নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারমাণবিক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি, প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৩

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল রাশিয়ার (বর্তমান ইউক্রেনে) চেরনোবিলে পরমাণু স্থাপনায় দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক ৩০ জন নিহত হয়। তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে অন্তত ৪ হাজার মানুষ মারা যায়। ঐ দুর্ঘটনার চারপাশের ১৮ দশমিক ৫ মাইল এলাকা বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এখানকার ধ্বংসস্তূপের পরিত্যক্ত গাড়ি, ট্রাক্টর, ভবন ও ঘরবাড়ি সব আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। ধীরে ধীরে এগুলো ঝোঁপঝাড়ে ভরে যাচ্ছে। তেজস্ক্রিয় মৌল ছড়িয়ে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে। রাশিয়ার চেরনোবিলে অমন দুর্ঘটনা ঘটার পর কতজন যে পঙ্গু হয়ে গেছে তার হিসাব নেই। আজও চেরোনবিল শহর ইউক্রেনের প্রিপইয়াট পরিত্যক্ত। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ শহর থেকে ১০০ কি.মি দূরে অবস্থিত পরিত্যক্ত এই নগরটিতে বর্তমানে বন্যপ্রাণী ছাড়া আর কিছুই নেই। চেরোনোবিল দুর্ঘটনায় সব কিছু মিলিয়ে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে বন্ধ করতেই লেগেছিল ৪০০ কোটি ডলার।চেরনোবিল দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল ৫০০ বর্গ কিলোমিটার।চেরনোবিল দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক মৃত্যু নেই, কিন্তু আজ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে, এদের মধ্যে ৪৬ লক্ষ মানুষ বেলারুশের। তীব্র তেজষ্ক্রিয়তার দরুণ খুব দ্রুত মারা গেছেন ১০ হাজার লোক, এখনও অবধি মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার যার মধ্যে ৩০০০ মারা গেছেন আত্মহত্যা করে। এই দুর্ঘটনার কারণে ইউরোপের চারপাশের তিন লাখ অধিবাসী তাদের নিজস্ব বাসস্থান ছেড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপায় নেই। কারণ পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা হচ্ছে সেই আগুন, যা কখনোই নেভে না।



বাংলাদেশে আতংক

ফুকোশিমার দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশেও গণমাধ্যমে লেখা বের হয়- ‘‘জাপান আমাদের থেকে বহু দূরে নয়। ফলে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া তেজষ্ক্রিয়তা খুব সহজেই বাতাস এবং মেঘে ভর করে আমাদের দেশে চলে আসতে পারে। আসতে পারে সমূদ্রের পানি বাহিত হয়ে। তাই সতর্কতার জন্য আপনারা যা করবেন- ১. আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজবেন না। ৬ মাসের মধ্যে বৃষ্টিতে না ভেজা সবচেয়ে উত্তম। ২. বাইরে নেড়ে দেয়া বা রোদে শুকাতে দেয়া পরিধেয় বস্ত্র বা ব্যবহার্য কাপড় যেন বৃষ্টিতে না ভেজে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। ৩. আগামী ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত গরুর দুধ এবং গুড়ো দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কারণ তেজষ্ক্রিয়তা বিস্তারের প্রধান মাধ্যম হলো গরুর দুধ। গরু বাইরে দুধ খায়, যেজন্য এটা ঘটে। বিশেষ করে শিশুদের গরুর দুধ না খাওয়ানো ভাল্। তবে এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন এবং নিউজিল্যান্ড থেকে যে গুড়ো দুধ আসবে সেগুলোতে পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা সহনশীল মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী থাকবে এটা ধরে নেয়া যায়। ৪. সামুদ্রিক মাছ পারতঃপক্ষে না খাওয়া ‘’-ইত্যাদি।



