নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মজার কিছু টুকরো গল্প-৭ (আরব ডায়েরি-৮৯)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০





১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

৪র্থ পর্ব

৫ম পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব



আগের পর্বগুলো পড়ে যারা মজা পেয়েছেন তাদের জন্য আরো কিছু গল্প-



১/ শফিক ভাইয়ের কথা আগের পর্বগুলোতে এসেছে। উনি যখন তখন আরবি প্র্যাকটিসে নামেন। শুধু মনযোগি শ্রোতা পেলেই হল।



একদিন শফিক ভাই ও মামুন গাড়ীতে করে বাসায় ফিরছেন। সামনে রেড লাইট, শফিক ভাই ড্রাইভ করছেন। সেই মূহুর্তেই মামুন বলে উঠে-‘ভাই দেখেন দেখেন, কি সুন্দর একটা গাড়ী।’ শফিক ভাই সেদিকে প্রতিবর্তক্রিয়াবশতঃ তাকাতেই রেড লাইটে ধরা খেলেন, ক্যামেরা জ্বলে উঠে। সাথে সাথেই ৫০০ রিয়াল (১০,০০০ টাকা) জরিমানা হয়ে গেল। তার পর থেকে তিনি মামুনকে ঝারি’র উপর রাখেন। সেদিনই শফিক ভাই ঘোষণা দিলেন- মামুনকে উনার গাড়ীতে উঠাবেন না। যদিওবা গাড়ীতে উঠাতে হয়, সামনের সিটে বসাবেন না। মামুন নাকি সামনের সিটে বসে ফেসবুকিং করে আর ঘুমায়।



কিন্তু কথায় আছে ন্যাড়া দু’বার বেল তলায় যায়। দ্বিতীয়বার যায় আগেরবার কেন হয়েছিল তা বুঝতে। আমাদের শফিক ভাইও তার ব্যাতিক্রম নন।



আরেকদিন শফিকভাই মামুনকে নিয়ে রাতে বের হলেন। মামুন ইলেকট্রনিক দোকানে যাবে। মেইন রোড, কিছুটা অন্ধকার, রাস্তাটাও চাপা হয়ে গেছে। মামুন ঠিক তখন দোকান খুঁজছে-‘মনে হয় এদিকটায়, এখানেই তো ছিল ...’ শফিক ভাই তাতে সাড়া দিতে গিয়েই ডিভাইডারে গাড়ী লাগিয়ে দিলেন। মারাত্নক এক্সিডেন্ট হল, গাড়ীর সামনের দিকটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ। সাথে সাথেই পুলিশের গাড়ী ও এ্যাম্বুলেন্স চলে আসল। ভাগ্য ভাল শফিক ভাইয়ের তেমন কিছু হয়নি, বের হতে পারলেন। ওদিকে মামুনের এক হাত পেছনে বেঁকে গেছে, গাড়ীর ভেতর ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।



পুলিশ শফিক ভাইকে জিজ্ঞাসা করে-‘অইটার অবস্থা কি?’ প্রতিদিন তারা এত এত এক্সিডেন্ট দেখে যে এই ধরনের এক্সিডেন্ট কোন ঘটনাই না।

মামুনের উপর শফিক ভাইয়ের তখন প্রচন্ড রাগ। দুঃখ কষ্ট ও ক্ষোভে বললেন, ‘মুমকিন মউত শোয়ে বাগী’। (মনেহয় মৃত্যুর অল্প কিছুক্ষন বাকী আছে)



ওনার এমনতর উত্তর শুনে পুলিশই হাসতে হাসতে মারা যায়। মামুনকে তখন ধরাধরি করে এ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছে।



২/ মামুন হাসপাতালে। সবাই গেল দেখতে। দেখা গেল-ভাঙ্গা হাত নিয়ে মামুন দাঁত কেলিয়ে হাসছে। কি ব্যাপার? আসল কথা একটু পর জানা গেল। সৌদি নার্সরা নাকি তাকে বেশ খাতির যত্ন করছে, যখন তখন হাত ধরে টানাটানি করছে। মামুন এতে বেজায় খুশী।



হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসার পরও মামুন একদিন আমার সাথে সৌদি নার্সদের স্মৃতিচারণ করছিল। আমি বললাম, ‘মামুন তোমার ভালো হাতটি ভেঙ্গে আবার হাসপাতাল পাঠিয়ে দেব।’ বলাবাহুল্য মামুন এতেও খুশী।



৩/ মোশতাক ভাই ও আমি একই বিল্ডিং এ থাকি। মাঝে মাঝেই আমরা ল্যান্ডফোনে কথা বলি। উনি আমাকে ল্যান্ডফোনে কল করলে একটা কথা সবসময়ই বলেন, ‘আপনি কি এখন বাসায় আছেন?’

