নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষক যখন যৌননির্যাতনকারী

১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৫১



শিক্ষক যখন যৌননির্যাতনকারী

খবরে পড়লাম দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর শিক্ষক দীপক কুমারের বিরুদ্ধে তার দুই ছাত্রীকে যৌননির্যাতন ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের নজরে আসে এবং প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কি হবে, তা পরে জানা যাবে। আপাতত আমি এর কারণ ও ভয়াবহতার দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমার ১২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বেশকিছু লম্পট শিক্ষককে দেখেছি যাদের মধ্যে খুব কম জনেরই যথার্থ শাস্তি হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ আছে। তাদের দলে অনেক সিনিয়র শিক্ষকও আছেন। সবাই বিষয়টা জানেন। কিন্তু সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যায়না। সবাই সবকিছু জেনেও এসব লম্পটদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন। আমি নিজেও করি, য়দিও আমার ইচ্ছে করে.....।

আবার অনেক শিক্ষক আছেন যারা অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও ঐ লম্পট শিক্ষককে বাঁচানোর জন্য নানা কূটকৌশল অবলম্বন করেন। ফলে তাদেরকে যথার্থ শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়না। এরকম অনেক নজির এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এখনও অনেক লম্পট শিক্ষক বহাল তবীয়তে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন।

মাঝে মাঝেই স্কুল, কলেজ এবং প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদেরকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এর কারণ কি?

১। শিক্ষকের নৈতিকতাবোধের অভাব ও চারিত্রিক স্খলনঃ আগেকার শিক্ষকরা ছিলেন চরিত্রবান। তাঁদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানীর অভিযোগ তেমন শোনাই যেত না। তাঁরা ছিলেন বাবামার সমান। কিন্তু এখন বহু শিক্ষক লম্পট, হারামী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষক আছেন, যারা কথাবার্তায় খুবই স্মার্ট, আন্তরিক, চোস্ত ইংরেজী বলে, সারাক্ষণ নীতিবাক্য - আমি এই করেছিলাম, সেই করেছিলাম, হেন হওয়া দরকার, তেন না হলে দেশ জাতি রসাতলে যাবে... আরো কত কি!! অথচ তারাই চরম দূর্নীতিবাজ, ঘুষখোর আর ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনকারী।

২। নির্যাতিত মেয়েদের প্রতিবাদ না করাঃ আমাদের দেশে যেকোন অপরাধ ঘটার পর তার প্রতিবাদ না করে আমরা বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করি, এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি বা অন্যায় হজম করে বিকল্প পথ খুঁজি।

বেশীরভাগ সময় এরা শাস্তি পায়না, কারণ এদের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা অভিযোগ করতে ভয় পায় সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে, শিক্ষকের আক্রোশের ভয়ে এবং এদের শাস্তি হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, এটা মেয়েরা জানে বলে। কখনও বিপদের সময়ে আশেপাশের মানুষের সাহায্য না পাওয়ার কারণে, বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা, পুলিশী হয়রানি ও অপরাধীর হুমকি-ধামকি ও হয়রানীর কারণেও মেয়েরা অপরাধ গোপন করে।

আমার এক সহকর্মী (যে নিজে মেয়ে কেলেংকারীতে ফেঁসেও পার পেয়েছে আরো কিছু শিক্ষকের সহায়তায়) আমাকে যুক্তি দিল, "মেয়েদের সম্মতি না থাকলে কোন শিক্ষক কি কিছু করতে পারে?" পারে। কারণ অনেক কষ্টে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। শিক্ষকের সাথে কলহের কারণে নিজের ভবিষ্যত নষ্ট করার সাহস সবার হয়না, হবার কথা নয়।

আমার মনে হয়না, কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় কোন শিক্ষককে গিয়ে বলে, "আপনি আমাকে পাস করিয়ে দিন, বেশী নম্বর দিন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়ে দিন। তার বিনিময়ে আমি আপনার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করব।" তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, কিছু মেয়ে এমন বলবে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় - " শিক্ষক তা শুনবেন কেন?" আসলে প্রস্তাবটা আসে শিক্ষকের কাছ থেকে।। কোন মেয়েকে যখন কোন শিক্ষক কুপ্রস্তাব দেন, তখন মেয়েটির হাতে তার কোন প্রমাণ থাকেনা। আর কোন অপরাধী প্রমাণ রেখে অপরাধ করেনা। ফলে তাদের অপকর্ম প্রমাণ ও প্রতিরোধ করা কঠিণ হয়ে যায়।

৩। ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগঃ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা এমন সুযোগ রেখেছি যে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে অনৈতিক কিছু করতে বাধ্য করতে পারেন। শিক্ষক ইচ্ছে করলে নম্বর কম বা বেশী দিতে পারেন। আবার কোন শিক্ষার্থী কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করলে সেটি প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়না। আর ছাত্রীরা বেশীরভাগ সময় প্রমাণ দিতে পারেনা বলে শিক্ষকরা পার পেয়ে যান।

৪। অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া বা হবার সম্ভাবনা কম হওয়াঃ অপরাধী শাস্তি পায়না বলে আরো অপরাধ করার স্পর্ধা ও সুযোগ পেয়ে যায় এবং বীরদর্পে অপরাধ করে। এসব হারামী শিক্ষকরা সারাজীবন অপকর্ম করে যায়, যেতে পারে। কারণ তাদের শাস্তি হয়না। এসব হারামীকে দেখে অন্যরাও অপরাধ করতে উৎসাহিত বোধ করে। আরো মানুষ অপরাধ করে। এভাবে সমাজ, দেশ কলুষিত হয়।

