নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসা কাছে টানে

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩

জাকিয়া সাত বছর বয়সে পদার্পণ করেছে। তার মা তার সবচেয়ে আপন,পরম আশ্রয়, একমাত্র অবলম্বন যেন।মা একটু চোখের আড়াল হলেও তার ভাল লাগেনা।যেন মা তার জীবন, মায়ের সান্নিধ্যেই সে স্বর্গসুখ পায়।মা তাকে অনেক বেশি স্নেহ করে, একসাথে খেলে, গল্প করে,লিখতে পড়তে শিখায়, স্কুলে নিয়ে যায়, স্কুল ছুটি হলে বাসায় নিয়ে আসে। ফলে মাকে ছাড়া তার জীবন কল্পনাই করা যায়না।মা জাকিয়াকেই জীবনের সেরা পাওয়া ও স্রষ্টার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ট উপহার মনে করে।

জাকিয়ার মুখে সারাক্ষণ মা মা শুনা যায়। তার বাবা ব্যস্ত মানুষ। মেয়েকে সময় দেয়ার সুযোগ পান না।চাকুরি-ব্যবসা নিয়ে দিনরাত সময় কাটান।তিনিও মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন,মেয়ের চঞ্চলতা আর হাসিমুখ তাকে মুগ্ধ করে।কিন্তু জাকিয়া তাকে বাবা বাবা বলে ডাকে না,বাসায় ফিরলে দৌড়ে তার কাছে ছুটে যায়না।জাকিয়ার অভিযোগ বাবা তাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায় না,কেনাকাটার জন্যে মার্কেটে নিয়ে যায় না।

মায়ের সাথে জাকিয়ার মধুর সম্পর্ক নিয়ে মাঝে মাঝে রসিকতা করে সাত্তার সাহেব বলেন, জাকিয়াতো তার মাকে প্রচন্ড ভালবাসে, বাবাকে নয়। অসুবিধা নেই-জাকিয়া তার মাকে ভালবাসে, আর জাকিয়ার মা আমাকে ভালবাসে তার মানে জাকিয়া আমাকে ভালবাসে। মায়ের গভীর স্নেহ,ভালবাবার বন্ধন, আনন্দদান,সময়দান, সুখদান- এসবের মাঝে একাত্ব হয়ে গেছে জাকিয়ারসবকিছু। বাবার সাথে পারস্পরিক ভালোবাসার দুনির্বার সত্যকে সে বুঝতে পারে না।

আয়েশা বেগম বলে-আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।তুমি পাশে থাকলে আমার মনের সতেজতা বাড়ে,মনের মধ্যে একটি আলোড়ন অনুভব করি, সব দুঃখ কষ্ট ভুলি,মন খারাপ থাকলে তোমার শান্তনা আর আশার বাণীতে মনটা সতেজ হয়-এটাতো আর একদিনে হয়নি।তাছাড়া যে মায়ের উষ্ণগর্ভে তার জন্ম হয়েছে,যার বুকের দুধ খেয়ে সে লালিত হয়েছে, যার মমতায় তার জীবন বিকশিত হয়েছে-তার প্রতি তো তার একটু ভালবাসা থাকবেই।

সাত্তার সাহেব বলল-জাকিয়া আমার জীবনের সুখ দুঃখ আর আশা আকাঙ্খার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।সে আমার জীবন, আমার হৃৎস্পন্দন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার উৎস। আমার সকল আশা-প্রত্যাশা-সোনালী স্বপ্ন তাকে ঘিরে।অথচ নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে,জাকিয়ার মিশু মন বাবাকে বুঝেনা। এটাও ঠিক মা-ই সুখ দুঃখের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় জীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয়। মায়ের স্নেহভরা মুখ সন্তানের জন্য এক সুখের আশ্রয়। মায়ের অগাধ ভালোবাসার কারণেই মাকে ঘিরে পরম আশ্রয় তৈরি হয়।বড় হওয়ার প্রতিটি মুহুর্তে মায়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মায়ের অগাধ মমতা,প্রগাঢ় আদর ও মমত্ববোধের কাছে জাকিয়া শুধু নয় সবাই বাঁধাপড়ে।

আজ জাকিয়ার জন্মদিনে।আলোকোজ্জল অনুষ্ঠানে আত্তিয়-স্বজন, শিক্ষক ও অভিভাবকরা রয়েছেন।জাকিয়া কেক কাটছে। সবাই বলে উঠল-হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।জাকিয়ার মুখে কেক তুলে দিতেই সে বলল-আগে মাকে দাও।

