নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসাধারণ সমাজ সেবীদের বেসম্ভব সমাজ সেবা এবং আক্কেল আলীর জীবন অভিজ্ঞতা

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৮

কোন এক দ্বীপে একদল অসাধারণ সমাজ সেবীদের বাস। এই অসাধারণ সমাজসেবীগনের বেসম্ভব সমাজ সেবার গল্প ঐ দেশের সীমা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের নিকট তাঁহারা অস্পর্শী অপ্সরা স্বরূপ। ঐ দ্বীপের অসাধারণ ব্যক্তিবর্গের সহিত অন্যান্য সাধারণ জনগণেরও বসবাস। আক্কেল আলি এই সাধারণ জনগণের মত চতুরতা বিবর্জিত এক মানব। একদিন আক্কেল আলীর এক বন্ধু মফিজ খুব গলা ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। কিন্তু গলার ব্যথা এবং ঐ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে না জানার কারনে ডাক্তারের সামনে হতে সমাজ সেবকদের ফোন দেবার কথা চিন্তা করল। ডাক্তার কে সে ইশারাতে বুঝালো সে তার শুভাকাঙ্ক্ষী সমাজ সেবকদের সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছে। এই বলে আক্কেল আলি একজন একজন করে সমাজ সেবকদের নাম্বারে কল দিতে লাগলো।

এক দল সমাজ সেবক একটি গাছের নিচে দাড়িয়ে ঐ গাছের পাতার পরিমান বেশি নাকি কম এবং এই পাতার পরিমানের উপরে কিভাবে সমাজের শৃঙ্খলা বা সৌন্দর্য নির্ভর করে তাই নিয়ে ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ আলচনার মধ্যে মফিজের কল এলো এক সমাজ সেবীর মোবাইলে। এতে সমাজ সেবী কিছুটা বিরক্ত ভরে মোবাইল খানা কেটে দিলেন। ঐ সমাজসেবী আরেক সমাজসেবীর প্রশ্নের উত্তরে বললেন “কি আক্কেল দেখেন তো “খ” ভাই এই লোকটা কি জানে আমরা কত ব্যস্ত থাকি? কি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি এর মধ্যে এই সকল ফোন রিসিভ করতে বিরক্ত লাগে না বলেন”। খ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন কি নিয়ে ফোন করল? ক সাহেব বললেন “আরে বলবেন না কি ডাক্তারের কাছে গেছে শেখানেও কথা বলে দিতে হবে!! মানুষরে উপকার করতে করতে মাথাতে তুলে ফেলেছি”। ‘গ’ বললেন, “হু ভাই আমরা না থাকলে এঁদের জীবন হেল হয়ে যেত!”
এদিকে মফিজের ডাক্তার বসে আছে বলে মফিজ তড়িঘড়ি করে এক সমাজ সেবিকা (‘ক’ সাহেবের স্ত্রী) কে ফোন দিল। এদিকি সমাজ সেবিকাগণ কিছু মহিলা দের নিয়ে বসে কার চুলে কি ধরণের শ্যাম্পু দেয়া উচিৎ, কে কোন ব্র্যান্ডের চিরুনি ব্যবহার করে, কে ত্মকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য ডাক্তার দেখাতে চায় এবং কাকে নিয়ে যেতে চায় এগুলোর মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনাতে নিমগ্ন। এর মাঝে মফিজের কল সত্যিই সেবিকা মহোদয়াকে বিরক্ত করল। তিনি বলেও ফেলেছেন এভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলচনার মাঝে যদি এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কল দেয় তবে কার না বিরক্ত লাগে? মফিজের এমন উদ্ভট কলের কোন উত্তর না দিয়ে সেবিকাগণ তাঁদের নিজেদের পূর্বোক্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ মন দিল।

মফিজের ডাক্তার মফিজের অবস্থা বুঝে তাঁর ড্রয়ার হতে কাগজ বের করে মফিজকে পেন্সিল ধরিয়ে দিয়ে বললেন “এই ফোন দেয়া রাখেন, এর চেয়ে আমাকে এঁকে বুঝান কি হয়েছে আপনার”। মফিজ ও বুঝল সে কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্গের সাথে বসবাস করে আর তাঁরা কত বড় মাপের সমাজ সেবী। মফিজ আর ডাক্তারের মিলিত প্রচেষ্টাতে ডাক্তার মফিজের সমস্যা বুঝতে সক্ষম হলেন। মফিজকে তিনি কিছু ঔষধ দিয়ে ১৪ দিন পরে দেখা করতে বললেন। বাসায় ফেরার পথে মফিজের সাথে আক্কেল আলীর দেখা হল।