৫। মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাবঃ মেয়েদের প্রতি হীন মানসিকতা ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাবের কারণে এসব শিক্ষকরা মেয়েদের সাথে নোংরামী করে।

৬। সম্মিলিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না করাঃ আমাদের দেশে অপরাধের লাগামহীন বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ হল - প্রতিবাদ ও সম্মিলিত প্রতিরোধ না করা। এসব অপরাধের প্রতিবাদ করার পর মেয়েটার পাশে আর কাউকে পাওয়া যায়না। দু'চারদিন সমবেদনা জানানোর জন্য কেউ কেউ আসে, তারপর ভোগান্তি একা মেয়ের, মেয়ের পরিবারের। আমরা এখনও এমন পরিবেশ তৈরী করতে পারিনি যেখানে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করা যায় এবং ন্যায় বিচার পাবার সম্ভাবনা সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সম্মিলিত প্রতিরোধ চলতে থাকে।

৭। প্রকৃত শিক্ষার অভাবঃ বংশগতি ও পরিবেশ সব মানুষের ভাল ও মন্দ আচরণের জন্য দায়ী। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের মন্দ আচরণকে পরিহার করতে শেখায়। শিক্ষিত মানুষরা যেহেতু এমন নোংরা আচরণ করছে, তার মানে তারা প্রকৃত শিক্ষিত নয়। শিক্ষা তাদের কোন কাজে লাগছেনা। শিক্ষা তাদের মানুষ না বানিয়ে পশু বানাচ্ছে। সুতরাং আমাদের শিক্ষা ও পরিবেশ মানুষের মন্দ আচরণকে থামাতে পারছে না। তাই এগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।

প্রতিকারঃ

১। যৌন নির্যাতনের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবেঃ আমাদের এ উপমহাদেশে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক - ইত্যাদি সবক্ষেত্রে নারীর প্রতি নানারকম নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। নিরাপত্তাহীনতার কারণে, সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে, সত্যিকারের আইনের শাসনের কঠোর প্রয়োগের অভাবে, বিপদের সময়ে আশেপাশের মানুষের সাহায্য না পাওয়ার কারণে, বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা, পুলিশী হয়রানি, অপরাধীর হুমকি-ধামকি-হয়রানি ইত্যাদি কারণে মেয়েরা অপরাধ গোপন করে। এ কারণগুলো নারীকে মানসিকভাবে ছোট ও দূর্বল ভাবতে শেখায়।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে নারী ও পুরুষের মর্যাদা সমান। আমাদের এ উপমহাদেশের সংস্কৃতি উল্টা। এখানে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়, কখনোই কোন রামকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়না।

এমনিতেই আমাদের দেশের মেয়েদের ভাল বিয়ে হওয়া সহজ নয়। তার উপর মেয়েরা ধর্ষিত বা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে তো আরোই সমস্যা। তাই আমরা এসব গোপন করি। কারণ মেয়েটিকেই সবাই অস্পৃশ্য মনে করবে, তার ভাল বিয়ে হবেনা, তার পরিবারের বদনাম হবে।
অথচ পুরুষ রেপ বা যৌন হয়রানি করলে, পতিতালয়ে গেলে, পরকীয়া করলে, প্রেমিকার সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করলেও তার বদনাম হয়না, তাকে কেউ খারাপ বলেনা। দিব্বি আবার বিয়ে করতে পারে, তার মান এতটুকু কমেনা। কিন্তু মেয়েরা সমাজের চোখে একবার ভ্রষ্টা খেতাব পেলে তার বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়। একটি মেয়ের সম্ভ্রম চলে যাওয়া মানে সমাজে সে অপাংতেয়। পচে যাওয়া খাবারের মত, যা কেউ খেতে চায়না। তাই নিজেদের সম্মান, পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবার ভয়ে, তথা সামাজিক ভাবে হেয় হবার ভয়ে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ ক্ষমতা থাকা সত্বেও যৌন অপরাধীকে শাস্তি দেয়না, দেবার চেষ্টা করেনা, অপরাধ গোপন করে। অনেক উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত পরিবার মানুষও মামলা করেনা লোক জানাজানি হবার ভয়ে, বিচারের নানা হয়রানী সহ্য না করার ইচ্ছা এবং মেয়েটির ভবিষ্যতের চিন্তা (লোকে নানা কথা বলবে, ভাল বিয়ে হবেনা..) করে।

পুরুষ দোষ করলেও আমাদের সমাজ মেয়েদেরকেই দায়ী করে। যেমন ডিভোর্স হয়েছে শুনেই বলা হয় নিশ্চয় মেয়ের দোষ, রেপ হয়েছে শুনেই বলা হয়, নিশ্চয় খোলামেলা পোষাক পরেছিল, স্বামী মেরেছে শুনেই বলে মারতেই পারে, সে তো স্বামী, দোষ না করলে এমনি মারে? শিক্ষক যৌন হয়রানি করেছে শুনেই বলা হয়, শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্য ছাত্রী মিথ্যে বলছে। ফলে মেয়েরাও মেনে নেয় যে তার প্রতি নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই ন্যায্য।