তেজষ্ক্রিয়তার দুর্ঘটনার প্রভাব ও প্রতিবাদ

তেজষ্ক্রিয়তা ও তার প্রভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা কেমন তা বুঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ভুতুড়ে গল্প/কল্প কাহিনী তৈরি হতে পারে সে জনশ্রুতি জানারও প্রয়োজন আছে।একটি দুর্ঘটনা দেশীয় জনমত, বিশ্ব জনমত এমনকি রাজনীতিকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে। প্রযুক্তিতে অত্যন্ত অগ্রসর জাপানে এই দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে পরমাণু বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশ জার্মানি ও ফ্রান্সে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জার্মানি তাদের নিজস্ব সাতটি পারমাণবিক জ্বালানিকেন্দ্র আপাত বন্ধ ঘোষণা করলেও পরমাণু জ্বালানি ইস্যুকে ঘিরেই প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৫৮ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সিডিইউ সরকারের পতন ঘটেছে। সেখানে পরমাণু জ্বালানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গ্রিন পার্টি বিজয়ী হয়েছে। জাপানে পরমাণু কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জার্মানি পরমাণু বিদ্যুৎ সম্পূর্ণভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ চলছে পরমাণু কেন্দ্র গুটিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া৷ তবে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিরাপদে মজুত করা সহজ কাজ নয়৷



বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু শক্তিনির্ভর দেশ ফ্রান্স ফুকুশিমার দুর্ঘটনার পর বিশ্বের পরমাণুনীতির সংষ্কার দাবি করেছে। আর জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতা কান মন্তব্য করেছেন, জাপানের পরমাণুকেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে ফেলা উচিত। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও বিজ্ঞানীমহল দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাচিঠি লিখে সব ধরনের পরমাণু প্রকল্প বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।চীন নতুন কোন পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সের পারমাণবিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফরাসি পার্লামেন্ট।



ইটালিও পরমাণু শক্তির ঘোর বিরোধী৷ চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ১৯৮৭ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে ইটালীয়রা পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের পক্ষে ভোট দেয়৷ পরবর্তীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি সেটা আবারও শুরু করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি৷



২০২০ সালের মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন চারগুণ বাড়াতে চায় ভারত৷ সরকারের এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েছে৷ রাশিয়ার সহায়তায় তৈরি হওয়া একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বিক্ষোভের কারণে মাঝেমধ্যেই বন্ধ রাখতে হয়েছে৷



জাপানে পারমাণবিক চুল্লির তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় টোকিওতে বসবাসরতদের মধ্য থেকে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে চলে আসে। জানা যায়, জাপানে সরকারি হিসাবে ১২ হাজার বাংলাদেশী বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৫ থেকে ৬ হাজার টোকিওতে রয়েছেন। আর সুনামির স্থলে ৫২ জন বাংলাদেশী ছিলেন। দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। জাপানের টোকিওতে অবস্থিত সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস সরানোরও চিন্তা করা হয়েছিল।



১৯৫০-এর দশক থেকে ২০১০ পর্যন্ত হিসেবে দেখা গেছে যে, বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কমপক্ষে ২৮টি পারমাণবিক কেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বায়ুমন্ডল, পরিবেশ ও প্রাণীর ক্ষতি করে - সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। ২০০৮ সালে জার্মান সরকার তার বাণিজ্যিক ১৬টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে বসবাসকারী শিশুদের ওপর একটি গবেষণা চালায়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে যতোই যাওয়া যায় শিশুদের দেহে ক্যান্সার বিশেষত লিউকোমিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি ততো বাড়তে থাকে। ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মাঝে বসবাসকারী শিশুদের লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তার বাইরে বসবাসকারী শিশুদের তুলনায় অন্ততপক্ষে দ্বিগুণ। গবেষণায় দেখা যায়, পরমাণু রিঅ্যাক্টরের আশপাশে অবস্থিত লোকালয়গুলোতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ২৬-২৮ জন, যখানে গড়পড়তা স্তন ক্যান্সারজনিত মত্যুহার হচ্ছে প্রতিলাখে ২০-২১ জন। এই গবেষণাটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যারা বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ডিপার্টমেন্টের গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে পুরনো পরমাণু কেন্দ্রগুলোর আশপাশে স্তন ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার ১৯৫০-৫৪ থেকে ১৯৮৫-৮৬ সময়কালে বেড়েছে ৩৭ শতাংশ, যেখানে পুরো আমেরিকারজুড়ে গড়ে তা বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ।



যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ডে ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ একটি পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটে। ১৯৮০ সালে থ্রি মাইল আইল্যান্ড ঘটনার পরপরই সুইডেন রেফারেন্ডামে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। ১৯৮৬ সালের চেরোনোবিল দুর্ঘটনার পর সবাই ধরে নিয়েছিল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিন বুঝি এবার ফুরাচ্ছে। জার্মানি কেবল নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধই করেনি। সেই সঙ্গে একে একে বন্ধ করে দিচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রগুলো। বেলজিয়াম, তাইওয়ান, জাপানও ক্রমে সরে আসছে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে। এমনকি নিজস্ব বিদ্যুতের শতকরা ৭৭ ভাগ পরমাণু শক্তি থেকে পাওয়া ফ্রান্সের জনগণ সেদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে ব্যাপকভাবে চাপ দিচ্ছে। ফ্রান্সের ফ্লামেনভিলেতে ১৬৩০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালে। এটি নির্মাণে প্রারম্ভিক ব্যয় ধরা হয় ৩৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা এবং ২০১২ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা বলা হয়। কিন্তু নানা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সংযোজন এবং ফুকুশিমা দূর্ঘটনার পরে আরো আধুনিকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার কোটি টাকা এবং এখন তা ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।



ব্রাজিলের অ্যাংরো-১ পরমাণু কেন্দ্রটি কিছুদিন পর পর যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার কারণে দুই হাজার সালের মে’ তে হাজার হাজার গ্যালন তেজস্ক্রিয় নোনাপানি প্ল্যান্ট থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে এবং খোদ ব্রাজিলে এই খবর চার মাস অপ্রকাশিত ছিল। পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানিটি এই খবর সরকারকে জানায়নি। এর ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয় বিপুলসংখ্যক মানুষ।



তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের বহুবিধ ক্ষতি

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যপদার্থ থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও খুব ভয়াবহ। এই বর্জ্য পদার্থের মধ্যে থাকে প্লুটোনিয়াম পরমাণুর বিভিন্ন আইসোটোপ। এগুলোর তেজষ্ক্রিয়তা বজায় থাকে হাজার হাজার বছর ধরে, অর্থাৎ হাজার বছর ধরেই এগুলো দূষণ ছড়ায়। এই বর্জ্যসমূহ নিরাপদে নিষ্কাশনের কোনো উপায় এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। মাটির গভীরে পুঁতে রাখলে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।



পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লোকদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র (গ্লাভস, পোষাক ইত্যাদি) পরিপূর্ণভাবে তেজষ্ক্রিয়ামুক্ত করার পদ্ধতি এখনও জানা নেই। ২০ জানুয়ারি ২০০০ নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক রিপোর্টে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র কারখানায় কর্মরত ৫ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এসব পরিস্থিতি বোঝাতেই নিউজিল্যান্ডের নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী জন পোর্টার বলেছিলেন, “মানুষ এখনও পরমাণু চুল্লীর সাথে বিশ্বাসে ঘর করবার মতো বড় হয়ে ওঠেনি।”



ফুকুসিমা বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ

দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চালে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করবে জাপান। পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর থেকে জন্মানো খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে জনগণ এখনো আতঙ্কে থাকায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।



জাপানে ফুকুসিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপর্যয়ে মাতৃদুগ্ধেও তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে দেশটির সরকার। সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা ইউকিও ইদানো বলেন, ফুকুসিমায় পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর সেখানকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার উপর তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সেখানকার উৎপাদিত ফসলেও অল্প পরিমাণে তেজষ্ক্রিয়তা ধরা পড়েছে। তাই সরকার মাতৃদুগ্ধে তেজষ্ক্রিয়তার কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবে।



