নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষকঃ জাতির মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর এবং বিবেক

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩

আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা কালিন একটি গল্প যা আমাদের ক্লাসে আমার অত্যান্ত শ্রদ্ধা ভাজন শিক্ষক বাচ্চু স্যার বলেছিলেন। একজন শিক্ষার্থীর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার শিক্ষকগণের ভূমিকা বুঝাতে স্যার এই গল্পটি করেছিলেন। স্যারের ভাষাতেই গল্পটি নিচে উল্লেখ করা হল-

তোমরা যখন কোন মেলাতে যাবে দেখবে সেখানে মাটি দিয়ে তৈরি অনেক সুন্দর সুন্দর ফল বিক্রয় করে। দেখতে অবিকল গাছের ফলের মত। মনে কর তুমি একটি সুন্দর মাটির আম কিনলে কিন্তু তুমি কি জান কত প্রক্রিয়ার পরে এই সুন্দর আমটি এত সুন্দর হয়? এই আমটিকে প্রথমে কাদামাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। এরপরে এটিকে আগুনে খুব সাবধানে পোড়ান হয় যেন এর আকৃতি ঠিক থাকে। এই আগুনে পুড়ে শক্ত হওয়া আমকে এর পরে বিভিন্ন রঙ করা হয়। সর্বশেষ এই আমটিকে আসল আমের মত বহিরাবরণ দেয়ার কাজ করে এটিকে বাজারে বিক্রয় করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

একজন শিক্ষার্থীর জীবন ঠিক একই ভাবে তার শিক্ষকগণের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। তোমার পিতা-মাতা নরম কাদারুপি তোমাকে প্রাইমারীর শিক্ষকগণের হাতে তুলে দেন। প্রাইমারীর শিক্ষকগণের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুচারু হাতের ছোঁয়াতে তুমি আম আকৃতি লাভ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গমন কর। সেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তোমাদের খুব সাবধানের সহিত পুড়িয়ে শক্ত করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্যারদের হাতে তুলে দেন। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকগণ তোমাদের প্রথমে সাদা রঙ দিয়ে এর উপরে তোমরা যে যেই রঙে বেশী আকর্ষণীয় হবে সেই রঙের প্রলেপ দিয়ে দেন। সবশেষে তোমরা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগনের কাছে যারা সারা বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী তোমাদের গায়ে বিভিন্ন কালার বা ঢঙের গ্লেজ দিয়ে দিবেন। এই গ্লেজ নিয়েই তুমি দেশ ও জাতির সেবা করতে লেগে যাবে।

এই গল্প আজও মনে হলে শ্রদ্ধাতে মাথা নত হয়ে আসে কত সহজে কত বড় একটি ব্যাপার স্যার আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কত সহজে তিনি বুঝিয়েছিলেন প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষকগণের নিরবিচ্ছিন্ন প্রয়াসই কেবল একজন শিক্ষার্থীকে সুন্দর আম রূপী সত্যিকারের মানুষে পরিণত করে। এর যে কোন এক পর্যায়ের সামান্য ছন্দ পতনই একজন শিক্ষার্থীকে বিগড়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। যা আমরা আমাদের সমাজে এখন লক্ষ্য করছি অহরহ। আমাদের সমাজে চলমান বিভিন্ন অঘটনমূলক ঘটনা এই সুচারু শৃঙ্খলের কোন এক পর্যায়ে বা অনেক পর্যায়ে ছন্দপতনকে যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

