নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহুয়া এক্সপ্রেস

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৪৯


(এক)

ট্রেন আসতে এখনও দু’ঘন্টা বাঁকী। উজ্জল কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলনা।এদিকে খিদাও লেগেছে বেশ।আসার আগে ও জেনেছে মোহনগঞ্জে হোটেলের খাবার ভালনা।তাই হোটেলেও যেতে ইচ্ছা নাই তার। শেষে একটি বন রুটি কেনে।চা দিয়ে ভিজিয়ে খায়।চৈত্র মাস শেষের পথে।তবুও ঠান্ডা বাতাস হাওরের দিক হতে আসছে। উজ্জল অবশ্য আসার সময় হালকা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে এসেছে ।বাংলাদেশে এবার ঋতু অদ্ভুত আচরণ করছে। চা শেষ করে চেয়ারে গিয়ে বসে উজ্জল।বহুদিন বাদে ট্রেনে যাতায়াত করছে সে।ষ্টেশনগুলিও অনেক বদলে গিয়েছে। এখন যাত্রী বসার জন্যে ভাল চেয়ার আছে ষ্টেশনে।সি সি ক্যামেরা,পুলিশের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি।বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।বদলে গিয়েছে বাংলাদেশ।
-শন পাপড়ি,এই শন পাপড়ি ,দুইটা দাও আমাকে।
উজ্জল তাকিয়ে দেখে মেয়েটিকে।শন পাপড়িওয়লা দুটি শন পাপড়ি তুলে দেয় মেয়েটির হাতে।মেয়েটি তার ব্যাগে টাকা খুঁজতে থাকে।কয়েকবার হাতড়ায়, পরে ব্যাগ উপুড় করে দেয়। লোকটি হাসে। ভাড় কাঁধে নিয়ে চলা শুরু করে।
-শন পাপড়ি নেবে,শন পাপড়ি।
মেয়েটি ব্যাগ গুছিয়ে নেয়।শন পাপড়িগুলি ব্যাগের ভেতর চালান করে দেয়।লোকটির চলে যাওয়া দেখতে দেখতে চিৎকার করে উঠে।
-এই লোক টাকা নিয়ে যাও। আমি বিনে পয়সায় শন পাপড়ি খাবোনা।
উজ্জল নির্লিপ্তভাবে সবকিছুই দেখে।আর ভাবতে থাকে ,পাগল যারা তারা কিভাবে চিন্তা করে।

(দুই)

মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিল ভোর পাঁচটায়। এলার্ম বাজতেই উজ্জল উঠে পড়ে।নিজেকে ঝটপট রেডি করে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
-মোহনগঞ্জের একটা টিকেট দিন।
কাউন্টার হতে টিকেট এগিয়ে দেয় ওর দিকে।উজ্জল অবাক হয়। ময়মনসিংহ হতে মোহনগঞ্জের ভাড়া মাত্র ছত্রিশ টাকা।লোকাল ট্রেন।
-চার নম্বর প্ল্যাটফরমে যান।
ট্রেন ছাড়লে উজ্জল ঘুমানোর চেষ্টা করে।ঘুম আসেনা।শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ হতে ব্রহ্মপুত্রকে ছোট কিশোরীর মত মনে হয়।

নেত্রকোণায় উজ্জলের ঘুম ভাঙ্গে।কামরায় প্রচন্ড ভীড়। প্রচুর নারী যাত্রী, নানা বয়সের। এ ওর গায়ে ল্যাপ্টে আছে।এক যাত্রী বিরস মুখে বলে,তার পকেট মারের কথা।চার হাজার টাকা ছিল তার পকেটে।
বউটির চোখে চোখ পড়ে উজ্জলের।পাতলা সিল্কের শাড়ি পড়ে ভিড়ের মাঝে অসহায়ের মত শাশুড়ীর সাথে দাঁড়িয়ে আছে।ধারালো শরীর।বউটি সরে আসে ওর কাছাকাছি।নাভী দেখা যাচ্ছে। শাড়ী বারবার ঠিক করছে সে।উন্নত স্তন উদ্ধত ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে উজ্জলের দিকে। উজ্জল চোখ সরানোর চেষ্টা করে।অসহায় পুরুষ চোখ বউটির শরীর ভ্রমণ করা শুরু করে। উজ্জল চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

জানালা দিয়ে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে উজ্জল,কোন স্টেশন। বউটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে,- একটু দূরে।
ভীড় অনেক কম।উজ্জল খেয়াল করে বছর পঁচিশের একটি ছেলে বউটির পাছায় খুব সাবধানে হাত দিচ্ছে মাঝে মাঝে। আর তার বন্ধুর সাথে কথা বলে খুব হাসছে।বউটি কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর সরে যাবার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে।উজ্জল চারপাশে চেয়ে দেখে। নির্লিপ্ত পরিবেশ। ফকিরের গান ভেসে আসে কানে।

“বল আল্লাহ রসুলের নাম
যাত্রা পথে ভাল থেকো।
বল আল্লাহ রসুলের নাম
গরীব দুখীরে করিবে দান।
বল আল্লাহ রসুলের নাম”।

উজ্জল খেয়াল করে ট্রেনের চলার শব্দের তালে তালে ফকিররা গান গেয়ে যাচ্ছে।উজ্জল চোখ বন্ধ করে।ফকিরের গান আর যুবকের হাসি ধীরে ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসে।

(তিন)

পাগলিটি দৌড়ে যায় শন পাপড়িওয়ালার কাছে।ব্যাগ হতে শন পাপড়ি বের করতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলে খিলখিল করে হেসে উঠে।
-মা,ওগুলি তুমিই খাও।আমি তোমাকে খেতে দিয়েছি।
মাইকে ঘোষণা হতে থাকে-মোহনগঞ্জ হতে জয়দেবপুরগামী মহুয়া এক্সপ্রেস আর অল্প সময়ের মধ্যে প্লাটফরমে আসবে।উজ্জল উঠে দাঁড়ায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.