নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েরা কোনদিনই \'মানুষ\' হবেনা

০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৬




মেয়েরা কোনদিনই 'মানুষ' হবেনা

আমাদের দেশে একজন মেয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে কখনও না কখনও কোন না কোন পুরুষের লোভী হাত দ্বারা অপমানিত হয়নি। বাসে, ট্রেনে, মার্কেটে, ভীড়ে - সবখানে পুরুষরা ওঁৎ পেতে থাকে - কখন সুযোগ পেলেই কোন মেয়ের শরীর স্পর্শ করা যাবে? এতই লোভনীয় জিনিস মেয়েদের শরীর যে কোনভাবেই লোভ সামলানো যায়না। মেয়ে! শুধু মেয়ে হলেই হলো!! চিকণ-মোটা, কালো-ফর্সা, লম্বা-বেঁটে, সুন্দরী-অসুন্দরী, বিবাহিতা- অবিবাহিতা, যেকোন বয়সী, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, পাগল, এমন কি শিশু হলেও আপত্তি নেই। কুকুরের মত ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। যেকোন ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, যেকোন আর্থ-সামাজিক স্তরের, বিবাহিত বা অবিবাহিত যেকোন বয়সের বেশীরভাগ পুরুষ মেয়ে পেলেই খুবলে খেতে চায়।

কেউ প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কখনও ক্ষমতা বা জোর খাটিয়ে, কখনও শিক্ষিতরা ভদ্রতার মুখোশে মেয়েদের ব্যবহার করে। চোখ টেপা, ঠোঁট ও চোখের নোংরা অভিব্যাক্তি, অশ্লীল কথা, ... কত রকমভাবে মেয়েদেরকে অপমান করা যায় !! মেয়েদেরকে অপমান করতে পারলে পুরুষরা খুশী হয়, অপদস্থ বা ব্যবহার করতে পারাকে কৃতিত্ব মনে করে, গর্ব করে বন্ধুদের কাছে বলেও। অসম্ভব বন্য তৃপ্তি পায়, যখন দেখে তাদের অপমানে কোন মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে।

কেন এত অপমান?? কি দোষ তাদের??? এত ফাও খেতে ভাল লাগে কেন?
শুধু যৌন হয়রানি নয়, প্রতি পদে পদে মেয়েরা নানা নির্যাতনের শিকার। কোন দোষ না করেও মেয়েরা শাস্তি পায়। এমন দোষ যার উপরে মেয়েদের কোন হাত নেই। বাবা যৌতুক দিতে না পারলে, সন্তান না হলে, ছেলে সন্তান না হলে, গায়ের রং কালো হলে, দেখতে সুন্দর হলে, বিধবা হলে, স্বামীর চেয়ে বেশী যোগ্য হলে.....ইত্যাদি।

আবার কখনও কখনও অন্যের ইচ্ছা মেনে নিতে না পারলেও তারা নির্যাতিত হয়। যেমন- বখাটেকে প্রেমিক হিসেবে পছন্দ করতে না পারলে, কাউকে বিয়ে করতে রাজী না হলে, স্বামীর অত্যাচারে ডিভোর্স নিলে, স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দিলে, স্বামীকে ২য়, ৩য়.. বিয়ের অনুমতি না দিলে, নিজের কষ্টার্জিত টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিতে রাজী না হলে....ইত্যাদি।

ভাত দিতে দেরী হলেও স্বামীর মার খেতে হয়। এখনও অনেক গ্রাম্য ও অশিক্ষিত পুরুষ মনে করে, স্ত্রীকে অনুগত রাখতে হলে তার প্রতি কঠোর হওয়া প্রয়োজন। নাহলে তারা মাথায় উঠবে। আর সে কারণেই মাঝে মাঝে তাকে প্রহার করা জরুরী।

যত সমস্যাই হোক, যত অত্যাচারই করুক, তবু বাবা-মা চায়না মেয়ে স্বামীকে তালাক দিক ডিভোর্সের কারণে সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে।
বাবা বা ভাইরা মেয়ে ও তার সন্তানদের আর্থিক দায় নিতে চায়না, এমনিতেই আমাদের দেশের মেয়েদের ভাল বিয়ে হওয়া সহজ নয়। তার উপর মেয়ে অসুন্দর, বেকার বা ডিভোর্সি হলে তো আরোই সমস্যা।

মাথার উপরে বাবা, স্বামী বা ছেলে, মানে কোন পুরুষের ছায়া না থাকলে মেয়েরা আরো বেশী আক্রমণযোগ্য হয়ে যায়। তাই ছেলে সন্তান আমাদের সব পরিবারে খুব বেশী কাংখিত। তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সে আশ্রয়, দেখাশোনা, খাওয়া- পরা - সমাজ ও ধর্মমতে এসব দ্বায়িত্ব মূলতঃ ছেলেদের। তাই সব পরিবারে ছেলে সন্তান এত বেশী প্রয়োজন।

নারীবাদী, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া, এনজিওগুলো এবং মানবতাবাদীরা প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ, চিৎকার, লেখালেখি করছে নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, বৈষম্য, নির্যাতন এগুলো বন্ধ করার জন্য। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তেমন কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এত লেখাপড়া শিখিয়েও মানুষের মানসিকতার মোটেই পরিবর্তন করা যাচ্ছেনা।

কেন মেয়েদেরকে শুধুই ভোগের সামগ্রী মনে করা হয়? কেন নির্যাতন ও বৈষম্য করা হয়? কেন মেয়েদেরকে 'মানুষ' ভাবা হয়না? এক কথায় এর উত্তর - এজন্য দায়ী পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা।

মেয়েদের প্রতি ছেলে ও মেয়েদের হীন মানসিকতা তৈরী হয় কখন থেকে?
এর শুরু হয় কিভাবে? কেন, কখন, কিভাবে একটি ছেলে মেয়েদেরকে 'মানুষ' না ভেবে তার অধীনস্ত নীচু শ্রেণীর ফালতু জীব ভাবতে শুরু করে?

আসুন জানি।

প্রতিটা শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান হল তার বাড়ী, তার পরিবার। এটিই তার আচরণ, মূল্যবোধ, ধারণা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিক্ষা.. ইত্যাদির ভিত্তি তৈরী করে দেয়। এই ভিত্তিই তার সারাজীবনের আচরণের মূল চাবিকাঠি। এখান থেকে সে যা শিখবে, সারাজীবন সে তাই করবে। পরিবারে সে ভাল কিছু শিখলে সে ভাল হবে, নাহলে খারাপ।

বিদেশে প্রতিটা বাবা-মা জানে কোন বয়সের বাচ্চাদের সাথে কি আচরণ করতে হবে, বাচ্চাদের সামনে কি কথা বলা যাবে বা যাবেনা। তার সামনে কি আচরণ করা যাবে বা যাবেনা, তা আমরা জানিনা। আমাদের সমস্যার শুরু এখান থেকেই।

