নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতারক দালাল, অসচেতন অভিভাবক ও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:৪৮

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থী ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগে দেড় শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আটক করেছে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের সানওয়ে পিরামিড শপিং মল ও এর আশপাশের এলাকা সুবাং জায়া সিটি থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। আটক এসব শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই লিংকন ইউনিভার্সিটি, টিএমসি কলেজ, এডাম কলেজ, বাইনারি ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র। এ কলেজগুলোর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় মানবপাচারের অভিযোগ থাকায় দেশটির প্রশাসন অভিযানে নামে।সানওয়ে কমপ্লেক্সের ভেতরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও পাশের নির্মাণ প্রকল্প থেকে প্রায় ৮০ জন, বিভিন্ন ভিডিও গেমস স্টোর থেকে ২৫ জন ও ক্লাং এলাকা থেকো প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটক সবাই স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন ও ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে চাকরি করছেন।মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের পার্টটাইম কাজের স্বীকৃতি নেই। তারা পরিচয় গোপন রেখে রেস্টুরেন্ট ও নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করে থাকে।

পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অনেক মেধাবীদের স্বপ্নভঙ্গের করুণ কাহিনী। লোক দেখানো অফিস রুম, আর ৩/৪টি শ্রেণী কক্ষ, কোন ভবনের ২/১টি ফ্লোর নিয়ে চলে কলেজ। সেখানে নিয়মিত পড়াশুনা বা ক্লাস হয়না। ক্লাস হয় সপ্তাহে একদিন বা দুদিন। একদিকে আদম ব্যবসায়ীদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট আটকিয়ে শিক্ষার্থীদের অনিরাপদে রেখে প্রতারণার বাজার খুলে বসেছে। আর অন্যদিকে ভিটেমাটি বিক্রি করে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে পার্ট টাইম চাকরি করে ভাল আয় আর উন্নতমানের পড়াশোনার স্বপ্ন দেখা তরুণরা হচ্ছে নিরুপায়, কেউ সর্বশান্ত হয়ে ফিরছে দেশে আর বাড়ছে হতাশা।

কোচিং সেন্টার ধরনের এসব কলেজে প্রতারিত হয়ে পড়তে যেয়ে থাকা আর খাওয়ার খরচ জোগানোর জন্যে রেস্টুরেন্টে কাজ করতে হয়। ‘পার্ট টাইম চাকরি করে মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করতে পারবে’ দালালদের এমন আশ্বাসের সাথে বাস্তবতার সঙ্গে অমিল দেখে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে অনেকেই। অনেকে রকমারি দোকানে দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে আয় করেন দৈনিক ৩০ রিঙ্গিত (৭৫০ টাকা)। এতে বাবা-মার স্বপ্ন পূরণে পড়াশুনাটা হয় না, মানবেতরভাবে জীবনটা কাটানো যায় মাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করে ভালো আয় করে দেশেও কিছু আর্থিক সাহায্য করতে পারা আকাশ কুসুম কল্পনা। যারা আয়ের জন্যে কুলির কাজটাও পুলিশের হয়রানির ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে করে তারা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে না। পুলিশ ধরলেই ১০০ থেকে ২০০ রিঙ্গিত দিয়ে ছাড়া পেতে হয়। আর থানায় নিয়ে গেলে ১০০০ রিঙ্গিতের নিচে ছাড়া পাওয়া যায় না। এভাবে কষ্ট করে টাকা জমিয়ে বছর শেষে সাড়ে ৭/১০ হাজার রিঙ্গিত তুলে দিতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। এই সিমেস্টার ফি না দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভিসা দেন না নতুন করে।

মালয়েশিয়ার সাইনবোর্ড সর্বস্ব কিছু ইউনিভার্সিটি ও কলেজ হয়ে উঠেছে সেখানে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একেকটি বড় মরণ ফাঁদ। শিক্ষার্থীদের প্রলোভিত করার উপহার হিসেবে বাংলাদেশের এজেন্টরা প্রতি শিক্ষার্থীর ভর্তির বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পায়। প্রতারণা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন বাংলাদেশের কিছু স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম। বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্ম্পকে ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে এই ফাঁদে ফেলা হচ্ছে তাদের। বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয় আইওআই মলের একদিকে কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে চলছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে পুরো আইওআই মলকেই দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হিসেবে। ভর্তির টাকা দিয়ে এবং এক মাস বা দুই মাস পড়েই আবার দেশে ফিরে এসেছেন এমনও রয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এমনও অভিযোগ রয়েছে যে দেশ থেকে যে বিষয়ে ভর্তির কথা বলে পাঠানো হয়েছে, ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় ওই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোই হয় না। অত্যন্ত নিম্নমানের পাঠদান, শিক্ষক স্বল্পতা এবং খুব কম শিক্ষার্থী দেখে অনেকেই বিব্রত হন। অনেক সময় নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্যে ভিসা নবায়ন করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট জমা নেয়, কিন্তু পাসপোর্ট গুলোর নামে পুলিশি মামলা রয়েছে বলে ১ থেকে ২ হাজার রিঙ্গিত ঘুষ নেয়। দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে কলেজের ১হাজার রিঙ্গিত জমাতে দুই থেকে তিন মাস লেগে যায়। পাসপোর্ট জিম্মি করে আদায় করা অতিরিক্ত টাকা দিতে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তাদের।

অভিযোগ রয়েছে যেসব শিক্ষার্থী পার্টটাইম চাকুরি করতে যেয়ে পুলিশের হাতে বন্দী হন, তাদের ছাত্র হিসেবে প্রমাণের ব্যাপারেও গড়িমসি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশকে মোটা অংকের উৎকোচ দিলেই কেবল মুক্তি মিলে শিক্ষার্থীর।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অজ্ঞতা-দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে মালয়েশিয়ান কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশী এজেন্টরা। মালয়েশিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশী দালালরা মূলত: শ্রমিক পাচারের মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করছেন। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও গিয়ে পড়ছেন বিপাকে। এই প্রতারণার ব্যাপারে অভিভাবক ও শিক্ষর্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতারক দালালদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.