নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেজষ্ক্রিয়তা, ক্ষয়ক্ষতি ও অসচেতনতা

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২২

তেজষ্ক্রিয় মৌলের তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে । ‘তেজস্ক্রীয় রশ্মি’ বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ন এক প্রকার তড়িৎ চুম্বকীয় বিচ্ছুরিত শক্তি। প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ওজন এর নিউক্লিয়াস-এর মধ্যস্থ নিউট্রন ও প্রোটন-এর সমষ্টির সমান। যে-সব মৌলের পরমাণুর ওজন বেশী (সাধারণতঃ ২০০-এর উপর বা এর কাছা-কাছি) তাদের বলা হয় ভারী মৌল। এ-সব ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত-ভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গত হয়, এই প্রক্রিয়াকে-ই তেজষ্ক্রিয়তা (Radio-activity) বলে।


তেজস্ক্রিয়তার উৎস
তেজস্ক্রিয়তার উৎসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাকৃতিক, মানুষের সৃষ্ট ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত।

১. প্রাকৃতিক উৎস - পৃথিবীর সবদিকে মহাশূন্য থেকে ইলেকট্রন, প্রোটন ও কয়েকটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রায় আলোর বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানে। এদেরকে মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic rays) বলে। এই রশ্মিগুলো বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত। প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা অল্প মাত্রায় বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বেশি হয়, এর মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে রেডন গ্যাস। এটি বাতাস থেকে ৮ গুণ ভারী। এর তিনটি প্রাকৃতিক আইসোটোপ রয়েছে। এগুলো রেডিয়াম, ইউরানিয়াম ও থোরিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা থেকে সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক শিলা, উদ্ভিদ, প্রাণী ও বিভিন্ন শিল্প থেকে প্রচুর রেডিয়ান গ্যাস বায়ুমন্ডলে যোগ হয়।

২. মানুষের সৃষ্ট - মানুষের সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়। চিকিৎসায় এক্স-রে (রঞ্জন রশ্মি) ও অন্যান্য বিকিরণ থেরাপির মেশিন তেজস্ক্রিয়তার উল্লেখযোগ্য উৎস। শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও দ্রব্যের মান যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন কমপোনেন্ট ব্যবহার হয় যেগুলো থেকে বিপজ্জনক বিরণের সৃষ্টি হয়। নিউক্লিয়ার চুল্লী, পারমাণবিক মারণাস্ত্র পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দূর্ঘটনায় বিপুল পরিমানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আশেপাশের বিরাট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

৩. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ - আমাদের আশেপাশের প্রায় প্রত্যেক বস্তু থেকেই কমবেশি বিকিরণ হচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর, খাদ্য, পানীয় এমনকি আমাদের নিজের শরীর থেকেও তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ হচ্ছে। এই বিকিরণ খুবই কম মাত্রার যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করে এর হার কমবেশি হতে পারে। যেমন ইট-পাথরের তৈরি ঘরের বিকিরণের মাত্রা কাঠের ঘরের চেয়ে বেশি।

তেজষ্ক্রিয়তার বিপদ
সকল তেজস্ত্রিয় পদার্থের প্রতিক্রিয়া সমান নয়। অতিরিক্ত মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে বা স্পর্শে এলে আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে পারি। এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার কারণ হচ্ছে, তেজস্ক্রিয়তার ফলে মৌল থেকে যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তা মানুষের সংস্পর্শে এলে শরীরের জীবিত কোষ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে; কারণ আলফা ও বিটা রশ্মি চামড়ায় পোড়ার অবস্থা সৃষ্টি করে এবং গামা রশ্মি কোষের গঠনের ওপর ক্রিয়া করে। উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রিয় বিকিরন মানবদেহে নানা রকম ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে। দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, মানসিক বিকার এমন কি বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে। এর ক্ষতিকর প্রভাব বংশ পরস্পরায়ও পরিলক্ষিত হয়।