সমাজ র্মীদের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগস্টে শরণার্থীদের মধ্যে ১৫৩৯ জন মারা গেছেন অসুস্থতায়, সংখ্যাটা সুনামিতে নিহতদের কাছাকাছি৷ যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের বেশিরভাগই হতাশাগ্রস্ত৷ খালি করে ফেলা এলাকাটুকু হংকং-এর চেয়ে একটু বড়৷ তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা অনুযায়ী, ঐ এলাকাটিকে ১১টি জোনে ভাগ করা হয়৷



দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে ব্যবস্থা ও প্রশ্ন

জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয়ের পেছনে মানুষের যথেষ্ট হাত রয়েছে। প্যানেলটির চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ভুলের পাহাড় ও কর্মকর্তাদের অবহেলা এই পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে ভূমিকম্প ও সুনামির মতো বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে দেয়নি।



জাপানের ফুকুশিমার দাই-ইচি পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আকাশ থেকে সামরিক হেলিকপ্টার দিয়ে শত শত টন পানি নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ৯টা ৪৮ মিনিটে সেনাবাহিনীর চিনুক হেলিকপ্টারের সাহায্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিন ও চার নম্বর চুল্লিতে পানি নিক্ষেপ করা হয়। তবে পানি নিক্ষেপ করে দ্রুততার সাথে সরে পড়ছে হেলিকপ্টারগুলো যাতে ভেতরে থাকা ক্রুরা তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত না হন।



মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জাপানে অবস্থানরত নাগরিকদের ফুকুশিমার দাই-ইচি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। জাপানে থাকা মার্কিন সেনাদের তেজস্ক্রিয়তা বিরোধী ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাপানে ইতিমধ্যে ১১ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃটেন তার নাগরিকদের অনতিবিলম্বে টোকিও ও দক্ষিণাঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।



ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ভয়াবহতা জাপানিদের আরো শঙ্কিত করে তুলে। পরমাণু চুল্লি বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিষক্রিয়ায় অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়।তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পেতে এসব অঞ্চলে আয়োডিন বিতরণ করা হয়।



ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠবে কবে?

যে মানুষ ও প্রাণের ক্ষতি হয় তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, তবে যারা আহত হয় বা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে তাদের চারপাশে হাহাকার, ধ্বংসযজ্ঞ, স্বজন হারানো, বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে অনেক কিছু হারানোর কষ্ট, নিঃস্বতা, লণ্ডভণ্ড অবস্থা, পানি-বিদ্যুৎসহ সবই ধ্বংস হয়ে আছে। বলা চলে সেখানে জীবনের ওপর নেমে এসেছে চরম এক বিপর্যয়, সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামও চলছে। পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার ভযাবহতা সম্পর্কে জাপানিদের চাইতে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পৃথিবীর অন্য কোনো অঞ্চলের মানুষের বেশি নেই। ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে আণবিক বোমা নিক্ষেপের করুণ পরিণতি জাপানের জনগণ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে আসছে। এখনো ওইসব শহরে বিকলাঙ্গ মানুষের জন্ম এবং জীবনযন্ত্রণার কষ্ট বয়ে বেড়াতে হয় অনেককে। জাপানিরা প্রতি বছর আগস্ট মাসে হিরোশিমা নাগাসাকি দিবস স্মরণ করে, লাখ লাখ মানুষ ওই দুদিন তাদের পূর্বপুরুষদের আণবিক বোমায় মুহূর্তের মধ্যে মরে যাওয়া কিংবা পরবর্তী সময়ে ধুঁকে ধুঁকে মরার দৃশ্যটি পীড়িত করে, কাঁদায়। হিরোশিমা এবং নাগাসাকির মানুষজন প্রতি বছর প্রার্থনা করেন আর যেন আণবিক বোমায় কোনো মানুষ কষ্ট পেয়ে না মারা যায়। সেই জাপানেই এখন পারমাণবিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ভূমিকম্প পারমাণবিক চুল্লিকেও বিস্ফোরিত করেছে।