ছেলে ও মেয়ে সন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয় তখন থেকেই যখন জানা যায় গর্ভস্থ শিশু ছেলে না মেয়ে। ছোটবেলা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা পরিবার, প্রতিবেশী, স্কুল, খেলার সাথী, শিক্ষক, সমাজ - এদের কাছ থেকে দিনে দিনে একটু একটু করে শেখে যে মেয়েরা নীচু শ্রেণীর জীব, পুরুষের আজ্ঞাবহ, চাকর সমতুল্য এবং কোনমতেই সে পূর্ণাংগ মানুষ নয়। শিশুরা ওদের সামনে বা ওদের সাথে করা বড়দের নানা আচরণ থেকে এমন ধারণা পায়। তাই পরবর্তীতে সেও বড়দের মতই আচরণ করে।
উদাহরণ দেই।
- শিশুরা ছোটবেলা থেকে দেখে যে বাবা মাকে মারে, গালি দেয়। দিতে পারে। এটা তার অধিকার। কিন্তু কোন মা সেটা পারেনা। মা গালি বা মার খেয়েও হাসিমুখে আবার সংসার করে, বাবা অন্যায় করলেও শাস্তি হয়না, তাকে কেউ কিছু বলেনা। বাবার কোন আচরণকেই অন্যায় মনে করা হয়না। তাই বাবার মর্যাদা বেশী, মায়ের কম।

- শিশু জানে, টাকা থাকে বাবার হাতে, মা ভিখারী। যেকোন প্রয়োজনে বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়। বাবার মর্জি হলে দেয়, না হলে দেয়না। না দিলে মায়ের কিছু করার থাকেনা। ভিখারীর আবার মর্জি কি?
চাকুরীজীবী মায়েরাও টাকা ইচ্ছামত খরচ করতে পারেনা। স্বামী করতে দেয় না।

- মা ও বাড়ীর মেয়েরা অনুৎপাদনশীল কাজ করে। অর্থাৎ তারা যত কাজই করুক, তারা সে কাজের কোন পারিশ্রমিক পায়না। মা টাকা আয় করেনা। তাই শিশুরা মায়ের কাজ বা পরিশ্রমকে 'ফালতু' ভাবতে শেখে। মায়ের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন মনে করে।

- বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলে, অর্থাৎ কোন না কোন পুরুষ মেয়েদের পরিচালিত করে। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামত কিছু করতে পারেনা। সে কি করবে, কি করবেনা, সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, নিতে দেওয়া হয়না। তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষ। ফলে শিশুরা মেয়েদেরকে পরনির্ভরশীল বা পুরুষের পরগাছা ভাবে, কখনোই স্বাধীন সত্ত্বা ভাবতে পারেনা।

- মেয়েদেরকে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় সবসময়। যেমন - একা কোথাও যেতে দেওয়া হয়না, সন্ধ্যার পর বাইরে যেতে বা থাকতে দেয়া হয়না, ভীড়ে একা ছাড়া হয়না, ছেলেদের সাথে মিশতে দেয়া হয়না, সব পরিবেশে যেতে দেওয়া হয়না, সব কাজ করতে দেয়া হয়না,.... ইত্যাদি। অর্থাৎ মেয়েরা আক্রমণযোগ্য প্রাণী। যেকোন সময় যেকোন পুরুষ তাকে আক্রমণ করতে পারে, এই ভয় তার মনে বদ্ধমূল করে দেয়া হয় বলে সে নিজেকে দূর্বল ভাবে, ভয়ে ভয়ে সাবধানে চলে এবং নিজেকে গুটিয়ে রাখে।

- নাটক, সিনেমা, খবরে প্রতিনিয়ত শিশুরা দেখে যে, মেয়েরা আক্রান্ত হয়, যার কোন প্রতিকার হয়না। আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই।অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি অন্যায় করে পার পাওয়া যায়। পুরুষ দোষ করলেও সমাজ মেয়েদেরকেই দায়ী করে। যেমন ডিভোর্স হয়েছে শুনেই বলা হয় নিশ্চয় মেয়ের দোষ, রেপ হয়েছে শুনেই বলা হয়, নিশ্চয় খোলামেলা পোষাক পরেছিল, স্বামী মেরেছে শুনেই বলে মারতেই পারে, সে তো স্বামী, দোষ না করলে এমনি মারে? ফলে মেয়েরাও মেনে নেয় যে তার প্রতি নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই ন্যায্য।

- স্বামীর হুকুম ছাড়া স্ত্রী কিছু করতে পারেনা। ধর্মও তাই বলেছে। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া দানও করতে পারবেনা। ধর্ম স্বামীকেও স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ করতে বলেছে। তবে স্বামী সেটা না করলে সমাজ তেমন আপত্তি করেনা। তাই পুরুষ তা করার প্রয়োজন অনুভব করেনা।

- সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাবা নেন। তার মতই সব। মায়ের মত গুরুত্বহীন। তাই শিশুরা ধরেই নেয়, বাবার বুদ্ধি বেশী, মায়ের বুদ্ধি কম। মেয়েমানুষের বুদ্ধি কম, এটা পরিবার-সমাজে সবাই জানে, মানে। তাই মেয়েদের মতের কোন দাম দেয়া হয়না।

- সব ধর্মে বহুবিবাহ জায়েজ। কোন কারণ না দেখিয়েও স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া যায়, না দিয়েও একাধিক বিয়ে করা যায়। তাই বহু স্বামী বউ ছেড়ে গিয়ে আবার বিয়ে করে, করতে পারে। তাতে স্বামীর কোন শাস্তি হয়না। যেকোন বয়সী পুরুষ খুব সহজে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। কিন্তু মেয়েরা পারেনা, বিশেষ করে সন্তান থাকলে তো আরোই পারেনা।

- স্ত্রী নিজেকে স্বামীর অধীনস্ত মনে করে, ভয় পায়, স্বামী অসন্তুষ্ট হতে পারে, এমন কোন কাজ নিজে করেনা, সন্তান বা অন্য কাউকে করতে দেয়না। মা বাচ্চাকে বলে, "এটা কর বা ওটা করোনা, বাবা রাগ করবে।" ফলে শিশু বোঝে, পরিবারে পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ, তার কথাই শেষ কথা।

- বাবা মালিক, মা চাকর। বাবাকে না খাইয়ে মা খায়না, খেতে পারেনা। সব ভাল খাবার বাবা, ছেলে, বাড়ীর গুরুজনদের দিয়ে তারপর মেয়েদের দেয়। সবার খাওয়া হয়ে গেলে মা নিজে হাসিমুখে যা থাকে তাই খায় বা কখনও কখনও বাসি বা উচ্ছিষ্ট খাবার খায়। মায়েরা কখনোই একসাথে খায়না। সবার জামাকাপড় কিনে তারপর মায়ের জন্য কেনে। ফলে বেশীরভাগ সময় মায়েদের জন্য কেনাকাটা হয়না। সবার প্রয়োজন জরুরী, মায়েরটা ছাড়া।

- ছুটির দিনে বাবা টিভি দেখে, আরাম করে। মা সেদিন তার আরামের জন্য বিশেষ খেয়াল রাখে, ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে, তার কাপড় কেচে দেয়,, চুল কলপ করে দেয়। রোজ কাজ থেকে ফিরেও বাবা আরাম করে। অথচ মায়ের কোন ছুটি নেই। তার কোন বিনোদনেরও প্রয়োজন নেই। কারণ সে সারাদিন বাড়ীতে বসে বসে আরাম ছাড়া আর তো কিছু করেইনা! চাকরী বা কাজ করলেও তার রোজকার সংসারের কাজে আর কেউ তাকে সাহায্য করেনা।