তেজস্ক্রিতার মাত্রার ফলে ঘটা সমস্যা-গুলোর ৪-টি ধাপ রয়েছে,
প্রথম ধাপঃ... ২৫ রেম পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা শরীরে গ্রহণ করলে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে-না, কারণ এটা সহনীয় মাত্রা;
দ্বিতীয় ধাপঃ... ২৫ রেম হতে ১০০ পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা গৃহীত হলে রক্ত এবং কোষে সামান্য কিছু প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে ঘটে এবং মারাত্মক কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না;
তৃতীয় ধাপঃ... মাত্রা ১০০ রেম হতে ৩০০ পর্যন্ত শারীরিক কিছু উপসর্গ দেখা যাবে; যেমনঃ শারীরিক ও স্নায়বিক দূর্বলতা, বমি-বমি ভাব হওয়া, হালকা মাথা ধরা, রক্তের শ্বেত-কণিকার পরিমাণ হ্রাস পাওয়া প্রভৃতি। এ-ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে; সঠিক ও সময়োপযোগী সু-চিকিৎসার ফলে ভয়াবহ-কোনো সমস্যা সাধারণতঃ ঘটে-না;
চতুর্থ ধাপঃ... মাত্রা ৩০০ রেম-এর অধিক হলে চূড়ান্ত ক্ষতি এমন-কি মৃত্যু-ও (৪৫০ রেম-এ) ঘটতে পারে। এর লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ চুল পড়া, চামড়া কুচকে যাওয়া, চামড়ায় কালো দাগ পড়া, কোষ-এর মারাত্মক ক্ষয় প্রভৃতি। যদি সময়োচিত চিকিৎসা না-করা হয় তাহলে এ-ধরনের রোগীরা ২ হতে ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যু-বরণ করেন।

