নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক অবক্ষয়, অপরাধ প্রবণতা ও অনাকাংখিত পরিবেশ

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫০

সবচেয়ে বেশি অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে যুব সমাজ, যারা একটি দেশ বা জাতির ভবিষ্যত্। অনেকে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে, হয়ে যাচ্ছে বখাটে, মদ্যপ, ধর্ষক ও সন্ত্রাসী। অনেক শিক্ষিতরাও ভোগবাদী ও লোভাতুর মানসিকতার কারণে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা করে চলতে পারছে না, বনে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজ, সুদখোর ও ঘুষখোর। ফলে সমাজ ছাড়া হচ্ছে ন্যায়নীতি ও ন্যায়-বিচার। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমাজের সকল ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে।আজ মানুষের প্রয়োজনেই মানুষকে আবার মানবিকতার চর্চা করতে হবে, আর সুস্থ ধারার সমাজ গড়তে লালন করতে হবে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো। কেননা আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সুস্থ ধারায় বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে ও বখে যাওয়া রোধ করতে হবে।

সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেনসর সর্বপ্রথম মানবসমাজকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেছিলেন। তার মূল বক্তব্য ছিল 'জীবদেহ যেমন বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ বা উপাদান নিয়ে গঠিত, ঠিক তেমনি মানবসমাজও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ বা উপাদান নিয়ে গঠিত'। এখন কথা হলো, জীবদেহের কোন বিশেষ অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে সেই জীবের পুরো দেহ অসুস্থ ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি মানবসমাজের কোন বিশেষ দিক বা অঙ্গ ব্যাধিগ্রস্ত হলে পুরো সমাজ আক্রান্ত হতে বাধ্য। আক্রান্ত জীবের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য যেমন আশু সুচিকিত্সা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আক্রান্ত মানবসমাজের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য আশু যথোপযুক্ত পদক্ষেপ জরুরি। নতুবা পুরো সমাজকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। কিন্তু সমাজকে পরিশোধন ও নতুন করে বিনির্মানের দায়িত্বটা কে নিবে, কিভাবেই বা হবে সেটিইতো ঠিক নেই।

কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হত্যা, ধর্ষণ করতে পারে না। অথচ এসব সামাজিক অপরাধ ও অশ্লীলতা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে। গণধর্ষণ ঘটছে, স্বামীর দ্বারা স্ত্রীকে ধর্ষণে বন্ধুকে সহযোগিতার ঘটনা ঘটছে। এমনকি আপনজনদের দ্বারা যৌন নিযাতন এবং নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানির মতো ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলছে। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাও আক্রান্ত হয়েছে নানাবিধ সামাজিক ব্যাধি দ্বারা। এর মধ্যে ধর্ষণ অন্যতম। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় থাকছে একাধিক যৌন হয়রানি, ধর্ষণ বা ধর্ষণের পর হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা, যা ইদানীংকালে দ্রুত বাড়ছে এবং মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ যাত্রায় রক্ষা পাচ্ছে না অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুটিও, নিরাপদ থাকছে না ছাত্রীটি তার পিতৃসূলভ শিক্ষকের কাছে, সহপাঠিনী তার সহপাঠীর কাছে; এমনকি এতে আরো একটি বিষয় যোগ হয়েছে, তা হচ্ছে বিশ্বস্ত বান্ধবীটি পর্যন্ত বান্ধবীকে ধর্ষণের ফাঁদে ফেলতে দ্বিধা করছে না। এক ধরনের মানসিক বিকারগ্রস্ততা ও সামাজিক অস্থিরতা প্রকট হয়ে উঠছে। এখন আমাদের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে কোন সংস্কৃতির প্রভাবে এমনটা হচ্ছে!

বান্ধবীর প্রতারণায় গণধর্ষণের শিকার হবার ঘটনা ঘটছে। সিনেমা ও নাটকের অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিভা খোঁজার নামে গ্রামগঞ্জের সহজ-সরল তরুণীদের ফাঁদে ফেলে অবৈধ, অশ্লীল এবং পর্নোফিল্ম তৈরি করছে অনেক সংঘবদ্ধ চক্র। প্রতিভা খোঁজার নামে, আধুনিক সংস্কৃতির নামে যে অশ্লীলতা ও নোংরামির চর্চা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তা আবেগী কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের শুধু প্রতিভাই নষ্ট করছে না, তাদের ঠেলে দিচ্ছে অমর্যাদাকর ও মানসিক যাতনার এক অন্ধকার জীবনে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ঠেলে দিচ্ছে অকাল মৃত্যুতে। আইন ও কঠোর শাস্তির বিধান আমাদের আছেও; কিন্তু চলমান ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করে, শুধু আইন থাকলে কাজের কাজ হয় না। আইনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

জোর জবরদস্তি করে কোন সামাজিক ব্যাধির প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না। আমরা আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার নামে এমন একটি সামাজিক পরিবেশে যাচ্ছি যেখানে ভালো-মন্দের, সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের, সত্চরিত্র-অসত্চরিত্রের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকছে না। আমরা এমন এক মানসিক অবস্থায় চলে যাচ্ছি যেখানে অবলীলায় আমরা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছি কোন বিবেকের বাধা ছাড়াই। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং পারিবারিক বন্ধনের সামাজিক মূল্যবোধগুলো ভেঙে যাচ্ছে তরুণদের হতাশাগ্রস্ততা আর অতি বৈষয়িক চিন্তার জন্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.