- আমাদের সমাজের নিয়ম অনুসারে কিছু কাজ ছেলেদের, কিছু কাজ মেয়েদের। তুলনামূলকভাবে মেয়েদের কাজগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ ও বোরিং। রান্না, কাচা, বাচ্চা সামলানো, পরিবারের সবার দেখাশোনা.. ইত্যাদি সব কাজ করতে গিয়ে সে অবসর পায়না। দিনরাত ব্যস্ত। পুরুষরা কাজ বা চাকরী শেষে বাড়ী ফিরে আরাম করে, বৌ-মেয়ে-বোন-মা তার সেবা করে, কারণ সে সংসার চালানোর জন্য টাকা আনে।

- মেয়েরা সংসার, বাচ্চা সামলিয়ে সময় পায়না। ফলে তার সৃজনশীলতা থাকলেও প্রকাশ পায়না। ধীরে ধীরে সে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনা, সারাজীবন পরনির্ভরশীল থেকে যায়। পুরুষ ইচ্ছে করে মেয়েদের অর্থ-সম্পদ করায়ত্ব করে যাতে মেয়েরা তাকে ছাড়া একা বাঁচতে না পারে।

- হিন্দু মেয়ে বিধবা হলে গহনা-শাঁখা-সিঁদুর খুলে নেয়া হয়, চুল কেটে দিয়ে কুশ্রী করা হয় যাতে কেউ তাকে পছন্দ না করে, বিয়ে করতে না চায়। যৌন চাহিদা অবদমনের জন্য ধর্মের দোহায় দিয়ে বিধবাদের নিরামিশ খাওয়ানো হয়। রংগীন পোষাক, রূপচর্চা সব নিষিদ্ধ। মুসলিমদের মধ্যেও বিধবাদের গহনা পরা, রঙীন পোষাক পরা, বিয়ে- উৎসবে যাওয়া ভাল চোখে দেখা হয়না। অর্থাত স্বামী ছাড়া সমাজে মেয়েদের অবস্থান দূর্বল ও নীচু হয়, তার সব চাওয়া-পাওয়া, ভাললাগা-মন্দলাগা গুরুত্বহীন হয়ে যায়। ফলে মেয়েরা বাধ্য হয় যেকোন মূল্যে পুরুষের সাথে, তার ছত্রছায়ায় থাকতে।

- ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরকে বিয়ে করে সংসার করার জন্য তৈরী করা হয়। তারা পড়াশুনা, চাকরী, রূপচর্চা, শরীর ঠিক রাখা- এসবই পুরুষের জন্য করে যাতে তার ভাল বিয়ে হয়। অর্থাৎ মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল ভাল বিয়ে হওয়া। অন্য কথায় ভাল আশ্রয় পাওয়া। নিজেকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন চেষ্টাই সে করেনা। কারণ সে জানে, একা সে টিকতে পারবেনা, তাকে টিকতে দেয়া হবেনা।

- ছোটবেলা থেকেই সব ভাল জিনিসটা বরাদ্দ থাকে ছেলেদের জন্য। সবসময় ছেলের সুবিধার কথা আগে ভাবা হয়, পরে মেয়েদের। যত্ন ও ভালবাসাও ছেলের জন্যই বেশী। ফলে মেয়েরা নিজেদেরকে ছেলেদের তুলনায় কম কাঙ্খিত ও কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে বাধ্য হয়।

- মেয়েরা ধর্ষিত বা শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হলে আমরা গোপন করি। কারণ মেয়েটিকেই সবাই অস্পৃশ্য মনে করবে, তার ভাল বিয়ে হবেনা, তার পরিবারের বদনাম হবে। অথচ যারা অন্যায় করল, তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হয়না। এটিও নারীকে মানসিকভাবে ছোট ও দূর্বল ভাবতে শেখায়। একটি মেয়ের সম্ভ্রম চলে যাওয়া মানে সমাজে সে অপাংতেয়। পচে যাওয়া খাবারের মত, যা কেউ খেতে চায়না। পুরুষ রেপ করলে, পতিতালয়ে গেলে, পরকীয়া করলে, প্রেমিকার সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করলেও তার কিছু হয়না, তাকে কেউ কিছু বলেনা। দিব্বি আবার বিয়ে করতে পারে, তার মান এতটুকু কমেনা। কিন্তু মেয়েরা সমাজের চোখে একবার ভ্রষ্টা খেতাব পেলে তার বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়।

- সব খারাপ বা নেতিবাচক ঘটনার জন্য মেয়েদেরকে দায়ী করা হয়। যেমন- সন্তান ফেল করলে, বখে গেলে, দোষ করলে, ভুল করলে, প্রেম করলে, চুরি করলে... তার দায় মায়ের। কারণ বাবা আয় করেন, তাই বাকী আর কিছু সে করবেনা। তার কাছে কেউ কিছু আশাও করেনা। সন্তান লালন-পালন, পড়াশোনা, সব দায় একা মায়ের। বাচ্চাদের প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং এর টাকা দিতে বাবাদের আপত্তি থাকেনা। কিন্তু যে মা দিনের পর দিন বাচ্চার পিছনে পরিশ্রম করে, তাকে ঈদে, পূজায় বা বিয়েবার্ষিকীতে শাড়ী দিতে গেলে টাকা ফুরিয়ে যায়। শিশুরা এসব দেখে দেখে মেয়েদের অশ্রদ্ধা করতে শেখে। ছেলে শিশুরা নিজেদেরকে বাবার মত ক্ষমতাধর ভাবতে শেখে আর মেয়েরা নিজেদেরকে দূর্বল, পরনির্ভরশীল ও হেয় ভাবতে শেখে।

ছোটবেলা থেকেই ছেলে ও মেয়েদের আলাদা রাখা হয়, আলাদা খেলা, আলাদা শোয়া, আলাদা খাবার, আলাদা সুবিধা..। আলাদা স্কুল, কলেজ। এমন কি একই স্কুলের ক্লাসেও ছেলে-মেয়ে  আলাদা  আলাদা বেঞ্চে বসে।

এ এক আজব প্যারাডক্স। ছেলেদের দ্বারা আক্রান্ত হবার ভয়ে বা প্রেমে পড়ার ভয়ে ছেলেমেয়েকে অভিভাবকরা একসাথে রাখেনা। আবার একসাথে রাখেনা বলেই মেয়েদের প্রতি ছেলেদের আকর্ষণ, লোভ, আগ্রহ কমেনা। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, গোপন ও অসহজলভ্য কোনকিছুর প্রতি মানুষের কৌতুহল, আগ্রহ সবচেয়ে বেশী। উন্নত দেশগুলোতে ছেলেমেয়ে একসাথে চলাফেরা, পড়া, কাজ করে। মেয়েরা খোলামেলা পোষাকে চলে। তাই ওসব দেশের ছেলেরা মেয়েদের দিকে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় না, মেয়েদেরকে অপমান, নির্যাতন করেনা।

উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার সমান। একজন ছেলে যা যা করতে পারবে, একটি মেয়েও তাই। কোন মেয়েকেই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করা হয়না। জোর করে কোন অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিতও করা হয়না। মেয়েরাও মানুষ। পছন্দ না হলে মেয়েরাও ডিভোর্স করতে পারে, আবার বিয়েও করতে পারে, লিভ টুগেদার করতে পারে, কুমারী মেয়ে মা হতে পারে... ইত্যাদি।

