নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুচিন্তিত মতামত চাই

২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:১১




সুচিন্তিত মতামত চাই

বাংলা একাডেমীর লোকজন কাজের অভাবে অনেকদিন থেকেই খৈ ভাজছেন। সর্বশেষ তাঁরা ভেজেছেন আমাদের দীর্ঘ দিনের আনন্দের উৎসব ঈদকে। এ অবস্থায় এখন জরুরী হয়ে পড়েছে, এসব মান্যজনকে কিছু কাজ দেবার যাতে তাঁরা বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান এবং আমরাও নিত্যনতুন বানান শেখার বিড়ম্বনা থেকে বেঁচে যাই। তাঁদেরকে কি কি কাজ দেয়া যায় এ বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দিতে আপনাদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

এবিষয়ে আপনাদেরকে একটা পুরনো গল্প বলি। সেই আয়নাওয়ালা নাপিতের ভুত ধরার গল্প। ভুতকে বাড়ীতে আনার পর ভুত বলল, "আমি সারাজীবন আপনার চাকর হয়ে থাকতে রাজী আছি। তবে আপনি যেদিন আমাকে আর কোন কাজ দিতে পারবেন না, সেদিন আমি আপনার ঘাড় মটকাব।" নাপিত রাজী হয়ে ভুতকে কাজ দিতে লাগলো একটার পর একটা। বিশাল বাড়ী বানাও, প্রচুর টাকা এনে দাও, গহনা, ভাল ভাল খাবার, জমিজমা,....। প্রতিবার এক নিমেষে সব কাজ শেষ করে ভুত এসে বলছে, "এবার কি করব?"

নাপিত দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এত কাজ কই পাবে? নাপিতের বউ বলল, "তুমি ভেবোনা। এবার ভুত এলে আমি ওকে কাজ দেব।" একটু পরে ভুত এসে বলল, "হুজুর, এবার কি কাজ?" নাপিতের বৌ বলল, "বাঁশঝাড়ে গিয়ে সবচেয়ে লম্বা বাঁশটা চেঁছে মসৃণ কর। তারপর তাতে খুব ভাল করে তেল মাখাও।" একটু পরে ভুত এসে বলল, "করেছি। এখন কি হুকুম?" নাপিতবৌ বলল, "যতক্ষণ অন্য কাজের জন্য না ডাকি, ততক্ষণ তুমি ঐ বাঁশে উঠবে আর নামবে। কাজের জন্য ডাকলে সে কাজ করে দিয়ে গিয়ে আবার ওঠানামা করবে। এখন যাও।" ভুত মন খারাপ করে চলে গেল।

বাংলা একাডেমীর লোকেদের জন্য এরকম কোন কাজ দেয়া যায় কি?

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:১৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: আলপনা তালুকদার ,




আপনার গল্পের মতোই বলি কি কাজ দেয়া যায় ।
প্রতিটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরের সাথে এক এক করে "আ" কার , "ই" কার , "ও"কার সহ যতো "কার " আছে তা দিয়ে বানান শুদ্ধিকরণ প্রজেক্টে লাগিয়ে দেয়া যায় । এটা শেষ হলে তারপরে যুক্তাক্ষর । পারমুটেশান পদ্ধতিতে চলবে ।
যেমন ----
পাখা সাবা কারা রাবা
রাতা পাহালা.....
:( :(( B-) :)
এমনি ----
পিখি সিবি কিরি রিবি.....

এরপরে যে বানান টা দাঁড়িয়ে যাবে সেটাই হবে সহি বানান ।

২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ১০:১১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ভাল বুদ্ধি। ধন্যবাদ।

২| ২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:২০

বিজন রয় বলেছেন: কাজ না, পুরা বাংলা একাডেমী বন্ধ করা হোক।

ছোঠবেলায় আমরা জি এস ভাই যেমন করে বলেছেন তেমন করে আবৃত্তি করতাম।

২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ১০:১৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: বন্ধ হলে মন্দ হয়না। ইংরেজী অজস্র বানান বিভ্রাট আছে। সাইকোলজি, নিউমোনিয়া, অফেন,.... ইত্যাদি। তারা তো বানান বদলায় না। আমাদের ঢঙ্গের শেষ নাই। ধরে.....। এক একটা বুদ্ধির ঢেঁকি!!!"

৩| ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ২:৫৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'ঈদ' কবে এবং কীভাবে 'ইদ' হলো? প্রায় ১৫-২০ বছর পর আমাদের চোখ খুললো?

