নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারিবারিক কিছু সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান

০৯ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:২২





আমার আজকের লেখাটি আমার কিছু বন্ধু ও কিছু পাঠকের অনুরোধে লিখছি। তারা চেয়েছে, নারী ও পুরুষের প্রতি নানা রকম যে নির্যাতন বা পারিবারিক সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত হয়, সেগুলোর মনোবিজ্ঞানসম্মত কিছু সমাধান বিষয়ে যেন আমি একটি পোস্ট লিখি। আজকের লেখার বিষয়বস্তু তাই। তবে তার আগে কিছু জরুরী কথা বলা ভাল।

যখন কোন সমস্যাগ্রস্ত ব্যাক্তি তার কোন পারিবারিক বা সম্পর্ক বিষয়ক সমস্যার সমাধান পাবার জন্য কাউন্সিলরের কাছে আসেন, তথন কাউন্সিলর নানা প্রশ্ন করে সমস্যাটি সম্পর্কে, তার সাথে আনুষঙ্গিক বিষয়, সর্বোপরি সমস্যা বা সম্পর্কটি ঐ ব্যাক্তির কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জেনে নিয়ে কাউন্সিলর সমস্যাটির এক বা একাধিক বিকল্প সমাধন ব্যাক্তির সামনে তুলে ধরেন। সম্ভাব্য সমাধানগুলোর মধ্যে থেকে ব্যাক্তি তার জন্য সবচেয়ে সহজ বা পছন্দনীয় বিকল্পটি বেছে নেয়। যেমন -

আমার এক ছাত্রী, (যে কিনা রাজশাহীর বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা) বললেন, তাঁর স্বামী তাঁকে গবেষণার কাজ বন্ধ করে ফিরে যেতে চাপ দিচ্ছেন। কারণ তাঁর স্বামী বাচ্চা সামলানোর ঝামেলা মেনে নিতে চাচ্ছেন না। বাচ্চাকে রেখে এসে থাকতে তাঁর এবং তাঁর বাচ্চার - দুজনেরই খুব কষ্ট হচ্ছে। অথচ ডিগ্রীটা করা ওনার পেশার জন্য খুবই জরুরী, অনেক কষ্টে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ অবস্থায় উনি প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে আছেন ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থা থেকে বের হবার জন্য উনি আমার পরামর্শ চাইলেন। আমি সব শুনে তাঁকে ৩টি সম্ভাব্য সমাধান দিলাম।

১. বাসা ভাড়া নিয়ে কোন রিলেটিভসহ বাচ্চাটাকে রাজশাহী নিয়ে আসতে,

২. সুযোগ থাকলে ফিরে গিয়ে তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী করতে,

৩. ডিগ্রীর চেয়ে বাচ্চা-স্বামী তার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে ডিগ্রী না করেই ফিরে যেতে। বাচ্চা বড় হলে পরে ডিগ্রী করতে।

কখনো কখনো সমাধান সমস্যাগ্রস্ত ব্যাক্তির পছন্দ নাও হতে পারে। যেমন কোন ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকাকে আপনি যতই বলুন যে, কোন সম্পর্ক একতরফা হয়না। যত কষ্টই হোক, তাকে ভোলা ছাড়া উপায় নেই, যেহেতু সে আর আপনাকে ভালবাসেনা,.. তবু তারা তা মানতে চায়না।

আবার অনেকে জেনে শুনে অশান্তি করে। তারা সব জেনেও আপনার পরামর্শ শুনবেনা। যেমন, যৌতুকলোভী কোন স্বামীকে আপনি যতই বলুন, যৌতুকের জন্য বউকে নির্যাতন করা অন্যায়,....সে শুনবেনা। কারণ আমাদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের কারণে আমাদের বেশীরভাগ লোকই ওটাকে অন্যায় বলে স্বীকারই করেনা।