আমরা মেয়েদেরকে মানুষ ভাবিনা। প্রতি পদে পদে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক কারণের দোহায় দিয়ে মনে করিয়ে দেয়া হয় যে আমি মেয়ে। তাই পরিবারে ও সমাজে নারীদের অবস্থান, অধিকার, সুযোগ, যোগ্যতা, ক্ষমতা, ইচ্ছার স্বাধীনতা, ...  ইত্যাদি সব কম। এগুলো কমই থাকবে। কারো বেশী হলে সেটা পুরুষরা সহ্য করতে পারেনা।

উন্নত দেশের লোকেরা প্রতিটা ছুটিতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যায়। এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়, বিনোদনও হয়। আমাদের মত গরীব দেশের পুরুষরা সেক্সকে বিনোদনের একমাত্র  মাধ্যম মনে করে। একারণেই মেয়েদের শরীরটা তাদের এত পছন্দ। এজন্যই এরা বহুগামীও বটে।

বিদেশে যে কোন ছেলে বা মেয়ে যেকোন কাজ করে নিজের জীবন চালাতে পারে, তাই তারা স্বাধীন। মেয়েরাও সহজে কাজ পেতে পারে, তারাও চাইলে একা থাকতে পারে, বাঁচতে পারে। নিজের যোগ্যতা থাকলে পুরুষের সাহায্য ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তাই তাদের অত ভাবতে হয়না।

বিদেশে সব কাজ সবার। রান্না, ঘর-বাগান-গাড়ী-টয়লেট-কিচেন পরিস্কার করা, সন্তান প্রতিপালন- ইত্যাদি সব কাজ উভয়ে মিলে করে। তাই মেয়েরা কাজ বা জব করতে পারে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।

আমাদের দেশের নারীদের প্রতি অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূল কারণ হল মেয়েদের আর্থিক স্বাবলম্বীতা না থাকা। তাই এ অবস্থা থেকে মেয়েদের উত্তোরণ ঘটাতে হলে প্রথমে মেয়েদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে, যেটা পুরুষরা হতে দিতে চায়না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে  দেয়ওনা। যেহেতু মেয়েদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আসবেনা, তাই মেয়েরা কোনদিন স্বাধীন বা মানুষও হবেনা। এও এক আজব প্যারাডক্স !!!



বন্ধুরা, সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা। ভাল থাকুক নারী ও নারীর জন্ম দেয়া পুরুষ ও কাপুরুষরা।

রিপোস্ট






মন্তব্য ৫০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৪

শোভ বলেছেন: "এখনও অনেক গ্রাম্য ও অশিক্ষিত পুরুষ মনে করে, স্ত্রীকে অনুগত রাখতে হলে তার প্রতি কঠোর হওয়া প্রয়োজন। নাহলে তারা মাথায় উঠবে। আর সে কারণেই মাঝে মাঝে তাকে প্রহার করা জরুরী। "

এটা কোরানেও আছে স্ত্রীদের প্রহার করার কথা , সুরা আন নিসার ৩৪ নং আয়াতে তাই মুসলমান স্বামীরা একটু বেশিই প্রহার করে । কিন্তু অন্য ধর্মের তারা কেন করে জানিনা ।

০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: অনুগত রাখতে, দাপট দেখাতে, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে।

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২| ০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

বিজন রয় বলেছেন: বাংলাদেশ যেহেতু অন্ধ ধমীয় হয়ে উটছে, সে হিসাবে আপনার শিরোণাম ঠিক আছে।

তবে সব পুরুষ এক নয়।

ভাল পোস্ট।

০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: সব পুরুষ আমি বলিওনি। বলেছি অধিকাংশ পুরুষ ( প্রথম প্যারার শেষ লাইন)।

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। খুব খুব ভাল থাকুন।

৩| ০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯

স্বতু সাঁই বলেছেন: আমিও ভাবছি, নির্যাতিত পুরুষদেরকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিবো। কিন্তু সমস্যা হলো আমি এখনও প্রথম পাতায় লিখার অনুমতি পাই নি।

০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: পুরুষ নির্যাতন নিয়েও আমার লেখা আছে। পরে পোস্ট দেব। আপনি আপনার ব্লগেই দিন। লেখা ভাল হলে প্রথম পাতায় না এলেও আপনার ব্লগে গিয়েই পাঠক পড়বে।

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৪| ০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:১৫

স্বতু সাঁই বলেছেন: দেখি আর কিছুদিন

০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: লিখতে থাকুন এবং পোস্ট করতে থাকুন। প্রথম পাতায় এলে রিপোস্ট দেবেন।

ধন্যবাদ।

৫| ০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২১

নাদিম আহসান তুহিন বলেছেন: শিক্ষিতের মধ্যেই অমানুষ পুরুষ আছে, অশিক্ষিতরা তো অশিক্ষিতই,,,সর্বোপরি লাস্ট লাইনটার কথা বলি,,
মেয়েদের আর্থিক সাবলম্বী হওয়ার কথা বলছেন, মেয়েদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এলেই কী উল্লেখিত সব সমস্যা নিরসন সম্ভব?

০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমি মনে করি, মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে পুরুষের নির্যাতন অনেকাংশে কমে যাব। যেমন, পরিবারে যেসব নারীরা আয় করেন, তাদেরকে সবাই সমীহ করে। সমাজে স্বাবলম্বী মেয়েদেরকে সহজে কেউ ঘাটায় না। কারণ আর্থিক স্বাবলম্বী মেয়েরা যেকারো বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পায়না। আর্থিক শক্তি নারী-পুরুষ সবাইকে প্রতিবাদী হতে সাহস যোগায়। তারপরেও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন ও প্রকৃত শিক্ষারর প্রসার না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা পুরোপুরি যাবেনা।

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৬| ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৫

ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: মেয়েরা সব সময় নির্যাতিত হবে...এটাই স্বাভাবিক...এটাই রুল আফ নেচার। প্রাচিন কালে মানুষ কতো সুখি জিবন যাপন করতো, এর একমাতরো কারন ছিলো মেয়েদের পুরুষের ওধিনে থাকা।

০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: wow! amazing!!!!

৭| ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৬

আল ইফরান বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
কিন্তু আর্থিকভাবে সামর্থ্য অর্জন করলেই নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে সেটাতে আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না।
নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার হার বিগত কয়েক দশক ধরেই বেড়ে চলেছে, তার সাথে সাথে নির্যাতনের হার কিন্তু কমেনি বরং বেড়েই চলেছে আশংকাজনক ভাবে। তার মানে আপনাদের কাছে ক্ষমতায়নের অন্যতম প্যারাডিম হচ্ছে অর্থ।
ক্ষমতায়নের কথা বলার আগে 'ক্ষমতা' কি সেইটার উপযুক্ত বোধগম্যতা অত্যন্ত জরুরী বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
আপনার অভিমত জানতে চাই।

০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: বন্ধ না হলেও কমে যাবে নিশ্চিত। আর্থিকভাবে সাবলম্বী হলে মেয়েরা নির্যাতিত হতে হয়, এমন সম্পর্কে থাকবেনা। প্রয়োজনে একা বাঁচবে, প্রতিবাদ করবে। রাজনৈতিক নেত্রী বা অফিসের নারী বসের পিছনে হুজুর হুজুর করা পুরুষদের দেখলেই বুঝতে পারবেন 'ক্ষমতা' কি।

৮| ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৬

মু রফিকুল ইসলাম বলেছেন: হা হা হা.......।

০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: হাসতে থাকুন, হাসি হৃদয়ের জন্য ভাল। কিন্তু পোস্ট নিয়ে কিছু বললেন না যে!!!

