নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির প্রভাব ও প্রতিকার

২৪ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৬



শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির প্রভাব ও প্রতিকার

একলব্যকে যখন গুরু দ্রোনাচার্য তীরধনুক বিদ্যা শেখানোর মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তার শিষ্য হবার জন্য গুরুদক্ষিণা হিসেবে একলব্যর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি চেয়ে বসেন (বৃদ্ধাঙ্গুলি না থাকলে একলব্য আর তীরধনুক চালাতে পারবেনা), তখন একলব্য গুরুর মান রাখতে এবং তার শিষ্য হবার আশায় স্বেচ্ছায় নিজের হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে দ্রোনাচার্যকে দিয়ে দেন।

এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, একজন ছাত্রের কাছে একজন শিক্ষকের মর্যাদা কত ব্যাপক। আর কিছু শিক্ষকগণ এই মর্যাদার সুযোগ নিয়ে ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। পড়া না পারলে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে মারা বা সবার সামনে গালি দেয়াকে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় স্বাভাবিক মনে করা হয়। যদিও তা স্বাভাবিক নয়। শারীরিক ও মানসিক - এ উভয় ধরণের শাস্তিই যেকোন শিক্ষার্থীর জন্য ক্ষতিকর।

সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বহু স্কুলে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী নির্যাতন চলছে। স্কুলের শিক্ষকদের মারমুখী আচরণ কিছুতেই থামছেনা। প্রায়ই শিক্ষকরা শিশুদের মারছেন, ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখছেন, নোংরা ভাষায় গালি দিচ্ছেন, ইত্যাদি। প্রায়ই মিডিয়াতে এসব ঘটনার খবর আসছে। যদিও এসব ঘটনা মিডিয়াতে যতটা আসছে, বাস্তবে তা ঘটছে আরো বেশী।

শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন মূলত দূর্বল প্রতিপক্ষ শিশুর উপর সবল শিক্ষকের অত্যাচার। এই অসম শক্তির সংঘাত যুগে যুগে হয়ে এসেছে। কখনও দাম্পত্য সম্পর্কে, কখনও কখনও দেশ, জাতি, ধর্ম, গোত্র, অর্থ, ক্ষমতা তথা যেকোন অসম সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এ সংঘাত শাসক ও শোষিত, দূর্বল ও সবল, ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাহীনের মধ্যে বিরাজমান। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, 'এবিউজার' ও 'ভিকটিম' - দুই পক্ষই অনেক সময় বুঝতে পারেনা যে তারা একটি অসম ও অস্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্যে আছে। না বুঝলেও এসব নির্যাতনের ফলে ভিকটিমের বা শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পরিমাণ কমেনা।

যেকোন শারীরিক নির্যাতনকে যতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়, মানসিক নির্যাতনকে ততটা করা হয়না। কারণ মানসিক নির্যাতন দেখা যায়না, দেখানোও যায়না। তারচেয়েও বড় বিষয় হল, আমার মানসিক কষ্ট আমি নিজে যতটা অনুভব করব, অন্যেরা, এমন কি আমার অতি আপনজনেরাও ততটা করবেননা, করতে পারবেননা। তাই শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে অনেক অনেক বেশী।

শিক্ষক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের ফলে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা আহত হয়, মানসিক নির্যাতনের ফলে শিশুরা হতাশা, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, স্নেহবঞ্চনা, দুশ্চিন্তা... এসবে ভোগে। এর ফলে শিশুদের মনে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় যা থেকে নানা মানসিক সমস্যা, যেমন- দূর্বল ব্যক্তিত্ব, পরনির্ভরশীলতা, নানা পরিবেশ ও মানুষের সাথে সঙ্গতিবিধানের অক্ষমতা, কাউকে বিশ্বাস করতে বা ভালবাসতে না পারা, ভঙ্গুর মানসিকতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি হতে পারে। মানসিক নির্যাতন থেকে অনেক সময় শারীরিক অসুস্থতা, যেমন - ট্রমা, বিষন্নতা, এংজাইটি, আর্থারাইটিসের মত কঠিণ অসুখও হতে পারে।

যেসব শিশুরা বাবামা বা শিক্ষক কর্তৃক নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে বড় হয়, সেসব শিশুরা বাবামা, শিক্ষক বা বড়দের কাছ থেকে ওসব আচরণ অনুকরণ করে। পরবর্তী জীবনে তারাও স্ত্রী, সন্তান, কাজের লোক বা অধীনস্তদের সাথে একই আচরণ করে। এভাবে বংশ পরম্পরায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রভাব চলতে থাকে চক্রাকারে।

শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করলে শিশুদের যে সীমাহীন ক্ষতি হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির প্রভাবগুলো হলঃ

