নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য প্রিয় মানুষ আমি, বাংলা ভাষা চর্চার চেষ্টা করি। মূলত একজন একনিষ্ঠ পাঠিকা।

উজ্জয়নী

পেশায় গবেষক, নেশায় পাঠক

উজ্জয়নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেসবুক ও আমরা - এটি আদ্যোপান্ত সত্যি ঘটনা।

০৫ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:১৮

আজ কলকাতার পথে অনেকদিন পরে ঘুরছিলাম। দুটি বিশেষ দৃশ্য দেখলাম। তারপর থেকে ফেসবুক নিয়ে বেশ চিন্তিত
দৃশ্য এক : স্থান - লেক মার্কেটের কাছের এক বড় রাস্তা। সময় - বিকেল ৫ টা
আমার গাড়ি লাল বাতিতে আটকে, লম্বা জ্যাম। অনেকটা সময় ও ধৈর্যর পরীক্ষা। বসে বসে এদিক ওদিক দেখছি। হঠাৎ যা দেখলাম চোখ আটকে গেল। এক ৫০ এর কাছাকাছি বয়েসের ভদ্রলোক, রাস্তার ধারে পার্ক করা এক দামী গাড়ির সামনে এসে নানা ভঙ্গিতে অনেক সেল্ফি তুলছেন। গাড়িটা তার না হওয়ার সম্ভাবনা ষোলআনা। কিন্তু সেল্ফি অবশ্যই তার নিজের। দুই -তিন মিনিট, ডান বাঁ, উপর, নীচ করে শেষে দেখি হঠাৎ লম্বা করে জীভ বের করে সেল্ফি তুলছেন। সত্যি বলছি, সাধারণ হিসাবে ভদ্রলোক পাগল নন, দিব্বি মধ্যবয়েসের মধ্যবিত্ত। আমি তো চোখের পাতা না ফেলে দেখছি। হঠাৎ চোখাচোখি। ভাগ্যিস সেই মুহূর্তে সিগনাল সবুজ হয়ে গেল। না হলে কি হত বলা মুশকিল, হয়ত আমিও দিনের আলোয়, হাজার লোকের মাঝে নেমে জীভ বের করে সেল্ফি তুলতাম ফেসবুকে শেয়ার করার তাগিদে, নয়তবা হাসার অপরাধে, ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে যেত।

দৃশ্য দুই : স্থান - গড়িয়া মাছের বাজার, সময় - সন্ধে ৮টা
আমি ইলিশের মরশুমে একটু সৌখিন হয়ে পড়ি। গেছি চেনা মাছওলার কাছে বড় ইলিশ কিনতে। একটা এক কেজি দুশোর মাছ দাম দর করে কিনেছি, কাটার ইন্সট্রাকশন দেবার পালা। ঠিক তখনি আরেক ক্রেতার আবির্ভাব। বছর তিরিশ বয়েস, কানে হেড ফোন হাতে দামী মোবাইল। মাছ বিক্রেতা আমার মাছ ছেড়ে তাকে নিয়েই পড়লেন, আমি তো হাতেই রয়েছি। ইনিও ইলিশ প্রেমিক। তাকে সব কটা বড় ইলিশ দেখানো হল। তিনি - জাষ্ট আ মিনিট বলে, ফেসবুকের লাইভে চলে গেলেন, সাথে মাছের বর্ণনা, দাম, বাজারে মাছের সাপ্লাই কেমন ইত্যাদি, বুঝতেই পারলাম লাইভ ফেসবুকে অনেক কমেন্ট আসছে। মাছওলাও মরীয়া, সে বলল - মাছ তো নয় মাখন, যদি ভিতরটা দেখাতে চান ক্যামেরাটা এই দিদির কেনা মাছ, যা আমি কাটছি তার উপর ঘোরান। ইলিশ প্রেমিক হাইটেক ক্রেতা, মন দিয়ে আমার মাছটার পিস পিস হওয়ার ভিডিও তুললো। আমায় কেউ জিজ্ঞেসও করল না আমার আপত্তি আছে কিনা! না মাছওলা না হাইটেক ক্রেতা। দাম চুকিয়ে মাছ থলিতে ভরে যখন এগুচ্ছি, পিছনে শুনলাম হাইটেক ক্রেতা তার ফেবুর বন্ধুদের পরামর্শ চাইছে, কতবড় করে পিস করা উচিত সে ব্যপারে।
সেই থেকে ভাবছি, পৃথিবী কোথায় পৌঁছে গেছে, ফেবু লাইভ করে মাছ কেনে এ প্রজন্ম, নিজেকে কেমন ফসিলের মত পুরনো মনে হল।
বিকেলে জীভ বের করে সেল্ফি আর সন্ধ্যেতে ফেবু লাইভে ইলিশ কেনা - দুটোর ধাক্কা এখনো কাটেনি।
সেই ছোটবেলায় ইস্কুলে রচনা লিখতে দিত বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? তখন আশীর্বাদের পক্ষেই জোর সওয়াল করতাম। আজ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একই রচনা লিখতে দিলে, কি লিখবো? আর এই বিষ্ময় প্রকাশের মাধ্যমও তো শেষমেশ সেই ফেবু।
সুতরাং বেঁচে থাকো ফেসবুক চিরজীবী হয়ে তুমি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:৫৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: দিদি চমৎকার পোস্ট। ফেইসবুকের দু'টি ফিচার আমার সবচেয়ে অপছন্দ। এর মধ্যে একটি হলো- বিভিন্ন গ্রুপে অটো এড। আর দ্বিতীয়টি হলো, ফেইসবুক লাইভ। কর্তৃপক্ষ হয়তো ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে ফিচারটি যুক্ত করেছিলেন। কিন্ত এ উপমহাদেশের বিচিত্র টাইপের জনগন সম্বন্ধে এতো দূর থেকে হয়তো জানাশুনা তেমন ছিল না!! তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লাইভে গেলে খারাপ হয় না। তাই বলে যত্র তত্র!!! X( X(