প্রথমতঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো তিন ধরণের এক. সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুই. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তিন. কিন্ডারগারটেন শ্রেণীর প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুই নম্বর বিদ্যালয় গুলোতে সাধারণত বেতন কম হওয়া তে ভালো কোন শিক্ষক (সল্প কিছু ব্যাতিক্রমি ঘটনা বাদে) ওখানে চাকুরী করতে আগ্রহী নন। তিন নম্বর শ্রেণী ভুক্ত প্রতিষ্ঠান যে কত আছে তা গননা করে শেষ করা যাবে না। এই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই আসলে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নীতিতে চলে। অর্থাৎ যত কম বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে যত বেশি বেতন শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা যায় এটাই তাঁদের মূল মন্ত্র। আর এক নম্বর বিদ্যালয় গুলোতে নিয়োগ হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে। সারা দেশে বা এলাকা ভিত্তিক এই নিয়োগ গুলোতে কত রকমের যে অনিয়ম হয় তা আজ ওপেন সিক্রেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা কালিন দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে একদল মেধাবী (!) শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে এই সকল পরীক্ষাতে কারো পাশে বসে তাকে পাশ করিয়ে দিবেন শর্তে কিছু অর্থের বিনিময়ে এমন পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করতে। অনেক ক্ষেত্রে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পরীক্ষার পূর্বেই অনেক চাকুরী প্রার্থী প্রশ্ন পেয়ে যাচ্ছেন। কেউ বাধ্য হয়ে বা কেউ কাঙ্ক্ষিত চাকুরী লাভের আশাতে এমন হাজারো দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করছেন। এর মাঝে হাতে গোনা কিছু ফেয়ার শিক্ষক যে নিয়োগ হচ্ছে না তাও বলা যাবে না। উপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা ধরে নিতে পারি এই প্রাথমিক পর্যায়ের অনেক শিক্ষকগণই নিজেদের চাকুরী গ্রহনের সময়েই নিজেদের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ফেলেছেন। এই সকল শিক্ষকগণের পক্ষে একজন শিক্ষার্থীর নৈতিকতা গড়ে দেয়া কতটুকুন অলীক কল্পনার বিষয় তা আমাদের ভাবতে হবে। এদের তৈরি আমের আকার আম না হয়ে কলা বা কামরাঙ্গা হওয়াও আশ্চর্যের কোন বিষয় নয়।

দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় তিন ধরণের এক. সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুই. এম পিও ভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় (এম পি ও ভুক্ত দাখিল মাদ্রাসাও আছে অনেক) এবং তিন. বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে নিয়োগের সময় প্রক্সি এবং দুর্নীতির সুযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর মত অনেক অযোগ্য এবং নৈতিকতার অভাব সম্পন্ন ব্যাক্তি শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। বহিরাগত ব্যাবহারিক পরীক্ষক হিসেবে ঢাকা শহরের নাম করা এক সরকারী বিদ্যালয়ে দুইদিন (তিনদিনের জন্য দেওয়া) দায়িত্ব পালন করে এই বিবেকহীন শিক্ষকদের অনৈতিক কাজকে বৈধতা না দিয়ে আমাকে দায়িত্বে অব্যাহতি নিয়ে চলে আসতে হয়েছিল। এম পি ও ভুক্ত বিদ্যালয় গুলোতে তো পরিচালনা পর্ষদের কর্তা ব্যাক্তিদের মনোরঞ্জন না হওয়া পর্যন্ত কেউ শিক্ষক হতে পেরেছেন তা খুঁজে পাওয়া দুস্কর। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে কিছু কিছু ভালো শিক্ষক নিয়োগ পেলেও এখানকার প্রাইভেট টিউশনির জন্য গড়ে উঠা সিণ্ডিকেট এবং বিদ্যালয় কতৃপক্ষের দেয়া সামান্য বেতন এদের অনেক কেই শিক্ষকতা পেশাতে ২-৪ বছরের বেশি টিকে থাকতে দেয় না। আবার অনেক বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের স্নেহ ভাজন হওয়ার দরুন পরিমল টাইপের নরকের কীট দের নিয়োগ দিতে বাধ্য হন। এই সকল শিক্ষকগনের কাছেই আমাদের নরম আম আকৃতিকে পোড়ানর জন্য দিলে সেই আম বেশী পুড়িয়ে ফেলা, ভেঙ্গে ফেলা, পেয়ারার আকার দেয়া অথবা আমকে কাঁঠালের মত কাটা যুক্ত করে ফেলাই স্বাভাবিক। এই দুই শ্রেণীর শিক্ষকগণের ফলে আমরা ১০০ ভাগ আমের মধ্যে হয়ত ৩০-৪০ ভাগ আম পাই, ৪০-৫০ ভাগ অন্যান্য আকৃতির ফল এবং বাকি ২০-৩০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। পূর্বে এই সকল স্তরে অনেক ত্যাগী এবং জ্ঞানী শিক্ষকগণ থাকলেও সময়ের বিবর্তনে তাঁদের সংখ্যা আশংকা জনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এমন একজন শিক্ষক ছিলেন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রেজা এ করিম চৌধুরী (চুন্নু স্যার হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত) যিনি একাধারে ৩৮ বছর বিভিন্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে (কোন কোন প্রতিষ্ঠান হতে বেতন নিলেও সেই টাকা ঐ প্রতিষ্ঠানের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যায় করতেন) জ্ঞান বিতরণ করে গিয়েছেন। একই সাথে নিজদের জমিতে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও স্থাপন করাতে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছিলেন। এই মহান শিক্ষক পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বনের জন্য নিজের ছেলেকে শাস্তি দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিষ্ট্রেট কে বাধ্য করেছিলেন। এই সকল আদর্শ শিক্ষকগণের কত সৎ এবং দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তা এই সকল ঘটনাই প্রমাণ করে। যাঁদের নৈতিকতার আলোকে আলোকিত হয়ে আজো অনেকে অনেক উচ্চ পদে সততার সাথে দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন। এমন আদর্শ শিক্ষক গনের অভাব যে আমাদের এই সকল সৎ যোগ্য জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আশংকা জনক ভাবে হ্রাস করবে তা কি আমাদের জাতির কাণ্ডারিগণের বিবেচনাতে আছে?