আমি ফোন রেখে কিছুক্ষন আপন মনে হেসে নেই। হাসি তামাশা এখন বড়ই দূর্লভ।



৪/ শাকিলার ক্যাম্পাসে ইন্ডিয়া থেকে এক Nutritionist জয়েন করেছে। দেখাগেল সে ক্যাম্পাসে এসে ভাত দিয়ে সকালের নাস্তা সারে।



৫/ ইউনিভার্সিটিতে একদিন জোহরের নামাজ পড়তে আমাদের মসজিদে গেলাম। রুকুতে গিয়েই বুঝলাম কি ভুলটাই না করে বসেছি। তাড়াহুড়ায় দুই পায়ে দুই রকমের মোজা পড়ে এসেছি। নামাজ শেষ করে ফিরতি পথ ধরতে আর দেরী করিনি।



৬/ আমাদের এখানকার এক ভাই বিদেশী বিয়ে করেছেন। সজ্জন ব্যাক্তি। ওনার ৩ টি মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটি সবার ছোট। ওনার বাসায় একদিন দাওয়াত ছিল। বাচ্চাগুলো কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে ঘুরে এসেছে। এখন ভাঙ্গা ভাঙ্গা অল্প কিছু বাংলা বলে। বাচ্চারা নিমিষেই শাকিলাকে পছন্দ করে ফেলে।



ছোট মেয়েটি অনেক অনেক কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘আন্টি আন্টি what is ছাছা?’

শাকিলা বুঝিয়ে বলে – uncle কে বাংলায় ‘চাচা’ বলে।

মেয়েটির কৌতুহল কিছুতেই শেষ হয় না- what is পেটা দেব?

শাকিলা এবার না হেসে পারে না। সবকিছু বুঝিয়ে দেয়।



ছোট ছেলে আনাস সব শুনছিল, এবার বলে উঠে- they call me Mama (uncle/মামা)। I told them –I am a man. I am not your Mama (mother/মা)।

বস্তুতঃ বাড়ীর দ্বিতীয় কর্তা আনাস এখনি নিজেকে পুরুষ ভাবতে পছন্দ করে। কেউ তাকে মেয়েলি স্বভাবের ভাবলেই সাথে সাথেই প্রতিবাদ করে উঠে।



৭/ বাচ্চা হবার পর দীবা খুব একটা রান্না করেনা। তাই মোশতাক ভাই নিজেই রান্নার কাজটা সামলে নিচ্ছেন। উনি প্রতিদিন আমার সাথে নীচে আড্ডা মারতে মারতে রান্নার গল্প করেন। তাই বললাম- একদিন খাওয়াতে হবে।



একরাতে উনি আমাদের আড্ডায় রুটি (আরবীয় খবুজ) আর ভুনা মাংস নিয়ে আসেন। মাংস মুখে দিতেই সেকি অসাধারণ স্বাদ। আমি তৎক্ষনাত এটা উনার রান্না ভাবতেই পারলাম না, ‘এটা আপনি রান্না করেন নাই। আজকের জন্য দীবা রান্না করে দিয়েছে।’

কিন্তু মোশতাক ভাই অনড়, ‘ না, আমিই রান্না করেছি। দীবাকে রান্না ঘরে ঢুকতেই দেই নাই।’



আরেক রাতে উনি বাসায় খাসী’র খেবসা (আরবীয় বিরানি) পাঠালেন। খেয়ে মনে হল, এমন খেবসা সৌদিতে খুব কমই খেয়েছি। পরেরবার আবার খাওয়াবেন সেই কথা আদায় করে নিলাম। আরেকদিন খাইয়েছিলেন, সেই স্বাদ এখনো জিভে লেগে আছে। ওনার রান্না খেলে মনে হয় ১০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রান্না খাচ্ছি। অথচ আগে জানতাম উনি কোন রান্নাই পারেন না। তনুমায় ব্যাচেলর থাকাকালিন রান্না না করেই কাটিয়েছেন। উসামা ও কচি ভাই রান্না করত।

উসামাকে মোশতাক ভাইয়ের অসাধারণ রান্নার কথা বলায় মাথা নাড়ে, ‘ হুম, ফাঁকি দিয়েছে।’

এই রহস্যের জাল কে ছিড়বে?