সাত্তার সাহেব বলে উঠল-কি সৌভাগ্য আয়েশার।জাকিয়ার মুখে শুধু মা আর মা।আসলে মা সন্তানের একবুক ভালোবাসা,মা সন্তানের টোল পড়া গালের হাসি, মা দুষ্টুমির আদরমাখা বকুনি, মা সমস্ত বায়না পূরণের ষ্টোর হাউস।মা মানে সততা, মা মানে নিশ্চয়তা, মা মানে নিরাপত্তা, মা মানে অস্তিত্ব, মা মানে আশ্রয়, মা মানে একরাশ অন্ধকারে এক বুক ভালবাসা। মায়ের আদর যেন সর্বদা লেগে থাকে জাকিয়ার গায়ে, শরীরে, মুখে।‘মা’ মা-ই তার সঙ্গে পৃথিবীর আর কোনো কিছুর তুলনা চলেনা।তাই জয় হউক মায়ের, মাতৃত্বের।সবার হাতে তালি,সবাই উৎফুল্ল।

আয়েশা বলল-সেদিন আকাশ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল, সমুদ্রও হেরে গিয়েছিল ভালবাসার গভীরতার কাছে-যেদিন জাকিয়ার মুখে প্রথম মা ডাক শুনেছিলাম।মা যে কি ভীষণ মিষ্টি শব্দ আর ভালবাসায় ভরা তা সেদিন হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম, আমার বড়ই আনন্দিত হয়েছিলাম।আর যখন মা হয়েছিলাম তখন সৃষ্টির আনন্দের সাথে যোগ হয়েছিল এক ধরনের পূর্ণতা যা জীবনের সব সৃষ্টির আনন্দকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।জাকিয়ার আনন্দ-সুখ-ব্যাথা, বেদনার মাঝে একাত্ম হয়ে আছে আমার আনন্দ, বেদনা সবকিছু।জাকিয়া আমার মানসিক প্রশান্তির উৎস আর আমিও তার মানসিক প্রশান্তির উৎস।জাকিয়াই আমার নয়নমণি আমার অহংকারের ধন।তার জন্যে দোয়া করবেন।

পরদিন শুক্রবার।স্কুল ছুটি থাকায় নিশ্চিন্তে জাকিয়া ঘুমোচ্ছে।সাত্তার সাহেব নাস্তা করে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন।আয়েশার খুব নি:সঙ্গ লাগছে।ফেসবুকে কিছুক্ষণ বান্ধবীর সাথে চ্যাট করল,জাকিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ছবি আপলোড করল।স্কাইপিতে কয়েকজনের সাথে কথা বলল।বান্ধবীদের সাথে কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েও ফুলটাইম গৃহিণী থাকার ব্যাপারটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হল। মনটা অনেকটা ফুরফুরে লাগছে। ব্লগে কিছু লিখতে ছিল-এমন সময় জাকিয়ার ঘুম ভাঙ্গল। বলল-আম্মু ক্ষুধা লেগেছে।

জাকিয়া নাস্তা শেষে ভিডিও গেমস্ ও খেলনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আয়েশা ল্যাপটপ অন করলেন।ইন্টারনেট মডেম লাগালেন।ব্লগ ওপেন করে লিখলেন-


আমাকে ক্ষমা করে দিও
আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছে।নতুন জীবন দান করেছে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছ। সবসময় চেয়েছে নিজে মৃত্যুর স্পর্শ পেয়ে হলেও আমাকে সুরক্ষিত রাখতে।এখন তার চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে,শ্রবণ শক্তি কমে গেছে। তুমি ক্ষমা না করলে জীবনের পরিত্রান নেই, তোমার ক্ষমা পাওয়াটাই হবে একটা আনন্দের ঘটনা।তুমি প্রবীণ হিসাবে নবীনের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেছ।কিন্তু আমি মেয়ে বলে তোমাকে এই দু:সময়ে কোন সহযোগিতাও করতে পারছিনা।অনেক কষ্ট হচ্ছে, মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।