***

'ঈদ'কে বাংলা একাডেমী কবে 'ইদ' করে ফেলেছে তা জানতে হলে সংক্ষেপে বানান প্রমিতীকরণের ইতিহাসটা আগে জেনে নেয়া দরকার।

১৯ শতকের আগে পর্যন্ত বাংলা বানানের নিয়ম বলতে বিশেষ কিছু ছিল না। উনিশ শতকের সূচনায় যখন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্ব শুরু হলো, বাংলা সাহিত্যিক গদ্যের উন্মেষ হলো, তখন মোটামুটি সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুশাসন-অনুযায়ী বাংলা বানান নির্ধারিত হয়। (বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান, পৃষ্ঠা ৮৮৪)

রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানানের নিয়ম প্রকাশ করে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৯ সালে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ সরকার মৌলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ-র নেতৃত্বে East Bengal Language Committee গঠন করে। এরপর ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমীর তদানীন্তন পরিচালক সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে বানান-সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ব্যক্তিগত আগ্রহে ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষা পর্ষদে বাংলা বানান সরলায়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ আবদুল হাই এবং মুনীর চৌধুরী এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে একটি বিবৃতি দেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ সালে কমিটির মাধ্যমে বাংলা বানানের নিয়মের একটি খসড়া তৈরি করে।

বানানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদীন কোনো সর্বজনগ্রাহ্য নিয়ম চালু করা সম্ভব হয় নি। বাংলা একাডেমী ১৯৯২ এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্ট জরিপের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হয়। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে ১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রকাশ করে, যা ১৯৯৮-এ পরিমার্জিত হয়ে ২০০০-এ পুনরায় সংশোধিত হয়। ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমী বাংলা-অভিধান-এর প্রথম প্রকাশনা বের হয়।

বাংলা একাডেমী তাদের সকল কাজে প্রমিত বানান রীতি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। সাহিত্যিক, পত্রিকা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই রীতি ব্যবহারের সুপারিশ ও অনুরোধ করেছে।

১৯৯১ সালে আনন্দ পাবলিশার্স তাদের আনন্দ বাজার পত্রিকার জন্য নিজস্ব বানানরীতি প্রণয়ন করেছিল। ২০০৬ সালে প্রথম আলো তাদের পত্রিকার জন্য নিজস্ব ভাষারীতি প্রণয়ন করে।

প্রত্যেক মানুষ, বিশেষত সাহিত্যিকের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা থাকে, কমবেশি। তাই তাঁরা কোনো চাপিয়ে দেয়া রীতি, যদি তাঁদের মত-বিরুদ্ধ হয়, সহজে মেনে নিতে চান না। বাংলা একাডেমীর কমিটির সদস্যগণও বেশ কিছু বানানের ক্ষেত্রে একমত হতে পারেন নি, যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। একটা পত্রিকা ভাষার ক্রম বর্ধমান, পরিমার্জন, ও সংশোধনের ইতিহাস, আবার এসবের সহায়কও। যায়যায়দিন তাদের পত্রিকায় বিশেষ কিছু বানানের উদাহরণ ছাপতো যা লেখকগণকে অনুসরণ করতে বলা হতো।

‘বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান‘ বইটিতে 'ঈদ' প্রসঙ্গে বলা হয়েছে এটি প্রচলিত বানান; আর 'ইদ' হলো প্রবর্তিত প্রমিত-বানান-রীতি অনুযায়ী শুদ্ধ বানান, যেহেতু শব্দটি বিদেশি। বিদেশি শব্দে ই, উ এবং এদের কার ব্যবহার করার নিয়ম করা হয়েছে।

বানানের জন্য আমাদের অথোরিটি হলো বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানানরীতি অনুযায়ী প্রণীত বাংলাদেশের যে-কোনো বানান-অভিধান। আমি ব্যক্তিগতভাবে 'বাংলা একাডেমী বানান-অভিধান' বইটি অথোরিটি হিসেবে ব্যবহার করি, এবং অর্থের জন্য বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান' বইটি ব্যাপকভাবে কনসাল্ট করি। শব্দকোষ হিসেবে যে-কোনো অভিধানই ভোকাবিউলারি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে, তবে আমি মনে করি, বানানের ক্ষেত্রে যে-কোনো একটি নিয়মই অনুসরণ করা উচিৎ, আর সেটা হলো বাংলা একাডেমী প্রমিত বানান-রীতি, এর আলোকে প্রণীত ‘বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান’। তবে বানানের জন্য বিদেশি কোনো বই, বিশেষ করে 'সংসদ বাংলা অভিধান'কে অথোরিটি হিসাবে নেয়া সঠিক হবে বলে মনে হয় না।