যৌন অপরাধ ঘটলে ভিকটিমের পরিচয় গোপন করা হয়। কারণ মেয়েটাকেই সবাই দোষী সাব্যস্ত করে। ভারতের যে মেডিকেল ছাত্রীটি গণধর্ষণেরে শিকার হয়ে মারা গেল, ভারতীয় মিডিয়া তার পরিচয় গোপন করে তার নাম দিল "ভারত কন্যা"। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। যেমন - ভারতেই গণধর্ষণের শিকার আরেকটি মেয়ে বলেছিল, "আমি ব্যথা পেয়েছি, তবে সম্মান হারাইনি। সম্মান তাদের গেছে, যারা আমার উপরে নির্যাতন করে অপরাধ করেছে।"আমির খানের উপস্থাপনায় "সত্যমেব জয়তে" অনুষ্ঠানে এক মহিলা ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে এবং তার সাথে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের বীভৎসতার বর্ণনা দেয়। তার বক্তব্য ছিল, "আমি কোন অন্যায় বা পাপ করিনি। তাই আমার মুখ লুকানোর কোন প্রয়োজন নেই। মুখ লুকাবে তারা, যারা আমার অপরাধী।"

একদিন দেখলাম, আমাদের গর্ব, বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, টিভিতে বর্ণনা দিলেন কিভাবে দীর্ঘ নয় মাস ধরে পাকিস্তানী আর্মি অফিসাররা পালাক্রমে দিনের পর দিন তাঁকে গণধর্ষণ করেছে। সাক্ষাতকারের শেষের দিকে উনি কেঁদে ফেললেন। বললেন, "আমি মাঝে মাঝে নিজেই নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে দেখি, আর নিজেকেই প্রশ্ন করি, এই আমিই কি সেই আমি?" সমাজ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করে কিনা বা কিভাবে দেখে? - এ প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌসী বলেন, "সমাজ আমাকে কি প্রত্যাখ্যান করবে? আমি সমাজকে প্রত্যাখ্যান করেছি।"

যৌন নির্যাতনের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। ধীরে হলেও তা বদলাচ্ছে। এখন মেয়েরা সাহস করে প্রতিবাদ করে। বনানী কেসটি তার সর্বশেষ উদাহরণ।

২। কৌসুলি হয়ে প্রমাণ জোগাড় করাঃ এমন নির্যাতন থামাতে হলে টেকনোলজি ব্যবহার, ছল, বন্ধুদের সহযোগিতা ইত্যাদি যেকোন উপায়ে এসব হারামীদের অপকর্মের প্রমাণ জোগাড় করে তাদের মুখোশ খুলে দেয়া। তাহলে তারা শায়েস্তা হতে বাধ্য। মেয়েদের সাহসী হওয়া খুব জরুরী। কিছুতেই ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করা যাবেনা।

৩। সামাজিক প্রতিরোধঃ পৃথিবীর উন্নত দেশে অপরাধীদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেনা। অপরাধীরা নানাভাবে হেয় হয়। আর আমরা জেনেশুনে ঘুষখোর অফিসার, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা পুলিশের সাথে আত্মীয়তা করি। অপরাধ করেছে জেনেও সব ভুলে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি। আপন কেউ, নিজ দল বা মতের লোকেদের অপরাধের কথা গোপন করি। মেনে নেই। মনে করি তার অপরাধ এমন গুরুতর কিছুনা বা অপরাধই না। সম্প্রতি বনানী রেপ কেসে আমিন জুয়েলার্সের মালিক তার ছেলের অপরাধকে বলেছে 'দুষ্টামি'!!!

৪। ছেলেমেয়েদের প্রতিবাদী হতে শেখানোঃপ্রতিটা শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান হল তার বাড়ী, তার পরিবার। এটিই তার আচরণ, মূল্যবোধ, ধারণা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, সাহস, শিক্ষা.. ইত্যাদির ভিত্তি তৈরী করে দেয়। এই ভিত্তিই তার সারাজীবনের আচরণের মূল চাবিকাঠি। এখান থেকে সে যা শিখবে, সারাজীবন সে তাই করবে। পরিবারে সে ভাল কিছু শিখলে সে ভাল হবে, নাহলে খারাপ। তাই ছোটবেকা থেকে আমাদের উচিত আমাদের শিশুদের প্রতিবাদ করতে শেখানো। কখনো যেন তারা কোন অন্যায় মেনে না নেয়। তাহলে তারা ভয় পাবেনা, কিছু গোপন করবেনা, সাহসী হবে, যেকোন অন্যায়ের শুরুতেই প্রতিবাদ করতে শিখবে। এটা খুব জরুরী।

৫। আইনের কঠোর প্রয়োগঃ পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোতে সত্যিকারের আইনের শাসন আছে। অর্থাৎ অপরাধ করে কেউ পার পায়না। ঘুষ খেয়ে কেউ অপরাধীকে শাস্তি থেকে রেহায় পেতে সাহায্য করেনা। আমাদের দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর 6 নেই। অর্থাৎ এখানে ক্ষমতা ও টাকা থাকলে মেয়েদের প্রতি অন্যায় করে পার পাওয়া যায়।

