নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুণে খাওয়া মানুষগুলো

১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৬




ঘুণে খাওয়া মানুষগুলো

আমার আব্বা সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক, কলা অনুষদের ডীন, শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, সেক্রেটারি, লতিফ হলের প্রভোস্টসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করার পর এখন তিনি অবসরে। এখনও তিনি যথেষ্ট কর্মক্ষম। তাঁর বিশাল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারলে এখনও সমাজ তাঁর কাছ থেকে অনেককিছু পেতে পারে। অথচ তিনি অবসরে। কর্মহীন জীবন কাটাচ্ছেন। নামাজ-কোরান পড়া, টিভি দেখা, পেপার পড়া, বিকেলে হাঁটা, নাতি-নাতনীদের সাথে গল্প বা সন্ধ্যায় ওদের পড়ানো,... এসব করে এখন ওনার দিন যাচ্ছে। যেহেতু উনি আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী, সেহেতু ওনার মনে অবসরের প্রভাব সেভাবে পড়েনি। তাঁর রোজকার কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে বটে। তবে উনি যেহেতু লেখালেখি করেন, লেখকরা যেহেতু কখনোই অবসর নেননা, তাই তিনি অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম।

আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু এসব বয়স্ক মানুষদের নিয়ে যাঁরা একসময় অনেকের জন্য অনেককিছু করেছেন। বয়সের ঘুণপোকায় খাওয়া এসব মানুষগুলোর শেষ জীবনের নানা দিক আজ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

মানুষ অবসরে গেলে, কর্মহীন হলে বা আয় না থাকলে মানুষের মানসিকতায় বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন -

১। কাজ না থাকা এসব মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে দূর্বল করে দেয়। ফলে তাঁরা হীনমন্যতায় ভোগেন। নিজেকে তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। তাঁদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। ফলে নতুন করে কিছু শুরু করার উদ্যম থাকেনা।

২। কোন মানুষকে অবসর দিয়ে প্রকারান্তরে আমরা বলে দেই যে আপনার ক্ষমতা শেষ। এখন আপনি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা। এটি যেকোন মানুষের জন্য চরম অসম্মানজনক।

৩। এসব মানুষের জীবনযাপনে আকষ্মিক ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে তাঁদের মনের উপর খুব বেশী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

৪। কেউ কেউ এই পরিবর্তন মেনে নিতে না পারার কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

৫। সামান্য অবহেলা বা অনাদরে তাঁরা খুব বেশী কষ্ট পান। কারণ তাঁরা মনে করেন, আয় না থাকার কারণে তাঁদেরকে আর কেউ দেখতে পারছেনা।

৬। যত বড় ক্ষমতাবান মানুষই হোন না কেন, আমাদের সমাজ এসব মানুষদের আর সেভাবে মূল্যায়ন করেনা। তাঁরা পদে পদে অপমানিত হন।

৭। এসব মানুষরা কিভাবে সময় কাটাবেন, তা ভেবে পাননা।

৮। হঠাৎ করে আয় কমে যাবার কারণে এসব মানুষরা আর্থিক অনটনে পড়েন। এটিও তাঁদের মানসিক কষ্টের কারণ।

৯। এসব মানুষদের সময় কাটানোর বা যাবার কোন জায়গা থাকেনা। পুরনো কর্মস্থলে গিয়েও তাঁরা তেমন সম্মান পাননা। ফলে তাঁরা বোরিং সময় কাটান বা কাটাতে বাধ্য হন।

১০। আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষদের অবসর নিয়ে কোন পরিকল্পনা থাকেনা। ফলে অবসরে যাবার পর কি করবেন, কিভাবে দিন কাটাবেন, এসব বিষয় তাঁদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলে।

১১। সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত না হলে, পারিবারিক আরো কোন দায়িত্ব থাকলে তাঁদের মানসিক কষ্ট আরো বেশী।

১২। আমাদের দেশে সরকারী ওল্ড হোম নেই। ফলে বয়স্ক মানুষরা নানা ভোগান্তিতে দিন কাটান। বাড়ীতে বসে থাকেন আর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেন।

১৩। বয়সের কারণে অনেকে বেশী কথা বলেন। অবসর নেবার পর তাদের এই অতিরিক্ত কথা বলা অনেকেই পছন্দ করেননা।

১৪। আমাদের রোজকার কর্মব্যস্ততার কারণে আমরা এসব মানুষদের সময় দিতে পারিনা। অনেকে আবার বয়স্কদের সঙ্গ পছন্দ বা উপভোগ করেন না। এড়িয়ে চলেন। ফলে নিজ বাড়ীতেই কখনও কখনও এসব মানুষ বিচ্ছিন্ন, একাকী ও আনন্দহীন জীবন কাটান।

