নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজকের নগর নি:স্ব ও পদ্মা নদীর মাঝি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

যখন রানা প্লাজা ধ্বসে গার্মেন্টস শ্রমিকরা মরে, অনেকের স্বজনেরা তার লাশটাও খুঁজে পায়না, অনেকে মৃতদেহটা পায় তবে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দূরে থাক ঘোষিত ক্ষতিপূরণও পায়না তখন কষ্ট লাগে। এরা কাজ করতে করতে মরবে, গালি খেতে খেতে এগুবে, রোগে শোকে ভুগবে। এদের জন্মানো, অস্তিত্ব এবং প্রস্থানকে পাপ কিংবা পাপের প্রায়শ্চিত্ব বলে মালিকেরা তৃপ্তি পায়। রানা প্লাজার রানা কিংবা তাজরিন গার্মেন্টসে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলেও মালিকের কিছু হয়না।



যেহেতু মালিক সেহেতু চোর হলেও মানুষ ভাল, তাই গুন্ডা মাস্তান সাগরেদদের মন জোগাতে তাদের বিচার বিলম্বিত করণ। আসলে মালিক শ্রমিককে মারবে, নির্যাাতন করবে। এ যুগে তারাইতো নবাব, তারাইতো জমিদার। এখনতো আর নীলকররা নেই, ইংরেজরা নেই, ইয়াহইয়া-ভুট্টোর বাহিনী নেই- কিন্তু তাদের গুরু দায়িত্ব পালন কেউ না করলে কি আর হয়! সেই দায়িত্ব নিয়েছে অনেক মালিকরা। এরা শয়তানের প্রেতাত্মা, নব্য হিটলার। মনে হয় যেন নেই- শ্রমিকের শ্রমের দাম, ব্যক্তিত্ব, ইচ্ছা-স্বাধীনতা। শ্রমিক যেন মালিকের কেনা গোলাম, যখন ইচ্ছা ছাটাই করবে, সামান্য অপরাধে বড় শাস্তি দিবে, গালমন্দ করবে। শ্রমিক কি দাবার ঘুটি কিংবা খেলার পুতুল যেভাবে যা খুশি করবে অথচ কোন বাধ প্রতিবাদ হবে না।



যেভাবে কাজের ছেলে মেয়েরা নির্যাতিত হচ্ছে তাতে মানুষ দিন দিন খুব সভ্য হচ্ছে এটা বলা যাবে না। দাস দাসীদের সাথে যেরকম আচরণ করতো এখনকার আদুরী কি তার চেয়ে ভাল ব্যবহার পায়! যারা পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পেয়ে কিংবা পরীক্ষার হলে নকল করে পাশ করেছে, ঘুষ দিয়ে চাকুরি নিয়েছে, মিথ্যা বলাটাকে স্মার্টনেস বলে ধরে নিয়েছে, অন্যকে ঠকাতে পারাটাকে বুদ্ধিমত্তা মনে করেছে তাদের দামি গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি থাকলেই কি আর স্বভাব চরিত্রও ভাল থাকবে? গরিবকে বঞ্চিত করে, দুর্বলের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে, অবৈধ ও অসৎ পথে সম্পদ অর্জন করে তার দ্বার লালিত পালিত সন্তান কি করে মানবিক হবে? নিষ্ঠুরতায় মানুষের চোখের পানি বের হবে, অভিশাপ দেবে তারপরও নিজের সুখ শান্তি আশাই করে যাবে এটা কি খুব স্বাভাবিক?



এখন মানুষ খুব সস্তা হয়ে গেছে। ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হয়। সন্তানের হাতে বাবা মা মরে। আবার পরকিয়ার কারণে নিজের সন্তানকে খুন করে মা। শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী যৌন নির্যা তনের শিকার হয়। সমাজটাকে কলুষিত করে ফেলা হচ্ছে। ভিক্ষুককে ২টাকা দিতে ১০০কথা শুনাবে আর ডাকাত কিংবা চাঁদাবাজদেরকে লক্ষ টাকা দিতেও টু শব্দটি করবে না। সিনেমা নাটক দেখে দেখে অবিশ্বাস বাড়ছে, পারস্পরিক আস্থা কমছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীজীবী মানুষদের নিয়ে রচিত কালজয়ী আঞ্চলিক উপন্যাস" পদ্মা নদীর মাঝি"তে জেলে সমাজের যে দু:খ, কষ্ট, বেঁচে থাকার সংগ্রাম তার চেয়েও ভয়াবহ ও মারাত্মক রুপে আজও দেখা যাবে সমাজে।