মাঝে মাঝে মনে হয় কোনদিনই কি এদেশে তেমন অবস্থা হবেনা, যখন অপরাাধী যেইই হোক না কেন, শাস্তি থেকে রেহায় পাবেনা কিছুতেই? ঘুষ খেয়ে কেউ অপরাধীকে শাস্তি থেকে রেহায় পেতে সাহায্য করবেনা। অপরাধীর সাথে সেলফি তুলে মিথ্যে বলবেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘুষ খাবেনা। বিবেকের, দেশের, আইনের তথা রাষ্ট্রের কাছে প্রকৃত দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। বিচার বিভাগ ও আইনশৃংখলা বাহিনী সততার সাথে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করলে পরিস্থিতি বদলাতো। তাহলে অবশ্যই কোন উন্নত দেশের মত আমরাও আশা করতে পারতাম, প্রতিটা মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, প্রতিটা অপরাধী যথার্থ শাস্তি পাবে।

সামনাসামনি সবাই এসব যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকদের সাথে ভাল ব্যবহার করলেও মনে মনে সবাই এদের ঘৃণা করেন। এরকম কিছু হারামীর জন্য পুরো শিক্ষক সমাজকে লোকে অশ্রদ্ধা করে, শিক্ষার্থীরাতো বটেই।

https://www.bn.bdeduarticle.com/শিক্ষক-যখন-যৌননির্যাতনকা/

মন্তব্য ৩১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:০৪

সুমন কর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২| ১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১২

আলগা কপাল বলেছেন: যথার্থই বলেছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে (অল্প সংখ্যক ঘটনায়) মেয়েরাও কিছুটা দায়ী থাকে। কখনো কখনো তারা ইঁদুর বিড়াল খেলা খেলতে গিয়ে ফেঁসে যায়।

এসব ঘটনা ঘটার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কিছুটা ভূমিকা আছে। আর নরপিশাচগুলো কখনই শিক্ষক ছিলো না, হতে পারে না। শিক্ষকরা কখনো এমন হয় না। এদের কেরোসিনে চুবিয়ে মারা উচিৎ।

১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। একমত। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


ছাত্রীদের সাথে জিং জিং কোথায় করে, ক্লাশরুম, অফিস, বাসায়? আপনি ঠিক মতো পিন-পয়েন্ট করতে পারলে, আমি সমাধান বের করতে পারবো!

১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: বেশীরভাগ সময়ে শিক্ষকদের চেম্বারে। কখনও কখনও শিক্ষকদের ডরমেটরীতে।

এবার সমাধান বের করুন। ধন্যবাদ।

১২ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: হাজী দানেশের দীপক বাবু এ কাজের জন্য নির্জন এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন।

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:২১

স্বতু সাঁই বলেছেন: প্রথমে বলে নেই, পোস্ট এতো বড় পোস্ট না করে, বড় লিখা দুই বা তিন খণ্ডে করলে ভালো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখেছি, পোস্ট বড় হবার কারণে পোস্টের গুরুত্ব কমে যায়। ফলে বিষয়বস্তু ভাল হওয়া সত্ত্বেও অনাগ্রহের কারণে পোস্টা পড়ে না।

এমনিতেই আমাদের দেশের মেয়েদের ভাল বিয়ে হওয়া সহজ নয়।

আপনি যেহেতু একজন শিক্ষিত নারী, সেহতু আপনাকেই আমার প্রশ্ন, নারীরা একথাটি ভাবে কেন?

কিন্তু মেয়েরা সমাজের চোখে একবার ভ্রষ্টা খেতাব পেলে তার বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়। একটি মেয়ের সম্ভ্রম চলে যাওয়া মানে সমাজে সে অপাংতেয়। পচে যাওয়া খাবারের মত, যা কেউ খেতে চায়না।

বাংলাদেশের নারীরা বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী দেখে ছেচল্লিশ বছরেও শেখে না কেন?

তাই নিজেদের সম্মান, পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবার ভয়ে, তথা সামাজিক ভাবে হেয় হবার ভয়ে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ ক্ষমতা থাকা সত্বেও যৌন অপরাধীকে শাস্তি দেয়না, দেবার চেষ্টা করেনা, অপরাধ গোপন করে।

হা হা হা.. আপনার এই অভিযোগ শুনে মনে হচ্ছে সব নারীরা তাদের পরিবারের মান সম্মান রক্ষার ঠিকা নিয়ে রেখেছে। এটা নারীদের দায়িত্ব বোধকে পাশ কাটানোর অভিযোগ।