১৫। কখনও কখনও পারিবারিক কোন বিষয়ে এঁদের সাথে আলোচনা করা হয়না। এঁদের মতামত নেয়া হয়না। ফলে এঁরা আপনজনদের মাঝে থেকেও নিজেকে আপনজনের সাথে সম্পৃক্ত ভাবতে পারেন না। এই অনুভূতি ভেতরে ভেতরে তাঁদেরকে অসহায় করে দেয়। ইত্যাদি।

উন্নত দেশগুলোতে বয়স্কদের অবস্থা:

চাকরী থেকে অবসর নিলেও বা বুড়ো হয়ে গেলেও সমাজে তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়না। এঁরা আমাদের সম্পদ। অমূল্য অভিজ্ঞতার ঝুড়ি। তাই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এঁদেরকে মূল্যায়ন করা হয়।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে বুড়ো-বুড়ীরা বাড়ীতে একা একা থেকে যাতে নিজেদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ না করেন, সেজন্য সরকারী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় রয়েছে কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট সেন্টার বা দিবাকালীন সেবা আশ্রম। সারাজীবন সমাজকে অনেককিছু দিয়েছেন, কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শেষজীবনে তাঁদেরকে কিছুটা ভাল সময় উপহার দেয়ার জন্য এসব সেন্টার। কি অসাধারণ দর্শন! এসব সেন্টারের নিজস্ব পরিবহণে এঁদের আনা-নেয়া করা ও বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। এঁদের ভাল খাওয়া, বিনোদন ও নানা কিছু শেখানোর মাধ্যমে ব্যস্ত রাখা হয়।শারীরিক ও মানসিকভাবে এঁদের সুস্থ রাখার জন্য আছে ডাক্তার ও প্রফেশনাল ট্রেইনার।এঁরা এখানে বই পড়ে, নেট ব্রাউজিং, ফেসবুক, কম্পিউটার, নেটে পেপার পড়া, ইমেইল করা - এসব শেখেন। কোন কোন এলাকায় মায়েরা তাদের ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে আসেন এঁদের সাথে গল্প করতে, এঁদের বাড়ীর কাজে সাহায্য করতে বা সংগ দিতে। আসার সময় আনেন এঁদের জন্য উপহার, রান্না করা খাবার, বই ইত্যাদি। এসব দেখে দেখে শিশুরা অন্যের প্রতি অনুভূতিশীল হয়। আমরা এসব ফালতু কাজে সময়- শ্রম-টাকা নষ্ট করিনা। বাড়ীতে নিজের মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করার মানসিকতাই আমাদের নেই, সেখানে আত্মীয়, প্রতিবেশী বা সুবিধা বঞ্চিতদের কথা ভাববো কিভাবে?

বিদেশে বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনার জন্য সরকারী হোম আছে। সেখানে বয়স্কদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, দেখাশোনার জন্য লোক আছে। ফলে অসুস্থ বা বিছানাগত হলেও এসব মানুষদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়না।

উন্নত দেশগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্যও ভাতা আছে। প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের যাতে বাবা- মা 'বোঝা' মনে করে অবহেলা না করেন, সেজন্য এই ভাতা। বেকার ভাতা দেয়া হয় যাতে যুবক-যুবতীরা হতাশার কারণে কোন অপরাধে না জড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া চাকরী দিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। তাই সে অন্ততঃ ভাতা দিতে বাধ্য, যতদিন না চাকরী দিতে পারছে।

আমাদের দেশে বয়স্কদের অবস্থা:

কাজের মধ্যে বা একটা রুটিনের মধ্যে থাকলে মানুষের শরীর- মন ভাল থাকে। তাই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে মানুষ যতক্ষণ কাজ করতে পারে, ততক্ষণ তারা অবসর নেয়না। আর আমরা অবসরের পর আর কিছু করতে চাইনা। চাকরী বা কাজের সুযোগও কম। যেদেশে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী বেকার, সেখানে অবসরে যাওয়া মানুষদের কাজের সুযোগের কথা কেউ ভাবেনা। তাই অবসর গ্রহণের আগেই আমাদের কিছু কিছু পরিকল্পনা থাকা ভাল।

