নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনের মৃত্যু ও একটি জাতির লজ্জা

২৬ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:২৯

রক্তমূল্যে অর্জিত এই দেশে এখনও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই। একের পর এক মূল্যবান প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। অনিরাপদ মৃত্যু যেকোন জাতির জন্যেই সীমাহীন লজ্জার, কলঙ্কের, অপমানের ও লাঞ্ছনার। রাজনের মৃত্যুও এর ব্যতিক্রম নয়।

সাম্প্রতিক সিলেটের শহরতলি কুমারগাঁও এলাকায় চোর সন্দেহে কিংবা কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সামিউল আলম রাজনের (১৩) হত্যাকান্ড খুবই মর্মান্তিক। হাত বেঁধে পিটিয়ে ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিছু অমানুষ হাসিমুখে এই জঘন্য নির্মম ঘটনা উপভোগ করছে। এমনকি পৈশাচিক বর্বরোচিত এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ, পেটানোর দৃশ্য দেখে হাসা কিংবা মেরে ফেলার ভিডিও ফেসবুকে দেয়া এবং তাকে বাঁচাতে কারো এগিয়ে না আসা প্রমাণ করে এই সমাজ যেন আর মানুষের সমাজ নেই।

শিশু রাজনের ঘটনা এদেশে নতুন নয়, এমন পৈশাচিকতাও বিরল নয়। ইতোপূর্বে নোয়াখালীর মিলন, ঢাকার বিশ্বজিৎ, নাটোরের সানাউল্লাহর ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনাই ঘটেছে। ২০০৬ সালে ঢাকার রাস্তায় বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল টিভিক্যামেরার সামনে। ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগরে জুবায়েরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। প্রতিদিনের খবরের কাগজে ডাকাত(?) সন্দেহে গনপিটুনিতে হত্যার সংবাদ আসে। সন্ত্রাস দমনের নামে ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা চলছে। আসলে কোনটাই রাজনের হত্যার চেয়ে কম নৃশংস নয়।

রাজন ছাড়াও সাম্প্রতিক সিদ্ধিরগঞ্জে নাইম (১৯) নামের একজন পোশাক শ্রমিককে মুঠোফোন চুরির অভিযোগে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক যুবককে জমি নিয়ে বিরোধে এবং কোম্পানীগঞ্জে চরকাঁকড়া ইউনিয়নে তৃতীয় লিঙ্গের লাকি আক্তার ওরফে জাহাঙ্গীরকে চাঁদা দাবির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০১১ সালে পবিত্র শবেবরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে ৬ জন ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করেছিল গ্রামবাসী। ঐবছরই ডাকাত সাজিয়ে উত্তেজিত জনতা মাত্র ১৬ বছর বয়সী মিলনকে মেরে ফেলেছিল।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুসারে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬৮ জন মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১০ সালে ১৬৭ জন, ২০১১ সালে ১৪৫ জন, ২০১২ সালে ৯৯ জন এবং ২০১৩ সালে ১২৩ জন পিটিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও এর আশপাশে বিভিন্ন ঘটনায় ১৫০ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিল। এই সংখ্যাগুলো নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক নয়।

এসব কিসের আলামত? আমরা যেন ভুলেই গেছি বিচারবহির্ভূত হত্যা মানেই হত্যা। সেটি যার দ্বারাই হোক না কেন। অত্যাচার মাত্রই অমানবিক, হত্যাকাণ্ড মাত্রই বর্বরোচিত। এই ধরনের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রতিটি অপরাধীকে যথোপযুক্ত সাজা প্রয়োগ এবং অপরাধী যাতে নিজেকে বিচারের উর্ধ্বে ভাবার সাহস না পায় সে ব্যবস্থা গ্রহন সময়ের অনিবারর্য্য দাবি। একটি সভ্য দেশ মানুষ পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারে না।

অন্যকে মারায় যে আনন্দ পায়, অসহায় ছেলেটার হাড়গোড় ভেঙে যে উল্লাস প্রকাশ করে সে পশুর চেয়েও নিৎকৃষ্ট। দেশের সর্বস্তরের মানুষ রাজনের খুনিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটি অমানুষ-খুনিদের উল্লাসের মঞ্চ হতে পারে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.