১৯৩৬ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটি নিয়ে পরিচালক গৌতম ঘোষ বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র- "পদ্মা নদীর মাঝি"। যেটি ১৯৯৩ সালের মে মাসে মুক্তি পায়। ছবিতে উপন্যাসটিকে পরিচালক তার শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে দারুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । ছবিটিতে ফুটে উঠেছে পদ্মা পাড়ের জেলেদের জীবনের নানা সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা । আজকে যারা ফুটপাতে ঘুমায়, বস্তিতে থাকে, ভিক্ষা করে চলে তাদের অনেকের অবস্থাতো সেই জেলেদের চেয়েও খারাপ। একটি সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান আলাপচারিতায় বলেছিলেন ‘বেকার যুবকদের বিয়ে করাতো দূরে থাক বেঁচে থাকারই অধিকার নেই। আর মেয়েদের যদি ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে কিংবা চাকুরি কোনটাই না হয় তবে তার দাম কুত্তার চেয়েও কম।’’



পদ্মা নদীর মাঝিতে জেলেরে জীবনের দু:খ দুর্দশা ও মানুষের আদিম প্রবৃত্তি ফুটে উঠেছে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলেপাড়াবাসীর জীবনযাত্রা, পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সম্পর্কযুক্ত কিছু ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে উপন্যাসের প্লট।পদ্মা তীরবর্তী জেলে পরিবার গুলোর জীবন কাহিনী এর মূল উপজীব্য বিষয়। সম্ভবত এটি প্রথম বাংলা উপন্যাস যেখানে আদ্যন্ত কথোপকথনে প্রকৃতি মানুষের হাতে নির্যাতিত একটি গোষ্ঠি জীবনের ছোট ছোট সুখ-দুখ,ভালবাসা,অসহায়তা ও আত্মরক্ষার তীব্র জৈবিক ইচ্ছার কাহিনি,গরীব মানুষের বেঁচে থাকার আগ্রহ ও সংগ্রমের সাহস,সেই সঙ্গে হোসেন মিঞা নামক এক রহস্যময় ব্যাক্তিত্বের উপস্থিতি উপন্যাসটিকে বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব দান করেছে।



পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের এক হতদরিদ্র জেলে। জীবিকার জন্য সে সম্পূর্ণভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। রোদ-বৃষ্টি গায়ে মেখে সারাবছর অমানুষিক পরিশ্রম করে। প্রচন্ড শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও সে কাজে যায়। দারিদ্র্যের সঙ্গে নিত্য সংগ্রাম করে যাদের বাঁচতে হয়, তাদের শরীরের দিকে তাকালে চলে না। কুবের জালহীন, নৌকাহীন এক নিঃস্ব জেলে। পদ্মার বুকে অন্যের নৌকায় শ্রম বিক্রি করে তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আবার কখনও অসহনীয় ঠান্ডা সহ্য করে রাতের পর রাত জেগে বর্ষা মৌসুমে সে মাছ ধরে, কেননা যত কষ্টই হোক তাকে বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে তার সংসারকে।



বর্ষা মৌসুম ফুরিয়ে গেলে রিক্ত, নিঃস্ব কুবেরের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ে। এত পরিশ্রমের পরও অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার হতদরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে মালিক শ্রেণি তাকে শোষণ করত, ঠকাত আর তারা জানত জীবিকা হারানোর ভয়ে কুবের কখনও প্রতিবাদ করতে পারবে না, চাইতে পারবে না তার ন্যায্য পাওনা। তাই নীরবে সব নিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনা সহ্য করেও সে দিনরাত পরিশ্রম করে। অসুস্থ শরীর নিয়েও সে পদ্মার বুকে নৌকা ভাসায়। মালা তাকে নিষেধ করলেও সে শোনে না। কারণ শরীর যাক আর থাক- ইলিশের মৌসুমে একটা রাত ঘরে বসে থাকলে তার চলবে না।



