নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাকরি, গ্রহণযোগ্যতা ও সামাজিক মর্যাদা (২য় কিস্তি)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০২

একজন শিক্ষিত মানুষের জীবনে চাকরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের বাজারে ভালো চাকরি করে এমন চাকরিজীবীর যেমন কদর বেশি, বৈবাহিক জীবনে মোটা বেতনের উপার্জনকারী স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর নজর বেশি, সামাজিক জীবনেও গ্রহনযোগ্যতা ও সম্মান প্রতিষ্ঠিত মানুষেরই বেশি। মুলত: গুড় থাকলে পিঁপড়া আসে, তেলে মাথায় সবাই তেল দেয় কথাটা বাস্তবেও সত্যি। তাই প্রতিটি মানুষই চায় একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে, ক্যারিয়ার গড়তে ও জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে। পড়াশুনা সম্পন্ন করার পরই প্রতিটি বাবা মা আশা করেন সন্তান একটি ভালো চাকরি পাবে, প্রেমিকা আশা করে প্রেমিক এমন চাকরি পাবে যাতে বাবা-মা শুনেই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।

কিন্তু চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ। শিক্ষাজীবনে খুব ভালো ফলাফল অর্জন করেও অনেকে ছিঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে দিন কাটান, আবার খারাপ রেজাল্ট করেও অনেকে মস্ত বড় অফিসার হয়ে পাজেরো নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দেখতে শুনতেও ভালো, ইংরেজিতে ভালো কথা বলতে পারেন, লিখতেও পারেন ভাল, কম্পিউটার পরিচালনায় আছে যথেষ্ট দক্ষতা, এমন কি লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে পারে, কিন্তু ভাইবাতে অথবা চূড়ান্ত ফলাফলে হাজারো লোকের ভিড়ে হারিয়ে যান বারবার। হন্যে হয়ে চাকরির জন্য ঘুরতে থাকা অনেকেই বুঝতেও পারেন না কেন তারা চাকরি পান না। অথচ তারই সহপাঠী কিংবা পরিচিত অনেকের চাকরি হয়, চাকরির পরে বিয়ে হয়, বিয়ের পরে বাচ্চাও হয়- কয়েক ধাপ অতিক্রম করে। অথচ চাকরিদাতাদের অনেকের সুপারিশ রাখতে হয়, তদ্বির ও ঘুষের খেলায় জড়াতে হয়। বেকার বেকারই থাকে, শুধু মানি অর্ডার,ব্যাংক ড্রাফট, গাড়ি ভাড়া, ফটোকপি, নেটবিল আর কুরিয়ারে বিল দিতে টিউশনী করা বা বাবার কাছে চাওয়া।

ইদানীং অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন পার্টটাইম চাকরি করেন। বাসা থেকেই কাজ করা যায় বলে অনেকেই মূল চাকরির পাশাপাশি এমন ধরনের কাজ করে থাকেন। আবার অনেকে মূল চাকরি হিসেবেই এই পেশাকে বেছে নেন। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বসেই এই ধরনের চাকরি করা সম্ভব। চাকরি প্রার্থিরা ঘরে বসে অনলাইনেই চাকরির আবেদন করতে পারে। জীবনবৃত্তান্ত দেখে প্রার্থী সম্পর্কে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের যেন ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়, সেদিকে আবেদনকারীদেরকে খেয়াল রাখতে হয়। কেননা চাকরির প্রতিযোগিতায় প্রতি বছরই প্রায় দুই লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী প্রবেশ করছে। কিন্তু সেই সঙ্গে চাকরির ক্ষেত্র বাড়ছে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার কারণে আগে যে পরিমাণ কাজ তিন ব্যক্তি করত এখন এক ব্যক্তিকেই সেই কাজ করতে হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাকরির পদসংখ্যা কমছেই। এমতাবস্থায় অনেকের ধারণা রয়েছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরনের চাকরিই তার জন্য যথেষ্ট। অথচ বাস্তবতা ঠিকভাবে উপলব্ধি করেন না। অনেকের মধ্যেই ধারণা রয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত নিম্ন যোগ্যতাসম্পন্ন পদে আবেদন করলে চাকরি নিশ্চিতভাবেই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা ইন্টারভিউ কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আপনার বায়োডাটা পড়ে উপলব্ধি করে থাকেন, এ পদের বিপরীতে আপনার যোগ্যতা অনেক বেশি এবং অল্প কিছুদিন কাজ করার পরই আপনি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে পারেন।