জাপানের তেজি অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে অনেকভাবেই সহায়তা দান করে আসছিল। এখন জাপানেই আঘাত এসেছে। ফলে বর্তমান জাপানকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে বেশ সময়ের প্রয়োজন হবে। সেই পর্যন্ত জাপানি সাহায্য সংস্থাগুলোর অনুদান, অর্থায়ন কতোটা স্বাভাবিক থাকবে তা দেখার বিষয়। জাপান বাংলাদেশের সবচাইতে বড় সাহায্য সরবরাহকারী দেশ। এছাড়া আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও অনেকটাই জাপানের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কটি দেশে কর্মরত শ্রমিকদের এখন দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে, বেশকিছু দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এসব ঘটনা আমাদের জন্য খুব সুখকর কিছু নয়।



তেজষ্ক্রিয়তার ভয় এখনও রয়ে গেছে

ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জাপানের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে৷ কয়েক মাসের চেষ্টায় ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিতে যে ক্ষতি হয়েছিলো তা বন্ধ করতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু তেজষ্ক্রিয়তার ভয় এখনও রয়ে গেছে৷ জাপানের এই পরমাণু বিপর্যের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও৷ অনেক দেশ এখন পরমাণু জ্বালানি থেকে সরে আসার কথা জোরেশোরে ভাবছে৷ জার্মানি ইতিমধ্যে সেই ঘোষণাও দিয়ে ফেলেছে৷



ফুকুশিমার আশেপাশের এলাকাতে এখনও রয়ে গেছে তেজষ্ক্রিয়তা৷ যতদিন এই তেজষ্ক্রিয়তা থাকবে ততদিন সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত রাখা হবে৷ অনেকে হয়তো আর কখনো নিজের ভিটামাটির দেখা আর পাবেন না৷ যদিও তারা এখনও সেই আশাতেই দিন গুনছে৷



চলচ্চিত্রে ফুকুশিমার দুর্ঘটনা

গত বছর জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছিল৷ সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি ৩টি ছবি এবার বার্লিনে চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হচ্ছে৷ ‘নিউক্লিয়ার নেশন' ছবির পরিচালক আতসুশি ফুনাহাশি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে এসে অত্যন্ত সন্তুষ্ট৷ ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সময়েও ফুনাহাশির পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও ফুকুশিমা নিয়ে ছবি করার সময়ে তাঁর মনে সংশয় ছিল৷ পরিচালক হিসেবে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন বলেই শেষ পর্যন্ত তিনি এই কাজে হাত দেন৷ দুর্ঘটনার পর ফুতাবা এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত স্কুলে ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল৷ তাদের সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই ছবিটি তৈরি করেন আতসুশি ফুনাহাশি৷ শহরটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শহরের মেয়র কীভাবে সেখানকার মানুষকে সংঘবদ্ধ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ছবিতে সেই প্রচেষ্টাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷



জাপানি পরিচালক তোশি ফুজিওয়ারা'র ‘নো ম্যানস জোন' ছবিতে ফুকুশিমার কাছে ২০ কিলোমিটার এলাকার অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে৷ মানুষ নয়, পরিত্যক্ত এই এলাকার ধ্বংসের মাত্রাই মূলত ধরা হয়েছে ক্যামেরার লেন্স'এ৷ তুলে ধরা হয়েছে সেই সব মানুষের বয়ান, যারা কার্যত সব কিছু হারিয়েছে৷ ‘ফ্রেন্ডস আফটার থ্রি ইলেভেন' ছবিতে পরিচালক ইওয়াই শুনজি পরমাণু কেন্দ্রের এক ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংক কর্মী ও সাংবাদিকের বন্ধুত্বের কাহিনি তুলে ধরেছেন৷ এমন বন্ধুত্বের আলোকে তিনি জাপানের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন৷