শত দারিদ্র্যের মাঝে কুবের জীবন-সংগ্রামে নিয়োজিত এক লড়াকু সৈনিক। জীবন সংগ্রামে বিধ্বস্ত এক মানুষ সে, অভাব তার নত্যসঙ্গী। তাই শারীরিক অসুস্থতা-উপেক্ষা করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অসহনীয ঠান্ডা সহ্য করে রাতের পর রাত জেগে সে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে, কেননা তাকে আর তার পরিবারকে বাঁচাতে হবে। শুধু কুবেরই নয়, জেলেপাড়ার প্রতিটি মানুষই এমনিভাবে জীবন সংগ্রামে লড়াই করে বেঁচে থাকে। ভূস্বামীদের অধীন কম খাজনার জমিতে গাদাগাদি করে তারা বসবাস করে আসছে বংশানুক্রমে। দারিদ্র্য তাদের নিত্যসঙ্গী। অশিক্ষা-কুশিক্ষা তাদের সংস্কৃতির মূল ধারা। ঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত তাদের জীবন বিধস্ত হয়। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর শিশুর ক্ষুধা নিবারণের উপায় জেলেপাড়ার মানুষগুলোর নেই। নিরন্তর পরিশ্রম করেও মহাজন আর ভূস্বামীদের শোষণের ফলে তারা তাদের অভাব ঘোচাতে পারে না। তবু তারা দিনরাত পরিশ্রম করে। কেননা, তাদের বাঁচাতে হবে, রক্ষা করতে হবে তাদের অস্তিত্ব।



পদ্মা নদীর মাঝির অন্যতম প্রধান চরিত্র কপিলা। কপিলার স্বামী শ্যামাদাস, অবস্থাপন্ন গৃহস্থ। অত্যন্ত বদমেজাজি। কপিলার সঙ্গে শীতের গোড়ায় তার ঝগড়া হয়। তাতে কপিলা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়। কপিলার স্বামী শ্যামাদাসও এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কপিলাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তারপর ফাল্গুন মাসে কপিলাকে স্বামীর কাছে পাঠানো হলে সে তাকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি বরং তাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কপিলা বাবার আশ্রয়ে থাকতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে কপিলার বড় বোন মালা পঙ্গু হওয়া সত্ত্বেও কুবের তাকে মাথায় করে রেখেছে। মালার কোনো অযত্ন অথবা অমর্যাদা কুবের কখনও করেনি। তাই শাশুড়ির কাছে সে সোনার জামাই। কপিলার মা তাই কুবেরের সঙ্গে তুলনা করে শ্যামাদাসকে দিনরাত গাল দেয়।



কুবের কপিলার আন্তঃসম্পর্ক উপন্যাসটির ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে। তাদের দুজনের ভালবাসা ছাড়াও মান অভিমান গুলো পাঠক হৃদয় ছুয়ে যায়। আমারে নিবা মাঝি লগে এরকম আরো অনেক কথা পাঠক হৃদয়কে হর-হামেশা পুলকিত করে। মানুষ ও প্রকৃতির কঠোরতার মধ্যে জেলে পরিবার গুলো কেন বাঁচতে চায়,কীভাবে বাঁচে,সমাজপতিরা কেন এবং কীভাবে শোষণ করে এবং সমাজপতিদের মনোভাব কেমন হয়। গরীব মানুষের অসহায়তাকে তারা কীভাবে কাজে লাগায়। আবার এই জেলে পল্লীর মানুষ গুলোর ভাব-ভালবাসা ও মন্দ লাগার ব্যাপার গুলো কেমন হয় তার পরিপূর্ন বর্ণনা আছে এই উপন্যাসের মধ্যে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৯

সকাল হাসান বলেছেন: কি মন্তব্য করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না!

কথাটা ঠিক, এখনের অবস্থাটা সেই উপন্যাসে ফুটিয়ে অবস্থার চেয়েও খারাপ!

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.