চাকরিচ্যুত হলে যুবকের উদ্দামও থেমে যায়। হারিয়ে যায় অফুরন্ত প্রাণশক্তি। এই যন্ত্রণা চাকরিচ্যুত ব্যক্তিকে এতটাই বিদ্ধ করে যে, নিকটাত্মীয় বা স্বজন হারানোর বেদনার চেয়েও বেশি কষ্ট হয়। এক বিশাল শূন্যতা ক্রমশঃই পেয়ে বসতে থাকে তাকে। যারা জীবনের কোন পর্যায়ে এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, তাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ, বিচলিত, লজ্জিত অথবা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে মুষড়ে পড়েন। অনেকেই বহু নিদ্রাহীন রাত কাটান এবং কেউ কেউ দিনের পর দিন চোখের পানি ফেলেন। আবার অনেকের মাঝে উঁকি দেয় অজানা নানা আশঙ্কা। আবার অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের মতবাদে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হয়ে সফল ব্যক্তিত্বেও পরিণত হন। তিনি তার কাজকে কেবল ভালোবাসেন, তাই নয়। তিনি যে পরিমাণ অর্থ উপাজর্ন করেন, তা স্বপ্নেও হয়তো ভাবেননি কোনদিন। চাকরিচ্যুত হওয়ার অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণায় কাতর হওয়ার অভিশাপই জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়, আরও উন্নত জীবনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

যে কোন মুহুর্তে পছন্দের কাজটি হারালেই উদ্যম ও মনোবল হারাবেন না। আজকের দিনে মানুষ চতুর্দিকে চাকরি খুঁজছে। পরিসরটা অনেক বেড়েছে। তারা এক জায়গায় স্থবির হয়ে বসে থাকছেন না। আগেকার দিনে একটি চাকরির পেছনে মানুষ তার পুরো কর্মজীবনটাই উৎসর্গ করতো। এখন সেই মনো্রভাবে পরিবর্তন এসেছে। চাকরিচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি মানুষের জীবনকে কিছুটা ভিন্ন পথে পরিচালিত করে। এটিকে একটি সুযোগ হিসেবেই হাজির হয় অনেকের কাছে। নিয়ন্ত্রিত আবেগ ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারলে ঘোরতর অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ও ভালোভাবে বের হয়ে আসা সম্ভব হয়।

তাড়াহুড়া করে বা যেনতেনভাবে কাজ করে সাফল্য আসবে না। আমি একটি কোম্পানীর এইচআর বিভাগে কাজ করতে গিযে দেখেছি নিয়োগ করব ৫০ জন, দরখাস্ত আসে ১ হাজার। নিয়োগ দূরে থাক সবার পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হয় না। কয়েকজন মিলে হাজার খানেক দরখাস্ত থেকে ৩০০ দরখাস্ত আলাদা করতে হয়। অনেকের সিভি দেখেই মনে হতো হয়তো কেবল দরখাস্ত করতে হবে বলে করেছে। অনেকেই ন্যূনতম যোগ্যতা ও বিষয় না দেখেই আবেদন করেন, অধিকাংশই কাট-পেস্ট করে সিভি তৈরি করায় কয়েকপাতার সিভি থেকে কাঙ্খিত যোগ্যতা খুঁজে নিতে কষ্ট হয়েছে। সিংহভাগই বিজ্ঞপ্তিটি ঠিক মতো পড়েন নি, বেশিরভাগই সিরিয়াস নন বলে মনে হয়েছে।
(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.