(৫) তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

তেজষ্ক্রিয়তার ব্যবহার
বর্তমান বিশ্বে তেজস্ক্রিয়তা বিভিন্ন কর্ম-ক্ষেত্রে ব্যবহৃৎ হচ্ছে,
১. বিদ্যুৎ উৎপাদনে: পরমাণু শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন-ই এই শক্তির সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য অবদান।তেজস্ক্রীয় আইসোটোপ থেকে ফিশন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ও জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
২. চিকিৎসা-ক্ষেত্রে: এক্স-রে, ফ্লোরোস্কপি, সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাফি, বোন ডেনসিটোমিটার, এনজিওগ্রাফি প্রভৃতি পদ্ধতি; কোষ বিভাজন-গত বিভিন্ন রোগ (যেমনঃ ক্যান্সার)-এর চিকিৎসাক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের কাজে তেজষ্ক্রিয়তার ব্যবহার করা হয়।রেডিও থেরাফিতে গামা রশ্মি দিয়ে ক্যান্সার-সেলের মৃত্যু ঘটিয়ে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করা হয়। বিভিন্ন ধরনের রেডিও আইসোটোপ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এবং কিছু কিছু রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হয়; বিশেষতঃ থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা নির্ণয় ও চিকিৎসায়।
৩. ওষুধ-শিল্পে: ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ-পথ্য জীবাণুমুক্ত-করণ ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে, তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করা হয়। এইডস, ক্যান্সার, আলঝেইমার প্রভৃতি রোগের কারণ ও রোগমুক্তি-সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা-সহ জৈব-চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহৃৎ হচ্ছে।
৪. শিল্প-ক্ষেত্রে: অতি সামান্য পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করে পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে পরিচালিত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের গতি, ফিল্টারকরণের ক্ষেত্রে দক্ষতা, পাইপলাইনের অভ্যন্তরীণ ক্ষয়প্রাপ্তির হার; কোনো ধারক বা পাত্রের মধ্যকার তরল বা পাউডারজাতীয় পদার্থের স্তর নির্ণয়; নির্মাণ বা উৎপাদন-শিল্পে বিভিন্ন বস্তুর পুরুত্ব, ঘনত্ব ও উপাদানের সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ে; পলিমারের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করার কাজে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।ঘড়ির কাঁটায় তেজষ্ক্রিয় থোরিয়ামের সাথে জিঙ্ক সালফাইড মিশিয়ে ঘড়ির কাঁটা ও নম্বরে প্রলেপ দেওয়া হয় ফলে এরা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে।নির্মাণ বা উৎপাদন-শিল্পে কাগজ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন বস্তুর পুরুত্ব, ঘনত্ব ও উপাদানের সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ে আলফা ও বিটা রশ্মিকে ব্যবহার করা হয়।
৫. কৃষি-ক্ষেত্রে: খাদ্যশস্যের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে, সংরক্ষণে, পুষ্টিগুণ বর্ধিতকরণে এবং কীটপতঙ্গ দমনে তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয়। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রয়োগ করে শস্যের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে অধিক ফলনশীল, বৈরী আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে সক্ষম ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রতিরোধক শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে উঠেছে।উন্নত বীজ তৈরির গবেষনায় তেজষ্ক্রিয়তা সফল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৬. পরিবেশে: অল্প পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করে মাটি, পানি বা বায়ুতে বিদ্যমান প্রধান, সুক্ষ্ম বা অতি সুক্ষ্ম উপাদানগুলো নির্ণয় করা সম্ভব হওয়ায় বায়ু ও মাটির দুষণমাত্রা, মাটির উপরিভাগ বা তলদেশের পানিতে বিদ্যমান দুষণ মাত্রা অথবা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর্সেনিক, সিসা, ক্যাডমিয়াম বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি নির্ণয় করা; বাঁধ ও সেচপদ্ধতির ক্ষেত্রে নদীর পানির প্রবাহ, পানি চুইয়ে বের হয়ে যাওয়া এবং আবর্জনা বা তলানি বৃদ্ধির হার পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে।
৭. পানি ব্যবস্থাপনায়: আইসোটোপ হাইড্রোলজি পদ্ধতিতে ভুতাত্ত্বিক ও রসায়নগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভুগর্ভস্থ পানির প্রবাহ, সুনির্দিষ্টভাবে এর অবস্থান চিহ্নিতকরণ, উৎপত্তি, বয়স, পানিতে বিদ্যমান দুষণের বৈশিষ্ট্য ও প্রক্রিয়া নিরূপণ, গুণগত মান নির্ধারণ; নতুন ও নবায়নযোগ্য পানির উৎসের সন্ধান, বণ্টনপ্রক্রিয়া; গভীর ও অগভীর জলস্তরে পানি পুনর্ভরণ পদ্ধতি এবং এগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করায় এর ব্যবহার স্বীকৃত।
৮. মহাশুন্যে: সাবমেরিন ও মনুষ্যবিহীন মহাশূন্যযানে জ্বালানির উৎস হিসেবে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার হয়।
৯. ভুতাত্ত্বিক / নৃতাত্ত্বিক / প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে: কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে জীবাশ্মসংক্রান্ত নমুনা ও শিলাখন্ডের বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়, উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে বিবর্তনবাদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করাসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণায়, জাদুঘরে সংরক্ষিত চিত্রকর্ম বা অন্যান্য শিল্পকর্মের খাঁটিত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে, খনিজ পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে (তেজস্ক্রীয়তা-ক্ষয়ের পরিমাপ) বিশ্লেষণ করে জীবাশ্মসংক্রান্ত নমুনা ও শিলাখন্ডের বয়স নির্ধারণ করা হয়।
১০. গৃহস্থালির কাজে: তাপ প্রয়োগে যেসব পদার্থের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলোর দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণের জন্য, কম্পিউটার ডিস্কের মেমোরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে, স্মোক ডিটেকটরে, রান্নার কাজে ব্যবহূত ননস্টিক প্যানের আস্তরণটি সঠিকভাবে যুক্ত হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করার জন্য, ফটোকপি মেশিনে উৎপাদিত স্থির বিদ্যুৎ দুরীকরণে, ফটোকপি মেশিনে কাগজগুলো একত্রে আটকে দলা পাকিয়ে যাতে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে না যায় সে-জন্যে প্রভৃতি কাজে তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করা হয়।
১১. নিরাপত্তার ক্ষেত্রে: নিরাপত্তা বিধানের স্ক্যানিং করার জন্য এক্স-রে মেশিন, স্ক্যানিং মেশিনে ও স্মোকিং ডিটেকটর, নিউট্রন সোর্স প্রভৃতিতে।
১২. খনিজ পদার্থে বিভিন্ন ধাতুর পরিমাণ নির্ণয়ে উক্ত ধাতুর তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ তেজষ্ক্রিয় প্রদর্শক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৩.পারমাণবিক অস্ত্র বানাতেএইসব বিকিরণকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন:
ওয়াইফাই,ব্লুটুথ তথা ওয়্যারলেস প্রযুক্তির ব্যাবহার বর্তমান যুগে অনেক বেশি । ওয়্যারলেস রাউটার কিংবা ওয়াইফাই মোডেম এ ইউজ করা হয় এক ধরনের electromagnetic radiation যার সাহায্যে আমরা আমাদের কম্পিউটার এ সিগন্যাল রিসিভ করে থাকি। আমাদের বাসা কিংবা অফিসে বিভিন্ন রকমের ওয়াইফাই বা ওয়্যারলেস রাউটার বা রাউটিং প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে যা থেকে ভয়ংকর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছরায় । ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক থেকে নির্গত রেডিয়েশন বড় বড় গাছের মৃত্যুর কারন হতে পারে।ওয়্যারলেস রাইটারের নিকটে গাছ লাগানো হলে গাছের শাখা ও পাতা ঝরে যায়। ওয়াই-ফাই থেকে নির্গত রেডিয়েশন কেবল গাছের নয় মানুষের শরীরেও প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন,ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক উৎসের নিকট থাকা গাছগুলোর পাতায় সীসার মতো এক ধরনের উজ্জল প্রলেপ পড়ে। রেডিয়েশন-এর ফলে গাছের পাতা মারা যায়, ফলে গাছের বৃদ্ধিও কমে যায়। ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক-ই এর জন্য দায়ী। নেদারল্যান্ডের শহরে এলাকায় শতকরা ৭০ ভাগ গাছেই রেডিয়েশনজনিত সমস্যা দেখা গেছে।