তেমনি যারা পরকীয়া করে, তারা সব জেনেশুনেই করে। তারা জানে, কাজটা অন্যায়, একসময় জানাজানি হবেই, হলেই নানা জটিলতা..- এসব জেনেই নিজেদের সংযত করতে না পারা, সিদ্ধান্তহীনতা, নিজের ইচ্ছাকে বেশী প্রাধান্য দেয়ার কারণে তারা পরকীয়া করে। তাদেরকে বললেই তারা পরকীয়া থেকে সরে আসবেনা যেহেতু তারা অন্যায় জেনেই সেটা করে।

অনেকে আবার না বুঝে অন্যায় করে। আমার এক বান্ধবীর বর আমাকে ফোন করে বলল, আমি আমার বউয়ের বাপের বাড়ী যাওয়া পছন্দ করতাম না। গেলে রাগ করতাম। কারণ আমার কোন বোন, খালা, ফুফু.. এমন কাউকে আমি কাছ থেকে না দেখার কারণে বাবার বাড়ীর আবেদনটা মেয়েদের কাছে কেমন, তা আমি বুঝতাম না। এখন বুঝি। এক্ষেত্রে তিনি হয়ত না বুঝে স্ত্রীর প্রতি অন্যায় করে থাকবেন। এরকম ক্ষেত্রে বুঝিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায়।

কখনও কখনও "ডিভোর্স দিন" বললেই কেউ স্বামী বা স্ত্রীকে ডিভোর্স দিবেনা যদি সে তাকে খুব ভালবাসে। আবার দিতে মানা করলেও দিবে বা গোপনে বা পালিয়ে বিয়ে করবে যদি পরকীয়া থাকে বা স্বামী বা স্ত্রীকে ভাল না বাসে। তাই পারিবারিক বা সম্পর্কের সমাধান দেয়া এবং তা মানাতে পারা সহজ নয়। তবে আমরা মনোবিজ্ঞানীরা সমস্যা বিশ্লেষণ করে সবদিক দিয়ে ভাল, এমন কিছু সমাধানের কথা বলতেই পারি। তবে সেটা মানা বা না মানা সম্পূর্ণ ব্যাক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

এবার আসুন, কিছু কমন পারিবারিক সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করি।

১। আর্থিক সমস্যা: শতকরা আশিভাগ পারিবারিক সমস্যার কারণ আর্থিক। কখনও কখনও স্বামী বা স্ত্রীর অপচয়, মাদকাসক্তি, আত্মীয়দের দেখাশোনার ভার, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশী... ইত্যাদি কারণে পারিবারিক অশান্তি হয়।

এর সমাধান হল - উভয়ে আলোচনা করে সাধ্য ও প্রয়োজনের গুরুত্ব বিবেচনা করে খরচ করতে হবে। স্ত্রীর সঞ্চয়ী হওয়া বেশী জরুরী। স্ত্রী বেকার হলে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। আজকাল গ্রামের মেয়েরাও পার্লার, বুটিকে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

২। পরকীয়া: স্বামী বা স্ত্রী - কেউ পরকীয়ায় আসক্ত হলে,  তা সে যে কারণেই হোক, ( "পরকীয়ার কারণ ও প্রতিকার" -  এই শিরোনামে আমার আলাদা একটি লেখা আছে। পরে কখনও পোস্ট দেব)  তা সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে বাচ্চাদের। তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে, পরবর্তী জীবনে কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা, ভয়-দুশ্চিন্তা-হতাশায় ভোগা, ভালবাসা, যত্ন ছাড়া কলহ ও অবহেলার মধ্যে বেড়ে উঠলে এদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই স্বামী বা স্ত্রীকে স্থির করতে হবে, সে নতুন সম্পর্কে জড়াবে, নাকি পুরনো সম্পর্কই তার কাছে বেশী প্রয়োজনীয়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে আলোচনা করে খুব দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে।