আবার, এর বিপরীতে আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারগুলোতে অবসর নিতে চাইলেও সংসারের চাকা সচল রাখার তাগিদ বয়স্ক মানুষগুলোকে কাজ করতে বাধ্য করে। এই মানুষগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। দরিদ্র পরিবারের অসুস্থতা বা বয়সের কারণে বিছানাগত বয়স্ক মানুষগুলোর দূর্গতি চোখে দেখার মত না।

আমির খানের একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক অনুষ্ঠান "সত্যমেব জয়তে" - তে দেখেছিলাম, ভারতের কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বৃদ্ধ, অসুস্থ বাবামাকে ( যারা আর সুস্থ হবেন না) তাদের সন্তানেরা বিষের ইনজেকশন দিয়ে খুন করছে।
অনেক সন্তান বাবামার অর্থ- সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

আমাদের দেশের অবস্থা এখনও অতটা খারাপ হয়নি। আমরা অন্তত বৃদ্ধ বাবামাকে খুন করিনা।

নচিকেতার "বৃদ্ধাশ্রম" - গানটি আমাদের সবার বিবেককে নাড়া দেয়। তারপরেও সবাই এসব বয়স্ক মানুষদের প্রতি সদয় নয়। রোজ অতি বৃদ্ধ মানুষকে রিক্সা চালাতে বা ভিক্ষা করতে দেখে ভীষণ খারাপ লাগে।

আমাদের দেশে বিছানায় পড়ে থাকা মানুষগুলোর দেখা শোনা কষ্টকর। পালা করে ছেলেমেয়ে বা ছেলের বৌরা তাদের দেখাশোনা করে। অনেকে এসব মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার করে। আমার এক পরিচিত আপা (যার বাবা দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থেকে থেকে পিঠে ঘা হয়ে গেছিল) কে বলতে শুনেছি, "এত কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আব্বার মরে যাওয়া ভাল।"

আমাদের দেশে স্বেচ্ছাশ্রমের ধারণাটা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বিদেশে কোন বয়স্ক মানুষ তাঁর ভারী ব্যাগ উঠাতে চেষ্টা করছেন দেখলে যেকেউ এগিয়ে এসে বলবে, "ক্যান আই হেল্প ইউ?" রাস্তায় আহত বা বিপদগ্রস্ত মানুষ দেখে কেউ এড়িয়ে যাবেনা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে অনেক মানুষ।

কিছুদিন আগে ভারতে এক পথচারীকে একটি অটো ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। হাজার হাজার মানুষ ও গাড়ি চলে গেছে সে রাস্তায়। একজন মানুষও লোকটিকে হাসপাতালে নেয়নি, শুধু এক রিক্সাওয়ালা তার পকেটের মোবাইলটি নিয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ সময় রাস্তা পড়ে থেকে বিনাচিকিৎসায় লোকটি মারা গেছে। ভারতের মিডিয়া মানুষের এমন অমানবিক আচরণ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়।

তেমনি বয়স্ক মানুষদের প্রতি আমাদের আরো বেশী মানবিক হওয়া প্রয়োজন। সরকারীভাবে বয়স্ক ভাতা বা বাবামার দেখাশোনা না করলে সন্তানের শাস্তির বিধান প্রবর্তন,.. এগুলো পর্যাপ্ত না হলেও ভাল উদ্যোগ। তবে তাঁদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানো এবং তাঁদের মানসিকভাবে ভাল রাখার বিষয়টিও সমান প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

আমাদের দেশে এসব অসহায় মানুষদের জন্য আর কি কি করা যায়?

ব্যাক্তি উদ্যোগে অনেকেই অনেক কিছু করেন। আমি এক সরকারী কলেজের প্রন্সিপালকে দেখেছি। রিটায়ার করার পর উনি বাচ্চাদের একটি স্কুল খুলেছিলেন যেখানে উনি ও ওনার স্ত্রী বিনা বেতনে পড়াতেন। কিছুদিন আগে সিলেটে বেড়াতে গিয়ে এক দম্পতির সাথে দেখা হল। তাঁরাও একটি স্কুল খুলেছেন। তাঁদের সন্তানরা থাকেন বিদেশে। তাঁরা সময় কাটানো আর সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে এটা করছেন।

