নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুসংস্কারের সাংস্কৃতিক চর্চা (!) ও আধুনিকতার নির্মাণ (এক)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:০১

আধুনিকতা ও উন্নতির এই যুগেও এমন অনেক বিশ্বাস ও চর্চার অস্তিত্ব রয়েছে যার কোনই যৌক্তিকতা (!) নেই। প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস বা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা ধারণা চেতনায় এতটা বদ্ধমূল হয়ে থাকতে পারে যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার সময়েও সামান্যতম বিচার বিশ্লেষণ করে পরিবর্তিত অবস্থান অনেকেই গ্রহণ করতে চাইবেন না। এমন কিছু চর্চা থাকতে পারে যা কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ, যা স্থানান্তরিত যোগ্য হয়ে ওঠেনি কিংবা এখনও স্থানান্তর করা হয়নি । বহুবিধ কুসংস্কারকে এখনও প্রথা-নিয়ম-শুভ পদ্ধতি বলে অনেকে চালিয়ে দেন। আধুনিকতাকে আমরা যতই অপরিহার্যর বলে গ্রহণযোগ্য করে তুলি না কেন তা সবার কাছে সমান আবেদন কখনই সৃষ্টি করে না।



কেউ অসুস্থ হলে কবিরাজের কাছে যায়,কেউ মাজারে যায়, কেউ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যায় আবার কেউ পল্লী চিকিৎসকের কাছে যায়। এই যে আচরণগত পার্থক্য এটা শুধুমাত্র জ্ঞানগত পার্থক্য বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতার কারণে ঘটে এমনটি মনে করা চরম ভুল। এর পেছনে অর্থনৈতিক অবস্থা ও আদর্শগত বা বিশ্বাসগত ভিন্নতাও অপরিহার্য্য কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় জ্ঞান গুলো জীবনের দিক নির্দেশনাকারী প্রক্রিয়া হিসেবে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে যে, এই জ্ঞান গবেষিত বিশেষায়িত অনেক জ্ঞানকেও মোটেই মূল্যায়ন করবে না। অনেক সময় “আধুনিকতার চিহ্ন” গুলো এমন এক ধরনের পরিব্যপ্তিমূলক আদর্শ হিসাবে বিবেচিত হয়ে পড়ে যা বিশ্বের কোন কোন জায়গায় স্থানিক ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।



মনে নতুন এক ধরনের প্রশ্ন উদিত হতে পারে যে আধুনিকতার সার্বজনীনতা আছে কি? একজন নারী খোলামেলা পোশাক পড়ে পরপুরুষের সাথে ঘুরে বেড়ানোকে “আধুনিকতা” ভাবছে এবং হিজাবকে প্রগতির অন্তরায় ভাবছে আরেকজন হয়তো মডার্ণ ফ্যাশনকে বেহায়াপনা বা অশ্লীলতা ভাবছে। প্রশ্ন হতে পারে কে বেশি আধুনিক? এই প্রশ্ন উঠলে আরেক প্রশ্ন ওঠে রায়টা কে দেবে ? কেন দেবে? তখন ক্ষমতা সম্পর্ক ও নির্মাণ বিনির্মাণের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে।



কোনটি “কুসংস্কার” আর কোনটি আধুানকতা এটা পরিমাপের মানদন্ডটা কি? “আধুনিকতা” কিভাবে আকার ধারন করে আর কিভাবেইবা এদেরকে পরিমাপ করা যায়? দীর্ঘ সময় ধরে কোন বিশেষ ব্যাপারে অব্যাহত প্রচার প্রচারণার ফলে দৃষ্টিভঙ্গিগত ও চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন সাধিত হয়। কোন জনগোষ্ঠীকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক তার চর্চাগত কোন ব্যাপারে যথাযথ উন্নতি করার চেষ্টা করা আর চাপিয়ে দেয়াটা কিন্তু এক কথা নয়। “আধুনিকতা” এবং “কুসংস্কার” ; “যৌক্তিকতা” এবং “যাদুবিদ্যা” সম্পূর্ণ একই রকমভাবে দেখতে চাইলে বহুবিধ দ্বন্দ্ব তৈরি হবে।এই দ্বন্দ্বের একদিকে রয়েছে যৌক্তিক জ্ঞান এবং অন্যদিকে রয়েছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হাতুরে জ্ঞান।



অতিমাত্রায় প্রচলিত কোন কুসংস্কার কিভাবে আসল তা বের করার উপর বেশি জোড় দেয়া, স্থানীক বিশ্বাস কিভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছড়ালো এবং এদের শক্তিশালী দিক গুলি সম্পর্কে খোঁজাটা সমাজ ও সংস্কৃতি বুঝার ক্ষেত্রে মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একটি আচার যা একটি সময়ে“কুসংস্কার” হিসেবে পরিগনিত হতো সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন উৎসবে ছড়িয়ে পড়ার ফলে তাও “জাতীয় সংস্কৃতি” হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা অসম্ভব নয়। যারা আচার পালন করে, আর যারা এ সম্পর্কে আইন করে তারা এক নাও হতে পারে। ক্ষমতাবানরা তার ভাষা, আচার আচরণ, সংস্কৃতিকে অন্যদের পশ্চাদপদ বিবেচনা করে শিখানোর দায়িত্বভার গ্রহন করে।



