নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত চিন্তার প্রকাশ...

সকাল সন্ধি

চিন্তার স্বাধীনতা চাই। প্রচলিত কুসংস্কার ভেঙ্গে দিতে চাই। সম্পর্কে অবৈধ বলে কিছু নেই...

সকাল সন্ধি › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়াই অপরাধ?

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

লিখেছেন: রহমান মুফিজ



DHORMO‘নাস্তিক্যবাদ’ প্রধান সমস্যা নয়। নাস্তিক্যবাদকে অপরাধ হিসেবে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে প্রধান সমস্যায় রূপান্তর করছে জামায়াত-শিবির ও সাম্প্রদায়িক-জঙ্গি-মৌলবাদী গোষ্ঠী। ফলে উপর্যুপরি ‘নাস্তিক’ হত্যায় অন্ধ-মূর্খ ও কিয়দাংশে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মৌন সমর্থন লাভ করেছে তারা। এ হত্যায় সরকারেরও প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে। সরকারের লোকজনও বলেন- তারা ‘নাস্তিকদের’ পক্ষে নেই। তারাও জঙ্গিদের মতো রাজীব, অভিজিত, বাবু ও অনন্তকে নাস্তিক বলে আখ্যা দিয়েছে। ফলে একের পর এক নাস্তিক হত্যায় সরকারের কিছু যায় আসে না। উপরন্তু ‘নাস্তিক’ হত্যায় নিরব থেকে জঙ্গিদের মন যোগানোর চেষ্টায় রয়েছে সরকার (যদি না থাকে সেটা প্রমাণ করতে হবে সরকারকেই)।

এ দেশে মানুষের থাকা-খাওয়া, জীবন-যাপন, ইত্যাদি সাধারণ অনেক সমস্যা ছাড়াও চুরি, লুটপাট, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, অনিয়ম-অবিচার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, অর্থ পাচার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়সহ নানা জাতীয় সমস্যা ফেলে রেখে কেবলই ‘নাস্তিক্যবাদই’ প্রধান সমস্যা হলো কবে থেকে?

যখন আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইলাম, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অভূতপূর্ব এক গণজাগরণ তৈরি করে সরকারকে বাধ্য করলাম কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি দিতে, আমরা যখন গড়ে তুললাম গণজাগরণ মঞ্চ, তখন থেকেই এ দেশে ‘নাস্তিক্যবাদ’ প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতসহ তার দোসররা প্রচার চালাতে লাগলো গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন নাস্তিকদের আন্দোলন। গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে তুলেছে ব্লগাররা। আর ব্লগার মানেই নাস্তিক। নাস্তিক আর ব্লগার সমার্থক করে তুললো তারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনকে ‘কতিপয় নাস্তিকদের আন্দোলন’ আখ্যা দিয়ে তারা বিষয়টির হাল্কা, অগ্রহণযোগ্য এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলো। তারা রাতারাতি শাহবাগ জাগরণের বিরুদ্ধে মতিঝিলে ইসলামী জাগরণ মঞ্চ গড়ে তুললো। শাহবাগ জাগরণের কর্মীদের অকথ্য গালিগালাজ করে খেদ মেটালো। ঢাকা শহর দখল করে রাতারাতি বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালালো। তাতে সমর্থন দিল বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ নানা দল ও শক্তি। সরকার নানা কৌশলে সেদিনের সে অপশক্তিকে ঠেকিয়েছিল। কিছুটা আপোশও করেছিল তাদের সঙ্গে। হেফাজতে ইসলাম নামের কথিত অরাজনৈতিক সংগঠন বেশ কিছু ব্লগারের তালিকা দিল সরকারের হাতে। তাদের দাবি ছিল ওইসব ব্লগারদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। সরকারের আশ্বাসে সেবারের মতো ক্ষান্ত দিয়েছিল হেফাজত।

এর পরের ঘটনা অদ্ভূত সমীকরণ হাজির করে আমাদের সামনে। একের পর এক ব্লগার হত্যা হতে থাকে। প্রত্যেকেই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী বা সমর্থক। প্রত্যেকেই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে লিখেছেন ব্লগে। সেসব লেখা নিয়ে ব্লগেই বাহাস হয়েছে অনেকের সঙ্গে, বিশেষ করে বিরোধী মতের সঙ্গে। সেসব বাহাসে ব্লাগাররা নানা যুক্তির মধ্য দিয়ে দেখিয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত-শিবির চক্রের শাস্তি ও নিষিদ্ধের দাবি কেন প্রাসঙ্গিক, কেন দরকার। যুক্তিতে না পেরে বিরোধীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। হত্যার হুমকি দিয়েছে। শেষমেষ হত্যায় লিপ্ত হয়েছে তারা।

বিষয়টা কত মর্মান্তিক একবার ভাবুন- কথিত ‘নাস্তিকদের’ বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা দু পক্ষ থেকেই নেয়া হচ্ছে। যারা তালিকা দিয়েছে তারা একে একে হত্যায় লিপ্ত হয়েছে আর সরকার তাদের দেয়া আশ্বাস অনুযায়ী নীরব থেকে ‘ব্যবস্থা’ নিচ্ছে।

আমাদের অপরাধ, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছি। সেই অপরাধে আমরা আজ নাস্তিক। আমাদের দাবির যৌক্তিকতা হার মেনেছে নাস্তিক্যবাদের কাছে। যদিও সে অপরাধ আদৌ অপরাধ কি না সেটি বিচারের ভার কেবলই সংবিধানের; কেবলই আইনের। যাদেরকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেয়া হচ্ছে তারা প্রকৃত বিচারে নাস্তিক কি না সে বিচারও করবে রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন ও শৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা ‘নাস্তিক’ হত্যায় মেতেছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ভূমিকা কি? রাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।

