নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দারিদ্র্য ওদের আজন্ম অপরাধ

১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:১৮






দারিদ্র্য ওদের আজন্ম অপরাধ


মনোবিজ্ঞানীদের মতে, 'এবিউজার' ও 'ভিকটিম' - দুই পক্ষই অনেক সময় বুঝতে পারেনা যে তারা একটি অসম ও অস্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্যে আছে। না বুঝলেও এসব নির্যাতনের ফলে ভিকটিমের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পরিমাণ কমেনা। সাবিনাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন মূলত দূর্বল প্রতিপক্ষ শিশুর উপর সবল মালিকদের অত্যাচার। এই অসম শক্তির সংঘাত যুগে যুগে হয়ে এসেছে। কখনও দাম্পত্য সম্পর্কে, কখনও কখনও দেশ, জাতি, ধর্ম, গোত্র, অর্থ, ক্ষমতা তথা যেকোন অসম সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এ সংঘাত শাসক ও শোষিত, দূর্বল ও সবল, ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাহীনের মধ্যে বিরাজমান।

আমাদের সবার বাড়ীতেই নানা কাজের জন্য নানা বয়সের নানা কাজের লোক আছে। অনেক উচ্চশিক্ষিত, বুদ্ধিমান, ধনী ও বিখ্যাত মানুষরা যেহেতু এসব নির্যাতনের সাথে জড়িত এবং এসব নির্যাতনের পরিমাণ যেহেতু অনেক, তাই আমাদের উচিৎ হবে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু সিরিয়াস আলোচনা করা। এখানে সাবিনাদের যেমন কিছু সমস্যা আছে, তেমনি বাড়ীর কর্তৃদেরও কিছু সমস্যা আছে। এই উভয়বিধ সমস্যা সাবিনাদের নির্যাতিত হবার পিছনে দায়ী। আসুন দেখি সেগুলো কি কি।

সাবিনাদের সমস্যাঃ

১। কমবয়সী হবার কারণে এরা কাজে অপটু হয়। শারীরিকভাবে সক্ষম নয় বলে কাপড় কাচা, মশলা করা, ঘর মোছা, রান্না করা, ইত্যাদি সব কাজে পারদর্শী হয়না, ভুল করে বা কর্তৃর মনমত করতে পারেনা। ফলে তারা নির্যাতিত হয়।

২। এরা বেশীরভাগ গ্রাম থেকে আসে। বয়স ও বুদ্ধি কম। শহুরে সব কাজ বোঝেনা। ওভেন, ফ্রিজ, গ্যাসের চুলা,. এগুলোর ব্যবহার ঠিকমত জানেনা। ফলে কাজে ভুল করে।

৩। নির্যাতিত হলেও এদের বাবামা প্রতিবাদ করতে পারেনা। কারণ নির্যাতনের কথা তারা জানতেই পারেনা। একারণে তারা নির্যাতিত হয়।

৪। সব বাসাতে এদেরকে ঠিকমত খাবার দেয়া হয়না, সব খাবার দেয়া হয়না। সবার খাওয়া হলে এরা খাবার পায়। বাসি, খারাপ খাবারগুলো দেয়া হয়। ফলে এরা ভাল ভাল খাবারের লোভ সামলাতে পারেনা, চুরি করে খায়। কখনও কখনও লোভে পড়ে টাকা বা দামী জিনিস ও চুরি করে।

৪। বয়স কম বলে দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেনা। কাজে ফাঁকি দেয়।

৫। শিশু মন সদা চঞ্চল। তাই হুকুম বা কাজের কথা মনে থাকেনা। প্রায়ই হুকুম ভুলে যায়। বার বার বলা সত্ত্বেও একই ভুল বার বার করে।

৬। বয়স কম হবার কারণে এদের কাজের চেয়ে খেলার বা টিভি দেখার নেশা বেশী ।

৭। এদের মধ্য পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার গরজ ও বোধ কম। ইত্যাদি।

৮। এদের প্রতি বাড়ীর ছেলেদের কুনজর বা সম্পর্কের কারণেও এরা নির্যাতিত হয়।


বাড়ীর কর্তৃদের সমস্যাঃ

১। বেশীরভাগ কর্তৃরা সব কাজ তাদেরকে দিয়ে করাতে চান। এই মানসিকতা নির্যাতনের জন্য দায়ী।

২। ধনী বা ক্ষমতাবানরা সহজে কাজের লোক পান। ফলে কাজের লোকেদের প্রতি এদের টান থাকেনা, কাজের লোকের প্রতি এরা সহজে নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে।

৩। এসব কর্তৃরা কাজের লোককে আপন ভাবতে পারেনা, তাদের প্রতি মমতা থাকেনা। তাই এরা খুব সহজে নির্যাতন করতে পারে।

৪। এসব কর্তৃদের মানসিক স্বাস্হ্য ভাল নয়। এরা কাউকে নির্যাতন করা অন্যায় মনে করেনা। এরা নিজেদের ব্যক্তিগত হতাশা, রাগ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সাবিনাদের নির্যাতন করে;

৫। এরা নিজের আবেগকে নিয়ণ্ত্রণ করতে জানে না। ফলে অতিরিক্ত রাগের কারণে শিশুদের মারে।

৬। সাবিনাদের শারীরিক বা মানসিক শাস্তি দেবার অপরাধে ক্ষমতাবান কারো শাস্তি হয়না। তারা টাকার জোরে পার পায়। তাই নির্দিধায় নির্যাতন করে।

৭। সাবিনাদের সাথে যেকোন আচরণ করলে কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। এরা প্রতিবাদ করতে পারেনা। নীরবে সব সহ্য করে যা অপরাধীদের দুঃসাহস বাড়ায়।