***

এবার আসি মূল প্রসুঙ্গে। গত ২/৩দিন ধরে 'ঈদ' আর 'ইদ' বানান-ইস্যুতে ফেইসবুক ছেয়ে গেছে, এবং আমরা যে, যেভাবে পারছি বাংলা একাডেমীর চৌদ্দ গোষ্ঠীকে উদ্ধার করছি। কিন্তু, এই ঈদ-এর নতুন বানান 'ইদ' তো আজকের কথা না, এটা যদ্দূর মনে পড়ে ২০০৫ সালেই 'বাংলা একাডেমী বানান-অভিধানে' এভাবে লেখা হয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে হঠাৎ করে এই নিয়ে আমরা বিদ্রোহ শুরু করলাম কেন?

ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বর্তমান বানানরীতি খুবই সহজ ও আধুনিক মনে হয়। সহজ হওয়ার ফলে আমার বানান ভুলের পরিমাণও অনেক কম থাকে। আগে যেখানে প্রায় প্রতিটি শব্দেরই আলাদা বানান মনে রাখার দরকার পড়তো, এখন নিয়মটা মনে রাখলেই ভুলের পরিমাণ অনেক কমে যায়।

কেউ কেউ বলছেন, এই নতুন বানান পদ্ধতির ফলে নতুন প্রজন্ম কনফিউজ্‌ড হচ্ছে বানানের ব্যাপারে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের কখনো বাংলা বানানের ব্যাপারে কনফিউশনে পড়তে দেখি না। আমরা আগে বানান করতাম 'কোন ধরণের লোক?'। বাচ্চারা লেখে 'কোন ধরনের লোক?' ওরা কী দেখে কনফিউশনে পড়বে?

আমরা লিখতাম গাড়ী, বাড়ী, নানী, দাদী। ওরা পড়ছে গাড়ি, বাড়ি, চাচি, নানি। ওরা তো জানেই না এগুলো আগে দীর্ঘ-ই-কার দিয়ে লেখা হতো। আমরা লিখতাম জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী। ওরা শুরু থেকেই লিখছে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি।

মানুষ সহজে কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করতে চায় না, তা যতই ফ্রেন্ডলি বা আধুনিক হোক না কেন। 'ঈদ' ও 'ইদ' ইস্যু তথা প্রমিত বানানরীতির ব্যাপারে আমাদের মনোভাবেও তা স্পষ্ট ফুটে উঠছে।

নিশ্চয়ই কোনো চিল আমাদের কারো না কারো কান নিয়েছে, অথবা আমরা কোনো চলমান ইস্যুকে ঢাকবার জন্য এ সামান্য বানান নিয়ে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলবার উপক্রম করছি। আমাদের বড় সমস্যা হলো আলস্য ও কোনো কিছুর গভীরে না যাওয়া, এবং অতি অবশ্যই একটা বিষয়কে সহজে বুঝবার ক্ষমতা না থাকা। অভিধানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, 'ঈদ' হলো প্রচলিত বানান। এ দ্বারা তো 'ঈদ'কে নাকচ করে দেয়া হয় নি; অন্যদিকে 'ইদ' এর বেলায় বলা হয়েছে প্রমিত বানানরীতি অনুযায়ী বানান, যেহেতু এটা একটা বিদেশি শব্দ। প্রমিত বানানরীতি পড়তে ও কম্প্রিহেন্ড করতে বড়োজোর এক ঘণ্টা সময় লাগবে; আর এতেই সব সন্দেহ দূর হয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা কেউ আসল জিনিসটা পড়ে দেখতে চাই না।

বানানরীতি আগে না থাকায় যে-কোনো শব্দ যে-কেউ যেভাবে লিখলেই তা চ্যালেঞ্জ করার কোনো উপায় ছিল না; চ্যালেঞ্জ করার অথোরিটি থাকতে হবে তো। অনেক পরে হলেও একটা নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। নতুন যে-কোনো কিছুতেই ভুল-ত্রুটি থাকা সম্ভব। ট্রায়াল এন্ড এররের মাধ্যমে যুগে যুগে যুগের চাহিদানুযায়ী তা পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়। বানানরীতিও তাই হবে। কলকাতা তাদের বানানরীতি কমপক্ষে ৫বার রিভিউ করেছে। আমাদের রীতির কোনো রিভিউ হয়েছে কিনা তা জানা নেই।