তৃতীয়ত, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ কেও তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যাবে, এক. সরকারী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় (অনেক গুলো মহা বিদ্যালয় ও আছে), দুই. এম পি ও ভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক (এই প্রতিষ্ঠানের অনেক গুলোই মহাবিদ্যালয়ের ভূমিকা পালন করে), তিন. বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এক নম্বর প্রতিষ্ঠান গুলোতে বি সি এস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয় যেখানে ৫৫ ভাগ কোটা এবং বাকি ৪৫ ভাগ মেধা ও অন্যান্য যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়। দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গুলোতে এম পি ও ভুক্ত বিদ্যালয়ের মতই অবস্থা। এখানেও শিক্ষাগত বা পাঠদানের যোগ্যতার চেয়ে নিয়োগ কমিটির পছন্দের বা তাঁদের মনোরঞ্জন করতে পারাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগের খড়গের ফাঁকফোকর দিয়ে হয়ত কোন যোগ্য শিক্ষক ঢুকে পরেন তবে তাঁরা তুলনা মূলক ভাবে নগন্য। তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত গুলোর বেসরকারি বিদ্যালয় গুলোর মতই অবস্থা। এই আদর্শ শিক্ষকের অভাবের সাথে এখানে রাজনীতি আবার মরার উপর খরার ঘা এর ভূমিকা পালন করে। একে তো শিক্ষকগণের নৈতিকতার অভাব সেই সাথে এই তথাকথিত রাজনীতি এদের অনেক কেই বিবকের ডাক না শুনতে প্ররোচনা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে এখান থেকে অনেকেই রং না মেখেই বিদায় হয় কেউবা আংশিক মাখার সুযোগ পায় যৎসামান্য কিছু আম হয়ত ভালভাবে রঙ্গিন হয়। এখানে ২০-৩০ ভাগ আমের হতে ৫-১০ ভাগ আম সঠিক রঙ পেতে পারে।