ছোটদের দাঁত উঠলে ইদুরের গর্তে ফেলা, কোকিল ডাকলে অতিথি আসা, কোথাও যাত্রার শুরুতে বিধবা নারী দেখলে যাত্রা অশুভ হওয়া- এসব আচরণ যারা করে তারা কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা ব্যাখ্যার ধার ধারেনা। কোন অন্ধকার বা ঠান্ডা রাত্রিতে একা ঘরের বাইরে বের হলে গর্ভবতী নারী ও সন্তানের অমঙ্গল হবে, তৈলে ভাজা পিঠা খেয়ে কিংবা মেহেদী হাতে দূরে কোথাও যাওয়া ক্ষতিকর। দূর্ভোগ জনিত পরিবারেও এসব নানারকম ব্যাখ্যা দেখা যায়। কেউ রাতের অন্ধকারে বাড়ির বাইরে বুকে আঘাত পেল, ভয় পেল কিংবা বাসায় এসে অসুস্থ হল বলা হবে এটি আকষ্মিক ও ভৌতিক পীড়া। এজন্য পরিবারের লোকেরা কবিরাজের পানিপড়া, হুজুরের তাবিজের আশ্রয় নেয়।



অস্বাভাবিক আচরণ করলে ভুতে ধরেছে বলে ক্লিনিকে নিয়ে কি হয়েছে তা না বুঝে কিংবা হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরিবর্তে কবিরাজের আশ্রয় নেয়।এসব বহুবিধ রোগের নানাবিধ চিকিৎসায় অনেক পরিবারকে তাদের অধিকাংশ অ-স্থাবর সম্পত্তি যেমন- গরু, হাস, মুরগী ইত্যাদিও বিক্রয় করতে হয়। আপনার কাছে অদ্ভুত এবং ভুতুরে মনে হলেও এসব চিকিৎসায় বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো অর্থও খরচ করা হয়ে থাকে। নানা তন্ত্রমন্ত্রাদির সাহায্যে ভূত প্রেত দূর করার নানা আয়োজন আমিও ছোটবেলায় দেখেছি।ভুতকে বোতলে ঢুকানো, মানুষকে ঝাড়ু পিটা করে রক্তাক্ত করার মাধ্যমে ভুতকে কষ্ট দেয়া- এসব কর্ম চালায় ‘‘ভুত খেদানোর ওস্তাদেরা’। অনেকে নাকি ভুত লালন পালন করেন, অনেকে ভুতের মাধ্যমে চিকিৎসাও করানোর কথা বলেন।



আমি সম্প্রতি চিকিন পক্সে আক্রান্ত হয়েছিলাম। বহুজনের বহুবিধ পদক্ষেপে রোগীর অবস্থা কাহিল। রোগে আক্রান্ত হবার পর দুধ দিয়ে গোসল করানো, নিম পাতা মেশানো গরম পানি দিয়ে গোসল করা, পাট পাতা ভেজানো তিতা পানি পান করা, তিক্ত করলা ভাজি দিয়ে ভাত খাওয়ার থেরাপি চলতে থাকে। যখন পর্যায়ক্রমে গুটি ওঠা কমতে থাকে তখন তিলের তৈল মাখা, নিমের তৈল মাখানো চলে।এদিকে এমবিবিএস ডাক্তার বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালামিলান লোশন মাখা, চুলকালে এ্যালাট্রোল খাওয়া, জ্বর আসলে নাপা খাওয়া, চুষে চুষে সিভিট খাওয়া চলতে থাকে। মাছ খাওয়া যাবেনা, গোশত খাওয়া যাবেনা, টক খাওয়া যাবেনা, মিস্টি খাওয়া যাবেনা, বাইরে বের হওয়া যাবেনা। শুধু না আর না। সব মিলিয়ে ঈদে বাড়ি যাওয়া, ঈদগাহে যাওয়া সব বন্ধ। আমরা অনেক কিছু চর্চা করি ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই।



স্থানিক মতাদর্শ এবং উন্নয়নের জন্য প্রচলিত প্রথাগত আচারকে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না।একজন ব্যক্তির অসুস্থ্যতা, উপশমের প্রথাগুলো অনেকবেশি ঝুঁকির মধ্যেও ফেলতে পারে। সন্তান অসুস্থ হলে তার সুস্থতার আশায় মসজিদে আগরবাতি-মোমবাতি দেয়া, শুক্রবারে জুমআ শেষে ক্ষির খিচুরি বিলানো, দান ছদকা বা মানত করাকে কোনো স্বাস্থ্যবিষয়ক আচরনের সাধারন অনুশীলন হিসাবে আপনি দেখতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ঔষধের চেয়েও পবিত্র কিছু বিশ্বাসগত অনুভূতি অগ্রাধিকার পায়। এমন ধারনা জড়িত যে এসব কর্ম ডাক্তার, ঔষধ ও কবিরাজের চেয়ে শক্তিশালী। হুজুরের ঝাড় ফুঁক, কবিরাজের লতা-পাতা-গুল্ম-গাছের খাল-শিকড়ের ব্যবহারে আপনি কোন অর্থ খুঁজে না পেলেও অনেকে পায়।



একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, কেউ এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পছন্দ করে, কেউ হোমিওপ্যাথিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে প্রাধান্য দেয়, কেউ আয়ুর্বেদিক বা ইউনানীকে গুরুত্ব দেয়।যে যেটা করে তার কাছে তার এই চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ততার পেছনের যুক্তিও আছে। অনেক এলাকায় হাসপাতালগুলোর চেয়ে কবিরাজের কাছে যাওয়ার প্রবনতা অনেকবেশি দেখা যায়। অনেকে বলে বহু হাসপাতাল ক্লিনিকে গেছি ও বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি ভাল হয়নি অথচ ফাইলা পাগলা কিংবা শাবিনা পাগলার মাজারে গেছি ভাল হয়ে গেছি। পীর বা মাজারের মাধ্যমে সুস্থ হয়েছে এটা বললে আপনি সেটাকে যেভাবেই নেন না কেন যারা বিশ্বাস করে তারা কিন্তু দৃঢ়তার সাথেই বলবে।



(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ++++++++++++++++++

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.