এ উপমহাদেশের মানুষ কিছুই না করে সেলিব্রেটি হতে চায়। আর এ আবালগুলো ফেইসবুক লাইভকে পরিচিতি লাভের বিশাল একটা মাধ্যম মনে করে। সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার সহজ মাধ্যম এটি। B:-)

দিদি মনে হয় ব্যস্ততার কারণে তেমন ব্লগে আসেন না। এছাড়া অন্য ব্লগারদের পোস্টে কমেন্ট তেমন একটা করেন না। এজন্য খুব ভাল লেখার পরও আপনার লেখায় ভিউ কম হয়। ব্লগে পরিচিতি বাড়াতে হবে। এতে সবাই আপনার লেখা পড়বে। একটা নিজস্ব প্লাটফর্ম হবে আপনার। আশা করি বিষয়টি একটু গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। :( :(

২| ০৫ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৪:৫১

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: উন্নত দেশগুলোতে ফেসবুক নিয়ে এতটি বাড়াবাড়ি হয় না যতটা আমাদের দেশে হয়। ফেসবুকের ভালো দিক আছে তবে অপব্যবহারের কারণে এটা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩| ০৫ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৪:৫৯

তাওহিদ হিমু বলেছেন: উপভোগ্য প্রযুক্তির প্রতি আপনার কেন এত বিতৃষ্ণা বুঝলাম না। দুনো ক্ষেতেই তো প্রযুক্তি সদ্ব্যবহার দেখলাম। একজনে আনন্দে ডুবে আছেন, অন্যজনে বিশ্বগ্রামের দূরত্বহীনতার সুফল ভোগ করছেন। খারাপ কিছু নেই।

০৫ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯

উজ্জয়নী বলেছেন: প্রযুক্তি নিয়ে বিতৃষ্ণা নেই, সেটা নিয়ে আধিখ্যেতা ও পাগলামোর প্রতি অস্বস্তি থাকাটাই স্বাভাবিক।

৪| ০৫ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৫:৪৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: জীবন এখন এমনই। কি আর করা।

৫| ০৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৮:২০

আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: বিজ্ঞান আর্শিবাদ ভয়ে এনেছেে অভিশাপ, কোনটাকে ছাড়া বাঁচা যাবে না । তবে আমরা একটু বেশিই করছি । বেশি বেশি করি বলে বিজ্ঞান আমাদের অন্ধ করে দিচ্ছে ।

৬| ০৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব এরকমই।

৭| ০৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: তথাকথিত ভার্চুয়াল লাইফ আমাদের জীবনকেই যান্ত্রিক করে ফেলেছে। দিনদিন ফেসবুক টুইটারের সেলফি/লাইভ ভিডিওর খপ্পরে আমাদের জীবনের সৌন্দর্যকে যেমন নষ্ট করছে তেমনি প্রকৃতির আবেশ থেকে আমাদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে

৮| ০৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমাদের দেশে মনে হয় বেশির ভাগই মানুষ ফেসবুকের ব্যবহার বোঝে না!

৯| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩

পিয়াস রায়হান বলেছেন: ব্যক্তি হিসেবে আমরা যে কতটুকু কূপমুন্ডক তা বোঝা যায় আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরণ দেখে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.