বাংলাদেশের সব গ্রামে বিত্তবান মানুষ আছেন। প্রতিটা গ্রামের কিছু মানুষ এগিয়ে আসতে পারেন। সবার আগে এগিয়ে আসতে পারে স্কুলের ছেলেমেয়েরা। তারা সবাই মিলে টাকা তুলে বাবামার সাহায্য নিয়ে বৃদ্ধদের জন্য খাস জমিতে বা কারো দান করা জমিতে রাস্তার পাশে অন্তত একটি ক্লাব বানিয়ে দিতে পারে, যেখানে বুড়ো বুড়িরা গল্পগুজব করবেন, ইনডোর গেম খেলতে পারেন। ধনী কেউ কেউ সেখানে একটি টেলিভিশন, ফ্যান, খেলার সরন্জাম, বই,...এসব কিনে দিতে পারেন বা মাঝে মাঝে তাঁদের জন্য একটু ভাল খাবারের আয়োজন করতে পারেন। তাঁদের সাথে গল্প করে রোজ কিছু সময় কাটালেও তাঁরা নিজেদের অবহেলিত ভাববেন না। তাঁদের ভাল লাগবে।

এই কাজগুলো করতে গিয়ে আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েরা ব্যবস্থাপনা শিখবে, সততা, দায়বদ্ধতা, নৈতিকতা, আন্তরিকতা, মানবিকতা, ইত্যাদি শিখবে। সেইসাথে তারা ইভটিজিং, মাদকসেবন ইত্যাদি খারাপ কাজ থেকেও দূরে থাকতে পারবে।

যারা শিক্ষিত বয়স্ক মানুষ, তাঁরা সেখানে আগ্রহী ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারেন। বয়স্ক শিক্ষা, হাতের কাজ শেখানো, বই পড়া, গাছ লাগানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান,.....ইত্যাদি অনেক কাজ করা যায়। অনেক পরিবারে টাকার অভাবে বয়স্কদের চিকিৎসা বা অষুধ কেনা সম্ভব হয়না। গ্রামের কোন্ বৃদ্ধ মানুষের কি অবস্থা, তা গ্রামের সবাই জানে। তাই আমার মনে হয়, "দশের লাঠি, একের বোঝা" - নীতিতে চললে কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা কত টাকা বিলাসিতায় নষ্ট করি। আসলে প্রথমে দরকার - আমাদের মনে বয়স্কদের জন্য কিছু করার তাগিদ সৃষ্টি করা। তাহলেই সেটা সম্ভব।

শহরেও স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে এরকম কিছু করা যেতে পারে।

ভারতে বৃদ্ধদের জন্য ক্লাব আছে, পার্ক আছে। যেখানে তাঁরা সময় কাটান। সেখানে তাঁরা যোগব্যায়াম শেখেন, রান্না শেখেন, মুভি দেখেন। কেউ আবার আসেন শুধুই গল্প করে বিনোদন পেতে। ভারতের একটি গ্রামে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি অধ্যায় বাস্তব প্রয়োগ পদ্ধতিতে শিখতে গিয়ে পুরো গ্রামের ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড নির্মূল করেছি। আমির খানের ঐ অনুষ্ঠানেই দেখেছিলাম, স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে পুরো এলাকা বর্জ্যমুক্ত করেছে। একটি খরাপীড়িত এলাকায় জলাশয় খননের মাধ্যমে পানিসমস্যা দূর করে কৃষিকাজে সফলতা এনেছে। মানুষ চাইলে সব পারে। এমন হাজার উদাহরণ দেয়া যায়।

ঠাকুরমার ঝুলি - তে ঠাকুরমার কাছে গল্প শোনার জন্য শিশুরা সমবেত হয়। এমন একটা জায়গা পেলে আমিও যাব গল্প শুনতে। একসময় আমিও বুড়ো হব। তথন আমার কথাও কেউ ভাববেনা। একসময় মারা যাব, কেউ মনেও রাখবেনা। তাই যতক্ষণ বেঁচে আছি, মানুষের জন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে।

সরকারী উদ্যোগে হোম বা বৃদ্ধাশ্রম করা যায়, যদিও আমি তাঁদেরকে সেখানে রাখার বিপক্ষে। কারণ মানুষ নিজের পরিচিত পরিবেশে, আপনজনের মাঝে যতটা ভাল থাকে, কোথাও তেমন থাকেনা। প্রবাসীরা বা যাঁরা বাধ্য হয়ে প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকেন, তাঁরা এ বিষয়টি খুব ভাল জানেন। এক বৃদ্ধাশ্রমের মালিক ও তাঁর স্ত্রীর সাক্ষাৎকার শুনেছিলাম। তাঁরা তাঁদের আশ্রমে থাকা বয়স্কদের সম্পর্কে বলছেন, "আমরা এঁদের সব দিতে পারি, শুধু প্রিয় মানুষদের সংগ দিতে পারিনা, যেটা এঁরা সবসময় মিস করেন।"

কিছু মানুষ উদ্যোগ নিলে এমন একটা কিছু করা যায়। একটা পাড়া, মহল্লা বা ওয়ার্ডে কতজন বয়স্ক মানুষ আছে, তাঁদের কার অবস্থা কেমন,... এসব জানার পর সরকারী, বেসরকারী বা ব্যাক্তি উদ্যোগে এমন কিছু পরিকল্পনা হাতে নিলে আমরাও তাতে শরীক হতে পারি। তবে এ বিষয়ে স্হানীয় মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।

কেউ আছেন কি?

