নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক আন্দোলন: স্বপ্ন ও বাস্তবতা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৭



একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্যে একদল ত্যাগী, নিষ্ঠাবান, সামাজিক সেবা প্রদানকারী স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন রয়েছে। সফল স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন গুলোকে মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ একদল লোকের আন্দোলন বললে ভুল হবে না। কোন একটি সেবাকে জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে প্রয়োজন পরে যোগ্য নেতৃত্ব ও দক্ষ কর্মী বাহিনীর। বিভিন্ন সভা-সমিতি, সেমিনার, খোলা প্রশ্নোত্তর, চা-চক্রের আড্ডা, মতবিনিময় সভার মাধ্যমে একই ধরনের চিন্তা অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। আকর্ষণীয় নেতৃত্ব গণবক্তৃতার মাধ্যমে নতুন ভাবধারায় মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারে। সুশিক্ষা ও প্রয়োজনীয় নৈতিক মূল্যবোধ ব্যক্তি পরিবারের গন্ডি ছাড়িয়ে সামাজিক সামষ্টিক মূল্যবোধ হিসাবে উপস্থাপিত হয়।



দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে, বাস্তব জীবনী ভিত্তিক গভীর বিশ্বাস ও মানবসেবার প্রচার করা যায়। গণতন্ত্রের ওপর অগণতান্ত্রিক বাধা, জনজীবনে ধর্মীয় আচার পালনে বাধা এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বা আদর্শিক সশস্ত্র সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নেয়া যায়। ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও গোটা মানবতাকে নিয়ে সামগ্রিক চিন্তাধারার আবেদন স্বাভাবিক কারণেই শক্তিশালী। দারিদ্র্য, পারস্পরিক শত্রুতা বিশেষ করে ধর্মবিভেদ, সুশিক্ষার অভাব বহুবিধ সামাজিক সমস্যার মূল কারণ। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা মোটেই সহজ নয়। তবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে শুধু নিজের সেবা না করে অন্যদের সেবার চিন্তাও করতে হয়; শুধু নিজের কথা চিন্তা না করে মহৎ ভিশন নিয়েও ভাবতে হয়। সমৃদ্ধ দেশ ও শান্তিপূর্ণ মানবতার কথা বলাটা যত সহজ এটা বাস্তবায়ন তত কঠিন।



মিডিয়া, স্বাস্থ্যসেবা, আকস্মিক বিপর্যয়ে সহায়তা দান, দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচি জনগণের নিকট আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। নাগরিক দায়িত্ববোধের চেতনায় প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কোনো পার্থিব প্রতিদান আশা না করে মানব সমাজের দায়িত্ব পালন করা সবার দ্বারা সম্ভব হয় না। প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে সমাজের সকল প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। বিচারবিভাগ, শাসনবিভাগ, সামরিক বাহিনী, মিডিয়া, শিল্পকলা ও ব্যবসা সর্বত্রই সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের দায়িত্বশীল নাগরিকরা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি পরায়ণ ও চরিত্রহীন লোকদের হাতে অর্পণ করলে তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা সচেতন ব্যক্তি মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন।



অপরিকল্পিতভাবে কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেই সামাজিক বিপ্লবের জন্যে কাজ করা হয়ে যায় না। সমাজকল্যাণমূলক কাজ ব্যাপকতা পেতে পারে না নেটওয়ার্ক তৈরি ছাড়া। স্কুল-কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া নেটওয়ার্ক, পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও, সংবাদ সংস্থা, সিনেমা ও নাটকের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করার মতো অবস্থা তৈরি হলেই কেবল একটি মানে পৌছায়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। সমাজ সংস্কার, পরবর্তী জেনারেশনকে জ্ঞানের আলোয় বিকশিত করা, ভবিষ্যতে তাদেরকে সঠিক নেতৃত্বদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সব দল ও মতের সাথে,সম্পর্ক রাখতে পারার সক্ষমতা অর্জন জরুরী। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সব ধর্মাবলম্বীর মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করে সর্বত্র। একটি শক্তিশালী কল্যাণমূলক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের বুদ্ধি ও কলাকৌশল ব্যবহার করা উচিত। এর জন্য উচিত আধুনিক টেকনোলজির সুযোগ কাজে লাগানো, মিডিয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক উন্নয়নে পাশ্চাত্যের সমান্তরাল থাকা।