৩। মতের অমিল: সংসার জীবনে নানা বিষয়ে মতের অমিল হতেই পারে। এর সমাধান হল - রাগারাগি, ঝগড়া না করে যুক্তি দিয়ে আপনার মত তুলে ধরা। কোন বিষয়ে মতের অমিল হলে কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে তারপর উভয়ে কথা বলা উচিত। কোন একজন বেশী রাগী হলে অপরজনের উচিত চুপ করে থাকা ও পরে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলা। আমরা কোন সমস্যা হলে সাথে সাথেই তার সমাধান করতে চাই। এটিই মূলত ঝগড়ার কারণ। কেননা সময় মানুষের ভাবনাকে বদলে দেয়। এখন যেটাকে ঠিক মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর হয়ত মনে হবে, সেটাই বিরাট ভুল ছিল। বাচ্চাদের সামনে কলহ করা খুবই অনুচিত। অনেক বাবামা বাচ্চাদের দিয়ে ঝগড়ার মধ্যস্থতা করান। এটি ভয়ংকর খারাপ। বাচ্চার কাছে বাবা ও মা উভয়ে সমান প্রিয় বলে কোন একজনের পক্ষ সে নিতে পারেনা। ফলে সে দ্বন্দ্বে ভোগে। তাছাড়া তার অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় ঘটনার গুরুত্ব ও প্রভাব সম্পর্কে অনুমান করতে না পারার কারণে সে ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তা ও কষ্ট নিয়ে বড় হয়।

৪। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল: বেশীরভাগ স্বামীদের ( আমার অনেক বন্ধুসহ) অভিযোগ হল, এখন সব বাড়ীর মেয়ে, বউরা, এমনকি কাজের মেয়েগুলো পর্যন্ত, রোজ সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত একটার পর একটা ভারতীয় সিরিয়াল দেখার কারণে বাচ্চাদের পড়া, সাংসারিক কাজ, স্বামীদের যত্ন,.. এসব কাজে চরম উদাসীন। কথা সত্যি। এসব বিদেশী সিরিয়াল যেকোন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশেও বাধা। সেজন্যই আমাদের কোন চ্যানেল ভারতে দেখানো হয়না। তাছাড়া ওসব সিরিয়ালে কুটনামী, প্রতিহিংসা পরায়নতা, বহুবিবাহ, পরকীয়া, আজগুবি নানা বিষয়,.... এসব শেখানো হয়। তাই আমি মনে করি ভারতীয় চ্যানেলগুলো, বিশেষ করে বাংলা চ্যানেলগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। তথ্য প্রযুক্তিরর যুগে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন আটকানো মুশকিল। বিনোদনের দিকটিও আছে। তবে তাতে শিক্ষামূলক বিষয় বেশী থাকলে, এমন কি ভারতে আমাদের একটা চ্যানেলও প্রচারের অনুমতি পেলেও কিছু বলার ছিলনা।


৫। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সাথে বনিবনা না হওয়া: নিজের পরিবারের লোকেদের সাথে সম্পর্ককে সেভাবে লালন না করলেও চলে। মনের টানেই এসব সম্পর্ক ভাল থাকে। কিন্তু বৈবাহিক কারণে তৈরী হওয়া সম্পর্ককে সযত্নে লালন করতে হয়। কারণ এসব সম্পর্কে কোন রক্তের টান থাকেনা। শ্বাশুড়ী, ননদ, জা, - এরা নতুন বৌকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। এখান থেকেই সমস্যার শুরু।

