নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্রসন্ন

সপ্রসন্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার অবাক চিহ্ন

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১০

একাকী তরুণের ঘটনা:

পার্কে গাছের ছায়ায় একলা এক তরুণ বসে মনোযোগ দিয়ে বাদাম খায়। গ্রীষ্মের প্রখরতায় এই অকৃত্রিম দান, ছায়াপ্রদানে নেতৃত্ব দেয় বিশাল এক পাকুড় গাছ। মূলত সেই গাছের ছায়াতেই ছেলেটার বসার সিট। আর তার সামনেই আরেকটা বসার সিট। তাতে এক স্যান্ডো গেঞ্জি পরা মধ্যবয়স্ক লোক। লোকটার মতই সে ক্লান্ত এবং ঘর্মাক্ত। তার হাতে পাচ টাকার বাদাম। সে বসে থেকে আশেপাশের জিনিস পর্যবেক্ষণ করে। ছেলেটার শরীর তেমন সুগঠিত নয় কিন্তু সামনের লোকটির অর্ধবয়সী শরীরে পেটানো ভাব স্পষ্ট, যা দীর্ঘদিনব্যাপী ব্যায়ামের প্রতি তার শ্রম দেয়া নির্দেশ করে। পেছনের সিটে ক্রমাগত চিরকুটে লিখে যায় এক সাধারণ মহিলা। অবশ্য তার এলোমেলো ভাব স্পষ্ট করে না কাগজে এই অকারণ খসখসানির কারণ।

আরেকটু দূরত্বে উষ্ণ হয়ে বসে থাকে এক যুগল। তাদের দেখে একলা তরুণের ধরে নিতে কষ্ট হয় না, তাদের সম্পর্কটা বেশ পুরনো। কিন্তু যুগলদের দেখে সে দুঃখভরে আবিষ্কার করে, তার হাতের বাদাম ভাগাভাগির মত একটু ভালবাসা ছড়ানোর কেউ নেই। সে ভাবে, যেখানে ভালবাসা নেই, সেখানে ভালবাসার চিহ্ন রাখাও ঠিক নয়। তাই সে একটা একটা করে সব বাদাম ছিলে তার খোসাটুকু আলাদা করে। সাথের কালো রঙের কাগজের ছোট প্যাকেটে সবগুলো খোসা ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়।

এরপর তা হাতে নিয়ে বসার জায়গা থেকে একটু দূরে হেটে যায়। সেখানে একটা ময়লার বাক্সে তা ফেলে দেয়। একলা মানুষের কোন চিহ্ন রাখায় আনন্দ নেই। সে যখন ভালবাসার মানুষটিকে খুঁজে পাবে তখন না হয় পার্কে বাদামের খোসা ফেলে রাখবে। একটু হয়তো নোংরা হবে পার্কটা! কিন্তু তাতে ক্ষতি নেই। কারণ বাদামের খোসা তো পচনশীল, মাটিতে মিশে যাবে। বরং এখানে ওখানে অযত্নে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি বাদামের খোসায় থাকবে সেই ভালবাসার মেয়েটির যত্নযুক্ত ভালোবাসার চিহ্ন। কারণ সেই মেয়েটা বাদাম একটি একটি করে ছিলে তাকে খাইয়ে দেবে। আর বাদামের খোসাগুলো নীরবে তাদের ভালোবাসার খানিক স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে। ছেলেটা খোসাগুলো ফেলে দেবার সময় এসবই ভাবতে থাকে আনমনে।

অবশ্য ময়লার বাক্সগুলো একেকটা যেন ট্র‍্যাজিক বস্তু। সে সবার আদর পেতে চায় কিন্তু পায় না। কারণ বাক্সে নয়, বাক্সের আশেপাশেই মানুষজন ময়লা ফেলে রাখে। ছেলেটা সেই ভালোবাসার মেয়ের বদলে একটা ময়লার বাক্সে আদর বিলিয়েই সন্তুষ্ট হয়। তারপরই সে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। এটা তার সাপ্তাহিক সূচি। যদিও তার সাথের বন্ধুরা আজ কেউ নেই। এরপর একলা দৌড় শুরু করবার দুই মিনিট পর আবার ফিরে আসে। হাপাতে হাপাতে সে বসে লোকটার সামনের বসার স্থানে।

ছেলেটা তখন আবিষ্কার করে, সেই মধ্যবয়সী লোকটার সিটের সামনের রাস্তায় কালো কাগজের প্যাকেটটা পড়ে আছে। আর তার সিটের নিচে এখানে সেখানে পড়ে আছে বাদামের খোসা। এত দূর থেকে ঠিক তার বসার সামনেই কিভাবে বাদামের খোসাগুলো এল, তা ভেবে সে বিস্মিত বোধ করে।

একটু আগেই যে জায়গাতে ভালোবাসার মানুষবিহীন ভালোবাসার চিহ্ন ফেলতে সে আগ্রহী ছিল না, সেখানে সেই বাদামের খোসা ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা কাকতালীয় হলেও নিয়তির কোন ব্যাপার কি? এতদিন ধরে অনাগত সেই ভালবাসা হয়তো সমাগত। এরকম একটা আপাত অর্থহীন সংস্কার তরুণটার মনের ভেতরে ফেলে রাখা কাচে হঠাৎ আলোক প্রতিফলনের মতই অল্পকাল কিন্তু তীব্রভাবে ঝিলিক দিয়ে যায়।