কিছু কিছু ওয়্যারলেস মডেম এবং যে ফ্রিকয়েন্সি তে রেডিও সিগন্যাল ট্রান্সমিট করা হয় তা একটি মাইক্রোওয়েব ওভেন এ খাবার গরম কিংবা রান্না করার ফ্রিকুয়েন্সির সমান । আপনি যখন আপনার মোবাইল কিংবা পিসি থেকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সার্চ করেন তখন আশে পাশের ওয়াইফাই সিগন্যাল গুলো দেখায় । কিন্তু এটা কিভাবে দেখায়? আপনি অথবা আপনার প্রতিবেশী যখন সার্চ করে তখন তরঙ্গ চলাচল করার সময় তার আশে পাশে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে যা থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন উৎপন্ন হয় । এই ভাবে এই সকল তরঙ্গ আপনার দেহের ভিতরে প্রবেশ করে ভিবিন্ন ক্যান্সার এবং স্কিন ক্যান্সার এর সৃষ্টি করতে পারে । এখানে বলে রাখা ভালো একটি ওয়্যারলেস রাউটার এর যতকাছে আপনি থাকবেন আপনার চারদিকে তরঙ্গ তথা রেডিয়েশনের মাত্রা তত বেশি থাকবে এবং আপনি ততবেশি শারীরিক এবং মানসিক ঝুঁকির সম্মুক্ষিন হবেন।


মোবাইল ফোন রেডিয়েশন:
ফিনল্যান্ড বিজ্ঞানী ডেভিস দাবি করেছেন, রেডিয়েশন-এর কারণে বুক পকেটে মোবাইল খোলা রাখলে হার্টের ওপর প্রভাব ফেলে। তিনি সারা বিশ্বের কাছে রেডিয়েশনের ক্ষতির দিক তুলে ধরেন তার ‘ডিসকানেক্ট’ দ্যা ট্রুথ এবাউট সেলফোন রেডিয়েশন’ নামের বইতে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। ফলে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারছে না। শিশুরা এক মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বললে ব্রেনে যে কম্পন তৈরি হয়, সে কম্পন স্থির হতে দু’ঘণ্টা সময় লাগে। এ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিং রেডিয়েশনের মধ্যে দীর্ঘ সময় চললে মানুষ অকাল বৃদ্ধের সম্মুখীন হতে পারে। ভুগতে হবে দৃষ্টিহীনতায় এবং নানা রকম চর্মরোগে। আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সার, মস্তিষ্কে ক্যানসার, এ্যাজমা, টিউমার, ব্রেইন টিউমার, ব্লাড ক্যানসার, দৃষ্টিহীনতার মতো নানান জটিল রোগে। কিডনি রোগ, কানের স্মায়ূতন্ত্রের, শ্রবন শক্তি হ্রাস, রক্ত সঞ্চালনের বিঘ্ন, বুক ব্যথা, চর্ম রোগ, ক্যান্সার, হ্যার্ট এট্যাক, চোখের সমস্যা, ব্রেনের অক্ষমতাসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।মোবাইল চালু অবস্থায় প্যান্টের পকেটে থাকলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়, যৌনাঙ্গ চিকন, দূর্বল, শুক্রানু কমে যায়।এ ধরনের ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর ওপর প্রভাব ফেলে এবং শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে। গর্ভবর্তী মহিলাদের ক্ষেরে এটি সবচেয়ে বেশী মারাত্নক। মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে থাকা প্রতি ৪ জন শিশুর মধ্যে ১ জন স্বাস্থ্যৎ ঝুকিতে থাকে। মোবাইল রেডিয়েশনে মারাত্বক টিউমার সৃষ্টি করে। ডা. প্রান গোলাপ দত্ত জানায়, প্রতি ১৫ মিনিট একটানা কথায় মাথার তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায় এবং ২০ মিনিট ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায়। যার কারনে কানে ও ব্রেনে সমস্যা হতে পারে।

