নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্মম নির্যাতন

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১০



নির্মম নির্যাতন

মাঝে মাঝেই মিডিয়াতে একটি ভয়ংকর নির্যাতনের বিভৎস ছবি ও খবর দেখে আঁতলে উঠি। কষ্ট আর যণ্ত্রনায় বুকটা টনটন করে। নিজের অক্ষমতা আর অসহায়তার জন্য চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে, রাগে- ক্ষোভে খুন করতে ইচ্ছে করে। যেকোন মূল্যে এ বর্বরতা বন্ধ হওয়া জরুরী। আজই, এই মুহূর্ত থেকেই। কিন্তু তা হবে কি???

জ্বি, আমি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর, নিষ্ঠুর, অমানুষ ও হায়েনারূপী শিক্ষকের নির্যাতনের কথা বলছি।

যেকোন কঠোর শারীরিক শাস্তি ( যেমন - মারা, কান ধরে ওঠাবসা করানো, বেঞ্চের উপর দাঁড় করানো, শ্রেণীকক্ষে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখা, শিক্ষকের টেবিলের পাশে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা, একপায়ে দাঁড় করানো, হাঁটুর উপর দাঁড় করানো ...ইত্যাদি) ও মানসিক শাস্তি ( যেমন -গালি দেয়া, শ্রেণীকক্ষের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা, ভয় দেখানো, অপমান সূচক কোন নাম বা শব্দ ব্যবহার করা,... ইত্যাদি) শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘস্থায়ী কষ্টের জন্ম দেয় যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের স্কুলভীতি, পড়াভীতি, ফেল করা, ঝরেপড়া, এমনকি স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ চরমভাবে ব্যহত হয়। তাই মনোবিজ্ঞানীরা এসব উভয় ধরণের শাস্তিদান থেকে শিক্ষকদের বিরত থাকতে বলেন। এখন এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধও। তবু এ অপরাধ থেমে নেই। রোজ কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নির্মমতা চলছে যার খুব সামান্যই মিডিয়াতে আসে। (সংখ্যায় কম হলেও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও ছাত্রদের গায়ে হাত তোলার প্রবণতা দেখেছি।)

প্রথমে জানার চেষ্টা করি, কেন শিক্ষক নামধারী এসব নরপশুরা কোমলমতি শিশুদের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন চালায়??

- এসব শিক্ষকরা নিজেদের ব্যক্তিগত হতাশা, রাগ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ছাত্রদের নির্যাতন করে;

- এদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল নয়। এরা নিজের আবেগকে নিয়ণ্ত্রণ করতে জানে না। ফলে অতিরিক্ত রাগের কারণে শিশুদের মারে;

- এরা শিশুদেরকে দেয়া শারীরিক শাস্তির ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অজ্ঞ;

- এরা জানেনা শিশুদের কোন কোন শাস্তি দেয়া যায়, কোনগুলো দেয়া যায়না;

- শিক্ষার্থীদের শারীরিক বা মানসিক শাস্তি দেবার অপরাধে কোন শিক্ষকের শাস্তি হয়না;

- কিভাবে পড়ালে শিক্ষার্থীরা ভাল শেখে, মনোযোগ বাড়ে, কেন শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী হয়, দুষ্টামী করে...এসব বিষয় সম্পর্কিত শিশু মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের অভাব থাকে এদের, যার কারণে এরা শিক্ষার্থীদের মারে;

- বেশীরভাগ শিক্ষক পড়াতে আসে অন্য চাকরী না পেয়ে। অ্রর্থাৎ শিক্ষকতা পেশাকে ভালবেসে আসেনা। ফলে এ পেশার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা থাকেনা;

- আগেকার যুগে ছাত্রদের মেরেই পড়ানো হতো। সেই সনাতন মানসিকতা এখনও অনেক শিক্ষক ছাড়তে পারেনি;

- অনেক শিক্ষক মনে করে, ছাত্ররা তাকে যত ভয় পাবে, সে তত ভাল শিক্ষক। তাই তারা ভয় পাওয়ানোর জন্য ছাত্রদের মারে;

- আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও লোভের কারণে অনেক শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিং এ পড়াতে বেশী আগ্রহী। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়া পারেনা, না পারলে শিক্ষক মারে;

- অভিভাবকরা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন নয়। ফলে এসব অপরাধের তেমন প্রতিক্রিয়া হয়না। ছাত্ররাও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেনা শিক্ষক ফেল করিয়ে দেবে বা কম নম্বর দেবে, সেই ভয়ে;

- আমাদের দেশে ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষক মূল্যায়নের সুযোগ নেই বললেই চলে। স্কুলে অভিযোগ বাক্সও থাকেনা। ফলে কোন শিক্ষক ক্লাসে কেমন আচরণ করে, তা জানা যায়না। তাই শিক্ষকদের জবাবদিহিতাও থাকেনা।


- শিক্ষকরা বোঝেনা, ছাত্ররা না পড়লে, মানুষ না হলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি ছাত্রের ও তার বাবামার। তাই তাদেরকে নিয়ণ্ত্রণ করতে একান্তই না পারলে গরু চোর বা পকেটমারের মত না পিটিয়ে বাবা-মার কাছে অভিযোগ করা যেতে পারে,

- বাচ্চাদের বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। আমার অফিসের একজন অফিস সহকারী প্রচুর বানান ভুল করে। আমি একবার খুব বিরক্ত হয়ে আমার পরিচালককে সেকথা বলেছিলাম। তৎকালীন পরিচালক এন্তাজ স্যার ( ড. মু. এন্তাজুল হক, অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ ও রেজিস্ট্রার, রা. বি) হাসতে হাসতে বলেছিলেন, "সেজন্যই তো তুমি শিক্ষক আর ও অফিস সহকারী।" মানে বাচ্চারা বাচ্চা বলেই পড়া ফাঁকি দেবে, দুষ্টামী করবে। আর আপনি শিক্ষক বলেই তার বয়সের কারণে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের.ঘাটতি আছে মেনে নিয়ে ওকে সেভাবে শেখাবেন; মহাপাপী বা অপরাধীর মত শাস্তি দেবেন না। এটা বেশীরভাগ শিক্ষকরা বোঝেননা।

বেশীরভাগ শিক্ষকরা জানেন না কি করে ছাত্রদের মনোযোগ বাড়ানো যায়, প্রেষণা সৃষ্টি করতে হয়, শিখণ( Learning) কিভাবে ঘটে, শিখনের উপাদান কি কি, শিক্ষণের (Teaching) কার্যকর ও আধুনিক পদ্ধতিগুলো কি কি, শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি কি ও কেন, কিভাবে শেখালে শেখা সহজ হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়, পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত, শিক্ষার্থীদের অসঙ্গতিমূলক আচরণের কারণ ও প্রতিকার, একজন স্বার্থক শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য কি হওয়া উচিত, শিক্ষকের আত্মোপলব্ধি ও আত্মমূল্যায়ণ কি ও কেন, কর্মসহায়ক গবেষণা কি ও কেন, স্কুল পরিচালনা কৌশলগুলো কি কি, মানুষের ভাল-মন্দ আচরণের কারণ ও তাতে শিক্ষার ভূমিকা কি, শিক্ষার্থীর ভাল-মন্দ আচরণে পরিবার-সমাজ-স্কুল-শিক্ষক-সহপাঠী -প্রতিবেশী- সমাজ-ধর্ম ইত্যাদির প্রভাব কতটা, শিক্ষার্থীর শিখনে প্রেষণা, আবেগ, পুরস্কার, শাস্তি, প্রবণতা, ক্ষমতা, বুদ্ধি,... ইত্যাদির প্রভাব কেমন,... ইত্যাদি। তাদের সবার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে শাস্তিকেই বেশীরভাগ শিক্ষক শেখানোর একমাত্র হাতিয়ার মনে করেন।