মধ্যবয়স্ক লোকের ঘটনা:

স্যান্ডো গেঞ্জি পরা একজন লোক। গরমে বাতাস খেতেই তার এমন অসচরাচর রূপ নেওয়া। সে পার্কে এসে গাছের ছায়ায় বসার সিটগুলোতে এসে বসার জায়গা খোঁজ করে। আশেপাশে অনেক বসার স্থান। সে দেখে আশ্চর্যজনকভাবে বসার স্থানগুলোতে কোন পক্ষী অংকিত শ্বেতনকশা নেই। কিন্তু ইটবিছানো পথটুকুতে শুধু সেই একরঙা সাদা আলপনা।

তাই লোকটা একটা ফাকা সিটে আসন নেয়। চোখের চশমা খুলে একপাশে রেখে সে দুই হাত ছড়িয়ে দেয়। তারপর মাথা রাখে ওই বসার সিটের একাংশে। আর বাকি অংশে পায়ের ওপর পা তোলা। বিশ্রামের আরামে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। তার ওপর পাকুড় গাছের আচ্ছাদন। গাছের ডাল আর সবুজ পাতার ফাঁকেফাঁকে উকি দেয়া নীল আকাশ লোকটার ওপরে সবুজ আর নীলের যৌথরঙা তাঁবু তৈরি করে। বৈশাখের বৈশাখি বাতাসে সেই তাঁবুর শীর্ষে পাতাগুলো মৃদু শব্দ করে কেপে যায়। চশমাবিহীন চোখে লোকটা দেখে, শীর্ষচূড়ার ক্রমাগত কম্পমান পাতাগুলো যেন ক্যালাইডোস্কোপের পরিবর্তনশীল নকশার মতই বারবার নকশা বদল করে।

লোকটার বসার জায়গার উলটো দিকে আরেকটা বসার স্থানে একজন সাধারণ মহিলা ক্রমাগত কলম দিয়ে কিছু লিখে যাচ্ছে। আরেক জায়গায় এক যুগল উষ্ণ হয়ে বসে আছে। তার সামনের সিটেই এক ঘর্মাক্ত তরুণ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর তরুণটা উঠে হাঁটা দেয় এবং তারপরই দৌড় শুরু করে।

কিন্তু এসব দিকে লোকটার কোন খেয়াল নেই। সে তখনো ওপরের দিকে মুখ করেই শুয়ে আছে। কিছু সময় পর হঠাৎ তার সম্বিৎ ফেরে সেই তাঁবুর শীর্ষদেশ থেকে কিছু পড়তে দেখে। সে হড়মড় করে মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পক্ষীনিসৃত পদার্থ কিনা ভেবে সতর্ক হবার চেষ্টা। কিন্তু সে দেখে সেরকম কিছু নয়। বরং একসাথে অনেকগুলো হালকা জিনিস আকাশে ভাসতে ভাসতে নিচে নামছে। পড়ার মধ্যে কোন সামঞ্জস্য নেই। প্রথমে কয়েকটা একসাথে পড়ে। এরপর আস্তে আস্তে বাকি কয়েকটা। নিচে পড়ার পর সেই জিনিসগুলো আলপনাময় ইটবিছানো পথে নতুন উপাদান যোগ করে।

সামনের সিটের নিচে মাথা ঝুকে লোকটা চশমাবিহীন চোখে দেখে, জিনিসটা আসলে বাদামের মত কিছু একটা! কালো রঙের কাগজটা অবশ্য তার নজরে আসে না। এত ওপর থেকে এগুলো পড়বার কারণ কি? সে ভাল করেই জানে এই বাদাম মাটির নিচে হয়, গাছের ওপর নয়!

তখন সে উপরে তাকিয়ে দেখে প্রশ্নের উত্তর পায়। সেখানে একটা কাক বসে নড়ছে, দাঁড়কাক। গাছের পাতার আড়ালে আর বড় ডালের ওপরে পাখিটা এমনভাবে আছে যে কালো রঙ হওয়া সত্বেও হুট করে নিচ থেকে কাকটাকে চোখে পড়ে না। লোকটা ভাবে, এই পাখিটাই এরকমভাবে বাদাম ফেলবার কারণ। কেউ কি আর গাছে উঠে বাদাম খাবে! পাকুড় গাছটার ডালে বসে কাকটাই বাদামের টুকরা ফেলছে।

লোকটা এরপর বুঝতে পারে বাদামটা আসলে খোসা ছড়ানো। তবে কি কাকটা বাদাম ছিলে খাচ্ছে? সে দ্বিতীয়বার প্রশ্নের কারণ খুঁজতে ব্যস্ত হয়। তার চেহারায় অজ্ঞানতাজনিত অবাক চাহনি। ঠিক এমন সময় তরুণটা একটি চক্রদৌড় সম্পন্ন করে লোকটার সামনের বসার স্থানে ফিরে আসে। লোকটা তা খেয়ালও করে না। কারণ তখনো চশমাবিহীন ঝাপসা দৃষ্টির মতই তার কাছে কাকের বাদামগ্রহণ এর ব্যাপারটা ঘোলাটে ঘোরের মত মনে হতে থাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.