আবশ্যকীয় সামাজিক সমস্যার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তরুণ সমাজকে আহ্বান জানাতে হবে যাতে তারা মানবতাবাদ, মানবাধিকার ও জ্ঞান ভিত্তিক তৎপরতার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোকায়নের কাজ করে। শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্যে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যেই দেশ ও জাতির স্বার্থ সর্বোত্তমভাবে নিহিত। শান্তি ও নিরাপত্তা বিকাশে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকে অত্যন্ত সক্রিয়, উদ্যোক্তা চেতনা জোরালো করতে হবে। এর জন্য অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাদের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন হবে। অর্থনৈতিক পর্যায়ের সহযোগিতা ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী হতে হবে।



বিশ্বায়িত পৃথিবীতে কোনো দেশই এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নয়। আমরা এখন এমন এক বিশ্বে বাস করছি যেখানে রাষ্ট্র, নেতৃবৃন্দ ও জনগণ ক্রমবর্ধমান হারে দৈনন্দিন ভিত্তিতে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। প্রায় প্রতিটি জিনিস তথা পণ্য, ব্যক্তি, পুঁজি ও আইডিয়া সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে, বিনিময় হচ্ছে। বিশ্বের একটি অংশের কোনো ঘটনা অন্য অংশে একই সাথে শ্রুত হচ্ছে এবং দেশে দেশে দ্রুত তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। এসব কারণে কোনো দেশই আর বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকতে পারে না বা সমৃদ্ধ হতে পারে না।



সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সহযোগিতা, সমঝোতা ও সহিষ্ণুতার মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। সঙ্ঘাত বা সম্ভাব্য সঙ্ঘাত নিরসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে একত্র করা, সার্বজনীন মূল্যবোধ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের শিকারদের প্রতি সমর্থন দান, পশ্চাৎপদদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করতে হবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার সাধন এবং মর্যাদা, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা এবং একই সাথে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নারী-পুরুষ সাম্যের মতো সার্বজনীন মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিশেষ কোন রাজনৈতিকদলকে সমর্থন কিংবা আক্রমণ কোনটাই করা যাবে না।



আধুনিকতা, দেশপ্রেম, গণতন্ত্র, বিজ্ঞান, কলা এবং অন্যান্য ফলপ্রসূ কার্যাবলীর একটি সুসমন্বিত সংশ্লেষণ ঘটাতে হবে। বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা ও বিজ্ঞানের সমন্বয ছাড়া একটি অত্যুচ্চমানের ধারণার বাস্তব নমুনা জনসমক্ষে উপস্থাপন করা অসম্ভব। ঐক্যের প্রতীক হতে উদ্বুদ্ধ সংগঠকরা ব্যক্তি হতে কমিউনিটি, কমিউনিটি হতে জাতীয়, জাতীয় হতে আন্তর্জাতিক এবং আন্তর্জাতিক হতে পুরো মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রচার করবে। নৃতাত্বিক পরিচয়, সংস্কৃতি, ধর্ম, সামাজিক শ্রেণী তথা সকলক্ষেত্রে বৈষম্য ও ভেদাভেদ তৈরির বিপক্ষে অবস্থান করবে। সহিংসতা কখনই নয়। সামাজিক আন্দোলনে যোগদান কিংবা নির্গমন পুরো স্বাধীন ও স্বেচ্ছাধীন থাকবে। কার্যক্রম যথেষ্ট উন্মুক্ত থাকবে যাতে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে। অংশগ্রহণ কিংবা বিযুক্তিকরণ পুরোটাই হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত।