যখন ঘর থেকে পাখির কিচির মিচির, কবুতরের বাকবাকুম শুনতাম।জোৎস্না রাতে উঠানে মাদুর পেতে প্রাণখোলা আসরে বসতাম।বড় চাচ্চুর দরাজ গলায় পুথিঁ পড়া শুনতাম। দাদুর কাছে রাতে ভূত পেত্নীর গল্প শুনতাম।আমগাছের ছায়ায় মাদুর পেতে লেখাপড়া করতাম। ঝড়ের দিনে সবাই মিলে আম কুড়াতাম।গাছে উঠে পাকাঁ কাঠাল পাড়তাম।আম্মুর বকুনি খেয়ে গাছে লুকাতাম, খুঁজে না পেয়ে আম্মু পেরেশান হত।বর্ষাকালে কলাগাছের ভেলায় চড়ে মন ইচ্ছেমত ভেসে বেড়াতাম।বৃষ্টির পানিতে ভেজা,পা পিছলে কাদাঁয় পড়া,দলবেধে বষার পানিতে গোসল, হৈচৈ করাতো ছিল বর্ষায় নিত্যদিনের কর্ম।লাঠি লজেন্স-হাওয়াই মিঠাই-ছনপাপড়ি খেতাম।জোরসে নামতা বলতাম,ঝড় বৃষ্টি বাদলা দিনেও ছাতা মাথায় মেঠোপথে চলতাম, বড়ফুফু জোরসে ধরে গোসল করাতো, খালা আমার শরীরে সরিষার তৈল মাখাতো।তখন যারা আমার পাশে ছিলে, কাছে ছিলে-আজ আমি তাদের কোন খবর রাখতে পারছিনা –আমাকে ক্ষমা করে দিও।

যখন মজার জীবন ছিল।সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পুতুল নিয়ে খেলতাম।বৃষ্টিতে ভিজে গোল্লাছুট খেলতাম। কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথে ছুটাছুটি করতাম, লুকুচুরি খেলাতাম।সেই বিশাল তেতুল গাছটা আছে, তেতুল খাবার মানুষও আছে, জাম গাছটাও কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে, শুধু আমি এখন আর ঢিল ছুড়িনা।ছিপ দিয়ে মাছ ধরেছি, বষার দিনে নৌকায় চড়ে শাপলা তোলেছি। বাকি ভাইয়ের ধাধাঁ কৌতুক শুনেছি।মেঝো মামার কাঁধে চড়ে নানুর বাড়ি বেড়াতে গেছি।আমলকি,বড়ই,খেজুর,বংকই. করমচা,কামরাঙ্গা খেয়েছি,কাঁচা পাকা আম ভর্তা আর আচার খেয়ে তৃপ্তির ডেকুর গিলেছি।পশ্চিম পাশ্বের পুকুরটায় মাছ ধরেছি। লালটুকটুকে গাভির জন্যে ঘাস কেটেছি।মায়ের হাতের তৈরি দুধ-ঘি-দই খেয়েছি।সাদা কালো ডোরাকাটা আমার একটি প্রিয় বিড়াল ছিল যাকে দুধমাখা ভাত খাইয়েছি।–সে সময় যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি আজ তাদের পাশে আমি থাকতে না পারার অক্ষমতার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি।

যেই সময় হাঁস মুরগির ছুটাছুটি ছিল।বৈদ্যুতিক লাইট নয় হারিকেন ছিল, বৈদ্যুতিক ফ্যান নয় হাতপাখা ছিল।ট্যাঙ্ক-হরলিক্স-ওভালটিন ছিলনা, আখের গুড় আর লেবুর শরবত ছিল।খেজুরের রস, তালের রস, মধু ছিল; দুধ, মাছ, শাকসবজি, হাস মুরগি ছিল। ছিলনা ইটের দালান, ফ্রিজ, কম্পিউটার, টিভি;তবে আন্তরিকতা-ভালবাসা-সুখশান্তি ছিল।বাতাসা-কদমা বিলানো, জুম্মা শেষে ঝাল খিচুরি ও মিষ্টি ক্ষীরের মিশ্রণ-অতুলনীয় ছিল।জামান চাচ্চুর লেখা কবিতা পড়ার সুযোগ ছিল, ছোটফুফুর কণ্ঠে তা শুনার আনন্দ ছিল। আজ তা নেই।যা আছে তা নিয়েই মনটা তৃপ্ত থাকতে চাচ্ছেনা, প্রশান্তি পাচ্ছিনা। সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিতে না পারার জন্যে আমায় ক্ষমা করো।

আয়েশা লিখতেছিল। হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠল। রিসিভ করতেই তার মায়ের কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পেল-কেমন আছ? তোমার শরীরটা ভালোতো মা?........................... ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.