সর্বশেষ ধাপে রয়েছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। এর মধ্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হাতে গোণা দু চারটি বাদে বাকি গুলোর শিক্ষার মান কিংবা অন্য কিছু আমূল পরিবর্তন না হলে এগুলো নিয়ে আলচনা করাও বৃথা। এগুলোর মধ্যে ১৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিবেচনা করে ভর্তি হবার জন্য ইউ জি সি কতৃপক্ষ তাঁদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেখেছেন। আর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে তো প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারনে অনেক শিক্ষাদানে অক্ষম ব্যাক্তি শিক্ষক হয়ে এমনকি প্রোফেসর ও হয়ে যাচ্ছেন। ভালো ফলাফল ধারী ব্যাক্তি ই যে ভালো শিক্ষক হবেন এই গ্যারান্টি অন্তত আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পরশুনা করে এসেছি তাঁরা দিতে পারছি না। অনেকেই হয়ত আমার সাথে একমত হবেন যে এমন অনেক ভালো শিক্ষক আছেন যাঁদের পড়ানোর ধরন এর সাথে অন্য অনেক তুলনা মূলক ভালো ফলাফল কৃত শিক্ষকের ধরণের মধ্যে রাত আর দিনের মত পার্থক্য বিদ্যমান। এই দলীয় পরিচয়ে শুধু যে নিয়োগ তা নয় অনেক ক্ষেত্রে পদোন্নতিতেও দলীয় বিবেচনাই মুখ্য হয়ে দাড়ায়। এই ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন স্যারের চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে করা একটি মন্তব্য নিম্ন রূপ- “ আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক প্রভাষক হওয়ারও যোগ্যতা রাখেন না”। এই যোগ্যতা বলতে তিনি সার্টিফিকেটের যোগ্যতা হয়ত বুঝান নি তিনি বুঝিয়েছেন শিক্ষাদান বা গবেষণার অযোগ্যতা। আনএকাডেমিক কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আমরা একাডেমীকে পুরস্কার দেয়ার ঘটনা হয়ত একমাত্র বাংলাদেশেই পাওয়া যাবে। একজন শিক্ষক যদি অন্ধ দলীয় লেজুর বৃত্তির সাথে জড়িত থাকেন তাহলে তাঁর শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে থেকে কতটুকুন নৈতিকতা শিখবে? ইউ জি সির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে দেশের নতুন কার্যক্রম শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ব্যাতিত বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের সিংহ ভাগই অধ্যাপক। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর মোট ২০৫৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৮৯৭ জন অধ্যাপক (প্রায় ৪৪ %)। অথচ উন্নত দেশ সমুহে এর বিপরীত চিত্র দৃশ্যমান। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ কিংবা সর্দার ফজলুল করিম স্যারদের মত ব্যক্তিত্ব পদের অভাবে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এত সংখ্যক অধ্যাপক আমাদের বিস্মিত করে। এই সকল শিক্ষকগণ যে কত ভালভাবে গ্লেজ দিতে পারবেন কিংবা অন্যান্য ভাল গুণাবলী তাঁদের ছাত্রদের মধ্যে দিতে পারবেন চিন্তা করে দেখা এখন সময়ের দাবী।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে অবস্থা যদি এত খারাপ হয় তাহলে শিক্ষা ব্যাবস্থা টিকে আছে কীভাবে কিংবা এখনো কিছু ভালো মানুষ তৈরি হচ্ছে কীভাবে? উত্তর খুবই সহজ আর তা হল এখনো ৫-১০ ভাগ আদর্শ শিক্ষক প্রতিটি স্তরে রয়ে গেছেন। যে সকল শিক্ষার্থী এই সকল আদর্শ শিক্ষকগণের সংস্পর্শে আসছেন তারাই প্রকৃত মানুষ হচ্ছেন। অতীতে এই সকল আদর্শ শিক্ষকগণ ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু কালের বিবর্তনে উপরে বর্ণীত সমস্যা গুলোর কারনে আজ এই ধরণের শিক্ষক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এই ভাবে চলতে থাকলে সেদিন বেশী দূরে নাই যেদিন আদর্শ শিক্ষকগণ চুন্নু স্যারদের মত হারিয়ে যাবেন এবং তাঁদের পাওয়া যাবে শুধু বই পুস্তকের বিভিন্ন চরিত্রে।

এই আদর্শ শিক্ষকের অভাবেই আমাদের তরুণ সমাজ আজ নতুন নতুন উপায়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক অবক্ষয় আমাদের এই শ্রেণীর শিক্ষকের অভাবকেই মনে করিয়ে দেয়।

মেধাবী এবং নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষকগণকে শিক্ষকতা পেশাতে আনতে হলে বেতন কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ও জরুরী। বিশ্বের সকল উন্নত দেশে শিক্ষকগণ সর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানি পান। তাই মেধাবীদের এই পেশাতে আগ্রহী করতে হলে এই পেশার জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর সাথে সাথে এই পেশার সামাজিক অবস্থান উন্নত করার বিকল্প নাই।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের সর্বনিম্ন যোগ্যতা স্নাতক করার পাশাপাশি এদের অন্য বিশেষ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। যেমন জাপানে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার চেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া অনেক কঠিন। কারন প্রাথমিক শিক্ষকগণই সর্বপ্রথম ঐ নরম মাটির দলাটিকে সুন্দর একটি আকৃতি দাণ করেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নিয়োগ কমিটির ক্ষমতা বিলুপ্ত করে একটি স্বাধীন দুর্নীতি মুক্ত কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া এখন সময়ের দাবী।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা, পাবলিকেশনস (যদিও আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নেচার এবং বাংলাদেশের লোকাল কোন জার্ণালের একই মূল্য দেয়া হয় যা পৃথিবীর আর কোন দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না) এর সাথে শুধু মৌখিক সাক্ষাৎকার নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই সকল কিছুর উপরে যে যোগ্যতাটি দেখা হয় তা হল রাজনৈতিক পরিচয়। এই পর্যায়ে অধিকাংশের মতে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পাবলিকেশনস দেখে প্রতি পোষ্টের বিপরীতে তিন জন শিক্ষক কে এক মাস তাঁদের পছন্দ মত কিংবা নিয়োগ কমিটির পছন্দের কোন বিষয়ের ক্লাস নিতে দেয়া হয় এবং একই সাথে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এক জনকে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলেই হয়ত ভালো শিক্ষক পাওয়া সম্ভব। অনেকে হয়ত বলবেন এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের অপচয় হবে তাঁদের কাছে প্রশ্ন একজন অযোগ্য শিক্ষক কে ৩০-৪০ বছর পূর্ণ বেতনে পোষার চেয়ে এক মাসে এই তিন জনকে বেতন দেয়া কি অনেক বেশি অপচয়ের কাজ হবে? তবে ডেমো ক্লাসের ব্যাপারটি সকল স্তরের শিক্ষক নিয়োগের অন্যতম একটি মানদণ্ড হওয়া উচিৎ।