লন্ডনের এক অনিবাসী ভারতীয় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিনি খুরানা দীর্ঘ গবেষণার পর দাবি করেছেন, ধুমপানের চেয়েও ক্ষতিকর হচ্ছে মোবাইল ফোন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের বিকিরণ থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অতিমাত্রায় মোবাইল ব্যবহারে শরীরের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘক্ষন কথা বলার কারনে কানের সমস্যা, কানে ঝিমঝিম করা, কানের ভিতরে ব্যথা, ব্রেইনের নিউরনের ক্ষতি, বন্ধ্যত্ব, পারকিনসন, ব্রেনেরকোষ দূর্বল হয়ে যেতে পারে।অধিক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীগণ ইতিমধ্যেই এসব রোগে ভুগতে শুরু করেছেন। মোবাইল ব্যবহারের ফলে দেশের অগণিত শিশু এখন ‘অটিজমে’ (মানসিক প্রতিবন্ধী) আক্রান্ত হচ্ছে। সমস্যার আর একটি দিক হলো, আমরা যখন ফোনে কথা বলি না, তখনও ওই বিকিরণ আমাদের ক্ষতি করে চলে। মোবাইল অন থাকলেই তাতে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আসতে থাকে টাওয়ার থেকে। কানে ফোন নিয়ে কথা বলার সময় সেটি মস্তিষ্কের একেবারে কাছে চলে আসে। বিকিরণ প্রবাহিত হতে থাকে শরীরের মধ্যদিয়ে।


মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন:
মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন এক নীরব ঘাতকের নাম। বিজ্ঞানীরা বলছেন- এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চেয়েও বেশী ভয়াবহ এবং তীব্র। মোবাইল টাওয়ার ও তার শক্তিশালী এ্যান্টেনার কাছাকাছি বসবাস করা মারাত্মক ক্ষতিকর। টাওয়ার থেকে নির্গত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি মানবদেহের সেলগুলোর ওপর মারাত্মক বিষ্ক্রিয়া ঘটায়। এতে দেহে আলাদাভাবে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিং রেডিয়েশন উৎপন্ন হলে সেলের বিকৃতি ঘটে। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশনের কারণে মানুষের টিউমার, আলঝেইমার, ব্রেইন টিউমার, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, নিদ্রাহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও গর্ভপাত সহ মারাত্মক রোগসমূহ অকল্পনীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে। এছাড়াও এর রেডিয়েশন আমাদের মগযের মধ্যে ঢুকে ডিএনএ ভেঙ্গে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিকিরণের জেরে শরীরে ডিএনএ-র পুনর্বিন্যাস ও ক্রোমোজমের ক্ষয়ের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। দেহের নার্ভের সেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং মানুষ পারকিনসন্স, আলঝেইমারস প্রভৃতি শিরাঘটিত দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে দেশে একটি বিকলাঙ্গ,মেধাশূন্য ও অকেজো প্রজন্ম সৃষ্টি হ’তে পারে। এইসব রোগের বাহ্যিক লক্ষণ হ’ল শরীরে ঝিম ঝিম ভাব হওয়া, মাথাব্যথা, হজমের ক্ষমতা কমে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অবসাদ, বিষণ্ণতা, অহেতুক ভয় করা এবং কাজে অমনোযোগী হওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া ও ভুলে যাওয়া।বিশেষজ্ঞদের হিসাব মতে যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাদে বা কাছাকাছিতে টাওয়ার বসানো হয়েছে, তার বিকিরণের কুপ্রভাবে এখনকার শিশুরা ২০ বছর পরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে।