৯| ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৮

মু রফিকুল ইসলাম বলেছেন: বলার কিছুই নেই....

০৮ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: সেটা কিরকম? ভাল, মন্দ, মাঝারি,... কিছু তো বলবেন!!

১০| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৭

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও নির্যাতন কমবে না, যদি না একহাত মেয়ের জন্য তিনহাত ছেলে খোজার প্রবণতা বাদ দেয়া যায়। মেয়ের বেতন হাজার টাকা হলে হাজব্যান্ডের বেতনটা লাখের কম হতে পারবে না। লাখপতির কাছে বৌয়ের হাজার টাকা হাতের ময়লা। মেয়ে যতই পরিশ্রম করে আয়রোজগার করুক না কেন ধনবান স্বামীর কাছে তার কোন মূল্য নেই। উলটা সংসারে সময় না দেয়ার অভিযোগে বঞ্চনা সহ্য করতে হয়।

০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:০৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তারমানে বড়লোক স্বামীদের বউ বেকার হলে কি তারা নির্যাতন করবেনা? সংসারে সময় দিলেই কি কোন মেয়ে নির্যাতন থেকে বাঁচবে? আমার মনে হয়না। যেসব স্বামী নির্যাতন করতে পছন্দ করে, তারা যেকোন আর্থ-সামাজিক স্তরেরই হোক না কেন, তারা নির্যাতন করবেই। বৌ বেকার, সকার, বেতন বা যোগ্যতা কম-বেশী যাই হোক না কেন। যেসব স্বামী বউয়ের চেয়ে কম আয় করে, তারা আরো বেশী নির্যাতন করে নিজের অযোগ্যতা ঢাকার জন্য।

বেশীরভাগ মেয়েরা স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে। কারণ বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে এবং মেয়ে ও তার সন্তানের আর্থিক দায় না নেবার কারণে পরিবার মেয়েদেরকে নির্যাতন সহ্য করে সংসার করতে বাধ্য করে। মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে নিজের ও সন্তানের দায় নিজেই নিতে পারবে, কারো উপর নির্ভরশীল হবেনা। ফলে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোক বা অন্য কারো নির্যাতন সহ্য করবেনা।

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

১১| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:২৮

কুঁড়ের_বাদশা বলেছেন:
আচ্ছা আপু, অনেক সময় খবরে লেখা থাকে যে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়েছে ! এখানে আমার প্রশ্ন ট্রাকের দোষ না, ড্রাইভারের দোষ?

০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৩৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: বেশীরভাগ সময়ে ড্রাইভারের দোষ। কারণ ট্রাক রাস্তায় নামানোর আগে কোন যান্ত্রিক ত্রুটি আছে কিনা, তা দেখাও ড্রাইভারের দ্বায়িত্ব। আর বেশীরভাগ দূর্ঘটনা ঘটে চালকের অদক্ষতা আর ভুলের জন্য।

১২| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৬

কুঁড়ের_বাদশা বলেছেন:
আচ্ছা ঠিক আছে ! এখন আসি আপনার পোষ্টের কথায়, ধরুন আপনার ছেলে ভবিষৎতে একজন দেশের রাষ্টপ্রতিও হতে পারে আবার একজন ধষকও । এখন তাকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব কার?

০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:৪৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন:
"প্রতিটা শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান হল তার বাড়ী, তার পরিবার। এটিই তার আচরণ, মূল্যবোধ, ধারণা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিক্ষা.. ইত্যাদির ভিত্তি তৈরী করে দেয়। এই ভিত্তিই তার সারাজীবনের আচরণের মূল চাবিকাঠি। এখান থেকে সে যা শিখবে, সারাজীবন সে তাই করবে। পরিবারে সে ভাল কিছু শিখলে সে ভাল হবে, নাহলে খারাপ।"

১৩| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:৪৮

কুঁড়ের_বাদশা বলেছেন:
প্রতিউত্তেরর সাথে একমত । তানা হলে কখনো সম্ভব না । ধন্যবাদ ।

০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৪৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

১৪| ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৫৩

সোহানী বলেছেন: আসলে বিদেশের সাথে তুলনা করতে গেলে অনেক কিছুই চলে আসে। আইন, অধিকার, রাস্ট্রীয় সাপোর্ট, সামাজিক সহযোগীতা যা কোন কিছুই আমাদের পক্ষে না। তার উপর আছে ধর্মীয় গোড়ামিঁ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব, সামাজিক বৈষম্য, ও সর্বোপরি শিক্ষার অভাব। তারপর ও আমাদের পথ চলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।

অনেক অনেক ভালোলাগলো লিখাটা ও প্রতিটি সমস্যার দিকে আলোকপাত করা। শতভাগ সহমত লিখায়।

০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৪৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ঠিক। ধন্যবাদ ভাললাগা ও সহমত প্রকাশের জন্য। ভাল থাকুন।

১৫| ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৫৪

কানিজ রিনা বলেছেন: আসলে মেয়েরা যদি শিক্ষীত সাবলম্বী হয়ে
বেকার ছেলেদের বিয়ে করতে শুরু করে।
আর ছেলেদের কাঁধে সংশারের দায়িত্ব্য
দিতে পারলে হয়ত ছেলেরা বুঝত বিনা
পয়সায় মেয়েরা সংশারে কত পরিশ্রম করে।

আর মেয়েরা যখন ধর্ষীত হয় তখন তার
বাপকে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ কেন তার
কোন পাপে তার মেয়ে ধর্ষীত হোল।
পুরুষরা তখনই বুঝে যখন তার বোন কন্যা
নির্যাতিত হয়।
দেখ আলপনা যদি প্রকৃতির জীব জানোয়ারের
দিকে তাকাই তাহলে দেখবা কুকুর কুকুরীর
পিছনে, মোরগ মুরগীর পিছনে দৌড়ায়।
কিন্তু মানুষ বিবেগ তারিত হবে। কিছু মানুষ
জীবজন্তুর বিবেক নিয়ে চলে।
তবে একটা কথা কি জানো নারীরা নিস্পাপ
যখন বাবার ঘরে স্বামীর ঘরে ছেলের ঘরে
মেয়েরা যদি কোনও দৈহিকগত পাপ করে
সেটা বাবা স্বামী ছেলে বহন করবে। তাই
ধর্মীয় দায় দায়ীত্ব্য অনুসারে পুরুষেরই দায়বদ্ধ
তা।
তোমার প্রতিটা লেখায় সমাজের সত্যতা
ফুটিয়ে তুলেছ। কিন্তু পাশ্চাত্ব্য সাধীনতায়
আমি বিশ্বাসী না। তোমার লেখায় ৩৫ প্যারায়
বলেছ কুমারী মেয়েরাও সন্তান ধারন করে
এটা অসভ্য আদিমতা।
যা আমাদের সমাজে চিন্তা করাই যায়না।
এই সাধীনতা যাতে না ঘটে সেই দায়ীত্ব্য
বাবা,ভাই,স্বামীর উপর বর্তায়।
পাশ্চাত্ব্য জঘন্য স্বাধীনতার দায় একটি পুরুষ
কখনও বহন করেনা। কুমারী মেয়েই তার
সন্তানের দায়ীত্ব্য নেয়। এই নোংরা স্বাধীনতায়
শিশুরা বাবা হাড়ায় মা হাড়ায়।
একটা মেয়ের পাঁচটা স্বামী একটা পুরুষের
পাঁচটা বৌ মাঝখানে। শিশুরা নিজের বাপ মা
কোনটা সঠিক করে বলতে পারেনা।
যেমন পতিতা লয়ে মেয়েরা বলতে পারেনা
তার সন্তানের বাবা কে। বাবারাও বলতে
পারেনা কোন সন্তান তার।
একটা সুষ্ঠ মানষীকতার সন্তান পেতে হলে
বাবা মা উভয়ের স্নেহ লালন অপরিহার্য।

