নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চাই

২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:২৩

গত ১৫ বছরে দেশে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫ হাজার ৪৯৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সরকারদলীয় সাংসদ ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে ২২ জুন ( সোমবার) সকালে তিনি এই তথ্য জানান। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুসারে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ৩১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ৪৫ হাজার ৪৯৫ জন নিহত হয়েছেন ও ৩৮ হাজার ৭৭০ জন আহত হয়েছেন। অনেকেই নিরাপদ সড়কের জন্যে আন্দোলন করছেন, অনেকে চিন্তা গবেষণা করছেন। লেখালেখি হচ্ছে, আলাপ আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছেনা। কারণ আমরা সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি।

তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির ধারায় প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকে বাদ যাচ্ছে না সড়ক ও পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থাও। প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকায় একের পর এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে বহু মূল্যবান তাজা তাজা প্রাণ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষাবিদ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজ কেউই আজ সড়কে নিরাপদ নন। প্রাণটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতে হচ্ছে সবার। চিরচায়িত মৃত্যুর এই ফাঁদ থেকে উত্তরণে আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, যথাযথ প্রযুক্তির ব্যবহার চাই।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন আর খুব চ্যালেঞ্জিং নয়। প্রযুক্তিগুলোকে ব্যবহার করে পৃথিবীর অনেক দেশ আজ সড়কে নিরাপদ। গাড়ি কিভাবে, কখন, কোথায় ড্রাইভিং করা হয়েছে এবং গতি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি ছিল কিনা, তার একটি ফিডব্যাক ড্রাইভার এবং অন্য পার্টির কাছে ডাটা সম্বলিত বিশ্লেষণ পৌছে দেয়ার জন্য তৈরিকৃত যানবাহন মনিটরিং সিস্টেম। এ পদ্ধতিটি যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দ্রুততার সাথে বেড়ে চলেছে। ড্রাইভারের ড্রাইভিং আচরণ মনিটরিং করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-ড্রাইভারের সংঘর্ষের ধরন, সংঘর্ষের সংখ্যার ডাটা সংগ্রহ করা হয় যা ড্রাইভারের সাংঘর্ষিক ঝুঁকি রেটিং করে। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় তা হল: ভ্রমণের শুরু ও শেষ সময়, গাড়ির স্পিড, গাড়ির অবস্থান, গাড়ির ব্রেকিং এর ধরণ, সিট বেল্ট ব্যবহার।

The European Conference of Transport Research Institutes এর অধিবেশনে সড়ক দূর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে অটোমেটিক ড্রাইভিং ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। অধিক দূরত্বের রাস্তায় চালকদের ক্লান্তি, অবসাদ ঘিরে ফেলে। ফলে অনেক দূর্ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে এ সিস্টেম দূর্ঘটনা অনেকাংশেই হ্রাস করে। স্লিপি-ড্রাইভার ওয়ার্নিং খুব কাজ দেয়। কিছু সিস্টেম যেমন-ডিসট্রেকশন বা স্লিপিং ডিটেকশন এর মাধ্যমে ড্রাইভার একটি ওয়ার্নিং পায়।এক্ষেত্রে একেবারে সমস্যাটি দূর না হলেও ড্রাইভার এর ড্রাইভিং এর প্রতি মনোনিবেশ ঘটানো যায় এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়। E-call সিস্টেম তথা অটোমেটিক তাৎক্ষণিক কল সিস্টেম বোর্ড গঠন করে সময়োপযোগী ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং ট্রাভেল মনিটরিং সিস্টেম প্রণয়ন করা যায়। আইসিটির ব্যবহার সড়ক নিরাপত্তা বিধানে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। লেন চেঞ্জের সময় সংঘর্ষ রোধ, ক্রসিং মনোটরিং সবই আজ হাতের নাগালে।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর দেয়া তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০জন সাধারণ নাগরিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। সে অনুযায়ী বছরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১১হাজার। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বাংলাদেশে বছরে ১২ হাজার আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দূর্ঘটনায়। এক প্রতিবেদনে দেশে সংঘটিত সড়ক দূর্ঘটনার ধরন সম্পর্কে বলা হয়, শতকরা ৪৮টি দূর্ঘটনায় পেছন থেকে পথচারীকে এবং ১৬টির বেশী দূর্ঘটনায় সামনের যানবাহনকে পেছন থেকে আঘাত করা হয়। মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে শতকরা ১৩ ভাগের বেশি। বেপরোয়া গতির কারণে দূর্ঘটনা ঘটছে শতকরা ৯ভাগের বেশি। ১৩ভাগ দূর্ঘটনা হচ্ছে অন্যান্য কারণে।

বিভিন্ন সময় সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। কখনো বা এই নির্মম দূর্ঘটনায় বার বার শিকার হয়েছেন একই পরিবারের মানুষগুলোই। এদেশের বড় বড় শহরগুলোর ব্যস্ততম মহাসড়কে প্রতিদিন মানুষ নানাভাবে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া, পঙ্গুত্ব বরণ করা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এখানে সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির উৎকর্ষতাতো দূরে থাক, অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ নিয়ম-নীতিও অনুসৃত হয় না। এ সকল ত্রুটিপূর্ণ সড়ক দূর্ঘটনার শতকরা ৬৪ ভাগই সংঘটিত হয় গ্রামাঞ্চলের সড়কে। প্রযুক্তি যেখানে আজও আলোর দেখা পায় নি।

তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমাদেরকে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখলেই চলবে না বরং যথাসাধ্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যেহেতু আমরা স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি, অতএব এর বাস্তবায়নও আমরাই পারব এবং তা আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.