নারী অধিকার ও নারীর স্বাধীনতা নিয়ে আমি অনেক লিখেছি এবং লিখছি। প্রথমেই আমি যেকথাটা বলে থাকি, নারী বা নারীকে যতোদিন নারী বানিয়ে বা করে রাখা হবে নারীরা ততোদিন নির্যাতিত হবে। এর থেকে নারী কোনদিনই মুক্তি পাবে না। আর একটা কথা, নারীবাদীরা যখন নারী নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুরুষকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে উপস্থাপন করে। তখনই হয়ে যায় সব গণ্ডগোল। কারণ নারী নির্যাতের যে কাহিনী তাতে সমাজে অতি সামান্য পুরুষ জড়িত। কিন্তু জড়ানো হয় গোটা পুরুষ সমাজকে। তাতে করে পুরুষদের সমর্থন হারিয়ে ফেলে নারীবাদীরা। নারী যদি পুরুষের শত্রুই হয়ে থাকে, তবে নারীরা পুরুষকে বিয়ে করে ঘর সংসার করবার স্বপ্ন দেখে কেনো? এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে খুব গভীর থেকে ভাবতে হবে। ধর্ষনে নারী নির্যাতন খুব সামান্য সংখ্যক ঘটনা। সবচেয়ে বেশী যে নির্যাতন ঘটে তা হলো পারিবারিকভাবে। পারিবারিকভাবে যে নির্যাতন ঘটে তাতে পুরুষের সম্পৃক্ততা খুবই কম। সে ক্ষেত্রে নারীই নারীকে নির্যাতন করে সবচেয়ে বেশী। হয় শাশুড়ীর দ্বারা নয় তো ননদের দ্বারা। তারচেয়ে বেশী নির্যাতিতৃহয় নারী তার মা বাপের বাড়ীতে। কারণ সেখানেই নারীকে নারী করে গড়ে তোলা হয় শারীরিক ও মানসিকভাবে। ফলে নারী হয়ে পড়ে পুরুষ থেকে দূর্বল এবং আলাদা। কারণ ভাল জামাটা ছেলের, মেয়ের জন্য যেমন তেমন। মাছের ভালো অংশটা ছেলের, মেয়ের জন্য ফিচাটা। ছেলে বসে কোলে, মেয়ের অবস্থান পায়ের কাছে। এইরূপে বাবা মা মেয়েকে মেয়ে রূপে গড় নারীকে নির্যাতনের শিকলটা পড়াতে শেখায়। সে কখনই প্রতিবাদী হতে পারে না।

নারীকে মুক্ত করতে কেবল নারীই পারে। নারী কেবল নারীসত্তায় বিকশিত হয়েই করে দেখাতে হবে। পুরুষের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নারী মুক্তি কোন দিনই আসবে না।

১৩ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমার লেখাগুলো আসলে পোস্ট নয়, আর্টিকেল। বিভিন্ন জায়গায় ছাপা হবার পর আমি সেগুলো ব্লগে দেই। এই লেখাটিও তাই। ক'জন পড়ল কি পড়ল না সেটা ভেবে আমি লিখিনা। কোন সমস্যার প্রভাব, সমাধান সবই থাকে আমার লেখায়।

আপনি মনে হয় আমার সবগুলো লেখা মন দিয়ে পড়েননি। আপনার বোঝার সুবিধার জন্য এই লেখারই কিছু অংশ নীচে তুলে দিলাম -

"- ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরকে বিয়ে করে সংসার করার জন্য তৈরী করা হয়। তারা পড়াশুনা, চাকরী, রূপচর্চা, শরীর ঠিক রাখা- এসবই পুরুষের জন্য করে যাতে তার ভাল বিয়ে হয়। অর্থাৎ মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল ভাল বিয়ে হওয়া। অন্য কথায় ভাল আশ্রয় পাওয়া। নিজেকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন চেষ্টাই সে করেনা। কারণ সে জানে, একা সে টিকতে পারবেনা, তাকে টিকতে দেয়া হবেনা।

- ছোটবেলা থেকেই সব ভাল জিনিসটা বরাদ্দ থাকে ছেলেদের জন্য। সবসময় ছেলের সুবিধার কথা আগে ভাবা হয়, পরে মেয়েদের। যত্ন ও ভালবাসাও ছেলের জন্যই বেশী। ফলে মেয়েরা নিজেদেরকে ছেলেদের তুলনায় কম কাঙ্খিত ও কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে বাধ্য হয়।"

আরেকটি পোস্টে লিখেছিলাম, "মেয়েরা মেয়েদের দ্বারাই বেশী নির্যাতিত হয়। একটি মেয়ে বৌ থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে নির্যাতন করে। যখন সে মা হয়, তখন ছেলেমেয়েও দেখে, মাকে বাবা নির্যাতন করে, করতে পারে। নিজে নিযাতিত হতে হতে মেয়েরা ধরেই নেয়, দূর্বল মেয়েদের উপর নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই যখন সে শ্বাশুড়ী, ননদ... এরকম ক্ষমতাশীল হয় বা সুযোগ পায়, তখন নারী নিজেও আরেক নারীকে নির্যাতন করে। অর্থাৎ মেয়েরা নির্যাতন করতে শেখে নিজে নানা সময় পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত হয়ে হয়ে। পুরুষরা নির্যাতন না করলে তারাও করত না, করবেনা।"

"ভাল বিয়ে হওয়া কঠিণ" - ভাবে কারণ তা আসলেই কঠিণ। দেখতে অসুন্দর, বাবা গরীব,.. যেসব মেয়েদের বিয়ে হয়নি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন।

আমি অনেকগুলো ধনী, শিক্ষিত পরিবার দেখেছি যারা মেয়ে চাইলেও পরিবার মেয়েকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেয়না। আমাদের এক শিক্ষিকা সম্প্রতি স্বামীর নির্যাতনে আত্মহত্যা করেছেন। অথচ তার পরিবার তাকে তার স্বামীকে তালাক দিতে দেয়নি।

আরও অনেক কথা লেখা যেত। আপাতত থাক। সময় পেলে আমার ফেবু দেয়াল ঘুরে আসুন। ধন্যবাদ।

৫| ১৩ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৪০

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: "মেয়েদের সম্মতি না থাকলে কোন শিক্ষক কি কিছু করতে পারে?" পারে। কারণ অনেক কষ্টে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। শিক্ষকের সাথে কলহের কারণে নিজের ভবিষ্যত নষ্ট করার সাহস সবার হয়না, হবার কথা নয়।

