নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।

মৌতাত গোস্বামী শন্তু

মানুষ বলে ভুল করলেও নিজেকে মানুষই বলব আমি।

মৌতাত গোস্বামী শন্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজী নজরুলের চরিতমানস : বাঙালিসত্ত্বার অপার সম্মীলন

২৭ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬


।।১।।
কাজী নজরুল ইসলাম তখন কবিতা লেখার অপরাধে জেলে, কবিগুরু তাকে উৎসর্গ করলেন ‘বসন্ত’ নাটক। জেলে বসে সেদিনের অনুভূতিকে নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির সঙ্গে তুলনা করে তিনি লিখেছেন,
“বিশ্বকবিকে আমি শুধু শ্রদ্ধা নয়, পূজা করে এসেছি সকল হৃদয় মন দিয়ে, যেমন করে ভক্ত তার ইস্ট দেবতাকে পূজা করে। ছেলেবেলা থেকে তার ছবি সামনে রেখে গন্ধ-ধূপ-ফুল-চন্দন দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বন্দনা করেছি, এ নিয়ে কতলোক ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে!”
আমাদের কবি নজরুল ইসলামের মানস এমনই।

।।২।।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের জন্য খুব বড় একটা নাম, যিনি ছিলেন ইচ্ছা শক্তির দাস, ছিলেন অপূর্ব সৃষ্টিশীল মানুষ, ছিলেন আপদমস্তক বাঙ্গালী। তার মানস নিয়ে বলতে গেলে প্রধানতম প্রামাণ্য বই – ‘নজরুল চরিতমানস’ থেকে বলতে হয় তিনি বিপ্লবী চিন্তা শক্তির বাঙালী। ড. সুশীল কুমার গুপ্ত তাকে কম্যুনিস্ট বলেননি, কিন্তু কিছুটা হলেও প্রচেষ্টা করেছেন মুজাফফর আহমেদ, নারায়ন চৌধুরীরা। আমরা নজরুলকে সাম্যবাদীরূপে চিনি তার দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য – সর্বহারা ও সাম্যবাদী। নজরুলের এই সাম্যবাদ তার একান্ত ব্যক্তিগত বিশেষায়িত, তাতে প্রসাধনীরূপে কেবল যুক্ত হয়েছে ‘রুশ বিপ্লব।’
“তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞাণ
সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুঁজে দেখ নিজ প্রাণ।”

।।৩।।
নজরুল ইসলামের ইসলামি গান ও গজল শুনে তাকে সাচ্চা, পিরপয়গম্বর ভাবা যেমন সম্ভব, তার শ্যামা সঙ্গীত, কীর্তন, হিন্দুদেবদেবী ও হিন্দু ধর্ম নিয়ে লেখা কবিতা পাঠে কেউ তাকে সাত্ত্বিক ঠাকুর, পুরোহিতও ভাবতে পারেন। আবার তার এমনও চরণ বা রচনা আছে যাতে তাকে নাস্তিকও বলা যায়! প্রকৃতপ্রস্তাবে নজরুল তার স্বীয় প্রতিভার কল্যানে তার মধ্যে এক আশ্চার্য সমন্বয় ঘটাতে পেরেছেন পরস্পর বিরোধী নানা ভাবাবর্তের।
“একই বৃন্তে দু’টি কুসুম –
মুসলিম তার নয়নমনি, হিন্দু তার প্রাণ।”


নজরুল ইসলাম বঙ্গভঙ্গের ও ভারতভাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিলেন, এবং ধর্মীয় স্পর্শটাকে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন । তাই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি তাকে সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধের মানুষ বলে চিহ্নিত করেছেন। আজীবন বিশ্বাস করেছেন অখন্ড মনুষ্যত্বে, তাই তিনি পিছিয়ে পড়াদের জেগে উঠতে বলেছেন, গেয়েছেন সাম্যের গান,
“গাহি সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধাণ
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলীম-ক্রীশ্চান।”

।।৪।।
নজরুল চরিত্রের একটি বিচিত্র উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে কবি নজরুল আর ব্যক্তি নজরুলের ভিন্নতা। প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খা যখন তাকে মুসলমানের কবি হয়ে মুসলিম সাহিত্য রচনার অনুরোধ জানান, তখন তিনি উত্তরে বলেন –
“মুসলিম সাহিত্য মানে কি মুসলমানের সৃষ্ট সাহিত্য না মুসলিম ভাবাপন্ন সাহিত্য?”