তেজষ্ক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ

জার্মানির সালৎসগিটার শহরের কাছে গত শতাব্দীর পরিত্যক্ত এক খনি রয়েছে, যার নাম কনরাড৷ মাত্র ৯০ সেকেন্ডে প্রায় ১,৩০০ মিটার গভীরে নেমে যাওয়া যায়৷ আগে এখানে লৌহ আকরিক তোলা হতো৷ সেই কাজ কবে বন্ধ হয়ে গেছে৷ তা সত্ত্বেও এখানে চরম ব্যস্ততা চলছে৷ কারণ সুড়ঙ্গগুলি এখন পরমাণু বর্জ্য রাখার জন্য উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে৷ সেখানে কুয়ার মধ্যে দুর্বল ও মাঝারি মাত্রার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাখা হবে, যাতে সেগুলি আগামী কয়েক হাজার বছরেও বিপজ্জনক হয়ে না উঠতে পারে৷ অন্তত কাগজে-কলমে সেটাই হলো পরিকল্পনা৷ জার্মান তেজস্ক্রিয়তা সুরক্ষা দপ্তরের প্রধান ভল্ফরাম ক্যোনিশ বলেন, ‘‘খনিকে গুদামে পরিণত করতে গিয়ে আমাদের নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ যেমন গত শতকের পঞ্চাশের দশকের কুয়া পরিষ্কার করতে অনেক সময় লাগছে৷ এটা শুধু এখানকার অভিনব সমস্যা নয়, পরমাণু বর্জ্যের চূড়ান্ত ব্যবস্থা করতে গেলেই এমনটা ঘটে৷ ফলে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বিলম্ব ঘটে, ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়৷''



পুড়ে খাক হয়েছে উরাল পর্বতমালার জঙ্গল৷ সবুজ গাছগুলো পুড়ে হয়েছে কয়লা৷ সেই দাবানল প্রায় স্পর্শ করেছিল একটি পারমাণবিক কেন্দ্রকে৷ এর নাম মায়াক পরমাণু স্থাপনা৷ সেখানেই পাঠানো হচ্ছে পরমাণু বর্জ্য৷ খোদ জার্মানি থেকে৷ রাশিয়ার উরাল পর্বতমালায় জমে থাকে বরফ৷ সেই বরফ গলা জল গিয়ে পড়ে একটি নদীতে৷ এই নদীর নাম তেচা৷ কলকলিয়ে বয়ে যাচ্ছে এর পানি৷ সেই জলের ধারে বসে ছিলেন আলিমভ৷ সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ৷ ভাবছিলেন, এই জলে কি নামা যাবে আর কখনো? নদীর গভীরের নানা রঙের মাছ আর সবুজ শ্যাওলা কি বেঁচে থাকবে? এমনিতেই অনেকটা খারাপ অবস্থা নদীটির৷ বিষাক্ত এই জল! কেন এমন ভাবছেন আলিমভ? উত্তর – পরমাণু বর্জ্য৷ জার্মানির ড্রেসডেন শহরের খুব কাছে সাবেক পূর্ব জার্মানির রসেনডর্ফ পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র৷ সেই কেন্দ্র থেকেই পরমাণু বর্জ্য যাচ্ছে রাশিয়ার উরাল পর্বতমালা সংলগ্ন মায়াক পরমাণু স্থাপনায়৷ ২০০৪ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে এই বিষাক্ত বর্জ্য যাচ্ছে সেখানে৷ তেজস্ক্রিয় পরমাণু রডগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণ করে সেই বিষাক্ত পানি ফেলতে হবে নদীতে৷ আর এর ফলেই নদীর জলে জমা হবে আরও বিষ৷



পরিবেশবাদীরা সরাসরি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দয়া করে এই বর্জ্য পরিবহণ বন্ধ করুন৷ কারণ, মায়াক পরমাণু স্থাপনায় নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আধুনিক নয় সেটি৷ বর্জ্য পরিশোধন করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় এটি৷ এক কথায় তারা মায়াক পরমাণু স্থাপনাকে তুলনা করছেন জীবন্ত টাইম বোমার সঙ্গে৷ সেখানকার বিরোধী দল ইয়াবলোকোর নেতা সের্গেই মিত্রোচিন বলছেন, ‘আমরা জেনেছি এখানে বিষাক্ত ১ হাজারটি পরমাণু ফুয়েল রড পাঠানো হচ্ছে৷ এর মানে এই যে আরও বিষাক্ত হয়ে যাবে তেচা এবং উরাল পর্বতমালা- এক কথায় চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলের পানি৷'আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের স্থানীয় নেতা ভ্লাদিমির চুপরভ'এর মতে, প্রতি বছর এমনিতেই তেচা নদীতে পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়ন ঘন মিটার বিষাক্ত পরমাণু মিশ্রিত পানি পড়ছে৷ ফলে বিষাক্ততা সর্বত্র৷ ‘আমরা ২০০৩ সালে এই নদীর পানি পরীক্ষা করেছিলাম৷ তখনই আমরা এখানে প্লুটোনিয়ামসহ নানা বিষাক্ত পদার্থের অস্তিত্ব পেয়েছিলাম৷ এক কথায় এখন যা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে রয়েছে৷ জনজীবন এখানে মারাত্মক হুমকির মুখে৷ তা সত্ত্বেও এখানে মানুষ মাছ ধরছে, শিশুরা গোসল করছে৷