উন্নত দেশে মোবাইল টাওয়ারগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং আবাসিক এলাকা থেকে বহুদূরে অবস্থিত। অথচ কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে চিত্র উল্টা। মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশনের নেতিবাচক প্রভাব নিকট ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা সর্বোপুরি জীবন ও জীবিকায় ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। তড়িৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে মোবাইল টাওয়ার থেকে টাওয়ারের সংযোগ হয় মেগনেটের মাধ্যমে। এটির সাথে আকাশের বজ্রপাতের একটা সম্পর্ক রয়েছে। যার কারনে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। মোবাইল টাওয়ার জীববৈচিত্র্যে জিনগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। টাওয়ারের আশপাশের গাছপালা মড়কের শিকার হচ্ছে অথবা ফলন কম হচ্ছে। মাটির জৈবশক্তিও নষ্ট করছে। টাওয়ারের বিকিরণের ফলে পশু-পক্ষী ও জীবজগতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এক জরিপে দেখা গেছে- মোবাইল টাওয়ারের ইএমআর এর প্রভাবে সেন্টমার্র্টিনে নারিকেল গাছে ডাব উৎপাদন কমে যাওয়া, অকালে ঝরে যাওয়া, অধিকাংশ ডাব-নারিকেলে পানি রা থাকা, আকারে ছোট হওয়া সহ অকালে অনেক গাছ মারা যাচ্ছে।

মোবাইল টাওয়ার থেকে নির্গত ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন (ইএমআর) ঘটিত ইলেক্ট্রো স্মোগ এতই মারাত্মক যে এটি পশু, পাখি, পোকামাকড় এমনকি মানুষের বায়োলজিক্যাল সিস্টেমকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে- গত কয়েক বছরে মৌমাছি সংখ্যা প্রতিনিয়ত মারাত্মক হারে কমে যাচ্ছে। যার কারণ হিসেবে তড়িৎ চুম্বকীয় রেডিয়েশন (ইএমআর) বৃদ্ধি জনিত দূষণকে দায়ী করা হয়েছে। পিঁপড়ার উপর গবেষণায় দেখা গেছে ইএমআর-এ উন্মুক্ত পিপড়া তাদের ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি কয়েক ঘন্টার মধ্যে হারিয়ে ফেলে (কেমার্ট, ২০১২)। আলফোসনো বালমোরি (২০০৫ সালে) প্রমাণ করেন- ইএমআর এর প্রভাবে চড়ুই, ঘুঘু, সারস, দোয়েল এবং অন্যান্য প্রজাতির পাখির বাসা এবং স্থান পরিত্যাগ, পাখা কমে যাওয়া এবং গমন ক্ষমতা কমে যায়। রাশিয়ায় এক গবেষণায় দেখা গেছে ডিম ফুটানোর সময়ে জিএসএম ফোনের কাছে উন্মুক্ত শতকরা ৭৫ ভাগ মুরগির ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং মোবাইল টাওয়ারের পাশের পাখির বাসা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে পাখি বাসা ত্যাগ করে এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেনা। প্যারাগুপোলাস এবং মার্গারিটিস বিজ্ঞানীদ্বয় প্রমাণ করেন যে- ডিজিটাল জিএসএম ফোনের কাছে উন্মুক্ত ফ্রুট ফাইয়ের প্রায় ৫০ ভাগ পর্যন্ত প্রজননের ক্ষমতা কমে যায়। পুরুষ ও মহিলা পোকা উভয়েকেই প্রতিদিন ৬ মিনিট করে রেডিয়েশনে উন্মুক্ত রাখলে ৪-৫ দিনেই যদি ৫০ ভাগ প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। আলফোসনো বালমোরি- ২০০৬ সালে সর্বপ্রথম মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনের প্রভাবে ব্যাঙের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার যোগসূত্র একটি নিবন্ধে তুলে ধরেন। ইএমআর ব্যাঙাচির চলনে অক্ষমতা, অসমবৃদ্ধি এবং ঊচ্চ মৃত্যুহার (৯০%) ঘটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে যে- ইএমআর এর প্রভাবে মাছ এবং বাঁদুর নাটকীয় ভাবে মারা যাচ্ছে। দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়, স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাতসহ প্রজনন স্বাস্থ্যের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। মোবাইল টাওয়ারে পাশে অবস্থানকারী গাভীর শতকরা ৩২ ভাগ বাছুরই চোখের ছানি পড়া সমস্যায় ভোগে (হাসিগ, ২০১২)। ইএমআর উত্তাপ সৃষ্টির জন্য দায়ী। যার ফলে মাটিতে বসবাসকারী পোকামাকড় ও অণুজীব সমূহ মারা যায়। যা বাস্তুচক্রে বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। রেডিয়েশনের প্রভাবে ব্যাসিলাস সাবটিলিস, মাইকোব্যাকটেরিয়াম ধ্বংস হয়ে যায় (বরিক এবং ফগার্টি, ১৯৬৭)। ইএমআর এর প্রভাবে সুগার ফারমেন্টেশনের সময় ই. কোলাই এর বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হয় বিশেষ করে জীবিত কোষের সংখ্যা কমে যায়। গাছপালা, ফসল, শাকসবজিতে তড়িৎ চুম্বকীয় রেডিয়েশনের নানা নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।

ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যের রেডিয়েশন:
ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যের প্রভাব আরও ভয়াবহ। মোবাইল ফোনে যেসব ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তা ক্ষতিকর রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-ওয়েস্ট)-এ রয়েছে রেডিয়েশন, সিসা, মার্কারি, ক্যাডমিয়াম, ব্রোমাইন, রিটারডোন্ট ফেম এবং পলিভিনাইল ক্লোরাইডের মতো ক্ষতিকর পদার্থ। এতে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে মানবস্বাস্থ্যও। ক্যান্সার ও যক্ষ্মাসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নষ্ট বা পুরনো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসেট, টিউব লাইট, চার্জার, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্যাক্স মেশিন, বৈদ্যুতিক বাল্বসহ বিনোদনমূলক সামগ্রীগুলোই হচ্ছে ই-বর্জ্য (ই-ওয়েস্ট)। যেখানে-সেখানে এগুলো ফেলে রাখলে বিষ ছড়ায় পরিবেশে। যা পানি-বাতাস ও আবহাওয়া বিষাক্ত করে। ই-বর্জ্য ফেলা মাটির পুষ্টিগুণ-উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ফসল ফলে না। গাছেও ফল ধরে না। ফসল ও পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ছে বিষাক্ত পদার্থ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ই-বর্জ্যরে সংস্পর্শে আসা মানুষ কিডনি রোগ, ক্যান্সার, কানে কম শোনা, হাঁপানি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, অ্যাজমা, টিবি (যক্ষ্মা), ব্রেইন ডিজিজসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া অনিদ্রা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ও চর্মরোগসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে মানবদেহে। বিদেশ থেকে বেশির ভাগই পুরনো ও সস্তা দামের কম্পিউটার-মোবাইল ফোন সেট আসছে। এসব বর্জ্যে কার্বনসহ বিষাক্ত-ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। যা মাটি-পানিতে মিশে ফসল ও পরিবেশ দূষিত করছে। মানুষের মারাত্মক ক্ষতিকর অবস্থা তৈরি করছে।


কম্পিউটারে রেডিয়েশন:
কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটানা ৮ ঘন্টার অধিক সময় কম্পিউটারের সামনে থাকলে শরীরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। যাতে অনেক রোগ সৃষ্টি হতে পারে।কম্পিউটারকে বলা যেতে পারে একটি লাইট সোর্স। তাই একটানা এই লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক| যারা বেশি গেমস খেলেন তাদের চোখের অনেক ক্ষতি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রেডিয়েশন প্রতিরোধ কাউন্সিলের গবেষণা মতে, এই রেডিয়েশন দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হতে পারে, হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত কে শুরু করে দেহের বিভিন্ন কোষে সংক্রামিত হয়ে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। সারারাত যারা ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, পরদিন চোখ জ্বালা, পানি পড়া থেকে শুরু করে আরো অনেক উপসর্গ দেখা দেয়, কারণ একটিই মনিটর।গর্ভবতিদের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত না । বিজ্ঞানিরা গবেষনা করে দেখেছেন গর্ভবতিদের মধ্যে যারা ২০ ঘন্টার বেশি কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন তাদের Micrariases , Pre – mature এবং Still born শিশু হয়েছে। কম্পিউটারের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্নির জন্য এটা হয়ে থাকে। গর্ভবতি মহিলারা কম্পিউটার ব্যবহার করলে গর্ভ এর সন্তানের উপর চাপ পড়ে।


ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন:
আমাদের নিত্যসঙ্গী কম্পিউটার, টেলিভিশন, বিদ্যুতের লাইন এসবই বিপজ্জনক ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছড়ায়। যারা দীর্ঘক্ষন ধরে কম্পিউটার এ কাজ করে তাদের ডিপ্রেশ্ন , এলার্জি আরও অনেক ধরনের অসুবিধা দেখা যায়। এগুলোর জন্য বিজ্ঞানিরা ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কে দায়ী করেছেন। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও বিদ্যুতের লাইনের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।গন্ধ, বর্ণ ও শব্দহীন এই অদৃশ্য ঘাতক তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণের ফলে ‘স্লো পয়জন’-এর মতো দেশে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির উদ্ভব ঘটেছে। মানুষ ও জীবজগতের সবাই এই মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মোবাইল টাওয়ার লোকালয়, বাড়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে স্থাপিত হওয়ায় এই ঝুঁকি শতগুণ বেড়ে গেছে।টিভি-রেডিওর টাওয়ারগুলোও বিকিরণ ছড়াচ্ছে।


তেজস্ক্রিযতা থেকে আত্মরক্ষার্থে করণীয়:
প্রখর সূর্যকিরণে (দুপুর ১২ - ২টা) বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। যতটুকু সম্ভব বৃষ্টির পানিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা।ক্লোরোফিল ও অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা। খাবারে আয়োডিন ব্যবহার করা (আয়োডিনযুক্ত লবণ)। দিনের বেলায় বাহিরে বের হলে সান-গ্লাস ব্যবহার করা। বিভিন্ন রেডিয়েশন থেরাপি অতিমাত্রায় গ্রহণ না করা। এক্স-রে ও রেডিয়েশন হয় এমন সব মেশিন থেকে দূরে থাকা। দিনের বেলায় বাহিরে বের হলে শরীর ঢেকে রাখা বা সান-লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা। দৈনন্দিন জীবনে গৃহস্থালি কাজে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করি তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা। ল্যাবরেটরি ও শিল্প-কারখানার কর্মস্থলে রেডিয়েশন ডিটেকটর ডিভাইস ব্যবহার করা। কৃত্রিমভাবে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে যেসব ফলমূল পাকানো ও বাজারজাত করা হয় তা কম খাওয়ার চেষ্টা করা।

তেজস্ক্রীয়তার কারণে রেডিয়েশন সিকনেসের কোন লক্ষন দেখা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে তেজস্ক্রীয় এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কাপড়চোপড় পরিবর্তন করে বিকিরণ কমাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তেজস্ক্রিয়তাকে সম্পূর্ণভাবে এড়ানো সম্ভব না হলেও একটু সাবধান হলে এর মাত্রাকে আমরা অনেক কমিয়ে আনতে পারি। ক্যান্সারসহ যাবতীয় রেডিয়েশন সিকনেস থেকে বাচঁতে হলে চিকিৎসার আগে প্রয়োজন সচেতনতা ও প্রতিকার।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৬

জাফরুল মবীন বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা এই পোস্টটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।

অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:




সুত্র দিয়ে দিলে ভালো হতো।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

সাদিকনাফ বলেছেন: উন্নত দেশে মোবাইল টাওয়ারগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং আবাসিক এলাকা থেকে বহুদূরে অবস্থিত। অথচ কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে চিত্র উল্টা। মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশনের নেতিবাচক প্রভাব নিকট ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা সর্বোপুরি জীবন ও জীবিকায় ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। [/sb

আপনার উল্লেখিত উন্নত দেশগুলোর কয়েকটি উদাহরন দিলে খুশি হবো..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.