আনোয়ার হোসেনকে উত্তরে বলেন,
“মুসলমান সমাজ কেবলই ভুল করেছে আমার কবিতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিত্বকে জড়িয়ে। আমি মুসলমান কিন্তু আমার কবিতা সকল দেশের, সকল কালের, সকল জাতির ।........আমি শরীয়তের বাণী বলি নি, আমি কবিতা লিখেছি। ধর্মের বা শাস্ত্রের মাপকাঠি দিয়ে কবিতাকে মাপতে গেলে ভীষণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ধর্মের কড়াকড়িতে কবি বা কবিতা বাঁচেনা, জন্মলাভও করতে পারে না।”

কলকাতা এলবার্ট হলে উচ্চারণ করেন,-
“কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি দু’টোর কিছুই নই। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে একজায়গায় এনে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।”

।।৫।।
তিনি আমাদের সমাজের পশ্চাৎগামীতার পিছনে দায়ী করেছেন ধর্মান্ধতাকে,-
“আমাদের বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে যে গোঁড়ামি, যে কুসংস্কার, তাহা পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই বললে অত্যুক্তি হইবে না।”

যারা দিনত চলিয়া যাইতেছে, পথত চলিতেছি’ ভাবাপন্নের তাদের জন্য লিখেছেন, -
“আজ বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে একজন চিত্রশিল্পে নাই, ভাস্কর নাই, সঙ্গীতজ্ঞ নাই, বৈজ্ঞানিক নাই, ইহা হইতে লজ্জার কি আছে?”
মুসলীম সমাজের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিশেবে ‘আমার ধর্ম’-তে আরো স্পষ্ট করে মোটা দাগে উল্লেখ করেছেন –
“বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানেরা গোঁড়া, শিক্ষিত মুসলমানেরা ঈর্শ্বাপরায়ন।”


।।৬।।
শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত কবির একটি সুন্দরতম মূল্যায়ন –
“নওকারির জন্য দাসখৎ লিখবার কায়দাকানুন শিখবার জন্য যদি তোমরা শিক্ষাব্রত গ্রহন কর, তবে জাহান্নামে যাক তোমাদের এই শিক্ষা পদ্ধতি, এই শিক্ষালয়।”

এই সমাজের অজ্ঞানতাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছেন,
“ভিতরের দিকে যত মরিয়াছি, বাহিরের দিকে তত
গুনিতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি গরু ছাগলের মত।"

হিন্দু মুসলমানের হানাহানি তার চক্ষূশূল ছিল, তিনি আগাগোড়া জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ও পাকিস্তানের বিরোধী। ‘বাঙ্গালীর বাংলা’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন,
“বাঙ্গালী যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে বাঙ্গালীর বাংলা সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।”

বাঙ্গালী পেরেছিল ১৯৭১-এ, সেদিন সবাই বলেছিল বাঙ্গালির বাংলা। কাজী নজরুল সামগ্রিক একটি সত্ত্বা যার মধ্যে একজন পরিপূর্ণ বাঙালির পরিস্ফুটন পাওয়া যায়। যিনি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক হানাহানি, শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন। কবির অসুস্থতা আমাদের একজন আদর্শকে কেড়ে নিয়েছিল, যিনি সামগ্রিকভাবে বাঙ্গালী প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীণ। কবির এই ১১৭তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি



গোপালগঞ্জ
১১জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৩

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সুন্দর পোস্ট অথচ কোন মন্তব্য নেই!

২| ২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৭

মৌতাত গোস্বামী শন্তু বলেছেন: পড়েই নি তো!
মন্তব্য করবে কিভাবে?

যাহোক, সমালোচনা করলে খুশি হোতাম!

৩| ২৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮

ছয় শব্দের অস্তিত্ব বলেছেন: নজরুল বাঙালি চেতনার কবি।
সত্ত্বার?
নন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.