এ নিয়ম করার আগে অনেক পণ্ডিতের মতামত নেয়া হয়েছিল। এখন আমি যদি বলি, কই, আমারে তো কেউ জিগায় নাই, তাইলে বুঝতে হবে আমি যে পণ্ডিত হইছি তা এখনো মানুষ জানে না; এটা মানুষের ফল্ট না, আমার ফল্ট।

মোটের উপর, বানান শুদ্ধ না অশুদ্ধ না কখন আমরা বিচার করি?

আমার আরেকটু ক্ষুদ্র জ্ঞান যোগ করি। বাংলায় কিন্তু স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী শব্দ উচ্চারিত হয় না। আপনি ঈদ বা ইদ যা-ই লিখেন না কেন, দুটোর জন্যই সমান মাপের টান দিতে হচ্ছে। এই যে প্রমিত বানানরীতি করে বানানকে সহজ করার প্রচেষ্টা, এটাও তার একটা কারণ। অনেক আগে থেকেই আমাদের বর্ণমালারও সংস্কারের কথা আলোচিত হচ্ছে। ৩টা স, ২টা জ, ২টা ন- একাধিক থাকবার কী প্রয়োজন? স-এর উচ্চারণ যেখানে ছ-এর মতো হয়, সেখানে ছ ব্যবহৃত হতে পারে, স যেখানে শ/ষ-র মতো, সেখানে স-ই ব্যবহৃত হবে। সাভারকে উচ্চারণ করি ছাভার, কিন্তু লিখছি শাভার :)

গাড়ি/গাড়ীতে ই/ঈ-কারের দৈর্ঘ্যের তারতম্য হয় না। গুরুগম্ভীর/গূরূগম্ভির- ই/ঈ/ঊ-কার/উ-কারে কী পার্থক্য হলো এখানে? এজন্য, আরবিতে 'ইদ'-এর বানান যাই হোক না কেন, বাংলায় ওটা 'ইইদ'-ই উচ্চারণ হবে। এ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং আরো হতেই থাকবে। রবীন্দ্রনাথ কলেজকে কালেজ লিখতেন, বাকিরা কলেজ। কেউ যদি কলিজ বা কালিজও লিখে বলেন, আমি বাংলায় বাংলার মতো করে লিখেছি, তাহলে তাঁকে বাধা দেবার কে আছেন?

লেখক বা সাধারণ মানুষ হিসাবে একটা শব্দকে যে-বানানে খুশি আমি সেই বানানেই লিখতে পারি। কিন্তু, যখন কোনো একটা কমিউনিটি, যেমন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো পাঠ্যপুস্তক বা রুলস/রেগুলেশন লেখা হবে, তখন একটা কমন বানানরীতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। তানা হলে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ সুযোগে যে যেভাবে পারছেন, বাংলা একাডেমীর বর্তমান কর্মকর্তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ছেন। কিন্তু ঈদ-কে ইদ করার ব্যাপারে এঁদের কারোই বিন্দুমাত্র হাত নেই; এটা সেই ১৯৯০-এর দশকেই হয়ে গেছে। তখন আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন হয়ত বলেছেন, আমাদের ঈদ সব মাটি করে দিয়েছে বাংলা একাডেমী, অমনি আমরা গর্জন করে উঠলাম। আমাদের চামড়া যে গণ্ডারের চামড়াকেও হার মানায়, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?

