নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লালনের মনের মানুষ

লালনের মনের মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরমী কবি হাসন রাজা ধ্যান ও কল্পনার এক আত্ম-আবিষ্কার

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:০১

হাসন রাজা উঁচুদরের শিল্পী না হলে তাঁর গানের বিচিত্র কারুকাজ সম্ভব হতো না। তিনি মাটির কাছাকাছি থেকে মাটির মানুষের জন্যই গান বেঁধেছিলেন। সে গানে গুনগুন করে সুর দিয়েছিলেন এবং গেয়েছিলেন। গান রচনা ছিল হাসন রাজার সহজাত সৃষ্টি। তিনি সৃষ্টির সময় কল্পনাকে দিগন্ত প্রসারিত করে দিয়েছিলেন। তিনি গানের উপাদান ও উপকরণ তার জীবনের চারপাশের মানুষ ও জীবন থেকে নিয়েছিলেন।



তার জীবনের ঘটনাপ্রবাহই তার গানের ভাজে ভাজে তরঙ্গায়িত হয়েছে। সওয়ার হয়েছে। তখন তিনি উপলক্ষ মাত্র। লক্ষ্য-তার মরমী সঙ্গীত। সহজাত গুণেই তিনি সেই সঙ্গীতে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন। প্রভাত কুমার শর্মা যেমন বলেন, ‘হাসন রাজা খাঁটি মরমী ও কবি ছিলেন। একটা কিছু তার সম্মুখে ছিল- যা তিনি ধরতে পারছিলেন না। সেই অনুভূতির ব্যথায় তিনি অস্থির হয়ে কাঁদছেন, আবার ক্ষণিকের জন্য আনন্দে নৃত্য করছেন। তাঁর এই হাসি কান্নার কাহিনী নীল আকাশের মতো, গভীর দূর দিগন্তে রেখার মতো ঝাপসার সন্ধ্যার অন্ধকারের মতো রহস্যময় এইখানেই তার কবিত্ব, এইখানেই তিনি মরমী।’

হাসন রাজা শুধু মরমী কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন সিলেটের সুনামগঞ্জের লক্ষ্মণশ্রী ও রামপাশা গ্রামের প্রতাপশালী জমিদার। তাঁকে বলা হতো সুনামগঞ্জের তৎকালীন মুকুটহীন রাজা।যেমন রাজা বংশ মর্যাদাও ছিল তেনি রাজার মতোই। তিনি মখমলের পাজামা, চোগা চাপকান ও জরীর পাগড়ী ছাড়া কোথাও বের হতেন না।হাসন রাজার পিতা নাম দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী এবং মায়ের নাম হুরমত জাহান বিবি। আলী রাজার একখালাত ভাই লক্ষ্মণশ্রীর জমিদার আমীর বখশ চৌধুরী বিরাট জমিদারীসহ অল্পবয়স্কা স্ত্রী হুরমত জাহান বেগমকে রেখে মারা গেলে আলী রাজা তাকে বিয়ে করেন। এই দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে হাসন রাজার জন্ম। আলী রাজার প্রথম পক্ষের একমাত্র পুত্র দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী হাসন রাজা থেকে বয়সে চৌত্রিশ বছরের বড় ছিলেন। আর এক মাত্র কন্যা হাজী সহিফা বানু ওরফে হাজী বিবি হাসন রাজার অল্প ছোট ছিলেন। হাজী বিবি কবি ছিলেন এবং দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরীও। দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীও মৃত্যুবরণ করেন। এই পরিস্থিতিতে মরমী কবি হাসন রাজা লক্ষ্মণশ্রী ও রামপাশার জমিদারীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অনেকে ভেবেছিলেন হাসন রাজার পক্ষে জমিদারী পরিচালনা কঠিন হবে। যেমনটি কবি রবীন্দ্রনাথ জমিদারীরভার গ্রহণের ক্ষেত্রেও অনেকে ভেবেছিলেন। তিনি যে ধরনের মানুষ, তার পক্ষে জমিদারী দেখাশোনা অসম্ভব হবে। প্রকৃত ক্ষেত্রে তিনি গভীর মনোনিবেশ সহকারে জমিদারী পরিচালনা করেন এবং তাতে সাফল্যও অর্জন করেন।

প্রথম দিকে তিনি কিছুটা নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন। ফলে প্রজারা তাঁর ধারে কাছে ভিড়তে সাহস করত না। চল্লিশের পরই তার মধ্যে সম্রাট অশোকের মতো আমূল পরিবর্তন ঘটে। এবং তিনি অন্য মানুষে পরিণত হন। তিনি তখন মরমী কবি হাসন রাজা। তাঁর মধ্যে তখন চারটি সত্তা ক্রিয়াশীল ছিল : ১. দয়া ও মানব প্রেম ২. সৌখিন জমিদারী পরিচালনা ৩. মরমী মানস এবং ৪. দার্শনিক জীবন দর্শন।

হাসন রাজা ছিলেন একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। তিনি ছিলেন একটি মৌলিক দর্শনের অধিকারী। একজন শ্রেষ্ঠ গীতিকার এবং একজন শ্রেষ্ঠ লোক কবি। হাসান রাজার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা দুই। গীতিকাব্য ‘হাছন উদাস’ প্রথম ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয়। কবির মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র, খান বাহাদুর গনিউর রাজা প্রকাশ করেন ‘হাছন-উদাস’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ। বইটি এখন দুষ্প্রাপ্য। হাসন রাজার অপর গ্রন্থ ‘সৌখিন বাহার’। কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা ‘সৌখিন বাহার’-এর আলোচ্য বিষয় ঘোড়া, কুড়া এবং নারীর আকুতি দেখে প্রকৃতি বিচার অর্থাৎ তিনি সহজে মানুষ ও হাতী-ঘোড়ার আকৃতি-প্রকৃতি দেখে দোষগুণ বিচার করতে পারেন। দোয়েল ও কুড়া পাখির গুণাগুণ সম্পর্কেও তিনি বিশেষ অবগত ছিলেন। তাঁর কবিতার ছন্দে লেখা সৌখিন বাহার’ বইয়ে ওইসব পাখিও হাতী ঘোড়া দোষগুণ সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তখনকার দিনে সিলেট জেলা বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো ঘোড়দৌড় ও মেলার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। হাসন রাজার ঘোড়ার মতো এমন নামকরা ঘোড়া সেই আমলে কোনো জমিদারের ছিল না। তাঁর ঘোড়াগুলি বিভিন্ন নামে অভিহিত ছিল।

হাসন রাজার অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি শুধু উপ-পত্নীই রাখেন নি। তিনি এদের ভরণ পোষণের ষোল আনা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রত্যেককে আলাদা ভিটে-মাটির বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন- যাতে আজীবন তারা সুখে শান্তি বসবাস করতে পারে

লেখক : তিতাশ চৌধুরী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.