আমাদের দেশে সবচেয়ে বৈরী সম্পর্ক হয় শ্বাশুড়ী-বৌয়ের। তার কারণও আছে। মা সীমাহীন কষ্ট করে তিল তিল করে ছেলেকে মানুষ করেন। ছেলেকে অসম্ভব ভাল বাসেন। ছেলের কাছে প্রত্যাশাও বেশী। কারণ ধর্মমতে বাবা-মার দেখাশোনার দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে উভয়ের হলেও ছেলেদের দায় বেশী বলে সমাজ মনে করে। বউ চায়না ছেলে সে দ্বায়িত্ব পালন করুক। কারণ আমাদের দেশের বেশীরভাগ মেয়েরা আর্থ-সামাজিক কারণে স্বভাবগতভাবেই ভীষণ কৃপণ। বিয়ের পর আরও কৃপণ হয়ে যায়। কারণ মেয়েরা সারাজীবন পরনির্ভশীল। বাবা, স্বামী বা ছেলের উপর, বিশেষ করে মেয়েরা বেকার ও গরীব হলে। তারা জানে স্বামীর অবর্তমানে টাকা ছাড়া ওদের অবস্থা কতটা নাজুক হয়। তাদেরকে সবসময় আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাবার সম্পত্তিতে অংশ বা বিধবা হলে স্বামীর সম্পত্তি ঠিকমত দেয়া হয়না। নিজে উপার্জন করলেও নিজের ইচ্ছামত স্বামী তা খরচ করতে দেয়না। এমন কি দেনমোহরটাও বেশীরভাগ সময় দেয়না। তাই সারাজীবন, বিশেষ করে বিয়ের পর মেয়েরা হয় হিসেবী। তাই তারা শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের পিছনে টাকা খরচ করা পছন্দ করেনা, অপচয় মনে করে। তাই তারা স্বামীকে আলাদা করতে চায়। ফলে শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের সাথে বৌদের সম্পর্ক ভাল হয়না। ফলে এই কারণে স্বামীর সাথেও তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়।

সারাজীবন মা ছেলের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বিপত্তি ঘটে তখন, যখন বিয়ের পরে ছেলের কাছে স্ত্রী মায়ের চেয়ে বেশী প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজনে। পরিবারের মতে বিয়ে হলে সেখানে নতুন বৌয়ের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বেশী থাকে। কিন্তু পরিবারের অমতে বা প্রেম করে বিয়ে করে আনলে পরিবারের সবাই বৌকে পছন্দ করেনা, ঈর্ষা করে এবং দোষ খুঁজতে থাকে।

বউরা মনে করে, স্বামীর কাছে যেহেতু সে অত্যাবশ্যক, তাই স্বামীর আর কাউকে প্রয়োজন নেই। স্বামী ও স্বামীর আয় হলেই যেহেতু তার সব প্রয়োজন মিটে যায়, তাই বৌরা স্বামীর অন্য রিলেটিভদের 'আগাছা' মনে করে। দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

মেয়েরা ভুলে যায়, যে স্বামী ও স্বামীর আয় নিয়ে স্ত্রীর এত ভরসা-গর্ব, সেই স্বামীকে তিল তিল করে বড় করেছে স্বামীর পরিবার। তাই স্বামীর রোজগারে তাদেরও হক আছে।

মেয়েরা যদি একটু উদার হয়ে শ্বশুরবাড়ীর লোকদের আপন করে নিতে পারে, স্বামী বলার আগেই তাদের প্রতি কর্তব্য করতে পারে, যদি মেনে নেয় যে স্বামীর রোজগারে তাদেরও হক আছে, যেহেতু তারা তাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে - তাহলে স্বামী ও স্বামীর পরিজন তাদের মাথায় করে রাখতে বাধ্য। তখন স্বামীও স্ত্রীর রিলেটিভদের দিকে খেয়াল করবে, স্ত্রীর মতের দাম দেবে, ভালবাসবে। অশান্তি কমে যাবে। সম্পর্ক ভাল হবে।

বৌরা আলাদা পরিবেশ থেকে আসে। তাই তাদের পছন্দ-অপছন্দ, ভাললাগা-মন্দলাগা, অভ্যাস, আচরণ, মানসিকতা ইত্যাদি অনেক কিছুই শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সাথে মিলবেনা, এটাই স্বাভাবিক। তাই কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও মানিয়ে চলতে হবে উভয়পক্ষকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেটা হয়না বলেই এত সমস্যা। সবাই সবকিছুতে পটু হয়না। বউরা সব কাজে পারদর্শী হবেনা, এটাও মেনে নিতে হবে।

