নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হঠাৎ বৃষ্টি-১ (আরব ডায়েরি-১০২)

০৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:১২



বিগত বছর এবং এ বছরের শুরুতে আমাদের আবহায় তেমন প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত ছিল না। দিন যায়, আমি বৃষ্টির আশায় দিন গুনি। সৌদি আরবের অন্যান্য জায়গায় বৃষ্টি হলে সবাই নাজেহাল হয়ে যায়। ফ্ল্যাশ ফ্লাড এসে গাড়ী, বাড়ী ও জীবন তছনছ করে দেয়। কিন্তু আবহা পাহাড়ী এলাকা হবার কারনে এখানে পানি জমে থাকে না, ফলে এখানে আমরা সবাই বৃষ্টিকে উপভোগ করি। অথচ সেই বৃষ্টির দেখা নেই।

হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বিকালে আমি তখন জহির ভাইয়ের অফিসে। ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে জহির ভাই অফিস বন্ধ করে আমার সাথে ঘুরতে বের হলেন। আমরা গাড়ীতে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালাম। বৃষ্টির তীব্রতায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, গাড়ী চালানো দায়। কয়েকবার পথ হারিয়ে আজমল ভাইয়ের বাসায় হানা দেই। সেখানে আরো অনেককেই আড্ডারত অবস্থায় পেলাম। আমাদের আড্ডা নতুন করে জমে উঠে। সবাই এই বৃষ্টির মাঝে খিচুরি খেতে চায়। আবুল হাসান ভাই রাতে খিচুরি রান্না করলেন। আমরা সবাই মিলে খেয়ে আরেক পশলা আড্ডা দিয়ে গভীর রাতে বাড়ী ফিরি।

দু’দিন পরেই ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। তীব্র খরস্রোতা ৩টি ঝর্ণা একটি পাহাড় থেকে বয়ে চলছে। আশ্চর্যজনকভাবে এই ঝর্ণাগুলো নাকি আমাদের আবহা’র। অথচ আমাদের পরিচিতদের কোন ধারণাই নেই। তবে ভিডিও’র জায়গাটি হাবালা বলেই মনে হল।

সপ্তাহখানেক পর সকাল হতে আবার তুমুল বৃষ্টি। অনেক রাস্তাতেই পানি জমে গিয়েছিল। স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ভার্সিটি খোলা ছিল। আমি অফিসে এসে দেখি তেমন কেউ আসেনি, বাসায় ফিরে আসলাম। আযম ভাই ফোন দিয়ে বললেন, “চলেন, ওয়াদি বেইশ ঘুরে আসি। বৃষ্টির পানি জমে নিশ্চয় তা আরো সুন্দর হয়েছে।” রাজী না হবার কোন কারন নেই। দুপুরের পর আযম ভাইয়ের ফ্যামিলি সহ বের হয়ে গেলাম।

কিন্তু শুরুতেই ঝামেলা। পুলিশ জিজানের পথ বন্ধ করে রেখেছে। কোন গাড়ীই নামতে দিচ্ছে না। পরে জানতে পারি ভারী বৃষ্টিপাতে পাথর ধ্বসে একটি টানেল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েকজন লোক আহত হয়েছিল। আমরা কিছুটা আশাহত। বৃষ্টি হচ্ছিল, আযম ভাই হাবালা’র পথে গাড়ী চালালেন। কিছুটা অনির্দিষ্ট যাত্রা।

এই পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহিলা ক্যাম্পাস আছে। কিছুদূর যেতেই একটি ব্রিজে অনেক গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমরাও গাড়ী থামালাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। গাড়ী হতে নামতেই পানি প্রবাহের শো শো আওয়াজ পেলাম। কাছে যেতেই চক্ষু চানাবড়া-ব্রিজের নীচ দিয়ে যেন খরস্রোতা নদী বয়ে যাচ্ছে। এত পানি ! কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি মনে হচ্ছে সব এখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই বলে খরস্রোতা নদী হয়ে যাবে, না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমরাও অন্যদের মতো ভিডিও করলাম, ছবি তুললাম। সৌদিরা গাড়ী থামিয়ে বৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করছিল।



আমি এতটুকোতেই তৃপ্ত ছিলাম। কিন্তু আযম ভাই হাবালা ঘুরে আসতে চাইলেন। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে আযম ভাই গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড়ের গাছগুলো আজ আরো সবুজ, বৃষ্টিতে গায়ের ময়লা ধুয়ে মুছে গেছে। ঈমান ও হানিনের অবাক দৃষ্টি, কৌতুহল আর নানারকম প্রশ্ন আমাকে মায়ার জগতে টেনে নিয়ে গিয়েছিল।



হাবালা যাবার পথে পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি সাময়িক ঝর্ণা চোখে পড়ল। কাছে যেতেই এর প্রকৃত সৌন্দর্য্য ধরতে পারলাম। বৃষ্টির সময় আবাহাতে অনেক ঝর্ণা তৈরি হয়- এতদিন তা শুধু শুনেই গেলাম, কখনো চোখের নাগাল পাইনি। কিন্তু এই কয়েকদিনের বিরতিহীন বৃষ্টি সে সুযোগটা করে দিল।





আমি ও আযম ভাই ঝর্ণার একেবারে কাছে চলে গেলাম- আহা! কি অপরূপ। আরবের বুকে ঝর্ণা। সারা জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। তখনো কি জানতাম আমাদের সামনে আরো কি বিষ্ময় অপেক্ষা করছে।


(আগামী পর্বে সমাপ্য)