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮

রানা আমান বলেছেন: আসলে অবসর জীবনের জন্য ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা করার ভাবনাতেই আমরা অভ্যস্ত নই । আপনার আব্বার অবসর জীবন আনন্দে কাটুক এই প্রার্থনা করি । আ্লাহ উনাকে রোগমুক্ত র্দীঘজীবন দান করুন ।

১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


পশ্চিমের সমাজ ব্যবস্হা ও অর্থনীতি বয়স্কদের সাপোর্ট করতে পারছে, কারণ বুড়োরা যোয়ান থাকাকালী সেই সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্হা গঠন করেছেন, অবদান রেখেছেন; বাংলাদেশের সরকারী কর্মচারীরা জোয়ান থাকাকালীন ডাকাতী করেছে; ফলে, তারা যে একদিন বয়স্ক হবেন, সেকথা ভাবেননি, তাদের ছেলেমেয়েরা তাদের জন্য তেমন কিছু করবে না।

আর দরিদ্র বয়স্করা দারিদ্রতার কারণে একটু আগে মারা যাচ্ছেন, অবহেলিত হচ্ছেন।

আপনার বাবার যদি সঠিক অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তিনি উনার জন্য পথ বের বের করবেন; আশাকি, ভুতপেত্নীর কাহিনী লিখে সময় ব্যয় করবেন না।

১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: গাজী ভাই, আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আপনার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি বলেছি, আমার আব্বা লেখালেখি করেন। কিন্তু তিনি কি লেখেন, তা কিন্তু আমি বলিনি। তাই আপনি

"আপনার বাবার যদি সঠিক অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তিনি উনার জন্য পথ বের বের করবেন; আশাকি, ভুতপেত্নীর কাহিনী লিখে সময় ব্যয় করবেন না।" - একথা বলতে পারেন না। তিনি ভুতপেত্নীর কাহিনী লেখেন একথা আপনাকে কে বলল?

আপনার কাছ থেকে এমন বক্তব্য আমি আশা করিনি তাও আবার একজন বয়স্ক মানুষ সম্পর্কে। এর আগে বলেছিলাম, আমি ব্লগ ছেড়ে দেবার কথা ভাবছি। এবার বোধহয় সত্যিই আর থাকতে পারব না। ভাল থাকবেন।

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:




আপনার বাবার যদি সঠিক অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তিনি উনার জন্য পথ বের বের করবেন; আশাকরি, ভুতপেত্নীর কাহিনী লিখে উনি উনার সময় ব্যয় করবেন না।

১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমি আপনার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ বিষয়ে সহব্লগার, পাঠক ও মডুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫

কানিজ রিনা বলেছেন: চাঁদগাজী আমেরিকায় বসে বসে হুইস্কী খায়
খাওয়ার পরিমান বেড়ে গেলে ভুত পত্নী ঘারে
চাপে আর এমন সব মন্তব্য মারে।
চাঁদগাজী মন্তব্যে যত গালা গাল শুনে গন্ডারের
চামরা পুরো হয়েছে। কিছুদিন বেশ ভাল ছিল
আবার শুরু করেছে।

১০ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: বিষয়টা মডুদের দেখা উচিত বলে মনে করি।
আপনাকে ধন্যবাদ আপা। ভাল থাকুন।

৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

আমাদের সময় এসেছে ঘুণে ধরা এই মানুষদের নিয়ে ভাবার। যাদের অবদানে আমরা আজ, তাদের ভুলে একদিন হয়ত আমরা নিজেদে ভবিষ্যৎ নষ্ট করব। ওল্ড হোমের পরিবর্তে নিজ আপন জনের পাশেই হোক আমাদের আশ্রয়! খুবই যুগোপযোগী লেখনী!

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৬| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২০

মূর্ক্ষের পিতা হস্তী মূর্ক্ষ বলেছেন: Old is gold. mom

১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৪০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। ধন্যবাদ।

৭| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


স্যরি, আপনি ব্লগ ছাড়িয়েন না, আমি সুন্দর কমেন্ট করার চেস্টা করবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.