মনে রাখা প্রয়োজন, স্বামী বা স্ত্রীর, উভয়দিকের সম্পর্কগুলো অবিচ্ছেদ্য এবং পরিপূরক। তাই সেগুলো সচল ও ভাল রাখা খুব জরুরী। মন থেকে স্বামী-স্ত্রী-উভয়ের শ্বশুরপক্ষের লোকজনকে মেনে নিন যে, সে সম্পর্কটা আপনার জন্য অপরিহার্য। তাই যেকোন মূল্যে সেটাকে টিকিয়ে বা ভাল রাখার গরজ আপনার বেশী হওয়া ভাল। তাহলে অপর প্রান্তের মানুষটিও আপনার কাছে আসবে, আপনার ভাল লাগবে। এক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা বেশী।

৬। আলাদা থাকতে চাওয়া: পেশার কারণে এখন একক পরিবারে থাকতে আমরা বাধ্য হই। আবার বৌরা বরকে নিয়ে আলাদা থাকতে চায় প্রাইভেসীর কারণে ও আর্থিক কারণে। নিজেদের মত আলাদা, স্বাধীন থাকবে, যা খুশী করবে, যেখানে খুশী যাবে, বিলাসিতা করবে, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের আর্থিক দায় এড়াবে, কারো কথা মেনে চলতে হবেনা ইত্যাদি। শ্বাশুড়ী-ননদরা বউকে দেখতে পারেনা, তাই বউরাও তাদের দেখতে পারেনা। এ এক অদ্ভূত প্যারাডক্স ! এক্ষেত্রে স্বামীদের কঠোর হতে হবে শুরু থেকেই। বউদের অন্যায় আবদার মেনে নেয়া যাবেনা।

৭। সন্দেহপ্রবণতা: স্বামী বা স্ত্রী একে অন্যকে সন্দেহ করে, তাদের গতিবিধি অনুসরণ করে, নানা আপত্তিকর প্রশ্ন করে,... এসব অশান্তির কারণ। এর সমাধান হল, আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে বিশ্বাস করুন। সন্দেহ যেকোন সম্পর্ক শুধু খারাপই করে, সম্পর্ক টেকাতে পারেনা। যে আপনাকে ভালবাসেনা, তাকে আপনি যতই চোখে চোখে রাখুন, সে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবেই। আর যে ভালবাসে, তার হাজারটা বন্ধু বা বান্ধবী থাকলেও সে আপনাকে ছেড়ে যাবেনা।

৮। স্ত্রীর আর্থিক পরাধীনতা: স্ত্রীকে টাকা না দেয়া বা নিজের অর্থ স্বাধীনভাবে খরচ করতে না দেওয়া অন্যায়। বেশীরভাগ পুরুষ বউকে তার হাতখরচের টাকা দেয়া, বউয়ের বাবার বাড়ীর লোকেদের জন্য টাকা খরচ করা, বউয়ের বাবার বাড়ী যাওয়া, এমন কি স্ত্রীর আয় স্ত্রীর হাতে থাকা পছন্দ করেনা। এটি মেয়েদের মনোকষ্টের প্রধান কারণ। এর সমাধান, স্ত্রীর আয় তাকে স্বাধীনভাবে খরচ করতে দিন, কারণ তার আয়ে আপনার কোন হক নেই। বউ বেকার হলে আপনার সাধ্যমত প্রতিমাসে তাকে কিছু টাকা দিন এবং এ টাকার কখনও কোন হিসাব চাইবেন না। বউদেের এমন কিছু প্রয়োজন থাকে, যারজন্য স্বামীর কাছে টাকা চাওয়া মোটেই সম্মানজনক নয়।

৯। স্ত্রীর মতের দাম না দেয়া বা কিছু করতে বাধ্য করা: অনেক স্বামী প্রায় সব বিষয়ে একা সিদ্ধান্ত নেন। এটি অনুচিত। স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ড্রাইভার, কাজের লোক, বাইরের লোক, বিশেষ করে বাচ্চাদের সামনে স্ত্রীকে গালি দেয়া, অপমান করা যাবেনা। এতে বাচ্চাদের মনে বাবা মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা তৈরী হয়। বাবাকে দেখে শিখে বড় হয়ে এসব শিশুরাও মেয়েদের বা বউদের অসম্মান করে। প্রায় সব পুরুষ মেয়েদের কাজকে তুচ্ছ মনে করে। এটিও খুব অন্যায়। কারো কাজই তুচ্ছ নয়। হতে পারে ধরণ আলাদা। বউকে তার মনের বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করবেননা। এতে আপনার প্রতি তার ভালবাসা কমে যাবে।