পরিবারই সমাজের অবকাঠামো, কয়েকটা
সুষ্ঠ পরিবার মিলে একটি সুষ্ঠ সমাজ ও
প্রতিটা সুষ্ঠ সমাজই সুষ্ট রাস্ট্র। অসংখ্য
ধন্যবাদ তোমাকে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: কুমারী মেয়ের পিতৃত্বের দায় আমাদের দেশেও ছেলেরা নেয়না, (মেয়েদের সাথে সম্পর্ক ঠিকই করে), মেয়েরাই নেয়। পার্থক্য শুধু - বিদেশে কুমারী মাকে কেউ খারাপ চোখে দেখেনা। কারণ তারা জানে ঐ শিশুটির কোন দোষ নেই এবং মেয়েটি একা শিশুটির জন্ম দেয়নি। আমরা ভণ্ডামি করি। একতরফা মেয়েদের দোষ দেই। রাতে পতিতালয়ে যায় সব ধর্ম-গোত্রের পুরুষ, আর দিনের বেলায় চি ৎকার করে গালি দেয় পতিতাদের।

আরো অনেক কথা বলা যায়। আপাতত ধন্যবাদ। খুব খুব ভাল থাকুন।

১৬| ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:০৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: (কথাগুলো নারী বিষয়ক চিন্তা যিনি করছেন/কমেন্ট পাঠককে)
আপনার মানসিকতা যদি হয় ঘর থেকে বেরুলেই সেটা আপনার প্রাপ্তি তাহলে আপনার বিবেচনাবোধে ঘাটতি আছে। সমান অধিকার নাকি নায্য অধিকার? কোনটা চাওয়া উচিত?
নায্য অধিকার হলো গর্ভবর্তী অবস্থায় সর্বাধিক সহযোগিতা পাওয়া, টিনএজ সময়ে ছেলের চেয়েও বেশি পুষ্টিগত চাহিদা পূরণে মা-বাবার বিবেচনাবোধ।
স্ত্রী হিসেবে চাকরি করলে রান্নায় স্বামীর সহযোগিতা, সমানভাবে শেয়ার...

আগের চিন্তাধারার পরিবর্তন করার সময় অনেক আগেই এসেছে। এখন দরকার সেটার বাস্তবায়ন, শুধু সমানাধিকার সমানাধিকার বললে হবে না। প্রয়োজন ও বাস্তবতার নিরীখে পথ চলতে হবে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:০৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: সম্পর্কে আন্তরিকতা থাকলে আর কিছুই লাগেনা। কারণ সংসারে সবাই একে অন্যের পরিপূরক। এই সহজ সত্যটা মেনে নিলেই অনেক সমস্যার সমাধান এমনি এমনি হয়ে যাবে।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন।

১৭| ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:০০

নতুন বলেছেন: আমাদের দেশেও বিদেশের মতন পরিবত`ন হবে তবে সময় লাগবে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:০৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

১৮| ০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: লিখতে থাকুন। গাছ লাগালে ফল ধরেই। সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ঠিক। পরিস্থিতি একদিনে বদলায়না। ধন্যবাদ।

১৯| ০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:০১

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আপনি এবং কানিজ রিনার লেখায় ধার আছে, আপনাদের কলম অবিরত চলুক।

০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৪০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তাই? অশেষ ধন্যবাদ। জ্বি, আমি নিয়মিত লিখছি। ব্লগ ছাড়াও পেপারে, অনলাইন জার্নালে, ফেসবুকে লিখছি। যদিও মেয়েদের লেখালেখি করা সহজ নয়। চাকরী, সংসার, বাচ্চা,... - সব সামলিয়ে বাড়তি সময় বের করা যথেষ্টই কঠিণ। তবু মনের একটা চাহিদা আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাধ্য করে। দোয়া করবেন। ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২০| ০৯ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭

মানবী বলেছেন: সুন্দর বিস্তারিত পোস্ট! কিছু বিষয়ে কনফিউশন আছে....

"- স্বামীর হুকুম ছাড়া স্ত্রী কিছু করতে পারেনা। ধর্মও তাই বলেছে। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া দানও করতে পারবেনা। ধর্ম স্বামীকেও স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ করতে বলেছে। তবে স্বামী সেটা না করলে সমাজ তেমন আপত্তি করেনা। তাই পুরুষ তা করার প্রয়োজন অনুভব করেনা।

- সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাবা নেন। তার মতই সব। মায়ের মত গুরুত্বহীন। তাই শিশুরা ধরেই নেয়, বাবার বুদ্ধি বেশী, মায়ের বুদ্ধি কম। মেয়েমানুষের বুদ্ধি কম, এটা পরিবার-সমাজে সবাই জানে, মানে। তাই মেয়েদের মতের কোন দাম দেয়া হয়না।

- সব ধর্মে বহুবিবাহ জায়েজ। কোন কারণ না দেখিয়েও স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া যায়, না দিয়েও একাধিক বিয়ে করা যায়। তাই বহু স্বামী বউ ছেড়ে গিয়ে আবার বিয়ে করে, করতে পারে। তাতে স্বামীর কোন শাস্তি হয়না। যেকোন বয়সী পুরুষ খুব সহজে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। কিন্তু মেয়েরা পারেনা, বিশেষ করে সন্তান থাকলে তো আরোই পারেনা।"


- এসব চর্চা এখনও আমাদের দেশে তেমন ব্যাপক ভাবে চলে কিনা বুঝতে পারছিনা। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায়।

পাশ্চাত্যের দেশে যে পোস্টে উল্লেখিত দোষ সমূহ থেকে সকল পুরুষ মুক্ত এমন নয়, সংখ্যালঘু কিছু ক=লোক সব দেশে এমন সংকীর্ণ হয়েই থাকে। বিশহব জুড়ে নারী বৈষম্যের মুখোমুখি নাহতো তাহলে "হুইমেন'স মার্চ" এর মতো কোন কিছুর প্রয়োজন হতো না।


" হিন্দু মেয়ে বিধবা হলে গহনা-শাঁখা-সিঁদুর খুলে নেয়া হয়, চুল কেটে দিয়ে কুশ্রী করা হয় যাতে কেউ তাকে পছন্দ না করে, বিয়ে করতে না চায়। যৌন চাহিদা অবদমনের জন্য ধর্মের দোহায় দিয়ে বিধবাদের নিরামিশ খাওয়ানো হয়। রংগীন পোষাক, রূপচর্চা সব নিষিদ্ধ। মুসলিমদের মধ্যেও বিধবাদের গহনা পরা, রঙীন পোষাক পরা, বিয়ে- উৎসবে যাওয়া ভাল চোখে দেখা হয়না। অর্থাত স্বামী ছাড়া সমাজে মেয়েদের অবস্থান দূর্বল ও নীচু হয়, তার সব চাওয়া-পাওয়া, ভাললাগা-মন্দলাগা গুরুত্বহীন হয়ে যায়। ফলে মেয়েরা বাধ্য হয় যেকোন মূল্যে পুরুষের সাথে, তার ছত্রছায়ায় থাকতে।"