বাংলা একাডেমীর অভিধানের শুরুতে একটা দীর্ঘ লিস্ট দেয়া আছে কবি ও লেখকদের- তাঁরা যেভাবে শব্দ ও তাঁর ব্যবহার করতেন, সেগুলো কনসাল্ট করে অভিধানে শব্দের বানান ও ব্যবহারবিধি উদাহরণ হিসাবে দেয়া আছে। এসব করতে একজন লেখক বা একদল লেখককে রাতের পর রাত কাজ করতে হয়। মোটা মাথা দিয়ে তা হয় না। যাঁরা এখন সমালোচনামুখর, তাঁদের অনেকের কমেন্ট দেখেই মাথামোটা মনে হয়।

ব্লগে প্রায় ৮ বছর ধরে প্রমিত রীতি অনুযায়ী লিখছি। ইন্টারনেটে আমিই প্রথম প্রমিত বানান রীতি আপ্লোড করেছি। সবাই এই রীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ব্লগেও যাঁরা নিয়মটা জানেন তাঁরা 'ইদ' লিখছেন অনেক আগে থেকেই। আমিও ইদই লিখছি। আমার প্রকাশিত বইতেও ইদ লেখা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত দাওয়াত কার্ডেও আমি ইদ লিখছি কয়েক বছর ধরে। এটা হলো a matter of acceptance only.

কল্পনা করুন, আজ থেকে ৩/৪ শত বছর আগে বাংলা শব্দ বা বানানের কী অবস্থা ছিল। যদি বানানের বিবর্তন না হতো, তাহলে আজও আমরা সেখানেও পড়ে থাকতাম।

গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো, বাংলা লিপিতে সর্বপ্রথম (عيد) শব্দটি 'ইদ' বানানেই লিখিত হয়েছিল। কেননা, তখনো বাংলায় ঈ ও ঊ-এর উৎপত্তি ঘটে নি এবং বর্ণমালার পূর্ণাঙ্গ রূপ (অধুনার মতো) স্থিরিকৃত হয় নি, এবং কোন বানানটি দীর্ঘ আর কোনটি হ্রস্ব হবে, তারও কোনো নিয়ম তখন ছিল না। আজ থেকে হাজার বছর আগেকার কথা বলছি।

১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হ্যালহেডের বইয়ে স্বরবর্ণের সংখ্যা ছিল ১৬। পরবর্তী প্রায় ১০০ বছর মদনমোহনের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ (প্রকাশকাল ১৮৪৯) পর্যন্ত স্বরবর্ণের সংখ্যা ১৬টিই ছিল। এগুলো হলো অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ঋৃ, ৯, ৯৯, এ, ঐ, ও, ঔ, অ০, অঃ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই সংখ্যা কমিয়ে ১২তে নামালেন। তিনি ঋৃ, ৯৯, অ০, অঃ, এই ৪টি বর্ণ বাদ দিলেন। তারও ১২৫ বছর পর আরেকটি সংস্কারের মাধ্যমে ৯ বর্ণটি বাদ পড়ে যায়। এসব ঘটেছে বিগত মাত্র ৩০০ বছরের মধ্যে।

এরপর সংস্কৃত বর্ণ ও উচ্চারণের আলোকে বাংলায় দীর্ঘ-উচ্চারণের জন্য ঈ ও ঊ এবং এদের কার-চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম বলবৎ করা হয়।

বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের কথা শুনছি বিগত ২৫-৩০ বছর ধরে। এটা আমরা সবাই জানি যে, বানানের সাথে মিল রেখে আমরা কোনো শব্দকে দীর্ঘ বা হ্রস্বভাবে উচ্চারণ করি না। যেমন, যাবতিয়/যাবতীয়, আঁখিনির/আঁখিনীর, গুরুওগম্ভীর/গূরূগম্ভির। ই,ঈ, ঊ-কার বা উ-কার উচ্চারণে কোনো তারতম্য সৃষ্টি করছে না।

এজন্যই, ঈ/ঊ (এদের কার-সহ), একাধিক জ, একাধিক স, একাধিক ন, একাধিক র ছাঁটাই করে একটিতে নিয়ে আসার জন্য উচ্চারণবিদ ও গবেষকরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী কয়েকশত বছর পর আরো যে পরিবর্তন হবে না, তা আমরা কেউ হলফ করে বলতে পারি কি? আর তখন যদি ঈ ও ঊ বাদ পড়ে যায়, 'ইদ' বানান নিয়ে কি গৃহযুদ্ধ বাঁধবে না?

দুঃখিত যে, কমেন্টটা মূল পোস্টের চেয়ে কয়েকগুণ বড় হয়ে গেলো :(

নীচে আমার দুটি পোস্টের লিংক দিলাম কেবল আগ্রহী পাঠকের জন্য।


২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৩:৪৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমরা ছোটবেলা থেকে যে বানান পড়ে এসেছি, তা থাকলে অসুবিধা কি ছিল? ইংরেজী ভাষাতেও প্রচুর গোলমাল আছে, বানানে ও উচ্চারণে। তাতে কি সমস্যা হয়েছে? অন্য কোন ভাষার বানান কি এভাবে পরিবর্তন করা হয়? শত শত বই লেখা হয়েছে আগের বানানে। সব কি নতুন করে ছাপবেন? রবীন্দ্রনাথ,নজরুল, হুমায়ূন আহমেদরা মারা গেছেন। তাঁদেরকে কবর থেকে তুলে এনে কি বাংলা একাডেমী বানান শেখাবে?