নিজেদের সম্মানের চাইতে সার্টিফিকেট বড় হয়ে গেল? ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরা যদি না বুঝে ভবিষ্যৎ আসলে কিসে নষ্ট হচ্ছে তাহলে আর কি করার আছে।

১৩ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন:
অনেক সময় পরিবার অপরাধ গোপন করতে বা প্রতিবাদ করতে দেয়না।

আমি অনেকগুলো ধনী, শিক্ষিত পরিবার দেখেছি যারা মেয়ে চাইলেও পরিবার মেয়েকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেয়নি। আমাদের এক শিক্ষিকা সম্প্রতি স্বামীর নির্যাতনে আত্মহত্যা করেছেন। অথচ তার পরিবার তাকে তার স্বামীকে তালাক দিতে দেয়নি।

ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরা ভয় পায় আমাদের সামাজিক অবস্থার কারণে। কারণ সমাজ সবসময়ই মেয়েদেরকে দোষ দেয়।

"পুরুষ দোষ করলেও আমাদের সমাজ মেয়েদেরকেই দায়ী করে। যেমন ডিভোর্স হয়েছে শুনেই বলা হয় নিশ্চয় মেয়ের দোষ, নাহলে ডিভোর্স দেবে বা নেবে কেন, রেপ হয়েছে শুনেই বলা হয়, নিশ্চয় খোলামেলা পোষাক পরেছিল, স্বামী মেরেছে শুনেই বলে - মারতেই পারে, সে তো স্বামী, দোষ না করলে এমনি মারে? শিক্ষক যৌন হয়রানি করেছে শুনেই বলা হয়, শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্য ছাত্রী মিথ্যে বলছে। ফলে মেয়েরাও মেনে নেয় যে তার প্রতি নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই ন্যায্য।"

তাছাড়া আমাদের দেশে ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। প্রতিবাদ করলেই কোন শিক্ষক শাস্তি পাবেই, এমন হয়না। অনেক উদাহরণ আছে।

ধন্যবাদ।

৬| ১৩ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

স্বতু সাঁই বলেছেন: আমি আপনার এই পোস্ট পড়েই মন্তব্য করেছি। যাহোক, আপনি লিখছেন লিখে যান।

১৩ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১৩ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:১২

স্বতু সাঁই বলেছেন: তবে একটা কথা শেষে বলে নিই, নারী নির্যাতনের পিছনে পুরুষ না প্রথা দায়ী। লিখার লক্ষ্য যদি প্রথার বিপরীতে হয়ে থাকে তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। নচেৎ পুরুষের বিরুদ্ধে লিখে নারীর মুক্তি কোন দিনই আসবে না।

১৩ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: পুরুষ, নারী, প্রথা, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র, আইন, বিচারব্যবস্থা,... সবাই দায়ী। আমি আমার কোন লেখাতেই পুরুষকে এককভাবে দায়ী করিনি। তবে পুরুষরা বেশী দায়ী। কারণ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র,... সবখানে পুরুষের প্রাধান্য ও ক্ষমতা বেশী।

ধন্যবাদ।

৮| ১৩ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:১৫

স্বতু সাঁই বলেছেন: আমি অনেকগুলো ধনী, শিক্ষিত পরিবার দেখেছি যারা মেয়ে চাইলেও পরিবার মেয়েকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেয়নি।

এই অপরাধটা কার? পুরুষের নাকি প্রচলিত প্রথার?

১৩ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: মূলত পুরুষ ও সমাজের। পুরুষেরই বেশী। কারণ পরিবার পুরুষ পরিচালনা করে। পরিবারের কেউই বাড়ীর কর্তার বিরুদ্ধে যেয়ে কিছু করতে পারেনা।

৯| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:৫১

স্বতু সাঁই বলেছেন: পুরুষের সমাজ, এটা গঁত বাধা কথা। বাঙালী পরিবারে বাড়ীর কর্তা নারীরাই হয়। পুরুষ কর্তা হয় একেবারেই নিম্নশ্রেণীর কিছু পরিবারে। আপনি যদি আমার সাথে আমার গ্রামে যান, প্রতিটা বাড়ী ঘুরিয়ে দেখাতে পারবো, স্বামী কামায় করে বউয়ের হাতে তুলে দেয়। বউ গোটা সংসার চালায়। আমার মাও তাই করতেন, এখন বেঁচে নেই। মাকে দেখেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিই আমাদের সংসারের হাল টেনেছেন। এর চাইতে আর জলজ্যান্ত প্রমান আর কি দিবো।

