নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা: চাই নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২৬

বাংলাদেশে সড়ক দূর্ঘটনা বেড়েই চলছে-এটা বুঝার জন্যে খুব বেশি পিছনে তাকানোর প্রয়োজন হয়না। ১৯ জুন (শুক্রবার) ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে দুই পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ৩জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। ১৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সত্যপ্রিয় দাশ তপু। ১৭ জুন সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১ নারীসহ ২জন নিহত ও ১০ জন আহত এবং টাঙ্গাইল ও মাদারীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন। ক্রমাগত সড়ক দূর্ঘটনা যেন একটি সাধারন দুর্ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। ২৯ জানুয়ারী ২০১৩ ফরিদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র মিরাজ নিহত হন। প্রসঙ্গত এর আগে ঐ একই স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় এই কলেজ ছাত্রটির বাবাও মারা যান। ২২জুলাই ২০১২ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দূর্ঘটনায় বুয়েট ছাত্রী শামীমা নাসরিনের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়। পঙ্গুত্ব আজ যার সারা জীবনের সম্বল হয়ে দাঁড়ায়। মর্মস্পর্শী দূর্ঘটনা ঘটেছিল ১১জুলাই ২০১১ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। এতে প্রাণ হারায় ৩৮ শিক্ষার্থীসহ ৪০ শিশু কিশোর।

সড়ক দূর্ঘটনার চিত্র দেখলে আশ্চর্যব হতে হয়। ২০০০ সালে নিহতের সংখ্যা ৩৪৩০জন এবং আহত/পঙ্গু৩১৭২জন, ২০০১ সালে নিহত ৩১০৯জন এবং আহত/পঙ্গু ৩৬০৭জন, ২০০২ সালে নিহত ৩৩৯৮জন এবং আহত/পঙ্গু ৩০৭০জন, ২০০৩ সালে নিহত ৩৩৮৯জন এবং আহত/পঙ্গু ৩৮১৮জন, ২০০৪ সালে নিহত ২৯৬৮জন এবং আহত/পঙ্গু ২৭৫২জন, ২০০৫ সালে নিহত ৩১৮৭জন এবং আহত/পঙ্গু ৩৭৫৫জন, ২০০৬ সালে নিহত ৩১৯৩ জন এবং আহত/পঙ্গু ২৪০৯ জন, ২০০৭ সালে নিহত ৩৭৪৯ জন এবং আহত/পঙ্গু ৩২৭৩জন, ২০০৮ সালে নিহত ৩৭৬৫জন এবং আহত/পঙ্গু৩২৮৪জন, ২০০৯ সালে নিহত ২৯৫৮ জন এবং আহত/পঙ্গু ২৬৮৬জন, ২০১০ সালে নিহত ৪০৬৭জন এবং আহত/পঙ্গু ৪৯৭৫ জন।

এই ভয়াবহ সংকট থেকে উত্তরণে কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন- রাজপথ ও মহাসড়কগুলো সংকীর্ণ, আঁকাবাঁকা ও ভারী যান-বাহন চলাচলের অনুপযোগী। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে সড়ক সংস্কার ও সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অতীব জরুরী। এছাড়া চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। কোন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে অন্তত এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ড্রাইভাররা সিস্টেমটির ব্যাপারে অভিজ্ঞ। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে সিস্টেমটি কিভাবে ব্যবহার করা হয়।

দূর্ঘটনা রোধে একদিকে যেমন চালককে ট্রাফিক আইন মানতে হবে অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যেমন: ওভার লোডিং ওভারস্পিডিং, গাড়িতে চালানো অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলা, নির্ধারিত ষ্টপেজ ব্যতিরেকে যাত্রী ওঠানামা করা। এসকল বিষয়গুলোকে যথাযথ আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট লেভেল ক্রসিংয়ের শতকরা ৯৯ভাগ রেলগেটে ডিভাইস পদ্ধতির সিগন্যাল সিস্টেম নেই। প্রায় আড়াই হাজার লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে গেট ব্যারিয়ার ও গেঁম্যান রয়েছে মাত্র ৩৭০টিতে। বাকিগুলো অরক্ষিত। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে অতিসত্ত্বর এসব ক্রসিংয়ে ডিভাইস প্রযুক্তির সিগন্যাল সিস্টেম চালু করতে হবে।

সড়ক-মহাসড়কগুলোতে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দূর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় সড়কের বাক কমানো এবং হাইওয়েতে পথচারীদের চলাচলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদেরকে নিয়ে সময় উপযোগী ডিভাইস ডিজাইন করতে হবে যার মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা শক্ত অবস্থান নিতে পারব।

আমাদেরকে কার ইন্ডাস্ট্রির প্রতিও নজর দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিগুলো শুধুমাত্র লাভের জন্য মানহীন কার তৈরী করে। তাই সীমাবদ্ধ প্রযুক্তি দিয়ে এসব কার তৈরী করা হয়, এছাড়াও অত্যধিক বিনির্মান খরচতো রয়েছেই। এসকল কারণেই যানবাহন কিছুদিন রাস্তায় চলার পর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং দূর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গাড়ির যথাযথ মানও নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সগুলো জব্দ করে পরীক্ষার মাধ্যমে বৈধ লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বিষয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তদেরকে সঠিকভাবে মনিটরিং করতে হবে। আইসিটি নীতিমালার কর্ম পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে একটি পরিমিত কাঠামোর বাজেট পেশ করতে হবে। এই খাতে সরাসরি পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়ে এখাতের উন্নয়ন বেগবান করতে হবে। তবেই তা সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য যোগাযোগ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে।

তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন সহজে ও সুলভে প্রযুক্তিকে মানুষের কাছে পৌছানো এবং সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে সকলে মিলে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও আন্ত:জেলা সড়ক ও মহাসড়কে দ্রুতগতি এবং কমগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা। হাইওয়েতে স্থাপিত হাটবাজার, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট অপসারণ করতে হবে।

সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭হাজার কোটি টাকা যা আমাদের জিডিপির দেড় থেকে দুই ভাগের সমান। আমাদের যথাযথ নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা না থাকার দরুণ যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে তা দিয়ে মনে হয় যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণই সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয় জীবনের যে ক্ষতি ঘটছে তার ক্ষতিপূরণ হবার নয়, সম্ভব নয়। কখনোই সম্ভব নয় সেই কর্তব্যরত মানুষটিকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া। তবে এধরনের দূর্ঘটনা হ্রাসে সকলে মিলে পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি।

আমরা আর কোন সড়ক দূর্ঘটনা দেখতে চাইনা, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা চাই, নিরাপদ রাস্তায় হাটতে চাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.