আক্কেলঃ কি মফিজ ভাই কোথায় গিয়েছিলেন?
মফিজঃ গলা ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে রে ভাই।
আক্কেলঃ সব বুঝাইয়া বলতে পারছিলেন তো? অবশ্য আমরা ভাগ্যবান ক, খ, গ ভাইদের মত এত সমাজসেবী থাকাতে আমাদের এগুলো নিয়ে চিন্তা করা লাগে না।
মফিজঃ হুম, তবে ভাগ্য যে কার সুপ্রসন্ন তা বুঝতে তোমার আরও সময় লাগবে। মাত্র তো এলে কিছুদিন পরে বুঝবে কত সমাজসেবীর কত রকম সমাজ সেবা।
আক্কেলঃ কেন? এভাবে বললেন কেন ভাই?
মফিজঃ আমার দরকার ডাক্তারের সাথে কথা বলার লোক কিন্তু তুমি যদি আমার বাসার সামনের সৌন্দর্য বর্ধন নিয়ে কাজ করে মারাও যাও তাতে আমার বিপদে আমার কি লাভ হল?
আক্কেলঃ হুম, এই ভাবে তো চিন্তা করি নাই। তবে তুমি যাই বলেন ভাই ওনারা মহৎ মানুষ, তা না হলে গত পরশু ৩০ জন মানুষরে নিয়া এত বড় একখানা আয়োজন করে ফেলতে পারত? ওনারা কত কেয়ারিং জানেন? কাল আমার বউ কুকুরের ডাক শুনে ভয় পাওয়াতে ‘ক’ ভাই ও তাঁর স্ত্রী এসে ২ ঘণ্টা আমার বউয়ের কুকুরের ভয় ভাঙ্গাইছে!
মফিজঃ হুম, বড়ই মহৎ ব্যক্তি ওনারা, আল্লাহ্‌ ওনাদের এমন আরও মহৎ কাজ করার তুলনাতে আরও কম করে হলেও সত্যিকারের কিছু পরোপকার করার তৌফিক দান করুণ।

আক্কেল মফিজের শেষ কথা গুলো বুঝতে পারল না। এর পরে দুজন বিদায় নিয়ে চলে গেল। পথে যেতে আক্কেল আলীর সাথে ‘ক’ সাহেবের দেখা হল।