গবেষণায় প্রমাণিত, শিক্ষার্থীর শিখণে শাস্তির চেয়ে পুরষ্কার বেশী ফলপ্রসু। তাই শাস্তির পরিবর্তে পুরষ্কার দিয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো বা ত্রুটিপূর্ণ আচরণ সংশোধনের প্রতি শিক্ষকের আগ্রহ বেশী থাকা উচিত।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য ক্ষতিকর আচরণ পরিহার ও ভাল কাজ বা সফলতার স্বীকৃতি, জ্ঞানার্জনের প্রেষণা বা উৎসাহ প্রদান বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাল ফলাফল করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দুই ধরণের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যায়। যেমন -

১. বস্তুগত পুরষ্কার ( যেমন - বই, খেলনা, পদক, ক্রেস্ট, কলম, বৃত্তি, বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ,... ইত্যাদি দেয়া)।

২. মানসিক পুরষ্কার (যেমন - প্রশংসাসূচক বাক্য - খুব ভাল, চমৎকার, অসাধারণ, অভিনন্দন, ধন্যবাদ, সুন্দর, ভাল বলেছ বা করেছ, আরো ভাল করবে,.. এসব বলা)।

বস্তুগত পুরষ্কারের চেয়ে অবস্তুগত পুরষ্কার শিক্ষার্থীদেরকে কাজে বেশী উদ্বুদ্ধ, আত্মসচেতন ও আন্তরিকভাবে আগ্রহী করে তোলে। তাই শিক্ষকদের উচিত, শিক্ষার্থীদের মানসিক পুরষ্কার বেশী দেয়া। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাজে স্বাধীনতা, বার বার অনুশীলন করানো ও মুখস্থ না করিয়ে বুঝে পড়াতে পারলে তারা ভাল শেখে।


তবে বিশেষ প্রয়োজনে নিম্নলিখিত মনোবিজ্ঞানসম্মত শাস্তিগুলো শিক্ষকরা দিতে পারেন।


মানসিক শাস্তিঃ


১. চক্ষু শাসনের প্রবর্তন;

২.দৈহিক অঙ্গভঙ্গীর শাসন;

৩. কণ্ঠস্বরের শাসন;

৪. মনোভাবের পরিবর্তনগত শাসন;

৫. স্নেহপ্রাপ্তি বা পুরস্কারপ্রাপ্তি বঞ্চিতকরণ;

৬.সঙ্গী বা সহপাঠীর পুনর্বিন্যাসকরণ;

৭. পরীক্ষাভীতির প্রয়োগ;

৮. ভর্ৎসনা করা ও নির্দেশনা প্রদান, ইত্যাদি।



শারীরিক ও মানসিক শাস্তিঃ


১. শ্রেণীর কাজ বা বাড়ীর কাজ বেশী প্রদান;

২. শ্রেণীকক্ষের অভ্যন্তরে স্বল্পসময় দাঁড় করিয়ে রাখা;

৩. টিফিনের সময় বা ছুটির পর কিছু সময় স্কুলে আটকে রেখে কোন পড়া করিয়ে নেওয়া.. ইত্যাদি।

তবে অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, শিক্ষার্থীকে প্রতিপক্ষ না ভেবে তার প্রতি সহমর্মিতা, সহনশীলতা ও সম্প্রীতিমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তার শারীরিক, মানসিক পরিপক্কতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিতান্ত প্রয়োজনের তাগিদে ন্যূনতম শাস্তি দেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষককে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে -

* শাস্তির প্রকৃতি শিক্ষার্থীর অপরাধের প্রেক্ষিতে নির্ধারণ করতে হবে। ছোটখাট অপরাধের জন্য সাবধানবাণী উচ্চারণ করলেই চলে।

* শাস্তি হবে পরিমিত কারণ শিক্ষার্থী প্রতিপক্ষ নয়।

* শাস্তির বিধান হবে নমনীয়। কারণ শিক্ষার্থীরা চোর, ডাকাত বা সন্ত্রাসী শ্রেণীভুক্ত নয়।

* গুরুতর অপরাধের শাস্তি হবে দৃষ্টান্তমূলক যাতে তেমন অপরাধ আর কেউ না করে বা করতে ভয় পায়।

* জ্ঞানচর্চার বিশৃঙ্খলাকারীর শাস্তি হবে উন্মুক্ত বা সবার প্রত্যক্ষণযোগ্য, যাতে তা দেখে বাকী শিক্ষার্থীরা সাবধান হতে পারে।