১. শাস্তির প্রভাবে শিশুদের আত্মবিশ্বাস হ্রাস পায়;

২. পাঠে শিক্ষার্থীদের উদ্যম, মনোযোগ ও আনন্দ হ্রাস পায়;

৩. পাঠ্য বিষয়ের প্রতি ভীতি সৃষ্টি হয়;

৪. শাস্তির কারণে শিশুদের মধ্যে তীব্র অপমানবোধ বা লজ্জাবোধ হয়;

৫. নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে শিশুর মনে তীব্র হতাশা সৃষ্টি হয়;

৬. সহপাঠীদের কাছে নির্যাতিত শিশুরা অপমানিত বোধ করে;

৭. কখনও কখনও স্কুল ছেড়ে দেয়;

৮. বাজে কোন নামকরণের ফলে (যেমন- আদুভাই, গাধা,..) এসব নির্যাতিত শিশুরা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক কষ্টে ভোগে;

৯. তাদের আত্মসম্মানবোধ, আত্মশ্রদ্ধা বা self esteem হ্রাস পায়;

১০. স্কুল ভীতি বা মানসিক কষ্ট থেকে মানসিক রোগও হতে পারে;

১১. নির্যাতনকারী এসব শিক্ষকদের প্রতি নির্যাতিত শিশুদের চরম অশ্রদ্ধা তৈরী হয়;

১২. তাদের মনে অহেতুক ভয় বা ফোবিয়া হতে পারে। এ ভয় সাপেক্ষীকরণের ফলে সব শিক্ষক, সব বিষয়ের প্রতি স্থানান্তরিত হয়। ফলে সব শিক্ষকের প্রতি ভয় ও বিরক্তি সৃষ্টি হয়;

১৩. অর্জিত আবেগ, যেমন - ভয়, দুশ্চিন্তা, পীড়ন, হতাশা, দুঃখ ইত্যাদির কারণে নির্যাতিত শিশুদের মনে পাঠে অনীহা সৃষ্টি হয়;

১৪. তারা সব শিক্ষককে অবিশ্বাস, সন্দেহ করে। ভয় পায়। পরে সংসার জীবনেও নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা কাউকে বিশ্বাস করতে না পারার কারণে অসুখী হয়;

১৫. এসব নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা অসামাজিক ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হয়। ফলে তারা কারো সাথে সহজভাবে মিশতে ও মানিয়ে চলতে পারেনা;

১৬. সবসময় মানসিক অস্বস্তিতে ভোগে। অপমানের দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেনা;
১৭. এসব নির্যাতিত শিশুরা পরবর্তী জীবনে সামান্য সমস্যায় পড়লেই তাদের মানসিক প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। ইত্যাদি।

প্রতিকার

মাদ্রাসাগুলোতে, বিশেষ করে হাফেজিয়া মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক নির্যাতন আরো বেশী হয়। তাই -

১। খুব দ্রুত সব স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধ করতে হবে।

২। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃংখলা ও নজরদারী বাড়াতে হবে।

৩। শিক্ষকদের জবাবদিহিতা ও শাস্তিবিধান কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

৪। পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক শাস্তির ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে শিক্ষকদেরকে সচেতন করতে হবে।

৫।সর্বোপরি, শাস্তি ছাড়া আধুনিক মনোবিজ্ঞানসম্মত পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:২৩

সমাজের থেকে আলাদা বলেছেন: একটা ভালো কথা, শিক্ষকের মান বাড়াতে হবে। নিম্নমানের শিক্ষক হীনমন্যতা থেকে কমবয়েসী ছাত্রের ওপরে অত্যাচার করে থাকেন।

২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:১৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:৪২

সমাজের থেকে আলাদা বলেছেন: আপা আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা। যেসব শিক্ষক ক্লাসে পড়া বোঝাতে পারতেন না তারাই মারতেন বেশী। :'(
ভালো শিক্ষকরা বড়জোর বকা দিতেন।

২৫ শে মে, ২০১৭ ভোর ৬:২৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, এটা হয়। ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ২:১০

আবদুল মমিন বলেছেন: ছাত্র জমানায় একটা বাড়িতে লজিং থেকে পড়া লিখা করতাম । শিক্ষা সময় পার করেও আট বছর পর বিয়ে করলাম , মজার বেপার হোল লজিং বাড়ি থেকে আমার বাড়ি প্রায় ৫০০ কিলো মিটার দূরে কিন্তু তার পরেও কেমন করে আমার ছাত্র ছাত্রী দুটা আমার বিয়েতে এসে উপস্থিত হয়ে গেল কিসের টানে আসলো তাহা আজ ও বসে ভাবি ?

২৫ শে মে, ২০১৭ ভোর ৬:৩০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনি নিশ্চয় ওদেরকে কখনও মারেননি। মারলে এত ভালবাসতোনা।

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.