নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ইংরেজি সাহিত্যের একজন ছাত্র। আমি শিখতে ভালবাসি।

কৃষ্ণ কমল দাস

ছাত্র,ইংরেজি বিভাগ

কৃষ্ণ কমল দাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্ম তোর নরকে

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

--- নাম কি?
--- নয়ন।
-- শুধু নয়ন? আগে পিছনো কিছু নাই?
-- জ্বে না।
--- থাকো কই?
-- এই খানেই
-- মানে?
--- রাতে দোকান বন্ধ করে টেবিলের উপরে ঘুমাই।
সেই দিনের মত নয়নের সাথে কথা শেষ হয়ে যায়। আমি ডিম পরোটা খেয়ে রাস্তায় এসে সিগারেট ধরাই।
আমি ঢাকা আসি বছর পাঁচেক আগে। শূন্য হাতে। এক বড় ভাইয়ের বাসার কেয়ারটেকার এর চাকরি পাই।

বড় ভাই আমাকে ১ মাসের বেতন অগ্রিম দিয়েছিলো। তাই দিয়ে ভর্তি হই ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগে।
সময়ের সাথে আমি নিজের অবস্থান শক্ত করি। সদ্য মাস্টার্স পাশ করেছি। তারপরও টিউশন পড়িয়ে ২৫০০০ টাকা ইনকাম হয় মাসে। যা ইনকাম করি তার অর্ধেকও খরচ করতে পারি না।

এই শহরে আমার কেউ নাই। না প্রেমিকা না ভালো বন্ধু। আমার সময় কাটতো ছাত্র ছাত্রী পড়িয়ে।

যাক নয়নের কথায় ফিরে আসি। নয়নের বয়স ১০ বা ১১ বছর হবে। মাঝে মাঝে দেখতাম হোটেল রাণী তে। সেখানে তার কাজ ছিলো পানি দেওয়া।

আমি একটা জিনিস খেয়াল করতাম। কাজের ফাঁকেই ছেলেটা একটা খাতায় কি জানি লিখতো। লিখতে লিখতে হারিয়ে যেন কোন এক অন্য জগৎতে। মালিকের হুঙ্কার শুনে আবার বাস্তবে ফিরে আসতো।

একদিন আর নয়ন কে হোটেলে পাই নাই। মালিক আমার পরিচিত ছিলো। তার ভাইয়ের ছেলেকে আমি পড়িয়েছিলাম। আমাকে সে মাস্টার বলে ডাকতো।

--- নয়ন কই? আজ দেখি না যে?
-- মাস্টার, ওর তো মনে কাল অঙ্ক পরিক্ষা ছুটি তে আছে মনে হয়।

--- কি!! ও পড়ালেখা করে? কোন ক্লাসে পড়ে?

--- মাস্টার, পোলাটার মাথা ভালা। ফাইভে পড়ে।

মালিকের সাথে কথা বলার পর আমার মাথায় নয়নের ব্যাপার টা ঢুকে গেলো।
আমি যেন দেখলাম এক অদম্য ছোট্ট ছেলে। যে উড়তে চায়। দরকার শুধু মুক্ত আকাশ

পরদিন নয়নের সাথে আমার দেখা।

--- পরিক্ষা কেমন হইছে রে।
--- ভাইজান ভালো হইছে।
--- তোর বাবা মা কি করে?
-- বাবা মা বস্তিতে থাকে। ভিক্ষা করে।
--- তোর পড়তে কেমন লাগে?
--- ভালোই লাগে।
--- দেখি কি কি বই আছে তোর কাছে?
-- - স্কুল থেকে যা দিছে তাই আছে ভাইজান।
--- নয়ন রে শুধু ওই বই গুলো পড়লে হবে না। কাল আমার বাসায় আসিস।
-- জ্বে ভাই।

আমার বাসায় সব বই ছিলো। ক্লাস ফাইভের যত রকমের গাইড বই, সাজেশন, টেষ্ট পেপার সবই ছিলো।

আমার সব বই আর সঞ্চিত জ্ঞান দিয়ে নয়নকে পড়ানো শুরু করি। ছেলেটা অসম্ভব মেধাবী ছিলো। কোন এক অজানা টানে ওর সব দায়িত্ব আমি নেই। ছেলেটা সমাপনী তে অসম্ভব ভালো ফলাফল করলো। বৃত্তিও পেলো। বৃত্তিটাই ওর জীবন চিরতরে পরির্বতন করে দিলো। তারপর.......

তারপর একদিন তার বাবা মার খবর হলো। তাদের ছেলে এখন মাসে মাসে টাকা পাবে। হঠাৎ তাদের ভালোবাসা বেড়ে গেলো। তারা ছেলেকে নিয়ে যাবেই। আমি অসহায়। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া ভালোবাসা ভয়ঙ্কর হয়। এই ভালোবাসা স্বার্থের। রক্তের সম্পর্কের ক্ষমতা আমার ভালোবাসা আর স্নেহের ক্ষমতার কাছে জিতে যায়। তীব্র কষ্ট নিয়ে নয়ন কে বিদায় দিতে হয়।

জীবনে প্রথম বার কোন সম্পর্কের টান আমাকে কাঁদালো। মনে হলো বাড়ন্ত ধানের ক্ষেত নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

এর বছর চারেক পর। আমি তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করি। মতিঝিল এলাকায় থাকি। ঈদের পর ফাঁকা ঢাকা।

সন্ধ্যার পর ভুতরে গলি দিয়ে হেটে যাচ্ছি। কিছু সময় পর মনে হলো আমাকে অনুসরন করা হচ্ছে।
একটু পরই আমাকে ঘিরে ধরলো একদল কিশোর। হাতে চাপাতি। চোখে মুখে হিংস্রতা। কিছু বলার আগেই আমাকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। সবাই যখন আমার পকেট খুঁজতে ব্যস্ত তখন তাদের মধ্যে একটা ছেলে পাথরের মত দাড়িয়ে রইলো। মনে হলো সে ক্লান্ত, হাজার বছরের ক্লান্তি তাকে ঘিরে আছে।

বাকিরা কাজ শেষ করে.... ডেকে উঠে নয়ন আয় কাম শেষ।

(কাল্পনিক)


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস,
অসৎ সঙ্গে সর্বনাস।

কাল্পনিক হলেও বাস্তবতার
কঠিন বুননে ঠাসা ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৫

কৃষ্ণ কমল দাস বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: কিশোররা খুব হিংস্র হয়।

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.