* শিক্ষাঙ্গনে শাস্তির বিধান ক্রোধবর্জিত অবস্থায় প্রবর্তিত হবে যাতে শিক্ষক রাগের মাথায় শিক্ষার্থীকে অননুমোদিত শাস্তি দিয়ে না ফেলেন।

* শাস্তিদানের পর কখনও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা যাবেনা। তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। কেননা তাকেই শাস্তিদানের দায়িত্ব দেয়া যায় যিনি আবার স্নেহের পরশে শিক্ষার্থীকে সিক্ত করেন।

* বিদ্যালয়ে বা যেকোন শিক্ষাঙ্গনে শাস্তির উদ্দেশ্য হবে সংশোধনমূলক। শিক্ষার্থী কোন ভুল করলে তা শুধরে দেওয়াই মূল বিবেচ্য।

* শিক্ষক মনস্তাত্ত্বিক ভাবধারায় শিক্ষার্থীদের মন জয় করবেন। আবার প্রয়োজনে শাসন করবেন, শাস্তি দিবেন কিন্তু কখনোই সীমা লঙ্ঘন করবেননা।


* গবেষণায় প্রমাণিত, শারীরিক শাস্তির চেয়ে মানসিক শাস্তি বেশী ফলপ্রসু। তাই শারীরিক শাস্তিদানের চেয়ে মানসিক শাস্তিদানের প্রতি শিক্ষকের আগ্রহ বেশী থাকা উচিত।

* শুধু শাস্তি দিলেই হবেনা, শিক্ষার্থীকে নির্দেশনা দিয়ে সংশোধনের সুযোগ ও দিতে হবে। শিক্ষার্থী সংশোধিত হলে মানসিক পুরষ্কার ও দিতে হবে যাতে সে তার শাস্তির সুফল বুঝতে পারে।

শিক্ষকের ত্রুটিপূর্ণ আচরণ, পড়ানোর বা বোঝানোর অক্ষমতা, শাস্তির ভয়, শিক্ষার্থীর কম বুদ্ধি, শারীরিক বা মানসিক রোগ, পারিবারিক কলহ বা সমস্যা... এসব কারণেও শিক্ষার্থীরা পাঠে অমনোযোগী হয়। তাই শিক্ষকদের উচিত -

- পাঠদান আকর্ষণীয় ও অর্থপূর্ণ করা যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠে আনন্দ পায়।

- ভয়- ভীতিহীন আনন্দঘন পরিবেশে পড়ানো যেখানে শিক্ষক হবেন সাহায্যকারী, বন্ধু ও পরামর্শদানকারী।

- দলীয় কাজ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগীতামূলক সম্পর্ক তৈরী করা যাতে কোন শিক্ষার্থীই পিছিয়ে না পড়ে।

- উৎসাহব্যন্জক কাজ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা, যাতে তারা দুষ্টামি করার সুযোগ না পায়।

উপকরণ ব্যবহার করে হাতে কলমে শেখানো। তাহলে শিশুরা সহজে শেখে, কোন পড়াকেই কঠিণ মনে করেনা।

- অপরাধী শিক্ষার্থীর ভাল গুণের প্রশংসা করা। তাহলে সে ধীরে ধীরে অপরাধ থেকে সরে আসবে।

- শিক্ষার্থীদের চোখে চোখ রেখে পড়ানো, বোর্ডে লেখার সময়ও খেয়াল করা যে, কোন শিক্ষার্থী অমনোযোগী বা দুষ্টামি করছে কিনা।

- শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে বা চারপাশে ঘুরে ঘুরে পড়ানো যাতে কোন শিক্ষার্থী কোন অসুবিধা বোধ করছে কিনা তা জানা যায়।

- শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে যাতে শিক্ষার্থী তার যেকোন অপারগতা ও অসুবিধারর কথা নির্ভয়ে বলতে পারে।

- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশী মনোযোগ দিতে হবে।


- সাবধানবাণী উচ্চারণ ও পুনঃপুনঃ সাবধানবাণী উচ্চারণ করা যাতে শিক্ষার্থীরা সতর্ক হয়, দুষ্টুমি না করে।