সমাজে সাংসারিক দ্বন্দ্ব নাই তা না। অবশ্যই আছে। সেটার শতকরা ভাগ কতটুকু? সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। যদি ১০ ভাগ পরিবারে দ্বন্দ্ব থাকে, তাহলে ১০ ভাগ কোনভাবেই উদাহরণ হতে পারে না যে পুরুষের জন্যই নারীরা নির্যাতিত হয়। তাহলে ৯০ ভাগ পুরুষকে কলুষিত করা হবে। নারী নির্যাতনের ব্যপারে সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু সেটা গঠনমূলক হলে তা অতি উত্তম। কারণ গড়ে যদি পুরুষকে দোষারোপ করা হয় সেক্ষেত্রে আমিও দোষী হয়ে পড়ি। এটা আমিসহ ৯০ ভাগ পুরুষের অনুভূতিতে আঘাত করার মত এক ধরণের অপরাধ। যদি কোন পুরুষ নারী নির্যাতনের মত অপরাধ করে থাকে তবে তার সাস্তি হওয়া উচিত, এটা আমিও চাই। শুধু আমি কেন, সব বিবেকবান পুরুষেই চাইবে। ঢালাও ভাবে পুরুষকে দোষারোপ করে কি এর সমাধান কোন দিন আসবে বলে মনে করেন? কক্ষনই না। বরং এভাবে ঢালাও দোষারোপ না করে অনুসন্ধান চালান, অপরাধের কারণগুলো আসলে কি কি। যৌতুক নিয়ে যদি সংঘর্ষ হয়, সেটাকেও পুরুষের অপরাধ বলে গণ্য যাবে না। সমাজে যৌতুক প্রথার চলন রেখে সেই অপরাধের দ্বন্দ্বকে পুরুষের অত্যাচার বলে চালালে তো চলবে না। এরূপ অনেক অপরাধ আছে, যা পুরুষের কারণেই হয় এটা মোটেও সত্য নয়। তাই বলবো, সমস্যাকে আগে চিহ্নিত করুন সঠিকভাবে, তারপর অপরাধীকে ধরে সাস্তি দিন। সমগ্র পুরুষ জাতিকে দোষারোপ করলে, আপনি যার পশে শুয়ে থাকেন তাকেও দোষারোপ করা হয়। আর একজন অপরাধীর সাথে সহাবস্থা করা বা পাশে শুয়ে থাকাটাও পাপ।

আপনি চাইলে আমার এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাবো দেখাতে, পুরুষ কিভাবে নির্যাতিত হয় তা দেখানোর জন্যে। পুরুষের জন্য সমস্যা হলো একটা, নির্যাতিত হলেও মুখ ফুটে বলতে পারে না। কারণ সমাজ ঐ পুরুষকে তাচ্ছিল্য বা হেয় করবে বলে। মুখ বুজে সহ্য করে যায় কারণ সে নারীকে ভালোবাসে বলে।

লিখুন আরও বেশী করে, তবে তা যেন গঠনমূলক হোক এই প্রত্যাশা করি। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনার কমেন্টের জবাব পরে দেব। আপাতত ধন্যবাদ।

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনার প্রথম বক্তব্য - নারীরা পরিবারের প্রধান। জ্বি, সব ছোটখাট সিদ্ধান্ত, ভোগান্তি, বিরক্তিকর- একঘেঁয়ে কাজ মেয়েদের। তাদের বিনোদন বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। বাড়ীর সবার বিনা পয়সার নার্স হল বাড়ীর কর্তৃ।
রিসার্স বলছে, আগে শতকরা ৬৪ ভাগ, বর্তমানে ৮০ ভাগ নারী নিজগৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। নির্যাতনের কারণ নানাবিধ। নারীরা পরিবারের প্রধান হলে এমন হবার কথা নয়। সব পুরুষ নির্যাতন করেনা। আমি কখনও সেকথা বলিওনা। তবে একথা অবশ্যই বলি - স্বামী বা আপনজন নির্যাতন করলেও অধিকাংশ মেয়েরা আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে, কখনও পরিবারের চাপে, ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে তাদের সাথে থাকতে বাধ্য হয়। আর কেন নির্যাতন করে, নির্যাতন বন্ধ করার ব্যবস্থা করা, নির্যাতন সহ্য না করা...এগুলো সব আমার এরিয়াভুক্ত নয়।

আমি বলিনা পুরুষ নির্যাতিত হয়না। আমার ফেবু দেয়ালে "পুরুষ নির্যাতন" শিরোনামে একটি লেখা আছে। ইচ্ছে হলে দেখে নিতে পারেন।

ধন্যবাদ। এ বিষয়ে আপনার আর কোন মেসেজের উত্তর আমি দেবনা। সরি। ভাল থাকুন।

১০| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৩৪

স্বতু সাঁই বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম।

১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৫১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ওকে। বিজি আছি। ফ্রি হয়ে লিখব নিশ্চয়।

১১| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

স্বতু সাঁই বলেছেন: :|

১২| ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২১

আল ইফরান বলেছেন: সমাজ (আমি, আপনি আর আমরা) যখন শিক্ষকতাকে নিছক একটা পেশা হিসেবে গণ্য করে তখন তাদের কাছ থেকে এর চাইতে ভালো কিছু প্রত্যাশা করাটা কি খুব যৌক্তিক?
সাধনার পরিবর্তে জীবিকাই যেখানে মুখ্য হয়ে দাড়ায় তখন শিক্ষকরা আর শিক্ষক থাকেন না, হয়ে যান দূর্বৃত্ত।

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, তাই। আপনার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার আরেকটি লেখার কিছু অংশ তুলে দিলাম -