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: সৌদিতে এমন কালো করে মেঘ হয় ধারনাই ছিলো না। আমি তো ভেবেছিলাম, মহা শুস্ক স্থান। আর আপনাদের ভ্রমনের গল্প শুনতে শুনতে এখন মনে হয় নিজেই টিমের সদস্য হয়ে গেছি।

০৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

মধুমিতা বলেছেন: কেউ যদি বলে সৌদি আরবে বরফ পড়ে- বিশ্বাস করবেন? অথচ তাবুকে শীতের সময় বরফ পড়ে। প্রফেসি অনুযায়ী - আরবে নদী হবে। এগুলো তারই লক্ষণ মাত্র।

অনেক গল্প ছিল বলার, বলতে পারলাম কই। টিমের একজন হবার জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা।

২| ০৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২১

পুলহ বলেছেন: আমার বাবা দীর্ঘ একটা সময় মদীনার আশে পাশে ছিলো, সেই সুবাদে আমারো যাওয়া হয়েছিলো বেশ কয়েকবার; কিন্তু এমন তীব্র বৃষ্টি পেয়েছি বলে মনে পড়ে না।
আপনার পোস্টগুলো দেখে দেখে বহু আগে ফেলে আসা একটা দেশ আর সে দেশের টুকরো স্মৃতিগুলোর কথা মনে হয়, বড় ভালো লাগে !
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২

মধুমিতা বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আরবের জলবায়ু এখন অনেক পাল্টে গেছে। যখন বৃষ্টি নামে - ঢলের মত নামে।

৩| ০৯ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:১২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: সুন্দর ছবি ও বর্ণনা ভাল লেগেছে।

ভাল থাকুন। সবসময়।

০৯ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪

মধুমিতা বলেছেন: আপনিও ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

৪| ০৯ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:১৮

যমুনার চোরাবালি বলেছেন:

প্রতি মাসে একটি করে পোষ্ট তাও আবার অতিমাত্রায় ছোট সাইজের। আপনি সম্ভবত আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর মানে হলো আমদের চমৎকার অনেক কিছু জানার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। তবুও আশা ছাড়ছিনা, আরও অনেক কিছুই আপনার কাছ থেকে আমাদের পাবার আছে।
শুভেচ্ছা।

০৯ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮

মধুমিতা বলেছেন: হুম ..... আপনি দেখছি ভালোই খেয়াল রাখছেন। আরো বেশ কিছু পর্ব আসবে। তারপর সময় হয়েছে ডায়েরিটি শেষ করার।

৫| ০৯ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮

শরাফত বলেছেন: ভাই একটা অনুরোধ করি, প্লিজ ডায়রিটা শেষ করবেন না।
আপনার এই ডায়রি পড়ে অনেক অনেক মজা পাই ।
অনেক ভালো লাগে আপনার লেখা গুলি।
প্লিজ বন্ধ করবেন না ।

পোস্টে ++++

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:০৫

মধুমিতা বলেছেন: ভালো লাগার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার লেখা ধীরগতিতে চলবে। কিন্তু আরব ডায়েরি মনে হচ্ছে অনেকটা সময় পার করে এসেছে। শেষতো করতে হবেই।

৬| ০৯ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১৫

লা-তাহ্‌যান বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা!! চলতে থাকুক ডায়রী।

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:০৬

মধুমিতা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরো কিছুদিন চলবে।

৭| ১০ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:০৫

তাশমিন নূর বলেছেন: ভালো লেগেছে। আমি ব্লগে নিয়মিত নই, তাই বলতে পারছি না যে, পরের পর্বের অপেক্ষায়। তবে আসলে অবশ্যই পড়ব। সৌদি আরবের জীবন-যাত্রা, কৃষ্টি-কালচার সম্পর্কে আরও বিষদভাবে লিখবেন।

ভালো থাকবেন।

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:০৭

মধুমিতা বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার পেছনের বিভিন্ন লেখাতেই আরবদের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। আশা করি সময় করে পড়ে নেবেন।

৮| ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১১

তাশমিন নূর বলেছেন: ওকে, আপনাকে অনুসরণ করে রাখলাম। ধীরে ধীরে পড়ব আশা করি।

১১ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩২

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ১১ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১

হাসান রাজু বলেছেন: বৃষ্টি আহা কি আনন্দ, এসেছে বর্ষাহে আরন্য
স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে স্রান্ত বর্ষা দিনে কত দিন একা একা ঘুরেছি
উথাও মাঠের শেষে অশিম নিলিমানভে রংধনুর কত রং দেখেছি।
-ওয়ারফেজ

১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫

মধুমিতা বলেছেন: গ্রামের বৃষ্টি আমারও ভালো লাগে। স্কুলের দিনগুলো অদ্ভুত ছিল।

১০| ১২ ই মে, ২০১৬ রাত ২:২৬

মোঃমোজাম হক বলেছেন: হাবালা যাচ্ছেন শুনেই শিহরিত হলাম,লোভও হচ্ছে :)
কিন্তু আপনারা নিজেই ড্রাইভ করছেন শুনে ভীতও হলাম।

১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬

মধুমিতা বলেছেন: ভয় পাবেন না। আমাদের সাথে একজন পাকা ড্রাইভার ছিলেন। হাবাল মিস করেছেন, লোভতো লাগবেই।

১১| ১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ৭:৫০

ইমরান আশফাক বলেছেন: আমার আব্বার চাকরীর সুবাদে বেশ কিছুদিন হায়েল শহরে ছিলাম, ওখানে হালকা তুষারপাত ও দেখেছি।

১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

মধুমিতা বলেছেন: হাইল থেকে একটু পাশে তাবুকে শীতকালে বরফ জমে থাকে। কত আগে সৌদিতে ছিলেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.