-উপদেশনা-নির্দেশনা দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে পাঠে আগ্রহী করা... ইত্যাদি।

নিচের ঘটনাটি একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার।এবার আসুন জানি, কেন মাদ্রাসার, বিশেষ করে হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথা বেশী শোনা যায়? কেন এই ধার্মিক লোকগুলো ( যাদের দয়ালু ও খোদাভীরু হবার কথা, যারা হাদিস কোরান বেশী মানেন- জানেন) তারা কেন এমন হিংস্র পশুর মত সন্তানতূল্য এসব শিশুদের ভয়ংকরভাবে মারে? এদের এই অন্যায় আঘাতে খোদার আরশ কেঁপে ওঠার কথা। অথচ এদের দয়া হয়না কেন???

কারণ এসব মাদ্রাসায় পড়তে আসে দরিদ্র, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, ধর্মপ্রাণ মানুষের সন্তানেরা যারা সন্তানকে কোরানে হাফেজ বানানোর জন্য মরীয়া। তাহলে বেহেশত নিশ্চিত। বেহেশতের লোভে জেনেশুনে সন্তানকে এমন জালেমদের হাতে তুলে দিতে এদের আপত্তি হয়না। আর এই সুযোগটাই নেয় হুজুররূপী জানোয়াররা।

এই ঘটনার বেলাতেও বাবামা প্রতিবাদ করেনি। হুজুরের নাম বলেনি। এত শ্রদ্ধা! মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোতেও এসব পরিবারের শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাও কম ঘটেনা।

মাদ্রাসাগুলোতে নজরদারী কম। ওখানকার শিক্ষকগুলো প্রকৃত শিক্ষার আলো থেকে অনেক দূরে। তারা আধুনিক মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। না মেরেও যে যেকোন শিক্ষা দেয়া যায় - এটা তারা জানেইনা।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায়ঃ


- কি কি শাস্তি দেয়া যাবে, তার তালিকা শিক্ষকদের বসার ঘরে টানিয়ে রাখতে হবে। সেগুলো মেনে চলার জন্য নজরদারী বাড়াতে হবে।

- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে কিভাবে শ্রেণী নিয়ণ্ত্রণ করতে হয়, কিভাবে অন্তর্নিহিত প্রেষণা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনেযোগী করা ও খারাপ আচরণ থেকে দূরে রাখা যায়...।

- এরকম বিকৃত মানসিকতার শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইত্যাদি।

প্রার্থনা করছি, এরকম ঘটনা বাংলাদেশে আর না ঘটুক। কল্পনা করুন তো, এই শিশুটি যদি আপনার হতো, তাহলে আপনার কেমন লাগতো?????


Click This Link






মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৮

টুনটুনি০৪ বলেছেন: সহমত

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২১

ঋতো আহমেদ বলেছেন: খুব ভাল একটি পোস্ট । বাই দ্য ওয়ে, আপনার নামটা বাংলা অক্ষরে দেখে ভাল লাগল ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর একটি জনসচেতনা মূলক পোষ্ট মেম। ধন্যবাদ এমন একটি পোষ্টদানে পাঠকদের কৃতজ্ঞ করার জন্য।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:১১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: মেম, কেমন আছেন? ব্লগে কি প্রথম পাতায় এসেছেন? ফেবু তে অনেক পোষ্ট দিচ্ছেন এখানে নয় কেন? ঐগুলোই এখানে দিয়ে দিন পাঠক পড়বে। লিখার ও বিচার হবে আমার মনে হয়। তারপরেও আপনার ব্যাপার। ভাল থাকববেন সবসময়।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন:
না আসিনি। মনে হয় আসবোনা কোনদিন। আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা কারণটা কি? আমার এটা মানতে ইচ্ছে করেনা যে আমার লেখার মান খারাপ বলে এমনটা হচ্ছে।

জ্বি, ফেবু তে নিয়মিত লিখছি। পাঠকেের ভাল প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছি। জ্বি, দেওয়া যায়। প্রথম পাতায় আসেনা বলে দিতে ইচ্ছে করেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.