সামাজিক আন্দোলনে মানবকল্যাণমূলক চিন্তার উপস্থিতি থাকবে এবং আত্মসেবা ও আত্মপূজার অনুপস্থিতি থাকবে। নিজেদের কোনো সম্পদ অর্জনের পেছনে ছুটা যাবেনা এবং নিজেদের আত্মীয়দের অর্থ-সম্পদের পিছনে ধাবিত হতে অন্যুৎসাহিত করতে হবে। নিজ নিজ বিশ্বাস, চিন্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও গণতন্ত্রের বিকাশের প্রতি কমিটমেন্ট থাকতে হবে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে- নির্দলীয় অবস্থান। রাজনৈতিক কোনো কারণ বিবেচনায় আন্দোলনের মাঝে কোনো বিভাজন থাকবে না। প্রতিটি নাগরিককে দেখতে হবে ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময়ী অংশী হিসেবে। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো প্রার্থীকে সাংগঠনিকভাবে সমর্থন দেয়া যাবে না।



গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরতে হবে- গভীর বিশ্বাস, পরার্থবাদ, সাম্য, সহিষ্ণুতা, ভালোবাসা, আশা, বিনম্রতা, সৌজন্য, সহানুভূতি, যুক্তিবোধ, আধ্যাত্মিকতা, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা। আলোচনার বিষয় হতে পারে- সামাজিক সুবিচার, নৈতিকতা ও সদাচরণ, পরিবার ও শিশু শিক্ষা, মানবতাবোধ জাগ্রতকারি গুণাবলী, মহামানবদের জীবনী, ভাগ্য ও স্বাধীন চিন্তা, বিশ্বাস, অন্তররাজ্য, ধর্ম ও বিজ্ঞান, ব্যবসা, অর্থনীতি ও মিতব্যয়িতার ব্যাপারে যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গী ইত্যাদি।



নানা দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানি গড়ে ওঠতে পারে। যেমন-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া হাউজ, স্বাস্থ্যসেবা, বিপর্যয়কালীন সাহায্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্য। এগুলো হবে বিকেন্দ্রীকৃত; একক কোনো সংগঠনের চারপাশে এরা ঘনিষ্ঠভাবে অঙ্গীভূত থাকবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সিলেবাসে কোনো ধর্মীয় বই থাকবে না। নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান সীমাবদ্ধ হবে না। আর এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হবেন- স্থানীয় ব্যবসায়ী, পরহিতব্রতী বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা। সব স্কুলই বৈরিতামুক্ত, আন্তঃধর্মীয় সহমর্মিতা ও বহুধাভিত্তিক সংস্কৃতির একেকটি নমুনা হবে। এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস ও যুক্তির সুসমন্বয়ে এবং গোষ্ঠী মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকবে।



এমন প্রকাশনা কোম্পানি থাকতে হবে যারা বিভিন্ন ভাষায় বই-পত্র প্রকাশ করবে এবং শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে প্রভাব রাখবে। প্রথমে এজন্যে বিনিয়োগের জন্যে উদ্যোক্তা এবং পান্ডুলিপি তৈরির জন্যে লেখক লাগবে। ভবিষ্যতে স্থানীয় ও জাতীয় টিভি, নিউজ পেপার,সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিন,নিউজ এজেন্সি এবং রেডিও স্টেশনও লাগতে পারে। বিপর্যয়কালীন সাহায্য এবং মানবতাবাদী সেবার জন্যে রিলিফ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে হবে।



সামাজিক আন্দোলনের অংশীরা সপ্তাহে এক দিন চা পার্টিতে অংশ নিতে পারে এবং কোনো না কোনো আত্মিক, নৈতিক বা আধ্যাত্মিক বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবীদের সাথে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে যোগাযোগ করতে পারে। প্রকাশিত প্রকাশনা, অডিও ক্যাসেট, ভিডিও ক্যাসেট এবং অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে মোটিভেশন চালাতে পারে। পরিচালিত দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য সেবা, বৃত্তি প্রদান কার্যকলাপ ইত্যাদির মাধ্যমেও প্রচারণা চালায়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারে।