তালিকা ধরে একের পর এক ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের হত্যায় মেতেছে চিহ্নিত জঙ্গিগোষ্ঠী। এ হত্যার মূল লক্ষ্য মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে আঘাতে আঘাতে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলা, দমিত রাখা। এ হত্যার মূল লক্ষ, জামায়াত-শিবির বিরোধী, প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন রাজনৈতিক বলয়েকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। তা না হলে হঠাৎ করে রাষ্ট্রের আরো অনেক সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কেবলই ‘নাস্তিক্যবাদই’ প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। নাস্তিকরা কাউকে মারেও না, কাটেও না। যুক্তির বাইরে তারা কথাও বলে না। তারপরও ‘নাস্তিক’ই এদেশের প্রধান সমস্যা হয় কী করে? এর পেছনে কারা বা এর অভিসন্ধি কি তা মানুষ একেবারেই বুঝে না, তা নিশ্চয় নয়। মানুষের ন্যায় ও বিচারবোধের প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।

কিন্তু আমরা হৃদয়-বিদীর্ণ বিস্ময় নিয়ে লক্ষ করছি, আজ যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার অপরাধের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের। মুক্তিযুদ্ধ, ন্যায় বিচার, সাম্য ও প্রগতির পক্ষে কলম ধরলেই, স্লোগান দিলেই আজ শত্রু হয়ে উঠছি আমরা। এ তবে কোন মুক্তিযুদ্ধের দেশ, কোন বাংলাদেশ? তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের শক্তি, চেতনা, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধপরাধী জামায়াত-শিবিরের চাপাতির নিচে ভীত-সন্ত্রস্ত মুখ বুঁজে আছে?

শুরু থেকেই গণজারণ মঞ্চের আন্দোলন কাদের চক্ষুশূল ছিল তা জানে না কেউ? কারা নাস্তিক আখ্যা দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের তালিকা দিয়েছিল সরকারের হাতে জানে না কেউ? কারা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের নামে মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, জানে না কেউ? রাতারাতি নাস্তিক হত্যার মিশনই কেন এত ‘জরুরি’ কাজ হয়ে দাঁড়ালো, জানে না কেউ? অন্যসব ক্ষেত্রে হিসাবে জটিল হতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে হিসাবটা সোজাসাপ্টা। কারা এসব হত্যার হোতা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পেছনে তাও অনেকটা স্পষ্ট। এদেশে জঙ্গি কারা, জঙ্গি বানায় কারা, এসব অপকর্মের ফল খায় কারা সবই জানে জনগণ। কারা একে একে ব্লগার ও গণজাগরণের কর্মী হত্যার নীল নকশা করছে তাও আন্দাজ করতে পারে সচেতন মানুষ।

আমরা জানতাম, এমন একটা আন্দোলন নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি, যেটাতে মরণ কামড় দিতে পারে জামায়াত-শিবির চক্র। এবং তাই ঘটেছে। আমরাও বুঝে গেছি, আমাদের আরো রক্ত দিতে হবে। যুদ্ধপারধের বিচার চাওয়ার চরম মূল্য দিতে হবে আমাদের। রাজীব হায়াদার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাসের কাতারে আজ নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় দাঁড়িয়েছে। কাল আমাকে, আপনাকেও দাঁড়াতে হবে। এ জন্য প্রস্তুতিও আমাদের আছে। কিন্তু কেবলই তাদের চাপাতির কোপের নিচে যাওয়ার প্রস্তুতিই যুদ্ধাপরাধের বিচারের আন্দোলন, প্রগতির আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নয়। এভাবে উপর্যুপরি হত্যার কাছে নিজেদের সঁপে দেয়া আত্মঘাতি হওয়ারই সামিল। এখনই প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে না তুললে উত্তর প্রজন্ম সাহসের দীপ খুঁজে পাবে না। দীপ খুঁজে না পেলে অন্ধকারে পথও চিনবে না তারা। ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে পড়বে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ-প্রতিষ্ঠার লড়াই।

যেহেতু আমাদের আন্দোলনকে তারা ভয় পেয়েছে, একইসঙ্গে আমাদের অহিংসতাকে দুর্বলতা ভেবেছে তারা। তাই সন্ত্রাসে সন্ত্রস্ত করে রাখতে চাইছে আমাদের। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের অমূলক সন্ত্রাসের কাছে আমরা আমাদের সাহসকে বন্ধক দেবো কি না। বিকিয়ে দেবো কি না দেশকে। নাকি গড়ে তুলবো আরেকটি অভূতপূর্ব গণজাগরণ- যার জোয়ারে ভেসে যাবে সমস্ত সন্ত্রাস। ভেস্তে যাবে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র গঠনের সমস্ত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৪

মনোজ মুকুট বলেছেন: ধন্যবাদ সকাল সন্ধি

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১২

সকাল সন্ধি বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ... :)

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৫

যোগী বলেছেন:
সরকারে মধ্যে অবশ্যই একটা কিন্তু আছে। সেটা অভিজিতর স্ত্রী অনকটা বলেছেন।

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৮

সকাল সন্ধি বলেছেন: হ্যা, সরকার নিজেরা “নাস্তিক” বিশেষণ পেতে চায় না। তাই ব্লগার বা প্রগতিশীল যাই বলিনা কেন, এদের হত্যায় সরকারের পরোক্ষ ইন্ধন অবশ্যই আছে...

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:৩৪

অদ্বিত বলেছেন: সহমত।

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

হোৎকা বলেছেন: তুই নিজেকে দিয়ে শুরু কর হারামজাদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.