। যদিও নাবিলের বাবা এস এস সি পরীক্ষার পর হতে কখনোই আমার ছালাম গ্রহণ করতেন না এটা কি এই আজগুবি গল্পের ইমপ্যাক্ট কিনা তা আজো আমার কাছে রহস্যের মত মনে হয়। অভিভাবক গণের এহেন বাড়াবাড়ির জন্য কত বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক যে কর্পূরের মত উড়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। অভিভাবক গণের নিকট অনুরোধ করব আর যাই হোক ভালো বন্ধুত্বের মাঝে দেয়াল তুলে দিবেন না। বলা যায় না এই এক বন্ধুই আপনার ছেলেটিকে কোন খারাপ পথে যাওয়া হতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারে, যে পথ হতে আপনি তাকে কখনোই ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৪৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: নিকট ভবিষ্যতই বলে দেবে কে সঠিক।।

২০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ।

সহমত :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.