সামাজিক আন্দোলনে প্রত্যেক সদস্যই তাদের সময় ও সম্পদের কিছু না কিছু আন্দোলনে অবশ্যই খরচ করবে। কাউকে এখানে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হবে না। সকল দান বা চাঁদাই হচ্ছে স্বেচ্ছাকৃত। অংশগ্রহণ হবে স্বতঃপ্রবৃত্ত এবং এখানে কোনো সদস্য পদ সিস্টেম থাকবে না। স্বেচ্ছাসেবীরা অংশগ্রহণ করবে আর্থিক অনুদান এর মাধ্যমে, আন্দোলনের কাজে সময় দানের মাধ্যমে, মহিলাদের চালিত বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে, নিজেদের বাসায় অন্যান্য অতিথির বা মিটিং আয়োজনের মাধ্যমে। মূল্যবোধ, বিশ্বাস, পরার্থবাদ, আলাপ-আলোচনা, সহিষ্ণুতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সমাজ-কাঠামোর উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালানোকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করলে অবশ্যই কিছু সমর্থক পাওয়া যাবে।



একটা সময় স্বেচ্ছাসেবীদের সামষ্টিক প্রচেষ্টার সাথে জড়িত হতে পারে হাজার হাজার ফাউন্ডেশন, কোম্পানি, পেশাজীবী সংগঠন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। আর এসব সংগঠনের মধ্যে গাঁথুনি হিসেবে কাজ করবে মূল্যবোধ ও আদর্শ। এসব সংগঠন একে অপরকে সহযোগিতা করবে তাদের কর্মদক্ষতা অর্জনের জন্য। মনে রাখতে হবে-রাষ্ট্র সামাজিক শৃঙ্খলা, মানবাধিকার, ব্যক্তিক অধিকার, ন্যায় বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জামিনদার। বেশী বাড়াবাড়ি করা যাবে না। স্বাধীনতা ও আইনের শাসন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র ব্যবস্থার অস্তিত্ব জরুরি তবে শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ কমিউনিটিও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক সিস্টেমের অধীনে কমিউনিটিই অধিক প্রয়োজন। ইসলামিক রাষ্ট্র নয় বরং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবি করা যেতে পারে।



ভুলে গেলে চলবে না, গণতন্ত্র হতে পশ্চাদপসরণের কোনো সুযোগ নেই। একজন অবিশ্বাসীকে যেমন কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই বাস করতে দেয়া উচিত তেমনি একজন বিশ্বাসীকেও পরিপূর্ণভাবে তার ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের সুযোগ দেয়া উচিত। মানব উদ্ভাবিত শাসনপদ্ধতির মধ্যে গণতন্ত্রই সর্বোত্তম। গণতন্ত্র ক্রমাগত তার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবে এবং সকল দেশে গণতন্ত্র ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও উন্নয়ন, বাক স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণের জন্য অপরিহার্য। রাজনৈতিক শোষণ বন্ধ হয়ে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে। আর অধিক গণতন্ত্রায়নের ফলে স্বচ্ছতা বাড়বে, দুর্নীতি কমবে, সুস্থ অর্থনৈতিক প্রতিযোফগতা এবং জীবনমান বৃদ্ধি পাবে।



অঝথা বিতর্ক সৃষ্টি ও হাঙ্গামার পথ পরিহার করার দৃষ্টিভঙ্গি উদার ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা রাখতে হবে। বড় বড় কথা বলার চেয়ে-দারিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার লাঘব হওয়া দরকার; দেশীয় ও সুস্থ সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোর উপর জোর দেয়া দরকার; গ্রামীণ সমাজেরও শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার; কূটনীতি ও শক্তি প্রয়োগের মাঝে সাম্য থাকা দরকার। রাজনৈতিক কারণে কোন নাগরিকের ওপরই অত্যাচার চালানো সঠিক নয়। প্রচলিত দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা নাগরিকের কর্তব্য। ধর্ম কোনো সংঘাতের কারণ নয় এবং ধর্মকে সংঘাতের কোনো কারণ হতে দেয়াও উচিত নয়। যে কোন ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। রাজনৈতিক নৈরাজ্য, ক্রমাগত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হিংসাত্মক কার্যক্রমের বিরোধিতা করতে হবে।