- এই রীতি মনে হয় শিক্ষিত মহল ধীরে ধীরে পরিহার করে চলেছে। এমন একাধিক হিন্দু বিধবা দেখেছি যাঁরা আর দশজনের মতো স্বাভাবিক রঙীন পোশাক পরছে, সাধারণ খাবারই খাচ্ছে! যারা এখনই প্রাচীন রীতিটি আঁকড়ে আছে তা নিঃসন্দেহে আশংকা জনক।

"আমাদের দেশের নারীদের প্রতি অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূল কারণ হল মেয়েদের আর্থিক স্বাবলম্বীতা না থাকা। তাই এ অবস্থা থেকে মেয়েদের উত্তোরণ ঘটাতে হলে প্রথমে মেয়েদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে, যেটা পুরুষরা হতে দিতে চায়না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেয়ওনা। যেহেতু মেয়েদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আসবেনা, তাই মেয়েরা কোনদিন স্বাধীন বা মানুষও হবেনা। এও এক আজব প্যারাডক্স !!! "

- রুমানা মন্জুর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা, যিনি শুধু স্বাবলম্বী নন, উচ্চশিক্ষার্থে কানাডা গিয়েছিলেন। তাঁর করুণ পরিনতি কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। দু দিন আগে ভারতের আরেকটি সংবাদ, ভদ্রমহিলা সিভিল ইন্জিনীয়রিং এ পি এইচ ডি করছিলেন, তা সত্ত্বেও স্বামী শশুড়বাড়ির গন্জ্ঞনা আর নির্যাতন সইতে না পেরে ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে আত্মহত্যা করেন। ভেবে দেখুন, স্বামী সংসার থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও কতোখানি নিপীড়নের শিকার হলে তিনি হোস্টেলে বসে আত্মহনন করেন।
আবার অনেকে আছেন খুব শিক্ষিত বা প্রতিষ্ঠিত নন অথচ নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে প্রতিবাদী হতে জানেন, আত্মরক্ষা করতে জানেন। সব কিছুর পর্‌ও স্বীকার করতেই হয় শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।


"- সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাবা নেন। তার মতই সব। মায়ের মত গুরুত্বহীন। তাই শিশুরা ধরেই নেয়, বাবার বুদ্ধি বেশী, মায়ের বুদ্ধি কম। মেয়েমানুষের বুদ্ধি কম, এটা পরিবার-সমাজে সবাই জানে, মানে। তাই মেয়েদের মতের কোন দাম দেয়া হয়না।"
- ইন্টারেস্টিংলি শুধু আমার আত্মীয় স্বজন নয়, পরিচিত জনদের প্রায় সকলের মাঝেই দেখি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংসারে মা অথবা স্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এমনকি বাংলাদেশে বন্ধু বান্ধব পরিচিতদের মাঝেও এমনটিই দেখেছি।

"- মেয়েরা ধর্ষিত বা শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হলে আমরা গোপন করি। কারণ মেয়েটিকেই সবাই অস্পৃশ্য মনে করবে, তার ভাল বিয়ে হবেনা, তার পরিবারের বদনাম হবে। অথচ যারা অন্যায় করল, তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হয়না। এটিও নারীকে মানসিকভাবে ছোট ও দূর্বল ভাবতে শেখায়"

- এই বিষয়ে পুরোপুরি সহমত। আমাদের দেশে এক ভয়াবহ ব্যাধির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে, আরএই ভাবনাতেই আমরা উন্নত বিশ্বের চেয়ে হাজার মাইল পিছনে পরে আছি। শুধু পরিবার পরিজন আড়াল করে রাখে এমন নয়, পুলিশের কাছে মামলা করতে গেলেও তাঁদের হাজার রকমের প্রশ্ন করে নিশ্চিত করতে হয় মেয়েটি "খারাপ মেয়ে" না ভালো মেয়ে- এটা কেমন কথা। একজন বারবণিতাকেও ধর্ষনের অধিকার কারো নেই, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে বিনা বাক্য ব্যায়ে তার অভিযোগও গ্রহন করতে হবে।

এই সমস্যার সমাধান কিভাবে সম্ভব জানা নেই। গত ২৭ বছরের ২৫ বছর দুজন নারী দেশ পরিচালনা করছেন অথচ আজও আমাদের দেশের মেয়েদের এধরনের বৈষম্য আর অন্যায়ের শিকার হতে হয়- খুব খুব দুঃখজনক।

পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ আলপনা তালুকদার।

(দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য দুঃখিত!)

০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, উচ্চবিত্তদের মধ্যে এখন বউবাচ্চাদের মতের দাম দেবার প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে উচ্চবিত্তদের মধ্যেও পুরুষদের মতই প্রাধান্য পায়। আমি লিখেছি মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের কথা। সংখ্যায় এরাই বেশী।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ম্যাডাম ক'মাস আগে সুইসাইড করেছেন। ওনার স্বামীও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রেম করে বিয়ে। বিয়ের আগে থেকেই স্বামীর চরিত্র খারাপ ছিল। বিয়ের পরেও সেটা চলতে থাকে। কাজের মেয়েও বাদ যায়না। এই নিয়ে নানা নির্যাতন। ছেলেকেও মারে। এমন অবস্থায় স্বামী এক ছাত্রীর সাথে সম্পর্কে জড়ালে ম্যাডাম স্বামীর ঘর ছেড়ে শিক্ষকদের ডরমেটরীতে ওঠেন। ছেলেকে নিজের কাছে আনতে দেয়নি স্বামী। একটা রুমে একা থাকতেন। পরে সুইসাইড করেন। আরেকটা গবেষণায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ম্যাডাম বলেছেন, তিনি তাঁর বেতন নিজে তুলতে পারেননা। চেক সই করে দেন, স্বামী সব টাকা তুলে নেয়। না দিলে নানা নির্যাতন। আমরা অনেক কথা গোপন করি। ঐ ম্যাডাম কখনই বলবেননা যে, সংসারে তাঁর মতের কোন দাম নেই। ফলে অনেক রূঢ় সত্য আড়ালেই থেকে যায়।

আরো অনেক কথা লেখা যেত। আপাতত থাক।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২১| ০৯ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:১৫

চানাচুর বলেছেন: খুব সুন্দর করে প্রতিটা জিনিস অত্যন্ত গুছিয়ে লিখেছেন। মেয়েরা আসলেই মানুষ হতে পারেনি :(

০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২২| ০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৪

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আপনি কষ্ট করছেন, আমরা যদি আপনার কষ্টের মূল্যায়ন না করি তবে কার্পণ্য হয়ে যায়। আমার পরিবারের আমি ছাড়া আর সব নারী। সুতরাং নারী বিদ্রোহের কবলে পড়লে আমার উপায় নেই। সংগত কারণে আমি নারীদের সমীহ করি। এভাবেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের সমিহ আদায় শিখতে হবে, তবে তারা চালকের আসনে উঠতে পারবে এবং তাদের জীবন সাচ্ছন্দ হবে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:১০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা!!! ভাল থাকুন, ভাল রাখুন।