৮/ মোশতাক ভাইয়ের রান্না প্রসঙ্গে উসামার রান্নার কথাও চলে এসেছে। তখন মোশতাক ভাই, কচি ভাই ও উসামা এক সাথে তনুমা থাকে। কচি ভাই ও উসামা ফ্যামিলি নিয়ে আসেনি, মোশতাক ভাইও বিয়ে করেননি। উসামা প্রায় সময় রান্না করত। চুলায় মাংস চাপিয়ে একটার পর একটা মশলা দিয়ে যেত আর চেখে দেখত, আবার মশলা দিত।

পরিশেষে রান্নাটা মশলাময় এমন কিছু একটা হত, যা নাকি খাওয়া যেত না।



৯/ জহির ভাই সৌদি এয়ারলাইন্সের এজেন্সি অফিসে আছেন। বিয়ে নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত। গত বছর ছুটিতে দেশে গিয়েও বিয়ে করতে পারেননি। প্রায় প্রতি রাতে উনার সাথে আমার দেখা হয়, আর আমিও ওনার টেনশন বাড়িয়ে দেই।



একদিন দেশ থেকে খবর এল একটা মেয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে, ফ্যামিলির লোকজন দেখতে যাবে। বৃহঃবার রাত আমাদের ঘুরাঘুরির সময়। পরেরদিন অফিস করার ঝামেলা নাই। আমি জহির ভাইয়ের অফিসের সামনে গাড়ীতে অপেক্ষা করছি। অফিস আওয়ার শেষ, কিন্তু জহির ভাইতো বের হয় না। ফোন দিলে বলে- বের হচ্ছি। এভাবে ঘন্টা খানেক পর তিনি বের হলেন। সাথে হাবিব স্যার। জানা গেল মেয়ে দেখার কথা শুনেই তিনি হাবিব স্যারকে নিয়ে বিশাল এক সিভি তৈরি করেছেন । বিয়ে বলে কথা!



সে রাতেই কোত্থকে তিনি ২ বোতল মাশরুমের তৈরি হারবাল ঔষুধের ব্যবস্থা করলেন। বিয়ের আগে শরীরটাতো (?) ঠিক করতে হবে।



১০/ এক শুক্রবার দুপুরে জহির ভাইকে ট্যাঙ্গোতে ভিডিও কল দিলাম। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি উনার মাথার পাশে মাশরুমের হারবাল ঔষুধ শোভা পাচ্ছে। মনে মনে ভাবি থেরাপি তাহলে ভালোই চলছে! বিয়ে করতে বাকী আরকি। =p~ =p~

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আপনার টুকরো গল্পগুলোতে যথেষ্ট রস আছে। পড়ে বেশ মজা পেলাম মধুমিতা। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাকেও শুভকামনা।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪

আবু শাকিল বলেছেন: ভাল রসবোধ পেলাম :)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫

মধুমিতা বলেছেন: :P

৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮

মোঃমোজাম হক বলেছেন: ডিজিটাল পেনাল্টি দিতে দিতে ফতুর হয়ে যাচ্ছি ভাই।মাসের একটা আইটেমই থাকে ট্রাফিক পেনাল্টি :)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭

মধুমিতা বলেছেন: তাও ভালো রেড লাইট খান না। এখন থেকে রেড লাইট ভাঙলে ১ দিনের জেল, তারপর জরিমানার টাকা দিতে পারবেন।

:(

৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহা
প্রবাসীদের জীবন কথা
দারুন করে লিখেছেন খুব ভাল লাগল

আমি ড্রাইভিং স্কুলে রিটেন এক্সামের ক্লাসে ডিজিটাল পেনাল্টি র নিয়ম পড়ে মাথায় হাত দিলাম । আমাদের এখানে পরিচিত এক ভাই আছেন উনার পেনাল্টির জন্য আলাদা মাস খরচা থাকে ।

শুভ কামনা ভাইয়া :)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

মধুমিতা বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা। আমাদের এখানে মোবাইল ক্যামেরা এমন ভাবে প্লেস করা থাকে, আগে থেকে বুঝতেই পারি না।
সৌদিরা যেভাবে গাড়ী চালায়, তাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্যামেরা দরকার।

জানেন বোধয় সৌদিতে কার এক্সিডেন্টে মৃত্যুর হার পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী।

৫| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৭

তূর্য হাসান বলেছেন: বরাবরের মতোই ভালো লাগা রইল। ভালো থাকুন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

মধুমিতা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩৪

আদম_ বলেছেন: চিকরাইয়া চিকরাইয়া (শদ্ব করে/চিতকার করে) হাসলাম।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

মধুমিতা বলেছেন: :P :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.