লেখার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কলা উভয়কেই প্রমোট করতে হবে। মানব সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞান অপরিহার্য। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। মানব মনের উৎকর্ষ সাধনে শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় এনে সংস্কৃতি চর্চার উপর জোর দিতে হবে। দেশপ্রেম থাকবে তবে সাম্প্রদায়িক ভেদনীতি কিছুতেই নয়। ফালতু আলোচনা সমালোচনায় সময় নষ্ট না করে আবশ্যকীয় সামাজিক সমস্যার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। তরুণ সমাজ যাতে তারা মানবতাবাদ, মানবাধিকার ও জ্ঞান ভিত্তিক আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোকায়নের কাজ করে-এটা নিশ্চিত করতে হবে।



কেবলমাত্র শহরের মধ্যেই কাজ সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। সংগঠদেরকে পুরো দেশ জুড়ে ভ্রমণ করতে হবে। সংগঠকদের সর্বত্র গমন সমাজের সকল প্রতিনিধিদের নিকট পৌঁছানোর সুযোগ এনে দিবে। বক্তব্যের বিষয় আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক; সব সময় হবে বৈচিত্র্যময়। বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করার মতো চিন্তার গভীরতা ও মান সম্পন্ন লোক তৈরি করতে হবে।

সামাজিক মঞ্চে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। সমাজসেবার মাধ্যমে সমাজের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন দরকার। ব্যক্তির পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন এবং সমাজ হতে রাষ্ট্র পরিবর্তনের কৌশল যে রাষ্ট্র হতে সমাজ, সমাজ হতে ব্যক্তি পরিবর্তনের কৌশল অপেক্ষা শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ তা ইতোমধ্যে অনেক দেশে প্রমাণিত হয়েছে। সমাজ সেবামূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে মানুষের মূল্যবোধের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানোর প্রচেষ্টা অধিকাংশ মানুষই সাদরে গ্রহণ করবে।



জনগণের কোন দলীয় সংযুক্তি কিংবা দলীয় আদর্শের প্রতি ঝোঁক সামাজিক আন্দোলনকারীদের বন্ধু বা সহকর্মী হতে বাধা হতে পারে না। উদ্দেশ্য হবে সচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলা, আধুনিকতা, গণতন্ত্র ও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো যাতে এসব বৈশ্বিক প্রক্রিয়াসমূহ থেকে সুবিধা বঞ্চিত মানুষেরাও লাভবান হতে পারে ।



শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিচারবিভাগ, শাসনবিভাগ, সামরিক বাহিনী, মিডিয়া, শিল্পকলা ও ব্যবসা সর্বত্রই সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। মহ্ত্ত্ব দ্বারা হৃদয় জয় করতে হবে। খারাপকে খারাপ দিয়ে উত্তর দিয়ে দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না। যারা মানব কল্যাণে নিয়োজিত তারা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে অন্যের মঙ্গল কামনায় থাকে। রাজনৈতিক ময়দান দখলের চেয়ে মানুষের চিন্তার জগৎ দখল করার সার্থকতা অনেক বেশি। ধর্ম কোনো সংঘাতের কারণ নয় এবং ধর্মকে সংঘাতের কোনো কারণ হতে দেয়াও উচিত নয়।



সামাজিক আন্দোলন বা নেটওয়ার্কের আনুষ্ঠানিক কোনো কাঠামো বা সাংগঠনিক অবয়ব সবসময় জরুরী হয় না। সব সময় ষড়যন্ত্রকে জয় করার চেষ্টা করতে হবে জনসমর্থন দিয়ে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের অবস্থা উন্নয়নে পদক্ষেপ জনসমর্থনকে বাড়ায়। সহাবস্থান ও সহিষ্ণু পরিস্থিতি তৈরিতে ভুমিকা রাখতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০

সাকিব২ বলেছেন: Sir, "মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সামাজিক আন্দোলন।" এই বিষয়ের রচনায় কি কি পয়েন্ট দিব??


আপনাদের এই পোষ্টটি দেখে প্রশ্নটি করলাম.


কারন রচনাটা দরকার।

Help me, please.

২| ০২ রা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১

সাকিব২ বলেছেন: Sir, "মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সামাজিক আন্দোলন।" এই বিষয়ের রচনায় কি কি পয়েন্ট দিব??


আপনাদের এই পোষ্টটি দেখে প্রশ্নটি করলাম.


কারন রচনাটা দরকার।

Help me, please.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.