২৩| ০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯

কাউয়ার জাত বলেছেন: নারীবাদীদের কথামত চললে সমাজে কোনদিনই শান্তি আসবে না।
কিছু তোতাপাখির বুলি শিখিয়ে নারীদের পুরুষের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। শিখানো হচ্ছে ধর্ম, পিতৃতন্ত্র এবং পুরুষতন্ত্র এই তিন হচ্ছে নারীর প্রধান শত্রু।
সবকিছুতে তুলনা করার মানসিকতা তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। কিছু মিডিয়ার কাজ হচ্ছে, "নারীরা কেন ফুটবল খেলায় পিছিয়ে" টাইপের গবেষণা প্রকাশ করে উস্কানি দেয়া।
ফলাফলে কি হবে? এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটি নর-নারীর জন্মের পেছনে একজন পুরুষ এবং একজন নারীর অবদান রয়েছে। আজকের নারীরা তাদের স্বাধীনতার মডেল মনে করছে পশ্চিমা বিশ্বকে। অথচ ওখানে নারীদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। হুমায়ুন আহমেদ তার আমেরিকান সফরনামায় লিখেছেন যে, আমেরিকায় আগামী ১০০ বছরেও কোন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারবেনা। এখানে একটি মেয়ের জীবনের সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা থাকে চিয়ার লিডার হওয়া।

নারীবাদীরা এদেশীয় সহজ সরল মেয়েদের আবেগকে পুজি করে এদেশের মেয়েদের আমেরিকার মত "পর্নস্টার হয়ে গর্বিত" ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়।

এজন্যই কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ এবং "মেয়েরা কোনদিনই মানুষ হবেনা" টাইপের উস্কানিমূলক পোস্ট প্রদান।
আপনি লিখেছেন, আমাদের দেশে একজন মেয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে কখনও না কখনও কোন না কোন পুরুষের লোভী হাত দ্বারা অপমানিত হয়নি।
আমি চ্যালেঞ্জ করছি আপনার উপরোক্ত দাবী ডাহামিথ্যা। আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েই কোনদিন লোভী পুরুষের হাতে অপমানিত হয়নি। এ ধরণের ঘটনার শিকার নারীই বরং সংখ্যায় কম হবে। যদিও দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারি নি।
কিন্তু আপনারা নারীর কল্যাণকামী নন। আপনাদের ভিন্ন এজেন্ডা রয়েছে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন:




"সুখী হবার অব্যর্থ কৌশল" শিরোনামের আমার আরেকটি লেখায় আমি লিখেছিলাম - "মনে রাখা প্রয়োজন, স্বামী বা স্ত্রীর, উভয়দিকের সম্পর্কগুলো অবিচ্ছেদ্য এবং পরিপূরক। তাই সেগুলো সচল ও ভাল রাখা খুব জরুরী। মন থেকে স্বামী-স্ত্রী-উভয়ের শ্বশুরপক্ষের লোকজনকে মেনে নিন যে, সে সম্পর্কটা আপনার জন্য অপরিহার্য। তাই যেকোন মূল্যে সেটাকে টিকিয়ে বা ভাল রাখার গরজ আপনার বেশী হওয়া ভাল। তাহলে অপর প্রান্তের মানুষটিও আপনার কাছে আসবে, আপনার ভাল লাগবে। এক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা বেশী।"

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া আর আপনজন দ্বারা নির্যাতিত হওয়া - দুটো এক জিনিস নয়। বাংলাদেশে আগে শতকরা ৬৪ ভাগ, বর্তমানে ৮০ ভাগ নারী নিজগৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত।

আপনি ছাড়া একজন মেয়েও যদি বলে, আমি যা বলেছি তা মিথ্যে। বাংলাদেশের সব মেয়েরা কোন না কোন পুরুষের নোংরা হাত দ্বারা অপমানিত হয়না - তাহলে মেনে নেব, আমি ভুল বলেছি। আমি জানি, একজন মেয়েও বলবেনা। আপনার স্ত্রী, বোন, কন্যা, বান্ধবী,.... যে কাউকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন। তবে হ্যাঁ, অনেকেই সেটা লজ্জায় স্বীকার করতে চায়না।

আপনার অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি মেয়েদেরকে পুরুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা কখনোই, আমার কোন লেখাতেই করিনি, করবনা। আমি লিখি নারীর প্রতি অকারণ নির্যাতন বন্ধ করার জন্য, নারীর প্রতি কোন অন্যায় কেউ করলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য এবং সর্বোপরি স্বামী-স্ত্রীর শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের জন্য।

ধন্যবাদ।

২৪| ০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৫

কাউয়ার জাত বলেছেন: আপনার কথাই সঠিক।
অতএব যেসব মেয়ে বলবে, তারা পুরুষের নোংরা হাতে একবার হলেও অপমানিত হয়েছে, মনে করতে হবে তারা সত্য বলেছে।
আর যেসব মেয়ে অস্বীকার করবে, মনে করতে হবে তারা লজ্জায় পড়ে মিথ্যা বলেছে।

০৯ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: "কেউ প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কখনও ক্ষমতা বা জোর খাটিয়ে, কখনও শিক্ষিতরা ভদ্রতার মুখোশে মেয়েদের ব্যবহার করে। চোখ টেপা, ঠোঁট ও চোখের নোংরা অভিব্যাক্তি, অশ্লীল কথা, ... কত রকমভাবে মেয়েদেরকে অপমান করা যায় !! মেয়েদেরকে অপমান করতে পারলে পুরুষরা খুশী হয়, অপদস্থ বা ব্যবহার করতে পারাকে কৃতিত্ব মনে করে, গর্ব করে বন্ধুদের কাছে বলেও। অসম্ভব বন্য তৃপ্তি পায়, যখন দেখে তাদের অপমানে কোন মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে।"

২৫| ০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৮

কাউয়ার জাত বলেছেন: মোটকথা মাথা দিয়ে ঠেলে হোক আর জুতা দিয়ে ঠেলে হোক আমাদের স্বীকার করতেই হবে এদেশের ৮ কোটি মেয়ের প্রত্যেকেই জীবনে একবার হলেও পুরুষের নোংরা হাতে অপমানিত হয়েছে।
হ্যাপী?

০৯ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: "কেউ প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কখনও ক্ষমতা বা জোর খাটিয়ে, কখনও শিক্ষিতরা ভদ্রতার মুখোশে মেয়েদের ব্যবহার করে। চোখ টেপা, ঠোঁট ও চোখের নোংরা অভিব্যাক্তি, অশ্লীল কথা, ... কত রকমভাবে মেয়েদেরকে অপমান করা যায় !! মেয়েদেরকে অপমান করতে পারলে পুরুষরা খুশী হয়, অপদস্থ বা ব্যবহার করতে পারাকে কৃতিত্ব মনে করে, গর্ব করে বন্ধুদের কাছে বলেও। অসম্ভব বন্য তৃপ্তি পায়, যখন দেখে তাদের অপমানে কোন মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে।"

গায়ে হাত না দিয়েও (পুরুষের নোংরা হাত বলতে শুধু হাত নয়) মেয়েদের অপমানিত করা যায়।

একজন মেয়ে ব্লগারও যদি বলে, আমি যা বলেছি তা মিথ্যে। বাংলাদেশের সব মেয়েরা কোন না কোন পুরুষের নোংরা হাত, চোখ টেপা, ঠোঁট ও চোখের নোংরা অভিব্যাক্তি, অশ্লীল কথা,....ইত্যাদি দ্বারা অপমানিত হয়না - তাহলে মেনে নেব, আমি ভুল বলেছি।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.