"এখনকার শিক্ষকদের তাদের ছাত্রদের প্রতি আগেকার শিক্ষকদের মত আন্তরিকতা নেই। আগেকার শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে নিজের সন্তানের মত দেখতেন, পড়ার বাইরেও ছাত্রদের ভালমন্দ নিয়ে বিচলিত হতেন, সবল-দূর্বল সব ছাত্রদের প্রতি সমান মনোযোগী ছিলেন। ছাত্রদের সাফল্যের মাঝে নিজের পেশাগত সাফল্য খুঁজে পেতেন, নিজেরা ছিলেন আদর্শবান। ছাত্রদের মাঝেও তাঁরা আদর্শের চাষ করতেন। এখনকার শিক্ষকদের মাঝে এসব নেই। কারণ এখন বেশীরভাগ শিক্ষক শিক্ষকতা পেশায় আসেন অন্য কোন চাকরী না পেয়ে, ডোনেশন দিয়ে, ধরাধরি করে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। শিক্ষকতা পেশাকে ভালবেসে নয়। তাই এ পেশার প্রতি তাদের ভালবাসা, দায়বদ্ধতা,  আন্তরিকতা থাকেনা। তাই এ পেশাকে শিক্ষাকরা অন্যসব পেশার মত 'জীবিকা নির্বাহের উপায়' হিসেবে বিবেচনা করে। নিজেদেরকে চাকুরীজীবী ভাবে, 'মানুষ গড়ার কারিগর' ভাবেনা। তাই তাদের হাতে 'মানুষ' তৈরী না হয়ে অন্যকিছু তৈরী হচ্ছে। ড. জোহার মত একজন শিক্ষকও কি আছেন, যিনি ছাত্রদের জন্য জীবন দেবেন?"

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

১৩| ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯

স্বতু সাঁই বলেছেন: তবে আমি পেয়েছিলাম দু'জন শিক্ষক এক- বোটানীর সামাদ স্যার ও দুই- পরিসংখ্যানের মনোয়ার স্যার।

শিক্ষকদের নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছিলো জিয়া ও এরশাদের হাত ধরে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসে ক্যাম্পাস দখল আয়ত্বে নেবার জন্য যা খুশি তাই করেছে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তখন ক্যম্পাসে টেণ্ডারবাজী কি বুঝতাম না। রাজনৈতিক মিছিল মিটিং করেছি অধিকাংশ সময়ে নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে। রাজনৈতিক আদর্শের সমমনা বড়ভাই যারা চাকুরী বা ব্যবসা করতো তারা এগিয়ে আসতো আন্দোলনের সময়। তারাই সাহায্য করতো কিছু পয়সাকড়ি দিয়ে। আশিরদশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদর্শ বলে কিছু ছিলো। তারপর থেকেই অবক্ষয় নেমে আসে। এ অবক্ষয় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নয়, সর্বক্ষেত্রেই ছড়িয়ে যেতে থাকে। ফলে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাকেও বাণিজ্যিকরণ করা হলো। ক্ষেত্র যখন বাণিজিক হয়ে যায় তখন আদর্শ কর্পুরের মতো উড়ে যায়। সেখানে অনৈতিক চর্চ্চা হবে সেটাই স্বাভাবিক। যারা অনৈতিক কর্মে জড়িত থাকবে তারা সকলই অপরাধী। সকল অপরাধ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষরাই করে থাকে। কারণ আমাদের সমাজে পুরুষরাই পেষার সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কোন অপরাধের কারণে বলা হয় না, পুরুষরা অন্ষায় করছে, পুরুষরা নির্যাতন করছে, পুরুষরা লুন্ঠন করছে। পুরুষ সমাজই সমস্ত ব্যবস্থাপনাকে বিনষ্ট করছে। এই কথা কেউ ঘুণাক্ষরেও উচ্চারণ করে না। কারণ সেটা জীবিকার সাথে সম্পৃক্ত। ঐ দুর্নীতির পয়সায় নারীর অলংকার হয়, কণ্যা ও পুত্রের ছাত্রত্ব টিকে থাকে, বাবার অসমাপ্ত ভবিষ্যৎ কাঙ্খা পুরণের মোমবাতি জ্বলতে থাকে। কিন্তু নারী নির্যাতনের ক্ষেত্র এলেই, তখন সমস্ত পুরুষজাতি কলঙ্কিত হয়ে যায়। অপরাধী হয়ে যায় সমগ্র পুরুষজাতি। যেটা সম্পূর্ণরূপে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে ব্যবধান তৈরী করে দেয়। যা সত্যিই অনৈতিক। নারীবাদীর সাথে আমার বিরোধটা এখানে।

আমার সম্পর্কে একটু বলে নেই, আমার বউ যখন গর্ভবতী তখন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমার কণ্যা হলে আর কোন সন্তান নেবো না। ঈশ্বর আমার আহ্বান শুনেছিলেন। আমাকে একটা কণ্যা সন্তান দান করেছেন। এই প্রত্যাশা কেন করেছিলাম জানেন? সমাজে নারীর অবহেলার কারণে। কণ্যাকে আমি কণ্যানারীরূপে নয়, মানবসন্তানরূপে দেখবো বলে, যে সে পুত্রসন্তানের কোন অংশে কম না হয়। ঈশ্বর সেও ইচ্ছেও পুরণ করছে।

অপরাধীই অপরাধী। সামান্য কয়েকজন অপরাধীর জন্য গোটা সমাজ বা জাতি অপরাধী হতে পারে না। এটাই ছিলো আমার বক্তব্য।

১৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৪| ১৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০

বিজন রয় বলেছেন: স্বতু সাঁই বলেছেন: শিক্ষকদের নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছিলো জিয়া ও এরশাদের হাত ধরে।

সহমত।

১৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৫| ১৫ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

বিজন রয় বলেছেন: আপনার সাবজেক্ট কি?

১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:১৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: সাইকোলজিতে অনার্স- মাস্টার্স, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে পিএইচডি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.