১০। বিশেষ দিন ভুলে যাওয়া: বিশেষ দিনগুলো ভুলে গেলে মন খারাপ হয়, সম্পর্কের গুরুত্ব হালকা হয়। এটিও কলহের কারণ। তাই বিশেষ দিনগুলো সাধ্যমত উৎযাপন করুন।

১১। বাড়ী নোংরা রাখা: অনেক স্বামী বা স্ত্রী বাড়ী অগোছালো, নোংরা রাখে। এটি সযত্নে পরিহার করতে হবে। বউরা ঘরবাড়ি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন, স্বামীরা বাচ্চাদের সহ তা পরিপাটি রাখতে সাহায্য করুন। সুন্দর পরিবেশ শরীর, মন ভাল রাখে এবং সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরী করে।

১২। কোন কিছু গোপন করা: স্বামী বা স্ত্রী কোন কিছু গোপন করলে বা খোলামেলা আলোচনা না করলে উভয়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। তাই পরিবারের সবার সাথে খোলামেলা আলোচনা, বড়দের পরামর্শ, ছোটদের মত নিয়ে কিছু করলে তা সম্পর্ককে আন্তরিক ও দৃঢ় করে।

আরো অনেক সমস্যা আছে যেগুলো আলোচনায় আনলামনা। পরে.....

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


পারিবারিক সব সমস্যার সমাধান হিসেবে আপনি দিচ্ছেন, "স্বামী স্ত্রী আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে"; সমস্যা দেখা দিলে স্বামী স্ত্রী আলপ করে, নাকি গন্ডগোল করে?

প্রশ্ন-ফাঁস-করা ডিগ্রি?

০৯ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: হা হা হা! ভাল বলেছেন!!!

আগে শতকরা ৬৪ ভাগ, বর্তমানে ৮০ ভাগ নারী নিজগৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। সব সমস্যার সমাধান আলাপ আলোচনার মাধ্যমে করলে এটা হবার কথা নয়। আপনার মত সবাই কি ভালমানুষ? মোটেই না। বেশীরভাগ পুরুষ আলোচনার ধার ধারেনা। তাদের কাছে স্ত্রীর মতের কোন দামই নেই। তাদের হাত চলে, মুখের বিশ্রী গালি...

ভাল লাগছে, আপনার স্ত্রী ভাগ্যবতী। ধন্যবাদ। আমার একাডেমিক রেজাল্ট একদিন আপনাকে জানাব নিশ্চয়ই। ভাল থাকবেন।

২| ০৯ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫২

কোলড বলেছেন: Nothing new in your write-up. Same old shit!

6. You seem to be supporting living in a traditional joint family structure. Bangladeshi boys/girls need to learn to grow up and live separately. I always wonder how they have sex in Bangladesh where parents/siblings are next door!

7. Little dose of suspicion is good. As they say, trust but verify.

10. World doesn't end if you forget marriage day after 15 years.

11. Personal hygiene is more important than keeping a clean home. I always cringe every time I see yellow/wet armpit stain on shirts/blouse in Bangladesh. You should advise them to use deodorant/anti-perspirant at least.

12. You need to respect some privacy. Don't ask for his/her Facebook ID or phone password.

০৯ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: Thanks for your opinion and observation.

১০ ই মে, ২০১৭ সকাল ৮:১৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন:

ধন্যবাদ। আমি পারিবারিক সমস্যাগুলোর কারণ ও তার প্রভাবগুলোকে বিশ্লেষণ করে সমাধানের কথা বলেছি। কারণ জানলে ব্যাক্তি নিজেই সমাধান করতে পারবে।

আপনার কাছে নিশ্চয় আরো ভাল সমাধান আছে। যেমন ধরুন, স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়ায় আক্রান্ত হলে পরকীয়া নিবারণ বটিকা খেয়ে নিলেই পরকীয়া সেরে যাবে। কিংবা মতের অমিল হলে আছে মিলবটিকা,.......।