একই সাথে পূর্বে সিস্টেমের সমস্যার কারনে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য শিক্ষকগণকে বিভিন্ন ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাঁদের দুর্বলতা কাঁটিয়ে দিতে হবে। এর পরেও যদি কেউ পড়াতে অক্ষম হয় তাহলে তাঁকে অন্য পেশাতে প্রতিষ্ঠিত করে তাঁর পদে ভালো কোন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

অবিলম্বে এই জাতির মেরু দণ্ড গড়ার কারিগরদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সচ্ছ করা না গেলে জাতির মেরুদণ্ড নড়বড়ে হওয়ার সাথে সাথে নৈতিক পরাজয় অনিবার্য হয়ে পড়বে। তাই এই ব্যাপারে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা দয়া করে আমাদের এই ৫-১০ ভাগ আদর্শ শিক্ষক জীবিত থাকতে থাকতে আদর্শ শিক্ষকের সংখ্যা ৮০-৯০ ভাগ করার আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করুণ। তা না হলে দেশে যে ভাবে দুর্নীতি এবং অনৈতিক কাজ আশংকাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে সেই দিন বেশি দূরে না যেদিন আমরা এই সকল কাজের সৃষ্ট ব্লাক হোলের অতল গভীরে হারিয়ে যাব। যেখান থেকে শত চেষ্টা করেও জাতীকে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। আজ আপনি যে অনৈতিক কাজের মাধ্যমে একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন সেই শিক্ষকই যে জাতিকে রসাতলে নিয়ে যাবে না এর গ্যারান্টি কি? তাই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্দেশে বলব নগর পুড়িলে দেবালয় কিন্তু এড়ায় না, জাতি রসাতলে গেলে আপনি বা আপনার উত্তরসূরি গণও রসাতলে যেতে বাধ্য।

পুনশ্চঃ ৫-১০ ভাগ আদর্শ শিক্ষকগণের কাছে বর্তমান বাংলাদেশের বিবেক সম্পন্ন মানুষদের সবাই কৃতজ্ঞ। আপনাদের অবদানেই আজো আমরা টিকে আছি, পৃথিবীর বুকে গর্ব করার মত আমাদের কিছু অর্জন আছে। আপনাদের সংখ্যা ৮০-৯০ ভাগ করতে পারলে আমাদের অর্জন আরও কতগুণ বাড়ত তা কল্পনা করার শক্তি আমার নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: শেখ এম উদ্‌দীন ,




আসলেই দেশের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা ভয়াবহ । আদর্শ শিক্ষক নেই-ই বলতে গেলে, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া । শুধু সার্টিফিকেট এবং শিক্ষক নিয়োগে ঘুসের টাকার পরিমান দেখে শিক্ষক নিয়োগই এই ভয়াবহতার জন্ম দিয়েছে । কথাটি উড়িয়ে দেবেন না । মনে হয়না আগামী ১০০ বছরেও এখান থেকে আমরা বেরুতে পারবো ।

মেধাবী এবং নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষকগণকে শিক্ষকতা পেশাতে আনতে হলে বেতন কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ও জরুরী।


আপনার এই বক্তব্যের সাথে শুধু একমতই নই বরং বলতে চাই এদেরকে সর্বোচ্য সম্মানী ( বেতন ) সহ ভদ্রভাবে বেঁচে থাকার সঠিক পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে ।

পোষ্টের বোল্ড করা অংশটুকুর সাথে আমিও গলা মেলাচ্ছি ।

ভালো থাকুন ।

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:০৯

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
বেতন কাঠামোর সাথে সাথে পূর্বের আগাছা গুলো পরিস্কারের ব্যবস্থা করাও জরুরী। পরিতাপের বিষয় হল এই সকল বিষয় গুলো নিয়ে কেউ এখন কথা বলে না। বললেও মিডিয়া প্রচার করে না। আর কিছু দিন গেলে তো সকল ক্ষেত্রে এই ভুয়া শিক্ষকদের দখলে চলে যাবে তখন এদের কেই আদর্শ শিক্ষক বলে আমাদের মিডিয়া প্রচার করবে। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.