এখানেই আছে আরেকটি লেক৷ নাম কারাচাই৷ মধ্য ও দক্ষিণ উরালে রুশ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক শিল্পকারখানা স্থাপন করে৷ মায়াক কমপ্লেক্স ১৯৪৮ সাল থেকে পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে আসছে৷ মায়াকেই প্রথম সোভিয়েত পারমাণবিক বোমার কাঁচামাল প্রস্তুত হয় এবং ১৯৪৯ সালের আগস্টে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷ সেখানে ১৯৪৯, ১৯৫৭ ও ১৯৬৭ সালে তিন দফায় পরমাণু বর্জ্য দূষণের ঘটনা ঘটে৷ সব মিলিয়ে এগুলির বিকিরণ, চেরনোবিল বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট বিকিরণের প্রায় দশগুণ৷ ১৯৫০-এর দশকে মায়াকের পরমাণু বর্জ্য নিকটস্থ কারাচাই হ্রদে ফেলা হতো এবং এর ফলে হ্রদটি তেজস্ক্রিয় হয়ে পড়ে৷ ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে শ্রমিকেরা হ্রদটিকে পাথর দিয়ে ভরাট করা শুরু করে এবং মধ্য ৯০-এর দশকের মধ্যে এটিকে কংক্রিট চাপা দেয়ার কথা থাকলেও ১৯৯১ সালে এক সরকারি কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে এটা করলে ভূগর্ভস্থ পানির তেজস্ক্রিয়তা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ উরালে এখনও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কীভাবে পরিষ্কার করা হবে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে৷



সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এই নদীর জল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ৷ কিন্তু মিলা কাবিরোভা, যিনি সেখানকার অধিবাসী, যিনি বেড়ে উঠেছেন এই নদীর তীরেই, তিনি জানালেন, আমাদের কাছে এর পানি ব্যবহার করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই৷ তাই এই নদীর পানি আমরা ব্যবহার করছি৷ ‘১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে তেচা'য় পরমাণু বর্জ্যবাহী পানি ফেলা শুরু হয়৷ এর আগে এই নদীর পানিই ছিল এখানকার মানুষের খাবার জলের একমাত্র সংস্থান৷ সকলে এই পানি ব্যবহার করতেন৷'এ অবস্থায় যদি আবারো মায়াকে নতুন করে ফেলা হয় বর্জ্য মিশ্রিত পানি, তাহলে এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ আর মানুষের হবে সবচেয়ে ক্ষতি৷



জার্মানিতে পারমাণবিক বর্জ্যবাহী ট্রেনের যাত্রা নিয়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ তীব্র রূপ নেয়৷ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ করে৷ ট্রেনটির যাত্রাপথের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষ হয়৷ গোর্লেবেনের কাছের শহর ডোনেনবার্গের জঙ্গলে প্রায় ৪ হাজার বিক্ষোভকারী রেল লাইনের ওপরে অবস্থান নেয়৷ গোর্লেবেন শহরেও কমপক্ষে ২৫ হাজার পরমাণু বিরোধী বিক্ষোভকারী অবস্থান নেয়৷ পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে, সাহায্য নেয় জলকামানের৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ ডোনেনবার্গে পুলিশের ঘোড়ার সামনে পিছলে পড়ে গুরুতর আহত হন এক নারী৷ আহত হন কমপক্ষে ১২ জন৷

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

 বলেছেন: + :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.