আক্কেলঃ আরে ‘ক’ ভাই যে, কি অবস্থা ভাই, এভাবে হন্ত দন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
কঃ আর বল না ভাই, তোমার ভাবির এক বান্ধবী আমাদের অনেক গুলো ডাল দিয়েছে এবং সবাইকে নিয়ে খেতে। তাই বাসায় বাসায় ডাল পৌঁছে দিচ্ছি, তোমার ভাবিকে তো চিনই সকলের ব্যপারেই সে খুব কেয়ারিং।
আক্কেলঃ হুম, ভাই কাল ভাবি আমার বউয়ের জন্য যা করল, তা কত জনে করে ভাই?
কঃ আরে না কি যে বল না তোমরা। আমরা আর তেমন কি করি, তবে তোমার ভাবি তোমার বাসা থেকে বের হয়ে আবার আবুলের বাসাতে গিয়েছিল।
আক্কেলঃ কেন ভাই ওখানে কি হয়েছিল?
কঃ আর বলিও না, আবুলের বউয়ের লিপিস্টিক নাকি শেষ হয়ে গিয়েছিল, ও একা ভালো লিপিস্টিক পছন্দ করতে পারবে না বলে আমরা দুজন মিলে ওর সাথে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে কাজ শেষ করতেই বাবুল ফোন করল। বলল ওর নাকি জুতার ফিতা হারিয়ে গেছে। পরে ঐ দোকান থেকেই ফিতা কিনে ওর বাসাতে পৌঁছে দিলাম।
আক্কেলঃ হুম, ভাই আপনারা কত যত্নশীল আমাদের প্রতি। তবে মফিজের আজ ডাক্তার দেখানোর সময় আপনাদের কারো সাহায্য হলে হয়ত ভালো হইত।
কঃ কি হয়েছে মফিজের?
আক্কেলঃ ওর গলা ব্যথা হয়েছিল।
কঃ কি সাংঘাতিক ব্যপার বল তো? ও অবশ্য আমাকে কল করেছিল তখন আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তবে এখন ওর বাসাতেই এই ডাল দিতে যাচ্ছি। কি আর করা বল কত দিক আর সামাল দিব একা। এই দিকে তোমার ভাবিও একটু ব্যাস্ত এবং অসুস্থ।
আক্কেলঃ হুম, তবে ওর মনে হয় এই ডালের চেয়ে আপনার ফোন ধরাটা বেশি দরকারি ছিল।ভাবির আবার কি হল?
কঃ আর বল না ভাই, তোমার ভাবি নেলপোলিশ দিয়ে তা তুলতে গিয়ে আঙ্গুলের মাথাটা কেটে ফেলেছিল।
আক্কেল কি বলেন ভাই আমরা তো জানিই না। দেখি আজ বিকেলে যাব।
কঃ নাহ অত বেশি কিছু না, ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম ডাক্তার বলল এই সামান্য কাটাতে কোন ঔষধ দেয়া লাগবে না।
আক্কেলঃ ওহ, তাহলে তো ভালই। আচ্ছা ভাই আমি এবার যাই একটু কাজ ছিল।
কঃ হুম যাও, তবে এই ডাল টুকুন নিয়ে যাও।

এই বলে আক্কেল আলি এবং ‘ক’ সাহেব দুজন দুই দিকে চলে গেল।

আক্কেল আলি মফিজের শেষ বাক্য খানা নিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো। কারন ‘ক’ সাহেবের সমাজ সেবার ফিরিস্থি শুনে সে এগুলো সমাজ সেবা নাকি মানুষ হাতে রাখা তা আলাদা করতে পারল না। আক্কেল আলি কিছুতেই ভেবে পেল না যে ব্যক্তি তার বউয়ের কুকুর ডাকের ভয় কাটাতে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে দ্বিধা করে না সে একজন মানুষের ইমারজেন্সির সময় কিভাবে এমন নিস্পলক থাকেন? যদি তাই পারেন তাহলে তো এক সময় আমারও এমন পরিস্থিতিতে উনি নিশ্চুপ হয়ে গাছের পাতার রঙ দেখতে উদগ্রীব থাকবেন। এঁদের এই সকল কাজ যদি সমাজ সেবা বা সমাজের মানুষ নিয়ে এঁদের যত্নশীলতার প্রমাণ হয় তাহলে তো সর্বনাশ। এরা তো আসলে নিজেকে অন্যের নিকট গুরুত্বপূর্ণ বা সমাজে নিজেদের ভালো প্রমানে ব্যস্ত। এঁদের সকল কাজই কৃত্রিম। কি লাভ এই কৃত্রিমতার ব্যবসা করে? এমন হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে আক্কেলের ডাল প্রাপ্তির আনন্দ ম্লান হতে হতে মনের আকাশে ঘন কালো মেঘের আড়ালে ঢাকা পরে যায়। সে পৃথিবীর আকাশে তাকিয়ে আকাশের মাঝে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ায়।


বিদ্রঃ এই গল্প সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবিক ভাবে যদি কোন সমাজসেবীর চরিত্রের সাথে মিলে যায় তবে তা কাকতালীয় বলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তবে আক্কেল আলীদের বা এমন সকল সমাজসেবিদের নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করতে পারা মানুষ সমাজে নেই বললেই চলে। সকলেই ক, খ কিংবা গ সাহেবদের স্নেহ ধন্য হতে পারলেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। ফলে মফিজের বেহুদা কথা নিয়ে চিন্তা করার বা সেই চিন্তা হতে কারো মনের আকাশে মেঘ জমার সম্ভাবনা খুবই কম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: রসালো এবং গভীর......

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৫

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ। ক সাহেব গণ যদি বুঝত তাহলেই সার্থক হত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.