ভাষার কাজ মনের ভাব প্রকাশ করা। এতদিন পুরনো বানানে কি মনের ভাব প্রকাশ করা যায়নি? ফালতু জটিলতা সৃষ্টি না করলে কি খুব ক্ষতি হয়? বিষয়টি বিরক্তিকর ও অপ্রয়োজনীয়।

ধন্যবাদ।

৪| ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ২:৫৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বাংলা বানান প্রমিতীকরণের ইতিহাস

বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

শুভেচ্ছা এবং ইদ মোবারক।

২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনাকেও শুভেচ্ছা এবং ইদ মোবারক। ভাল থাকুন।

৫| ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৩:৩৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

বাংলা একাডেমী তার দ্বায়িত্বের কাজ করেছে!

২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: একমত নই।

শুভেচ্ছা জানবেন এবং অগ্রীম ইদ মোবারক।

৬| ২৩ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৪৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


আমিও আপনার সাথে একমত নই। দুঃখিত!

শুভেচ্ছা ও অগ্রীম ইদ মোবারক!

২৩ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:০৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। একমত নাই হতে পারেন। সমস্যা নেই। ধন্যবাদ।

৭| ২৩ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৭:৩১

মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: বানান নিয়ে এত কথা কেন? দুই বাংলার এক কমন ভাষা বাংলা। আমাদের বই যেমন কোলকাতাতে চলে ওদের বইও আমাদের এখানে চলে। দুই বাংলা মিলিয়েই কি এই পরিবর্তন, পরিবর্ধনের কাজটা করছে?

আপনার সাথে আমি একমত যে সমস্ত কালজয়ী লেখকরা মারা গেছেন তাদের লেখার কি হবে? লেখাগুলোতো ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি। সেক্ষেত্রে লেখক বা তার আত্মীয়ের যে স্বত্ত্বের মালিক তার অনুমুতি ছাড়াতো পরিবর্তন অপরাধ হিসেবে গন্য হএ।

যাইহোক বাংলা একাডেমী যাই করুক আমার কখনো প্রকাশনার সুযোগ এলে আমি যা শিখে আসছি সেভাবেই ছাপাবো একাডেমির কোন নতুন ফর্মুলায় না।

২৩ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। কলকাতার লোকেরা এমন কাজে সায় দেবে বলে আমার মনে হয়না।

কোন কাজের পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে তা মেনে নিতে কারো কোন আপত্তি থাকেনা। যেমন - Calcutta ও Dacca. বানান কঠিণ হোক বা সহজ (Psychology - Sychology), বানান ভুল হোক বা ঠিক ( Photo - Foto), উচ্চারণ ভুল হোক বা ঠিক (Often - Ofen) - বানান যেকোন ভাষার অলংকার। সহজ করার নামে বা বানানের ঠিকাদার (অথরিটি) বানানোর জন্য ভাষার এমন ব্যবচ্ছেদ ( আরো যুৎসই একটি শব্দ ব্যবহার করতে চেয়েও করলাম না) অগ্রহণযোগ্য। পত্রিকা, বই যাই ছাপান না কেন, আগের বানাগুলোকে অক্ষত রেখে সেটা করাই বেশী সমীচীন ছিল। তাছাড়া ভাষা তো কোন বিমানবন্দরের নাম নয়। সবচেয়ে বড় কথা - পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ভাষা হল জাপানি ভাষা। তাদের ছেলেমেয়েরা অনেক কষ্ট করে নিজেদের ঐতিহ্য শেখে। তারা এত কিছু পারে, একটা "জাপান একাডেমী" খুলে ভাষা সহজ করতে পারেনা? করেনা কেন? কারণ তাদের মাথা আমাদের মত মোটা নয়। তাদের করার অনেক কাজ আছে। আমাদের নেই।

আমিও আগের বানানেই লেখালেখি করব।

ভাল থাকুন। অগ্রীম ঈদ মোবারক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.