জ্বি, আমি বাংলাদেশের পারিবারিক পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই লিখেছি। সেজন্য সেক্স করার জন্য বাবামা ও বাচ্চাদেরকে আলাদা বাসায় রাখতে বলিনি। আমার ধারণা বললেও কেউ রাজী হতনা।

আমি বলিনি শারীরিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দরকার নেই। সেটি যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। সেটিও জরুরী। এমন আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমার আলোচনায় আসেনি, আসা সম্ভবওনা। আমার লেখার মূল ফোকাস ছিল পারিবারিক পরিবেশ ও সম্পর্ক।

১৫ বছর পর বিয়ে বার্ষিকী ভুলে গেলে ক্ষতি নেই। বেশ! ১৫ বছরতো মনে রাখুন! বেশীরভাগ পুরুষ তো বিয়ের দুএক বছর পরেই ভুলে যায়!

এ প্রসঙ্গে একটি সত্যি ঘটনা বলি। আমেরিকান এক বৃদ্ধা মহিলা তাঁর স্বামী মারা যাবার পর তাঁর জন্মদিনে বিশাল এক লাল গোলাপের ঝুড়ি উপহার পেলেন যার কার্ডে লেখা: "প্রিয়তমা পত্নীর জন্য স্বামীর উপহার।" উপহার পেয়ে মহিলা ভীষণ অবাক হয়ে ফুলের দোকানে ফোন করে জানতে চাইলেন, উপহারটি কে পাঠিয়েছে? দোকানদার জানালো, মহিলার স্বামী বেঁচে থাকতেই বেশ কিছু টাকা তাকে দিয়েছেন যাতে প্রতি বছর জন্মদিনে তাঁর স্ত্রীকে গোলাপের ঝুড়ি উপহার হিসেবে পাঠানো হয়।

গোপন করা বলতে আমি পাসওয়ার্ড কে বোঝাইনি। অনেক স্বামী বা স্ত্রী গোপনে অনেক কাজ করেন যার সাথে অন্যজনের স্বার্থ জড়িত, কিন্তু তাকে তা জানানো হয়না। যেমন, এক স্বামী স্ত্রীকে না জানিয়ে জমি বেচে দিয়ে সব টাকা খরচ করেছে। কোথায় খরচ করেছে বলেনা। অথচ জমিটা বাড়ী করার জন্য স্বামী-স্ত্রী দু'জনের টাকা দিয়ে কেনা।

আবারো ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৩| ০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৫১

সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন। কিন্তু আজকাল, সবাই বেশি বোঝে এবং নিজেকে নির্ভুল ভাবে। এটাই মূল সমস্যা।

১০ ই মে, ২০১৭ সকাল ৮:২৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। জ্বি, এটা মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। প্রায় সব মানুষ মনে করে, সে নিজে সঠিক, বাকীরা ভুল। আর বোকারা নিজেকে ছাড়া পৃথিবীর সব মানুষকে নির্বোধ ভাবে।

ভাল থাকুন সবসময়।

৪| ১০ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:১৩

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর অনেক সুন্দর কতক মতামতো আর পরামর্শ উপস্থাপন করেছেন এগুলো মেনে চলতে পারলে হয়তো সমাধান সম্ভব। কিন্তু অামরা কতজনই কারোর পরামর্শ শুনে চলি। পরামর্শ শুনার সময় কান পেতে শুনি কিন্তু করার সময় তার বিপরীত এইতো কনফ্লিলিক্ট হচ্ছে। যাই হোন সবার অন্তরে যদি স্রষ্টার ভয় থাকে তাহলে হয়তো সবাই সবার প্রতি সেক্রিফাইস প্রাধান্য দিয়ে জীবনকে সুন্দর পথে পরিচালনা করতে সমর্থ হতে পারে। আপনার অর্থবহ লিখাটি ব্লগে উপাহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ম্যাম।

১০ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:০০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১০ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৪৮

ধ্রুবক আলো বলেছেন: ভালো বলেছেন

১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:১৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.