৮। নির্যাতন করলেও সাবিনারা কোথাও পালাতে পারেনা। এদের যাবার কোন জায়গা নেই। কেউ তাদের সাহায্য করেনা।

৯। রান্নাঘরে গরম তেল, খুন্তি, আগুন, বেলুন,... এগুলো হাতের কাছে থাকে যা দিয়ে আঘাত করার ফলে সাবিনারা সহজেই গুরুতর জখম হয়।

১০। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারাই নির্যাতন করে যারা নিজেরাও নানা সময়ে অন্যের দ্বারা নির্যাতিত হয় এবং হতাশাগ্রস্ত থাকে।

১১। একটা বাচ্চার পক্ষে কতটা কাজ করা সম্ভব, সে বিষয়ে আমাদের বোধ, বিবেচনা থাকেনা। ফলে আমরা তাদের উপরে তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত সব কাজ চাপাই। না পারলে নির্যাতন করি।

১২। নির্যাতনকারীর বাড়ীর লোকজন, আত্মীয়, প্রতিবেশী, অনেকেই নির্যাতনের কথা জানলেও কেউ নির্যাতনকারীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেনা বরং সমর্থন করে। এটিও কারণ।

১৩। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থায় একটি মেয়ে ছোটবেলা থেকে দেখে, সংসারে ভাই, বাবা বা অন্য পুরুষরা ক্ষমতাবান। তারা মেয়েদের শাসন করে, করতে পারে। মেয়েটি বৌ থাকা অবস্থায় পুরুষ, শাশুড়ী, ননদরা তাকে দেখতে পারেনা, নির্যাতন করে। যখন সে মা হয়, তখন ছেলেমেয়েও দেখে, মাকে বাবা নির্যাতন করে, করতে পারে। তারাও শেখে যে মেয়েরা নির্যাতিত হবারই যোগ্য। নিজে নির্যাতিত হতে হতে মেয়েরা ধরেই নেয়, দূর্বল মেয়েদের উপর নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই যখন সে শ্বাশুড়ী, ননদ, বাড়ী বা অফিসের কর্তৃ... এরকম ক্ষমতাশীল হয়, তখন নিজেও নির্যাতন করে। অর্থাৎ মেয়েরা নির্যাতন করতে শেখে নিজে নানা সময়ে পুরুষ ও নারী দ্বারা নির্যাতিত বা অবহেলিত হয়ে হয়ে। পুরুষরা নির্যাতন না করলে হয়তো মেয়েরাও করত না।

আমাদের বিবেক মৃতপ্রায়। তাই সভ্যতার এই সংকট অনন্তকালের। এর কোনও শেষ নেই। কারণ আমি, আপনি আমরা সবাই এরমধ্যে রয়েছি। আমরাও এসব অপরাধের জন্য সমানভাবে দায়ী। আমরা শিক্ষক, বিচারক, নেতা, সমাজের বিবেকবান, শিক্ষিত, ক্ষমতাবান মানুষরা সমাজের এ স্খলন ঠেকাতে পারছি না। তাই আমরা যে যার ক্ষেত্রে সবাই ব্যর্থ।

সুষ্ঠু রাজনৈতিক, সামাজিক পরিবেশ ও সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারা এসব অপরাধের ব্যাপক বিস্তৃতির মূল কারণ। এগুলো প্রতিষ্ঠা করবে কে?


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

তানুন ইসলাম বলেছেন: সব থেকে বড় কথা হলো ,আমাদের দেশের আইনের হাতকড়া লাগানো ,এরা বার বার ই মোটা অংকের টাকা প্রশাসন কে দিয়ে পার পেয়ে যায় ,আইনের রক্ষকরা ও অপেক্ষা করে এমন কেস হাতে পাওয়ার জন্য,তাই আমি মনে করি,আমরা নিজেরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই,তাহলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোন উপায় নাই

১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে অপরাধী যেই হোক, অপরাধ করে পার পাবেনা, ঘুষ খেয়ে কেউ তাকে শাস্তি তেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবেনা। ধন্যবাদ।

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯

মূর্ক্ষের পিতা হস্তী মূর্ক্ষ বলেছেন: Do you have any sympathy with poor people ,victims ? not only want to be a bogger/ famous / publicity myself etc. You are also blue blood. Like him monster. I can't hurt you mom. It is a great sin. Physical , financial & spiritual hurt.

১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: "আমরাও ( আমি সহ) এসব অপরাধের জন্য সমানভাবে দায়ী। আমরা শিক্ষক, বিচারক, নেতা, সমাজের বিবেকবান, শিক্ষিত, ক্ষমতাবান মানুষরা সমাজের এ স্খলন ঠেকাতে পারছি না। তাই আমরা যে যার ক্ষেত্রে সবাই ব্যর্থ।"

ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৪

মূর্ক্ষের পিতা হস্তী মূর্ক্ষ বলেছেন: Death penalty or have to push in boiling egg in his/her anal/vagina. This is solved. FBI theory.

১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: Not bad at all.

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০০

মূর্ক্ষের পিতা হস্তী মূর্ক্ষ বলেছেন: Hey Dear
I am very sorry for above comments. Because sabina is victim. Pray for her. Nothing to do

১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন:
"Nothing to do" - একমত নই। লেখালেখি, সমালোচনা হচ্ছে। এতে অপরাধীরা ঘৃণিত হচ্ছে। এটাও একরকম শাস্তি। আর
"সুষ্ঠু রাজনৈতিক, সামাজিক পরিবেশ ও সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারা এসব অপরাধের ব্যাপক বিস্তৃতির মূল কারণ। এগুলো প্রতিষ্ঠা করবে কে?" - এসব পড়ে যাদের এগুলো ঠেকানো উচিত, তারা জনমতের চাপে হলেও কিছুটা নড়েচড়ে বসবে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.